- বই : ভিয়েনার ক্যাফে সেন্ট্রাল
- লেখক : সঞ্জয় দে
- প্রকাশনী : সময় প্রকাশন
- বিষয় : নানাদেশ ও ভ্রমণ
- পৃষ্ঠা : 208, কভার : হার্ড কভার,
- সংস্করণ : 1st Published, 2019
- আইএসবিএন : 9789844581210, ভাষা : বাংলা
গুছিয়ে লেখার প্রতিভা সবার থাকেনা।আমারও নেই।তবে এতটুকুন বলবো,যারা ইতিহাস ভালোবাসেন,তাদের জন্য চমৎকার তথ্য সম্বলিত একটা বই। আজ বিকেলে “ক্যাফে সেন্ট্রাল”থেকে কফি কিনে বের হবার সময় সন্জয় দা’র লেখা বইয়ের কয়েক লাইন খুব মনে পড়ে গেল…
“দুজন যখন নিজেদের মাঝে এসব গুরুগম্ভীর আলোচনায় মত্ত ছিলেন,তখন তাঁদের টেবিলের অনতিদূরে অপর টেবিলে এসে বসেছিল এক ছোকরা।বয়স সবে কুড়ি পেরিয়েছে।ছোকরার বাড়ি ক্রোয়েশিয়ার কুম্ৰভেচ গ্রামে।সে ভিয়েনার বাসিন্দা নয়,বরং থাকে ভিয়েনার দক্ষিণের এক ছোট শহরে,বড় ভাইয়ের বাড়িতে।পেশায় মোটর মেকানিক সে।ও শহরেই ডাইমলার গাড়ির কারখানায় মেকানিকের কাজ করে।গত মাসে সে একখানা চিঠি পেয়েছে সেনাসদর থেকে রাজার সৈন্যবাহিনীতে বাধ্যতামূলক দুবছরের সার্ভিসের জন্যে।রাজধানী শহরে আজ এসেছে সেই চিঠিটি নিয়ে।সামনের মে মাস থেকে তাঁর যোগদানের কথা,তাই সে ভাবছিল কিছুটা তদবির করে যদি ক্রোয়েশিয়ায় বাড়ির কাছাকাছি কোনো স্থানের গ্যারিসনে আত্তীকৃত হওয়া যায়!কাজ শেষে এসেছে এই ক্যাফেতে।এখানে অবশ্য যারা আসেন তাঁরা আরও উঁচু তলার মানুষ,কিন্তু মাসের প্রথম,পকেটেও তাই আছে মাইনের টাকা।যুবক তাই ভাবে,একটু বাবুয়ানা করলে মন্দ কী!বেয়ারাকে ডেকে সে এ-ক্যাফের সেরা কেক এবং এক কাপ কফির অর্ডার দেয়।স্তালিন আর সেই নেতার মাঝে কিছুটা অস্বস্তিকর ‘ আলোচনাটি আর এগোয় না অগত্যা স্তালিনই আজ নিজ থেকে আগেভাগে উঠে পড়বার জন্যে অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন।যাবার বেলায় নিজের সিল্কের হ্যাটটি মাথায় চড়িয়ে অগ্রভাগটি নিচের দিকে ঠেলে কপালের উপর নুয়ে থাকা অবাধ্য চুলের গোছাকে ঠিক করতে করতে বলেন, ‘আশা করি,এরপর হয়ত আমাদের দেখা হবে রুশ ভূমিতে,কমরেড ত্রতস্কি।’
ক্যাফের সেই ভারী দরজা ঠেলে নিজের ওভার কোটের ডান পকেটে হাত রেখে তিনি যখন বাইরে বেরুবেন,অনেকটা একই সময়ে সেই যুবকও দরজা ঠেলে বাইরে যাবার প্রতীক্ষায়,কিন্তু স্তালিন-কে সে আগে যাবার সুযোগ দিয়ে নিজে কয়েক মুহূর্তের জন্যে সেখানে দাঁড়ায়।যুবকের দিকে ফিরে না তাকিয়ে স্মিতস্বরে ‘ডাঙকে’ অর্থাৎ কিনা ধন্যবাদ বলে স্তালিন ক্যাফে থেকে বেরিয়ে যান।সেদিন যদি তিনি এই যুবকের দিকে ভালো করে তাকাতেন,বা পরিচিত হতেন,তাহলে ১৯৪৪ সালে এই যুবকের সাথে যখন আবারও মস্কোতে দেখা হয়,তখন কি সেই অতীত স্মৃতি স্মরণ করতে পারতেন? হয়ত পারতেন,হয়ত না।মুহূর্তে কাউকে দেখা স্মৃতির প্রায় বিশ বছর পরও সজীব থাকার সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ।যদি সেদিনের সেই স্মৃতি সমুজ্জ্বল থাকতো,তবে হয়ত স্তালিন চমকে উঠতেন এই ভেবে যে , সেদিনের সেই মলিন পোশাকের মোটর মেকানিক যুবকই আজকের বিশাল দেশ যুগোস্লাভিয়ার প্রখ্যাত পার্টিজান নেতা মার্শাল টিটো।”