“খাঁ খাঁ” শব্দের মানে কী বলেন তো? মানে নেই কোন, “বুকের মধ্যে কিরাম জানি খাঁ খাঁ করে”- বললে ঠিকই ধরতে পারবেন অনুভূতিটা কিন্তু ভাষায় একে ব্যাখ্যা করা যাবে না!
আচ্ছা, কেন বা কখন বুকের মধ্যে খাঁ খাঁ করে বলেন দেখি? প্রেমে পড়লে? যার প্রেমে পড়া গেল সে প্রেম ফেরত না দিলে? প্রেম ফেরত দিলেও মানুষটাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে না পেলে? নাকি প্রেমে প্রেমে বছর বছর কাটিয়ে দেয়ার পর মানুষটা বেইমানি করে বসলে? খাঁ খাঁ মানেই কি তবে প্রেম সম্পৃক্ত কিছু? না আসলে… শৈশবের স্বপ্ন যখন পরিবার আর সমাজের চাপে হাতছাড়া হয়ে যায়; জীবনে যা করতে চেয়েছিলাম তা করতে না পেরে ভালোবাসাহীন কাজ করে ডাল-ভাতের যোগানে নিজেকে বিকিয়ে দিতে হয় তখনও কিন্তু বুকের মধ্যে খাঁ খাঁ করে।
সবচেয়ে বেশি খাঁ খাঁ বোধ করি তখন করে যখন সমাজের জন্য, সংসারের জন্য নিজের সত্তা পর্যন্ত ত্যাগ করার পরেও দিনশেষে শুনতে হয়, “জীবনে কী করলে? কিছুই তো করলে না!” এক গুচ্ছ এমন “খাঁ খাঁ” জাগানিয়া গল্প নিয়েই কাজী ঐশীর ছোট গল্পে সংকলন “ভাই, একটা গল্প শুনবেন?”
লেখকের লেখনীর সাথে আমার পরিচয় বইভিত্তিক একটা ফেইসবুক গ্রুপে বছর দুয়েক আগে। তখন থেকেই তাঁর লেখার আমি ভক্ত। কাজেই, তাঁর গল্প সংকলন আসবে জানার পর বেশিরভাগ গল্পই হয়তো আমি ঐ গ্রুপে আগে পড়েছি বুঝলেও সবগুলো লেখাকে এক মলাটের মধ্যে পাওয়ার লোভটা আর সংবরণ করতে পারিনি। বইটা পড়ে এটাই অনুভূতি- বই কেনার সিদ্ধান্তটা মন্দ ছিল না।
বইটি মূলত দু’টি অংশে ভাগ করা। প্রথম অংশে সামাজিক ঘরানার ছোটগল্প, গল্প সংখ্যা ৭১। পরের অংশে থ্রিলার ঘরানার একুশটি ছোটগল্প। কিন্তু দ্বিতীয় অংশের গল্পগুলোও কেমন করে জানি থ্রিলের চেয়ে সেই “খাঁ খাঁ” বোধটার যোগান-ই বেশি দেয়।
এদিকে লেখকের লেখনীর ধাঁচটাই এমন যে সব গল্পই একটু রহস্যমাখা। প্রতিটা গল্পের শুরুটা পড়লে মনে হবে লেখক এমনিতেই একটা অযথা গল্প বলা শুরু করলো। কিন্তু সেই গল্পের শেষটা যে কেমন হবে আগে আন্দাজ করা দুষ্কর। তাই গল্পগুলোর মাঝে মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মত টুইস্ট, গা শিউরে দেয়ার মতো থ্রিল পাওয়ার প্রত্যাশা করাটা ঠিক হবে না। কিন্তু তাই বলে গল্পগুলো একেবারে নীরিহও নয়!
গল্পগুলোর রসদ আমাদের চারপাশ থেকে, নিত্যদিনের জীবন থেকে নেয়া। উপকরণ কাছাকাছি বলে মোট নব্বইটি গল্প সম্বলিত ৩১৮ পৃষ্ঠার বইটা এক বসায় পড়ে শেষ করার উপযোগী নয়। প্রতিদিন যেমন এক কাপ চা (কিংবা কফি) আমাদের একটু জীবনীশক্তির যোগান দেয় তেমনই এই বইয়ের গল্পগুলো প্রতিদিন একটা-দু’টো পড়লে পড়ে আরাম হবে।
ভূমিপ্রকাশ প্রকাশিত বইটার বাঁধাই-ছাপা-সম্পাদনা নিয়ে আমার তেমন একটা খুঁতখুঁতানি নেই। বানান ভুল নজরে আসেনি বললেই চলে। তবে প্রচ্ছদটা তেমন একটা মনে দাগ কাটেনি। হ্যাঁ, গল্পগুলোর ধাঁচ চিন্তা করলে আমাদের প্রবাহমান জীবনের সাথে প্রচ্ছদের চলতি রাস্তার মিল যদিও পাওয়া যায়, তবুও প্রচ্ছদ আরো চোখে পড়ার মতন হতে পারতো।
সবমিলিয়ে, আমাদের প্রতিদিনের টুকরো জীবন, টুকরো হতাশা আর নিজেদের মধ্যের খাঁ খাঁ ভাব অন্যের জীবনের আয়নায় দেখতে চাইলে খুলে বসুন “ভাই, একটা গল্প শুনবেন?”
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?