বিবর ছাড়াও মেহনাজের জীবনে আর একজন আছে
Title | বিবর ছাড়াও মেহনাজের জীবনে আরেকজন আছে |
Author | সুস্ময় সুমন |
Publisher | গ্রন্থরাজ্য |
Quality | হার্ডকভার |
ISBN | 9789849573661 |
Edition | 1st Published, 2022 |
Number of Pages | 200 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
বইয়ের নাম দেখেই কেমন একটা নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ গন্ধ পাওয়া যায়, তাই না? একটা সুড়সুড়ি সুড়সুড়ি ভাব…অনৈতিক আর অশালীন কিছু একটার লালসাময় ইঙ্গিত….
এইসব ইঙ্গিতপূর্ণ আতলামির চেয়ে সরাসরি বলাই ভালো…পরকীয়া, অবিশ্বস্ততা অথবা নিষিদ্ধ যৌনতার ইঙ্গিত। বইয়ের নাম দেখে এসব “পচা পচা কথা” মনের ভেতর উঁকি দেয়াটা খুবই স্বাভাবিক।
কিন্তু বইটা পড়ার পর, আই মিন মেহনাজের জীবনে ঘাপটি মেরে থাকা গোপন অস্তিত্বটার পরিচয় জানার পর, বিশিষ্ট লেখক গুপ্তদা’র ফ্যান রা বইয়ের জনরায় চরম মাত্রায় হতাশ হবেন।
আর যারা পোড় খাওয়া পাঠক, তারা – লেখক সুস্ময় সুমন – এর নাম শুনেই ধরে ফেলবে বইটার আসল জনরা – সাইকো থ্রিলার অথবা হরর থ্রিলার। কারণ, এদুটি জনরায় ইতিমধ্যেই নিজের লিখনশৈলী দিয়ে একটা পাকাপোক্ত জায়গা করে নিয়েছেন লেখক। তবে সত্যি কথা বলতে কি, আমার ধারণা, মেহনাজের জীবনে বিবর ছাড়াও আর কে আছে জানার পর – তার ডাইহার্ড ফ্যান রাও হতাশ হবে, গুপ্তদার ফ্যানদের মতই চরম মাত্রার হতাশ।
নাম যাই হোক কিম্বা নামে কিই বা এসে যায়…বইয়ের গল্পটা কিন্তু জোস ছিলো। প্রেম, পরকীয়া, অপরাধ আর অতিপ্রাকৃত – দুর্দান্ত কম্বিনেশন। সাথে যোগ হয়েছিলো লেখকের সহজাত লেখার ক্ষমতা এবং সাবলীলভাবে গল্প বলার দক্ষতা। বাস্তবতার সাথে অসাধারণ মিল রেখে চরিত্রগুলো তৈরী করেছেন তিনি এবং তাদের মুখে তুলে দিয়েছেন যথোপযুক্ত ন্যাকামিমুক্ত সংলাপ৷ টান টান উত্তেজনাপূর্ণ গল্পে ভয়ের এবং অস্বস্তিকর আবহ তৈরী করতে সুস্ময় সুমন সিদ্ধহস্ত৷ কিছু কিছু অধ্যায়ে দ্রুত পৃষ্ঠা উল্টে গেছি শুধু ভয়টা কাটানোর জন্যে৷ অথবা বলা যায়; ভয়ের বিপরীতে একটা ব্যাখ্যা খোঁজার আশায়৷
নারী পুরুষের স্বভাবজাত নিষ্পাপ ভালোবাসায় যখন বিকৃত শরীরী মোহের টানে ভাটার টান ধরে তখন মানব মনের অবচেতনে যে ভয়াবহ হিংসা, ক্রোধ আর আক্রোশের দানব তৈরী হয়, সেই দানব আর অতিলৌকিক দানবের মাঝে খুব বেশি কি পার্থক্য? লেখক নিজে মিডিয়া জগতের হয়েও সে জগতের কিছু কিছু মানুষের নোংরামি আর স্বার্থপরতা – গল্পের প্রয়োজনে উল্লেখ করেছেন সাহসিকতার সাথে৷
বইটা এক বসাতেই শেষ করেছি৷ আগেই বলেছি ক্লাইম্যাক্সটা হতাশাজনক৷ ফিনিশিং টাও তাই৷ সুপার প্রেডিক্টেবল৷ বইয়ের পাত্র পাত্রী, ঘটনা – লেখকের অন্যান্য বই থেকে আলাদা হলেও পড়ার সময় রিপিটেশনের একটা অনুভূতি খোচাচ্ছিল৷ পরে মনে হলো সব আলাদা হলেও হরর এলিমেন্টগুলো তার অন্য কোন বইয়ের সাথে অলমোস্ট সেইম ছিল৷ সেই মাংস পঁচা গন্ধ, শুড় ওয়ালা মাংসের দলার মতো নরকের কীট, যার মধ্যে আবার পিট পিট করা অসংখ্য চোখ!! খুবই পরিচিত ভিলেন৷ কিন্তু ভয়ংকর ভিলেন – সন্দেহ নেই৷ শুধু আফসোস, যতবারই সে তার শুড় বাড়িয়ে কোন না কোন ভিকটিমের পা কিম্বা গলা চাটতে নেয়, ততবারই কেউ না কেউ বেরসিকের মত দেখে ফেলে আর “কলিজা মুখে তুলে” বিকট চিতকার দেয়৷ আফসোসের উপরে আফসোস৷
অতিপ্রাকৃত গল্পে অসংগতি ধরতে যাওয়াটা বোকামি, তারপরেও কিছু বলি৷ শুধু কয়েকরাত দু:স্বপ্ন দেখেই নিজের বিয়ে ফেলে এতগুলো বছর পর শৈশবের ক্রাশের বাসায় এসে উপস্থিত হওয়া ঠিক যুতসই হলো না৷ বোঝাই যাচ্ছিল জোর করে হতভাগা পিপিলীকাটার পাখা গজানো হচ্ছে ট্রাকের তলে ফেলবার জন্যে৷ গ্রামের টিপিক্যাল জরিনা বেগমের পুত্রের নাম বিবর হওয়াটা বেশ ড্রামাটিক কিন্তু অবাস্তব৷ কারণ তার বাবা যে বাংলা সাহিত্যের ইন্টেলেকচুয়াল এমন প্রমাণ বইয়ে কোথাও পাইনি৷
আরেকটা চরিত্র তৈরী করেছেন লেখক, থার্ড ক্লাস যার স্বভাব, নাম অতল খান৷ বন্ধুদের থেকে ফাও খাওয়া থেকে শুরু করে নারী সাপ্লাই সব ধরনের ফাত্রামিতেই সে অভ্যস্থ৷ এমন কি মাত্র পাওনা ২০০০ টাকার জন্যে ফেসবুকে এক লোকের চরিত্র হনন করার মতো ছোটলোকিও সে করেছে৷ বাস্তবের কোন ঘটনার সাথে মিল খুজে পাওয়া অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র৷ পাওনা টাকাটা মাত্র ২০০০ হলেও পাওনা তো পাওনাই৷ হকের টাকা৷ এই কয়টা টাকার জন্যে ফেসবুকে পোস্ট দেয়াটা ছ্যাবলামি হলে, ওই লোক কত বড় ফাত্রা যে দিনের পর দিন এই কয়টা টাকা নিয়ে ঘুরায়? তাই অন্তত এ ক্ষেত্রে ছ্যাবলা অতল; বেনিফিট অব ডাউট পেতেই পারে আমার মতে৷
যাই হোক, বইটা সুস্ময় সুমনের নতুন পাঠকদের বেশ ভালো লাগবে৷ পরিচিত হতে পারবে তার সিগনেচার স্টাইলের সাথে৷ ভয় আর অস্বস্তির একটা ভিন্ন অনুভূতির সাথে মোলাকাত হওয়াটাও একটা ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা, তাই না?