- বই : বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর পিডিএফ (পরিবর্ধিত সংস্করণ)
- লেখক : ড. তারেক শামসুর রেহমান
- প্রকাশনী : শোভা প্রকাশ
- বিষয় : রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বিবিধ
- পৃষ্ঠা : 352, কভার : হার্ড কভার
- আইএসবিএন : 984700841189, ভাষা : বাংলা
“বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর” শুরুটা করেছিলাম অনেক আনন্দ নিয়ে, কিন্তু শেষটা আনন্দময় ছিল না। কারণ, প্রতিটা অধ্যায়ের বিশালত্ব(ভাবে)-এর কারণে মস্তিষ্ককে একটু বিরতি দিয়ে দিয়ে পড়তে হয়েছিল। বইটিতে যে যে বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেই সম্পর্কে আগে একটু একটু জানা ছিল। ফলে, বিষয়গুলো বা ঘটনা পরিক্রমা বুঝতে কষ্ট হয়নি। নাহলে, হয়তো সব মাথার ওপর দিয়ে চলে যেত মনে হয়।
বিশ্বরাজনীতির ১০০ বছর বইয়ে লেখক প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বতর্মান পর্যন্ত, বিশ্বে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করেছেন। বইটি মার্ক্সবাদ বা সমাজতন্ত্রের উত্থানপতন সম্পর্কে বিশ্লেষণটা ভালো লেগেছে আমার। পুর্ব ইউরোপে সমাজতন্ত্র উত্থান, চীনে মাও-এর কৃষকগোষ্ঠী দ্বারা বিপ্লব, কিউবায় সমাজতন্ত্রের উত্থানের ঘটনা প্রবাহ ভালোভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন লেখক। আর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ বা নাৎসিবাদ সম্পর্কে আলোচনাও রয়েছে। তবে, আরেক বিষয়ে ভালো বিশ্লেষণ করা হয়েছে, আফগানিস্তান সংকট এবং উপসাগরীয় যুদ্ধ (ইরাক সংকট)।
থ্রিলার
তাছাড়া, জাতিসংঘ, WTO, EU-এর প্রতিষ্ঠা এবং আমেরিকান প্রভাব নিয়ে সামান্য আলোচনা রয়েছে। জাতিসংঘকে পশ্চিমারা নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতেছে-এই ধরনের কয়েকটা লাইন উল্লেখ থাকলেও বিস্তর আলোচনার প্রয়োজন ছিল কিন্তু সেই আলোচনা আনেন নাই তার বইয়ে। তবে,
রুশ বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লব এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থানের কারণ এবং পতনের কারণ সম্পর্কে পরিষ্কার আলোচনা রয়েছে। কেউ জানতে আগ্রহী হলে, এই বইটি পড়তে পারেন।
এই বইয়ে ঊনবিংশ অধ্যায়টার বিশ্লেষণ সবচেয়ে সুন্দর লেগেছে। অধ্যায়ের নাম- “সভ্যতার সংকট ও নয়া বিশ্বব্যবস্থার স্বরূপ”; এই অধ্যায়ে হানটিংটনের লেখা “Clash of Civilizations” এর সুন্দর সংক্ষিপ্ত ব্যাখা দিয়েছে লেখক। স্নায়ুযুদ্ধে পরবর্তীতে বর্তমান বিশ্ব নতুন এক সংকটের দিকে মোড় নিয়েছে, তা “সভ্যতার সংকট”। হানটিংটন তার লেখায় বর্তমানে ৮টি সভ্যতার কথা বলেছেন। তার মতে, “কোন আর্দশিক দ্বন্দ্ব বা অর্থনীতি আগামী দিনে নতুন করে সংকটের জন্ম দিবে না। বরং সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব এই সংকটের জন্ম দেবে।” আমার মনে হয়, উক্ত ৮টি সভ্যতার মধ্যে ইসলামিক সভ্যতা বা মুসলিম সভ্যতা অন্যতম শক্তিশালী সভ্যতা; যা পশ্চিমা সভ্যতার জন্য হুমকি স্বরূপ। তারেক শামসুর তার বইয়ের উক্ত অধ্যায় বলেছে, “এটা স্পষ্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানরা আজ আক্রান্ত হচ্ছেন। আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন, সোমালিয়া সর্বত্রই আজ মুসলমানরা আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু। মুসলমানরাই আজ টার্গেট হচ্ছেন (পৃ.২৬৯)।”
তারেক শামসুর রেহমানের এই বইটি অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে বাজারে। আমি প্রশংসা করেতে চাই। বিশ্বরাজনীতি বুঝার প্রাথমিক লেভেলের জন্য এই বই পড়া জরুরী। কারণ, গত শতকের আন্তর্জাতিক ঘটনা প্রবাহের পরিষ্কার বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই বইটি। সুতরাং আপনি চাইলে বইটি পড়তে পারেন।
তবে, কিছু ঘটনার বিস্তর বিচার বিশ্লেষণ প্রয়োজন ছিল। যেমন, সোভিয়েত পতন বা সমাজতন্ত্রের পতনে পশ্চিমাদের যে ষড়যন্ত্র তার বিস্তর বিশ্লেষণ করলে পাঠকসমাজ আরো পরিষ্কার ধারণা পেত।
বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর গ্রন্থটি মূলত বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে সংঘটিত হওয়া ঘটনাবলির একটি সংকলন। বিংশ শতাব্দীর যে বিষয়গুলো বিশ্ব রাজনীতিতে আলোড়ন তুলেছিল, তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে গ্রন্থটিতে। বিশেষ করে দু’দুটো বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের পতন পর্যন্ত প্রতিটি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। চীনের সংস্কার কর্মসূচিও আলোচনা থেকে বাদ যায়নি।
বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর গ্রন্থটির দুটো উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হচ্ছে নতুন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও বিশ্ব পরিবেশগত সমস্যা। বিংশ শতাব্দীতে এই দুটো বিষয় বিশ্ব রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ভূমিকা, বাণিজ্যজোট হিসেবে এদেশের ভূমিকা সঙ্গত কারণেই তাই আলোচনা করা হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ব পরিবেশগত সমস্যা শীর্ষক অধ্যায়ে স্থান পেয়েছে বিশ্বের উষ্ণতারোধ সংক্রান্ত কিয়োটো চুক্তি থেকে শুরু করে সর্বশেষ প্যারিস সম্মেলনের বিষয়টি পর্যন্ত। বাংলাদেশের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিধায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গটি আলোচনা করা হয়েছে। ‘সভ্যতার সংকট’ বিশ্ব শতাব্দীর শেষ দিনগুলোতে আলোচনার ঝড় তুলেছিল। এটা বিবেচনায় নিয়েই ঊনবিংশ অধ্যায়ে ‘সভ্যতার সংকট’ ও নয়া বিশ্ব ব্যবস্থার স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। গ্রন্থটিতে প্রচুর সারণি ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে পাঠকরা ওইসব উপাত্ত ও তথ্য নিয়ে বিংশ শতাব্দীতে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা বিশ্লেষণ করতে পারবেন।
বিশ্বরাজনীতির ১০০ বছর গ্রন্থটি মূলত রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্রদের জন্য একটি রেফারেন্স বই। একই সাথে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা গ্রন্থটি পাঠ করে উপকৃত হবেন। সাধারণ পাঠকরাও বইটি পড়ে বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন।
প্রাক্কথন : ঊনবিংশ শতাব্দীর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি
History is not, of course a cookbook offering pretested recipes. It teaches by analogy, not by maxims. It can illuminate the consequences of actions in comparable situations, Yet each generation must discover for itself what situations are in fact comparable.
Henry Kissinger
বিংশ শতাব্দীতে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি, যা কিনা ছিল ঊনবিংশ শতাব্দীতে সংঘটিত ঘটনাবলিরই প্রতিফলন। বিশেষ করে বিভিন্ন মহাদেশে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবিস্তার, ইউরোপে ব্যাপক শিল্পায়ন, শ্রমিক আন্দোলন, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের বিস্তার, কট্টর জাতীয়তাবাদী নীতি ইত্যাদি নানা কারণ পরবর্তী শতাব্দীর ঘটনাপ্রবাহের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। সুতরাং বিংশ শতাব্দীতে যেসব উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে, তা বুঝতে হলে ঊনবিংশ শতাব্দী সম্পর্কেও আমাদের ধারণা থাকতে হবে। ঊনবিংশ শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যের বিস্তার। ব্রিটেন, ফ্রান্স, হল্যান্ড, স্পেন ও পর্তুগাল ওইসময় তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি, শিল্পের জন্য কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য দক্ষিণ এশিয়া তথা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, ল্যাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকাতে তাদের সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটিয়েছিল। যে কারণে ১৮৭০ সাল থেকে ১৯১৪ সালের সময়সীমাকে বলা হয় Age of [Imperialism অথবা ‘সাম্রাজ্যবাদের যুগ’। ধর্ম প্রচারকরা ওই সময় একটি বড় ভূমিকা পালন করেন। আফ্রিকায় ধর্ম প্রচারকে তারা বিবেচনা করতেন একটি মহান কাজ হিসেবে।
উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর প্রথম কিছুদিন পর্যন্ত ইউরোপীয় শক্তিগুলো তাদের সাম্রাজ্যবিস্তার অব্যাহত রেখেছে এশিয়া ও আফ্রিকাতে । ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৭৬৩ সালে ইংরেজদের কাছে কর্নাটকের তৃতীয় যুদ্ধে *াজিত হয়ে ফ্রান্স ভারত সম্পর্কে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আর ১৭৬৩ সালের পর পুরো ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদে জয়যাত্রা শুরু হয়। ১৮৪০-৪২ সালে চীনে ‘আফিম যুদ্ধ-এর মধ্য দিয়ে সেখানে সাম্রাজ্যবাদীর শক্তির আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। আফ্রিকাকে বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর-২
একসময় বলা হতো Dark Continent বা অন্ধকার মহাদেশ। প্রথম দিকে (১৫৬২) দাস ব্যবসার কারণে আফ্রিকাতে ইউরোপীয় শক্তির আগমন ঘটেছিল। ১৮০০ সাল পর্যন্ত দুটি ঔপনিবেশিক শক্তি (হল্যান্ড ও পর্তুগাল) আফ্রিকাতে তাদের উপনিবেশ গড়েছিল। পরে ফ্রান্স ও ব্রিটেন এই অঞ্চলে আসে। ইতালি এই অঞ্চলে এসেছিল অনেক পরে (ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া, সোমালিল্যান্ড)। আর জার্মানির উপনিবেশ ছিল সীমিত (দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকা, টোগো, ক্যামেরুন)। অন্যদিকে বেলজিয়াম কঙ্গো উপত্যকা দখল করে ওই অঞ্চলে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। ইউরোপীয় শক্তিগুলোর সাম্রাজ্যবিস্তারের কারণে খোদ ইউরোপে ধীরে ধীরে উগ্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জন্ম হয়েছিল। এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিংশ শতাব্দীর রাজনীতির উত্থান-পতনে যথেষ্ট প্রভাব খাটায়
চীনে বক্সার বিদ্রোহের (১৯০০) সুযোগ নিয়ে চীনের বিনা অনুমতিতে রাশিয়া মাঞ্চুরিয়া দখল করে। আর এভাবেই রুশ-জাপান যুদ্ধ শুরু হয় (১৯০৪-০৫)। ওই যুদ্ধকে ইউরোপীয় যুদ্ধ বলে বিবেচনা করা হয় না। মূলত, ১৮৭১-১৯১৪ সাল পর্যন্ত সময় ছিল ইউরোপে সামরিক প্রস্তুতির যুগ। ১৮৭০-৭১ সালে অনুষ্ঠিত সেডানের যুদ্ধ ইউরোপের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে সংঘটিত ওই সেডানের যুদ্ধ পরবর্তীতে গোটা ইউরোপকে প্রভাবিত করেছিল। সেডানের যুদ্ধ ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে চরম শত্রুতা সৃষ্টি করে এবং ফ্রান্স ওই যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল। ফলে, জার্মানির রাজধানী বার্লিন ইউরোপের রাজনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়। ওই সময়ে জার্মানির চ্যান্সেলর বিসমার্ক (১৮৭০-১৮৯০) কেবল ফ্রান্সকে পরাজিতই করেননি বরং গোটা ইউরোপের রাজনীতি থেকে ফ্রান্সকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিলেন। ইংল্যান্ড ওইসময় নিজেকে ইউরোপীয় রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য নিসঙ্গতার নীতি গ্রহণ করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিসমার্ক ইউরোপের অপর দুই বৃহৎ শক্তি রাশিয়া এবং অস্ট্রিয়ার সাথে মৈত্রীব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। ১৮৯০ সালে বিসমার্কের পতন ঘটলে তাঁর মৈত্রীব্যবস্থারও ইতি ঘটে এবং ফ্রান্সের বিচ্ছিন্নতারও অবসান ঘটে । ফ্রান্স ওই সময় রাশিয়ার সাথে মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ হয়।
১৮৯৭ সাল থেকে জার্মানির পররাষ্ট্রনীতির যে বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় তাতে দেখা যায় যে, বিশ্বরাজনীতিতে জবরদস্ত শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা এবং জার্মানির আন্তর্জাতিক মর্যাদা বৃদ্ধিকল্পে ঔপনিবেশিক নীতি গ্রহণে জার্মানি গভীরভাবে আগ্রহী ছিল। এছাড়াও জার্মানি তার নৌশক্তি সম্প্রসারণে যে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করে তাতে ইংল্যান্ড যথেষ্ট শঙ্কিত হয়ে পড়ে। ফলে ইংল্যান্ড দীর্ঘদিনের নিসঙ্গতা নীতি পরিহার করে ফ্রান্সের সাথে “আঁতাত কর্ডিয়েল” (১৯০৪) বা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১৯০৭ সালের আগস্ট মাসে ইঙ্গ-রুশ কনভেনশন সম্পাদিত হয়। এভাবে “আঁতাত কর্ডিয়েল” এবং ইঙ্গ-রুশ কনভেনশনের মাধ্যমে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও রাশিয়া পরস্পরের যে কাছাকাছি এসেছিল তাই “ট্রিপল আঁতাত” নামে পরিচিত। রাজনীতিতে এই “ট্রিপল আঁতাত”-এর পাশাপাশি ইউরোপে ব্যাপক শিল্পায়ন ও শিল্পায়নের ফলে শ্রমিকশ্রেণীর আন্দোলন সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা এবং সেই সঙ্গে উগ্র জাতীয়তাবোধ বিংশ শতাব্দীর রাজনীতিকে পুরোপুরিভাবে পাল্টে দেয়।
প্রাক্কথন : ঊনবিংশ শতাব্দীর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি
অধ্যাপক রিচার্ড গফ ( Richard Goof), ওয়াল্টার মস (Walter Moss), জেনিস টেরী (Janice Terry) এবং অধ্যাপক জিউ হুয়া উপসুর (Jiu-Hwa-Upshur) তাঁদের গ্রন্থ The Twentieth Century: A Brief Global History-তে পাঁচটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন, যা বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসকে পরিচালিত করেছিল । ওই পাঁচটি ঘটনা হচ্ছে, রাইট ভাইদের এরোপ্লেন আবিষ্কার, ভারতে দুর্ভিক্ষ (১৮৯৯ ১৯০০), প্যারিসে এম্মা গোল্ডম্যানের কর্মকাণ্ড ও তার দর্শন, চীনে বক্সার বিদ্রোহ এবং জার্মান দার্শনিক নিৎসের মৃত্যু (পৃষ্ঠা : ৫)। চীনে ১৯০০ সালে ‘মুষ্টিযোদ্ধা’ (Boxer) ভ্রাতৃসংঘের দ্বারা যে সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছিল, তা ইতিহাসে ‘বক্সার বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। ওই বিদ্রোহ মূলত পরিচালিত হয়েছিল বিদেশি আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে এবং তা ছিল দেশাত্মবোধ ও জাতীয় চেতনারই প্রতিফলন। ওই বিদ্রোহ ‘ব্যর্থ’ হলেও তা ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করেছিল সংস্কারের পথে যেতে। চীনে ১৯১১ সালে সান ইয়াৎ সেনের নেতৃত্বে যে গণবিপ্লব (জাতীয়তাবাদী আদর্শ, গণতান্ত্রিক চেতনা ও জনগণের জীবনের মান উন্নয়ন) অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তার পেছনে ‘বক্সার বিদ্রোহ’ ছিল একটি অনুপ্রেরণা। অন্যদিকে, মিস গোল্ডম্যান ছিলেন নৈরাজ্যবাদী। তিনি নিজেকে মনে করতেন সকল নির্যাতিত মানুষের মুখপাত্র হিসেবে।
একইসাথে তিনি ছিলেন প্রচণ্ড নারীবাদী। তাঁর লেখনীতে তিনি বারবার নারী স্বাধীনতার কথা বলেছেন। এম্মা গোল্ডম্যান যুক্তি দেখাতেন ‘a woman had the right to support herself; to live for herself; to love whomever she pleases, or as many as she please ‘ (Alice Waxler, Emma Goldman: An Intimate Life, New York, 1984, P. 94 ) । নৈরাজ্যবাদ এবং নারীবাদই পরবর্তীকালে বিংশ শতাব্দীতে একটি মতাদর্শ হিসেবে বিকশিত হয়।
অধ্যাপক গফ, মস, টেরী ও উপসুর বলার চেষ্টা করেছেন যে, ভারতে ১৮৯৯ ১৯০০ সালে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যা ছিল বিংশ শতাব্দীর রাজনীতির বিকাশে অন্যতম একটি ফ্যাক্টর। আর নিসের দর্শন ছিল তাঁর আমলের ‘ধর্মীয় অনুশাসনের’ বিরুদ্ধে একটি বড় প্রতিবাদ । তিনি পশ্চিমা সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারে ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছিল, যখন আফ্রিকার ‘কালো মানুষ’ ‘শিক্ষিত’ করার ‘মহান দারিত্ব নিয়ে ধর্ম প্রচারকরা আফ্রিকায় তাদের কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ঘটিয়েছিলেন, তখন জার্মান দার্শনিক নিৎসের (Nietzsche ) লেখনীতে এর সমালোচনা করা হয়েছিল। নিংসে তথাকথিত গণতন্ত্রকে ঘৃণা করতেন। গণতন্ত্রে যে সমতার কথা বলা হয়, তা চিত্র পছন্দ ছিল না। তিনি ভবিষ্যতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা, বিপ্লব, যুদ্ধ ও সংঘর্ষের বিষ্যত্ববাণী করেছিলেন। মোটকথা, ঊনবিংশ শতাব্দীর নানা ঘটনাবলি, নানা দর্শন শতাব্দীতে এসে বিংশ শতাব্দীর ঘটনাবলিকে প্রভাবিত করে।
blog
‘বেদে’ নামক নিবন্ধে সৈয়দ মুজতবা আলী প্রথমেই একটু ভূমিকা টেনেছেন।
Tuhin Khan এর অনুবাদে ইতালো ক্যালভিনোর ‘গায়েবি শহর’ আসছে বৈভব থেকে…
অবচেতন মন লেখক : ডাঃ মোঃ আবেদুর রহমান । Abocheton Mon
অভিমানে অনুতাপে – সাবের চৌধুরী
অসুখী দাম্পত্য জীবনে সুখ ফিরিয়ে আনার উপায়
আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন পূরণের দান – sean
আপনি কার দলে? এ প্রশ্নের চাইতে ‘আপনি কে? এই প্রশ্ন বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
একজন জহির রায়হান – তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, গল্পলেখক, চলচ্চিত্রকার, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং ভাই
একজন নারী যেমন স্বামী পছন্দ করে
একটি শব্দ এবং আমাদের আজকের মনোজগত
কুরআন থেকে নেওয়া জীবনের পাঠ-১১ – আরিফ আজাদ
কেন বই ভালোবাসি ? বই ভালোবাসার কিছু কারণ! – সিরাজাম বিনতে কামাল
গ্রন্থাবলি
অতুল চন্দ্র রায়, আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস, কলিকাতা, ১৯৯৫ কিরণ চন্দ্র চৌধুরী, আধুনিক ইউরোপ, কলিকাতা, ২০০৪
Richard Goff, Walter Moss, Janice Terry, Jiu-Hwa-Upshur. The Twentieth Century A Brief Global History, Boston – New York. 1998.
The 100 Years Of World Politics PDF Bangla Download For Free
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?