বিশ্বাসঘাতকদের ইতিহাস : মাওলানা ইসমাইল রেহান | Biswasghatokder Itihash By Mawlana Ismail Rehan

  • বই : বিশ্বাসঘাতকদের ইতিহাস 
  • লেখক : মাওলানা ইসমাইল রেহান 
  • প্রকাশনী : কালান্তর প্রকাশনী 
  • বিষয় : ইসলামি ইতিহাস ও ঐতিহ্য 
  • অনুবাদক : আবদুর রশীদ তারাপাশী 
  • পৃষ্ঠা : 216, কভার : হার্ড কভার 
  • আইএসবিএন : 9789849676447, ভাষা : বাংলা

At A Glance

মাওলানা ইসমাইল রেহান রচিত “বিশ্বাসঘাতকদের ইতিহাস” মূলত ইসলামী ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কিত একটি বই, বইটি প্রকাশিত হয়েছে কালান্তর প্রকাশনী থেকে। বইটির মূল আলোচ্য বিষয় যারা ইসলামের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাদের নিয়ে।
বিশ্বাসঘাতকদের বিষাক্ত ছোবল প্রকাশ্য শত্রুর চেয়েও ভয়ানক। কারণ, মানুষ প্রকাশ্য শত্রু থেকে থাকলেও গাদ্দার বা বিশ্বাসঘাতকদের ব্যাপারে থাকে নির্ভার। ফলে এরা পুরো শক্তি নিয়ে আঘাত হানতে পারে। এদের বিষদাঁত এতই ভয়ংকর যে, একটা রাষ্ট্র অথবা সমৃদ্ধ একটা জাতি ধ্বংসের জন্য মাত্র এক বিশ্বাসঘাতকই যথেষ্ট। 
ইতিহাসপাঠে জানা যায়, যুগে যুগে ঘরের শত্রুরা ইসলামের যে ক্ষতি করেছে, প্রকাশ্য শত্রুরা তার এক-দশমাংশও করতে পারেনি। মুসলিমদের ওপর যেসব বিপর্যয় নেমে এসেছে, এর মূলে কিন্তু এদেরই ভূমিকা বেশি। এদের বিষ এতই প্রতিক্রিয়াশীল যে, জাতিকে এর উপশম পেতে কয়েক শতাব্দী লেগে যায়। 
সৃষ্টির শুরু থেকে চলে আসছে সত্য-মিথ্যার সংঘাত। সেই অমোঘ সত্য থেকে রক্ষা পায়নি ইসলাম ও তার অনুসারীরা। যুগে যুগে বাতিল ও বাতিলপন্থিরা ঠুঁটি চেপে ধরতে চেয়েছে ইসলাম ও মুসলিমদের; কিন্তু হাজারো বাধা উপেক্ষা করে ইসলাম ও মুসলিমরা টিকে আছে আপন মহিমায়।
বিশ্বাসঘাতকদের ইতিহাস এমনই কতক ভ্রষ্টাচারীর কুকীর্তির জীবন্ত আখ্যান।এদেরএদের ওই কালো অধ্যায় পাঠ করে উম্মাহর কান্ডারিরা যাতে এদের চিনতে পারেন, ঘটে যাওয়া কালো অধ্যায় আর এদের পরিণতি থেকে শিক্ষা নিতে পারেন, সে লক্ষ্যেই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
বিশ্বাসঘাতকদের ইতিহাস বইয়ের ভূমিকায় আবদুর রশীদ তারাপাশী রেহান বলেন,
‘আস্তিন কা সাঁপ’ প্রবচনটি মূলত ফারসি ভাষার ‘মারে আস্তিন’ থেকে গৃহীত। শাব্দিক অর্থ ‘জামার হাতার সাপ’ হলেও প্রবচনটি ব্যবহৃত হয় গাদ্দার ও বিশ্বাসঘাতকদের বোঝাতে। আমরা ‘বন্ধুরূপী শত্রু’, ‘কড়িকাঠের ইঁদুর’, ‘ঘরের শত্রু’ বলে যা বোঝাই, ‘আস্তিন কা সাপ’ বলে মূলত তা-ই বোঝানো হয়ে থাকে।
আসলে গাদ্দারদের অপঘাত বোঝাতে ‘আস্তিনের সাপ’ শব্দটি যথেষ্ট নয়। কেননা, জামার হাতায় থাকা সাপের ছোবলে কেবল সংশ্লিষ্ট লোকই মারা যেতে পারে। পক্ষান্তরে কোনো গাদ্দারের বিষাক্ত ছোবলে ধ্বংস হতে পারে পুরো একটি রাষ্ট্র – একটি সমৃদ্ধ জাতি। গাদ্দাররা হয় প্রকাশ্য শত্রুর তুলনায় অধিকতর ভয়ানক। কারণ, মানুষ প্রকাশ্য শত্রু থেকে বাঁচার ব্যবস্থা নিলেও গাদ্দারদের ব্যাপারে থাকে নির্ভার। ফলে এরা পুরো শক্তি নিয়ে আঘাত হানতে পারে।
ইতিহাস পড়লে অনুমান করা যায়, যুগে যুগে ঘরের শত্রুরা ইসলামের যে ক্ষতি করেছে, প্রকাশ্য শত্রুরা তার এক-দশমাংশও করতে পারেনি। ইসলামি রাষ্ট্র ও মুসলিম জাতিসত্তার ওপর বড় বড় যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, এর মূলে কিন্তু এই গাদ্দারদেরই ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। এদের বিষ এতই প্রতিক্রিয়াশীল যে, জাতিকে এর উপশম পেতে কয়েক শতাব্দী লেগে যায়। তারপরও পুরোপুরি পাওয়া যায় না।
নিঃসন্দেহে মাওলানা ইসমাইল রেহান হাফিজাহুল্লাহ সময়ের শক্তিমান একজন ইতিহাসবিদ। তিনি কয়েক বছর আগে সাপ্তাহিক বাচ্চু কা ইসলাম নামক সাময়িকীতে ইসলামের গাদ্দারদের নিয়ে একটি সিরিজ রচনা করে এসেছিলেন। সেই সিরিজেরই মলাটবদ্ধরূপ হচ্ছে আস্তিন কা সাপ।
বইটি শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা হলেও এর আবেদন কিন্তু সমাজের সব শ্রেণির মানুষের কাছে সমানভাবে প্রযোজ্য। কালান্তর প্রকাশনী সবসময় বিশুদ্ধ ইতিহাসে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সে হিসেবে এটি অনুবাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাকে। তবে কলেবরে অনেক ছোট হওয়ায় প্রকাশনীর অনুরোধে আমি তাতে আরও কতিপয় গাদ্দারের কর্মতৎপরতা যোগ করি।
এখানে একটা বিষয় স্পষ্ট করা দরকার মনে করছি। লেখাগুলো আমরা সন হিসেবে ধারাবাহিক রাখার চেষ্টা করেছি। তাই ইসমাইল রেহানের লেখা আর আমার লেখা একাকার হয়ে গেছে। এগুলোর প্রতিটি শিরোনাম উল্লেখ করে কার কোনটি, সেটি আর ভূমিকায় বলে দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না। পাঠক যেন বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন।
ইতিহাসের আলোচিত-অনালোচিত আরও কজন বিশ্বাসঘাতককে নিয়ে এ বইটির দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশের ইচ্ছা আছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাওফিক দিলে কাজটা সমাপ্ত করব ইনশাআল্লাহ।
সম্মানিত পাঠক বরাবরে অনুরোধ, গ্রন্থটির কোথাও কোনো ভুল দৃষ্টিগোচর হলে আমাদের জানাবেন। ইনশাআল্লাহ পরবর্তী মুদ্রণে তা সংশোধন করা হবে।
আবদুর রশীদ তারাপাশী – ১০ মে 2022
আগেকার যুগের মানুষের পোশাকের ধরন ছিল বর্তমানের পোশাক থেকে অনেকটা ভিন্ন। তখনকার মানুষের জামার বাইরের দিকে কোনো পকেট থাকত না। কারণ, পকেট দেওয়া হয় টাকাপয়সা রাখার জন্য। কিন্তু সে কালে তো বর্তমানের মতো কাগজের মুদ্রা ছিল না। তখনকার মুদ্রা হতো সোনা-রূপার। কেউ যদি তার সঙ্গে দু-চারশ মুদ্রা নিয়ে বেরোত, তাহলে সেই মুদ্রার ওজন কি অন্তত আধা কিলো হবে না? এত ওজন পকেটে করে বেড়ানো কি সম্ভব? তাই সে যুগের মানুষ মুদ্রাগুলো খুঁতিতে ভরে কোমরের সঙ্গে অথবা জামার হাতায় গোপন পকেটে বেঁধে রাখত। তখনকার পোশাকের হাতা হতো অনেকটা খোলামেলা। সেই খোলামেলা হাতায়ই মুদ্রাগুলো রাখা হতো। রাখার পদ্ধতিটা ছিল এমন— মুদ্রাগুলোকে একটি থলেতে ভরে ফিতা দিয়ে হাতের নলার সঙ্গে বেঁধে নেওয়া হতো। এভাবেই ওগুলো পকেটমারদের হাত থেকে নিরাপদ থাকত। সে কালেও কিন্তু পকেটমারের অস্তিত্ব ছিল, ফিকহের প্রাচীন গ্রন্থাদিতে পকেটমার-সংক্রান্ত বিধানই এর বড় প্রমাণ। আরবিতে পকেটমারদের বলা হয় ‘তাররার’। আজও আমাদের সমাজে ধূর্ত ও ধড়িবাজ লোকদের ‘তাররার’ বলা হয়ে থাকে।
এবার লক্ষ করুন, হাতার পকেটে যদি মুদ্রা লুকিয়ে রাখা হয়, তাহলে কি সেই পকেট কেটে মুদ্রাগুলো হাতিয়ে নেওয়ার সাহস হবে কারও? কেউ এমন দুঃসাহস দেখালে কি সঙ্গে সঙ্গে তাকে পাকড়াও করা হবে না? তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, সে কালের পকেটমাররা এতটাই চতুর ছিল যে, অনেক সময় হাতার সেই গোপন পকেট থেকেও মুদ্রাগুলো কেটে নিয়ে যেত; অথচ মুদ্রাবহনকারী টেরও পেত না!
এই যে গোপন পকেটের কথা বলা হলো, তাতে কি জলজ্যান্ত কোনো সাপ ঢুকে পড়তে পারে? বাস্তবেই যদি কারও হাতায় সাপ ঢুকে পড়ে; আর সে তা টের না পায়, তাহলে তার চেয়ে উদাসীন কেউ হতে পারে? তার ধ্বংস কতটা কাছে, তা কি বলার অপেক্ষা রাখে? এদিক বিবেচনায় রেখেই উর্দুতে একটি মজার প্রবাদ হচ্ছে, ‘আস্তিনে সাপ পোষা।’ তবে প্রবাদটির মর্মার্থ হচ্ছে, নিজের ঘর বা বন্ধুমহলে শত্রুকে স্থান দেওয়া, আপন সমাজ ও দেশে গাদ্দারদের অবাধে চলাফেরা করতে দেওয়া। (বিশ্বাসঘাতকদের ইতিহাস) ইতিহাস সাক্ষী, কালপরিক্রমায় মুসলিম উম্মাহ নিজেদের আস্তিনের সাপদের দ্বারা যতটা দংশিত হয়েছে, বহির্শক্তি দ্বারা ততটুকু হয়নি। এই আস্তিনের সাপদের তালিকা বেশ দীর্ঘ। যখনই জাতি সফল কর্মপন্থা অবলম্বন করে ওদের থেকে সাবধান থেকেছে, ওদের পাকড়াও করেছে, তখনই তারা ধ্বংস ও ক্ষতি থেকে নিরাপদ থেকেছে; আর যখনই তারা ওদের ব্যাপারে উদাসীন থেকেছে, তখনই ধ্বংস হয়েছে তাদের ললাট-লিখন।
উম্মাহর বড় বড় সাম্রাজ্য ওই গাদ্দারদের হাতেই ধ্বংস হয়েছে। সবচেয়ে আফসোসের কথা হচ্ছে, দেখা গেছে অনেক সময় আমরা ওই সাপগুলোকে দুধ-কলা খাইয়ে লালনপালন করেছি। প্রজ্ঞাবানরা তখন সতর্ক করলেও আমরা মোটেও সতর্ক হইনি। অবশেষে গাদ্দাররা যখন তাদের কুৎসিত চেহারা নিয়ে সামনে এসেছে, তখন আর করার কিছুই থাকেনি।
আপনারা জানেন, একটি বাগানকে ফলে-ফুলে সুশোভিত করে তুলতে যেমন বাগানে পানি সেচ দিতে হয়, সার ছিটাতে হয়, তেমনি বাগানকে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ থেকেও নিরাপদ রাখতে হয়। জাতির গাদ্দাররা এমন বিষাক্ত সাপের মতো, যারা প্রথমে জাতির গা থেকে রক্ত শুষে নেয়, অবশেষে দংশন করে একেবারে মেরে ফেলে।
সে-সকল গাদ্দার থেকে দেশ ও জাতির শিশু-কিশোরদের সতর্ক থাকা ও এর কর্মপন্থা নিয়ে আমি কয়েক বছর আগে বাচ্চু কা ইসলাম সাপ্তাহিকীতে আস্তিন কা সাপ শিরোনামে একটি সিরিজ লিখে আসছিলাম। আমাদের অতি প্রিয়জন বিখ্যাত সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক মরহুম ইশতিয়াক আহমাদ সিরিজটি খুব পছন্দ করেছিলেন। 
সিরিজটি শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা হলেও বড়রাও এ থেকে উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ। বর্তমানে ভাই ফাহিম আলমের বিশেষ আগ্রহ ও কৌতূহলে সিরিজটি গ্রন্থাকারে আসছে। আমি আনন্দিত যে, গ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছেন বাচ্চুকা ইসলাম সাপ্তাহিকীর বিখ্যাত আর্টিস্ট কায়সার শরিফ। নিশ্চয় কাজটি সুন্দর ও সফল হয়েছে। আমরা এ যৌথ প্রয়াসটি এই আবেগ বুকে নিয়ে জাতির কিশোর ও তরুণদের হাতে তুলে দিচ্ছি, যারা বড় হয়ে যখন এ দেশের বিভিন্ন বিভাগের লাগাম নিজেদের হাতে তুলে নেবে, তখন যেন আস্তিনের সাপগুলোকে মাথা বের করার অবকাশ না দেয়। দেশ যাতে সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যপানে এগিয়ে যায়, যে লক্ষ্য সামনে রেখে তা প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। তারা যেন এ দেশে ইসলামকে সফলভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
মুহাম্মাদ ইসমাইল রেহান
১২ জিলকাদা ১৪৪০ – ২৫ জুলাই ২০১৯
বিশ্বাসঘাতকদের ইতিহাস Original Copy
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?