ভাল্লাগেনা by jahid hasan hridoy

 

“মহাজগতে কোটি-কোটি তারা

চারিদিকে কোটি গ্রহে ভরা

এর মাঝে পৃথিবী আর আমরা

দেখো কত ক্ষুদ্র লোভ-লালসা

আজ তুমি আছো হবে কাল বিগত

এ-কথা ভুলে ভাবো কী পেয়েছো কত

ভালোবাসা দাও নি আগের মতো

শান্তির আশাতে সব যুদ্ধরত।।”

উপরের কথাগুলো একটা বিখ্যাত গানের স্বরলিপি। মনেমনে যখন ভাবছিলাম কিছু কথা লিখবো, গানটার কথা মনে পড়ে গেলো। 

এর একটু আগে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির একজন স্পেশালিস্টের একটা ভিডিও দেখছিলাম। ভিডিওতে তিনি বলছিলেন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অনুভব করা ‘ভাল্লাগেনা’ রোগের (Discomfort Anxiety) কথা। তিনি বলছিলেন- “জগৎ কিন্তু আপনাকে কেন্দ্র করে ঘোরে না। তাই জগতের সবকিছু আপনার ভালো লাগতে হবে- এমন কোনো কথা নেই। আপনাকে অনেক কাজ করতে হবে দায়িত্বশীলতা থেকে, কর্তব্যবোধ থেকে। এর পুরো জার্নিটা আপনার ভালো লাগবে না- এমনটাই বরং স্বাভাবিক।”

অথচ কিছু মানুষ যেকোনো মূল্যে সারাক্ষণ ডোপামিনের উদ্দিপনা অনুভব করতে চায়, সর্বক্ষণ নিজেকে সুখী দেখতে চায়। সেই তাড়না থেকে তারা ক্ষমতাকে নিজেদের ইন্দ্রিয়-লিপ্সা মেটাতে ইউজ করে। তাদের কাছে মনে হয়- ‘পৃথিবীটা বুঝি তাদেরকে কেন্দ্র করেই ঘোরে’। তাই তারা সমাজের আর দশজনের ব্যাপারে পরোয়া করে না। তাদের জীবনটা শুধুই ‘আমি’-ময়।

আসলে বাস্তবতা হলো গোটা সৃষ্টিজগতের কাছে আমরা নিতান্তই ক্ষুদ্র এবং তুচ্ছ। আমি যদি আজ মারা যাই তবে কাল কিম্বা কালের বিবর্তনে মানুষ আমাকে ভুলে যাবে। পৃথিবী গতিশীল, কালের ধারাপাতে অতীত সদা ম্লাণ হয়ে যায়। তাই মনে হয়- জীবনকে ঘিরে আমার যত স্বার্থপর চাওয়া-পাওয়া – জীবনের বিশালতা ও ব্যাপ্তির কাছে তার কানাকড়িও মূল্য নেই।

এই নশ্বর মানুষ তবু অমর হতে চায়। কাব্যিক প্রতিভা দিয়ে মহাকাব্য রচতে চায়। প্রেমিকার তরে তাজমহল গড়তে চায়। সেগুলোইবা কতকাল টিকে থাকে? ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যানের তো একটা ইটের অস্তিত্বও আর বর্তমান নেই। তবু আমাদের কত দম্ভ! নিজেদের মানবিক সামর্থ্য নিয়ে আমাদের কতকত অহমিকা! আমাদের ক্ষুদ্র স্বার্থপরতা কিম্বা জাগতিক বিশাল কীর্তি, কিছুইতো টেকে না শেষমেশ। 

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা হুদে বলেছেন-

“যে সব লোক শুধু এই দুনিয়া জীবন এবং এর চাকচিক্যের অনুসন্ধানী হয়, তাদের কাজ-কর্মের যাবতীয় ফল আমরা এখানেই তাদেরকে দান করি, আর তাতে তাদের প্রতি কোনরূপ কমতি করা হয় না। কিন্তু পরকালে তাদের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছু নেই। (তখন তারা জানতে পারবে) তারা দুনিয়াতে যা কিছুই বানিয়েছে, তা সবই বিলীন হয়ে গেছে এবং তাদের যাবতীয় কৃতকর্ম সম্পূর্ণরূপে নিষ্ফল হয়েছে।”

–আয়াতঃ ১৫-১৬

আল্লাহর রাসুল (স) আমাদেরকে দুনিয়াতে মুসাফিরের মতো বাঁচতে বলেছেন। আমরা আখেরাতকে যদি দুনিয়া থেকে বেশি প্রাধান্য দিতে শিখে যাই- তবেই আমরা দুনিয়ার ক্ষুদ্র স্বার্থপরতা, অপরের প্রতি জুলুম আর হানাহানি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো। নিজেদের নশ্বরতা আর দুনিয়ার অনিত্যতা আমরা যত দ্রুত উপলব্ধি করতে পারবো- তত দ্রুতই আমরা সবর করা শিখবো, আর তখনই বোধহয় আমরা ‘ভাল্লাগেনা’ রোগ (Discomfort Anxiety) থেকেও বেরিয়ে আসতে পারবো।

বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?