“ভোরের প্রথম সোনালী আলো
স্বপ্ন নতুন জাগিয়ে গেলো…….”
সকাল টা দিয়েই আমাদের দিনের শুরু। সকালের সোনালী আলো টা যেন আমাদের সারাদিনের জন্য সোনালী সময়।
ছোটবেলায় আমরা একটা কবিতা প্রায় সবাই পড়েছি।
“Early to bed and early to rise,
Makes a man healthy, wealthy & wise..”
আজও তাই আমাদের বাবা মা বলেন সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে। সকালে ঘুম থেকে উঠলে দেহ মন সতেজ থাকে। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের বেশির ভাগেরই অভ্যাস দেরী করে ঘুমানো। ফলে সকাল হয়তো অনেকেরই দেখা হয় না। অথচ একসময় আমাদের অভ্যাসই ছিল তাড়াতাড়ি ঘুমানো আর সকাল সকাল উঠা। তবে এই সকালে না উঠে আমরা আমাদের অনেক ক্ষতি সাধন করছি, তা হয়তো বুঝতে পারি না।
বিখ্যাত মনীষী বেন্ঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন বলতেন, ভোরের মুখে সোনা রং থাকে। সকালে ওঠার উপকারিতার কথা এই উপমা থেকেই আমরা বুঝতে পারি। আর যারা রোজ সকালে উঠেন নিশ্চয়ই জানেন এর উপকারিতা। যাদের ভোরে বা সকালে ওঠার অভ্যাস নেই, তাদের জন্য এর উপকারিতা গুলো আজ আলোচনা করা হলোঃ
◾সকালে উঠলে প্রতিদিনকার কাজ তাড়াতাড়ি শুরু করতে পারবেন। এতে কাজের সময় বেশি পাবেন আর কাজের গতিও বেড়ে যাবে। গবেষণায় দেখা গেছে যখন কোনো ব্যক্তি ভোরে উঠেন, তখন অন্যদের তুলনায় তিনি বেশি সক্রিয় থাকেন এবং সময় নেন কম। কোনো ভালো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে, পরিকল্পনা ও লক্ষ্য অর্জনে অধিক পারদর্শী হন।
◾সকালে উঠার আর একটি ভালো দিক হচ্ছে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি। যখন কেউ সকালে উঠেন, তখন কাজের চাপ এমনই কমে যায়। ইতিবাচক বার্তা দিয়ে দিন শুরু হয়।সারাদিন এই ইতিবাচক মনোভাব চলতে থাকে।
◾কথায় বলে, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠা মানে সকাল সকাল ঘুমাতে যাওয়া। অনিয়মিত ভাবে সকালে ওঠার চেয়ে একটি নিয়মের মধ্যে ফেলতে পারে সবচেয়ে সুবিধা। এতে ঘুম ভালো হয়। প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হলেও অভ্যাস হয়ে গেলে দেহঘড়ি ঘুমের নতুন সময় ও সকালে উঠার বিষয়টি মানিয়ে নিবে।
◾যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এক গবেষণায় দেখেছেন, যারা সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে, তারা দেরীতে ঘুম থেকে উঠা শিক্ষার্থীদের তুলনায় ভালো ফল করে। ঘুমের মান ভালো হওয়া ও কাজের উৎপাদনশীলতার সঙ্গেও একে যুক্ত করা যায়।
◾সকালে উঠলে জীবন সুখের হয়। জীবনে ইতিবাচক দিক বাড়ে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ভোরে ঘুম ভাঙে, তারা বেশি সুখী হন। এই সুখ স্বল্পমেয়াদী নয়, বরং সারাটা জীবন ধরেই সুখ ছুঁয়ে যায়।
◾ভোরে ঘুম থেকে উঠলে আপনি ফ্রেশ মনে পড়াশোনায় সময় দিতে পারবেন। এতে কোনোকিছু অন্য সময়ের থেকে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়। তাছাড়া ছোট ভাই বোনেরা আপনার পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটাবে না।
◾সারাদিন মানুষের চলাফেরা ও কলকারখানা খোলা থাকে বলে দিনে বাতাসে প্রচুর রোগজীবাণু থাকে। কিন্তু ভোরের বা সকালের বাতাস থাকে বিশুদ্ধ। এতে আপনি প্রাণভরে শ্বাস নিতে পারবেন আর ব্যায়াম করতে পারবেন।ফলে শরীরটা ঝরঝরে হয়ে যাবে আর সারাদিন কাজে তেমন ক্লান্তি আসবে না।
এই সকালের সঠিক ব্যবহারই মানুষকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। বিশিষ্ট মার্কিন লেখক ও সফল প্রশিক্ষক হ্যাল ইলরোড তাঁর বেস্ট সেলার বই ” The Miracle Morning ” সকালের ৬ টি অভ্যাসের কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলোঃ
১. নিয়মিত প্রার্থনা বা ধ্যান করা।
২. লক্ষ্য নিয়ে নিজের সম্পর্কে বার বার ভালো কথা বলা।
৩. আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সুন্দর ভবিষ্যত নিয়ে কল্পনা করা।
৪. নিয়মিত পরিমিত ব্যায়াম করা।
৫. প্রেরণাদায়ক কিছু পড়া বা শোনা।
৬. ভবিষ্যত ভাবনা বা কিছু নিয়ে লেখালেখি।
সর্বোপরি সকাল হলো সারাদিনের প্রস্তুতি। তাই সময়মতো সকালে উঠে সারাদিনের কর্মতালিকা টা সাজিয়ে নিলে কার্যকর একটা দিন কাটানো সম্ভব।
লেখাঃ ঐশ্বর্য্য বিজয়া দাস
—জুনিয়র কন্টেন্ট রাইটার, রাইটার্স ক্লাব বিডি
Leave a comment