ত্রিজিৎ করের এখনও অবধি যতগুলো লেখা আমি পড়েছি, ‘বিট্টালিনী’ তাদের থেকে কিছুটা আলাদা।
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুদীপ চায় বেস্টসেলার লেখক হতে, চায় তাকে নিয়ে চরম উন্মাদনা হোক পাঠকদের মধ্যে। ফেসবুক-প্রিয় বাঙালি বইপ্রেমীদের পরবর্তী সেন্সেশন হয়ে ওঠাই তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলে দিয়ে এ বছরের ‘সেরার সেরা বার্ষিক সাহিত্য সম্মান’টা নিয়ে চলে গেলো আরেক তরুণ লেখক অরিজিৎ ভদ্র। এই অপমান কিছুতেই চুপচাপ মেনে নিতে পারে না সুদীপ। সাফল্যের অনেকগুলো ধাপ একলাফে ডিঙিয়ে যাওয়ার আকাঙ্খায় সে শুরু করে ভয়ংকর দেবী বিট্টালিনীর সাধনা।
এই বিট্টালিনী কে? কি তার ইতিহাস? কেন এত ভয়ংকর তার সাধনা? এই সব প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে উপন্যাসের পাতায়। তিন ভিন্ন সময়ে তিন ভিন্ন সাধক এই দেবীর সাধনায় রত হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত কি হলো এর পরিণাম এবং কিভাবে শেষ হলো তাদের কাহিনী জানতে হলে শেষ পাতা অবধি না পড়ে উপায় নেই।
বর্তমান সময়ের যে কোনো তন্ত্র ভিত্তিক অলৌকিক উপন্যাসের প্রিয় subject বজ্রযান ধর্ম এবং সেই তন্ত্রের দেবদেবীদের উল্লেখ এই লেখাতেও এসেছে। তবে ত্রিজিৎ বাবুর অন্যান্য লেখায় যে ভয়ের আবহটা তৈরি হয়, যা কি না বলতে গেলে তার লেখনীর প্রধান বৈশিষ্ট্য, সেটা এখানে অনেকাংশে অনুপস্থিত। তার বদলে ইতিহাস ও তন্ত্রের তত্ত্বভিত্তিক আলোচনা অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ভয় একদমই লাগেনি। বইয়ে সাধনার ভয়ংকর সব আচার, এবং নৃশংসতার বর্ণনা রয়েছে যা অনেক ক্ষেত্রে একটু বেশিই vulgur মনে হয়েছে। সেটা নিয়ে আপত্তি করতাম না, যদি সেগুলো অপ্রয়োজনীয় না মনে হতো। অনেক সময়েই এরকম লেগেছে যে শুধুমাত্র পাঠককে একটা shock দেওয়াই ঘটনাপ্রবাহের মূল উদ্দেশ্য।
আসলে গল্পের সূত্রপাতের কার্যকারণটাই আমার একদম বিশ্বাসযোগ্য লাগেনি। কাহিনী থেকে বোঝা যায় যে সুদীপের অফুরন্ত টাকাপয়সা আছে এবং অসাধু লোকেদের সাথে চেনা পরিচিতিও আছে। সেখানে বেস্টসেলার লেখক হওয়ার আর কোনো রাস্তা না ভেবে সে এমন একটা উদ্ভট এবং নিশ্চিতভাবে ধ্বংসাত্মক রাস্তা নেওয়ার কথাই কেন ভেবে বসলো এইটা আমার মাথায় এলো না। আর শুরুতেই তাল কেটে গেলে যেকোনো গল্পেই মন বসানো খুব মুশকিল। এটাও মনে হলো যে লেখক শেষ অবধি স্থির করতে পারেননি যে সুমিতকে হতভাগ্য, সহানুভূতি পাওয়ার যোগ্য চরিত্র হিসেবে দেখাবেন নাকি ঈর্ষাকাতর নরপশু যে স্বার্থসিদ্ধির জন্য যা খুশি করতে পারে এরকম চরিত্র হিসেবে দেখাবেন।
খুব বেশি গভীরে গিয়ে খারাপ খুঁজে খুঁজে বের করতে চাইনা আমি। মোটের ওপর বইটি তেমন একটা ভালো লাগেনি। মনে হয় লেখকের প্রথম দিককার লেখা। ঠিকঠাক জমলো না।
বইটিতে পাতায় পাতায় প্রচুর ফাঁকা জায়গা ব্যবহার করা হয়েছে। ঠিকঠাক ভাবে page setup করলে সম্ভবত আরো দশটা পাতা কমে শেষ করা যেত। এর কারণটা বুঝলাম না। দামটাও বই হিসেবে অনেকটাই বেশি মনে হলো। আপনি যদি ত্রিজিৎ করের লেখার মোটামুটি ভক্ত হন, এই বইটি না পড়লেও চলবে বলেই আমার মনে হয়। খুব ভক্ত হলে নিশ্চয়ই পড়বেন।
বিট্টালিনী
– ত্রিজিৎ কর
খোয়াই পাবলিকেশন
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?