বিজয়ী কাফেলা by Noor Mohammad Abu Taher.

বিজয়ী কাফেলা বইটির আদ্যোপান্ত শেষ করে মনে হলো গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স এর এটি একটি দুরন্ত প্রকাশনা। বইটির বিশেষত্ব এটিই যে, বইটিতে একসাথে পবিত্র কুরআনের দলিল সংযুক্তি করা হয়েছে সত্য-মিথ্যা দু’টিরই পরিচিতি দিয়ে। পরম্পর বিপরীতার্থক  সমাজের দু’রকম অনুসারীর ভিন্ন দলিল একসাথে প্রদান করে স্বচ্ছ করা হয়েছে।

     ✌ ভালো লাগার ব্যাপারটির মধ্যে রয়েছে বইটিতে গোটা মুসলিম উম্মাহর সমস্যা আর উত্তরণের পন্থা অতি সংক্ষেপে কমান্ড করার আবহে বর্ণিত হয়েছে। ড. ইউসুফ আল কারজাভি বর্তমান সময়ের একজন টপ লিস্টেট আলেম। উনারা জাতির এই ক্রান্তিকালে কমান্ড করার মতই মুসলিম জাতির সাড়া জাগানিয়া হুঙ্কার ছাড়ার যথেষ্ট যোগ্যতাও রাখেন।

>সবচে’ বেশি ভালো লেগেছে প্রকৃত মুসলিমদের চরিত্র সম্পর্কে ৬০ পৃষ্টায় করা এ মন্তব্যটি–

  “তারা পাপাচারীদের দেখে, যেমনটা ডাক্তার রোগীকে দেখে। পুলিশি দৃষ্টিতে দেখেনা। কখনোই কোনো পাপাচারীকে কাফির বলতে যায়না, পাছে সে মুরতাদ হয়ে যায়! তারা কখনোই বলেনা, মানুষ ধ্বংস হয়ে গেছে। অন্যদের অপবাদ দিতে যায় না। নিজেদের ভালো ও উত্তম বলে দাবি করে না।”

    » দেখুন, মু’মীন ব্যক্তি যেখানে মুরতাদ (স্ব-ধর্ম পরিত্যাগকারী) হয়ে যাওয়ার আশংকায় কোন পাপাচারীকে পর্যন্ত ‘কাফির’ বলেন না সেখানে আমাদের বাংলাদেশের কতিপয় তথাকথিত জুব্বাধারী আলেম অন্য কোন আলেমকে কাফির, বাটপার, চিটার, মাল, ভন্ড, বদমায়েশ, ওহাবী, সুন্নি, মওদূদী, জামাতি ইত্যাদি বলতেই থাকেন হরহামেশা।

      সম্ভবত করোনা ভাইরাস উনাদের জবানে হানা না দিলে আরো বহু রকম গালিগালাজ ডেলিভারি দিতেন! পাপাচারীদের পুলিশের মত করে আমরা না দেখে কেবল দেখি আলেমদেরকেই। তার মানে মু’মীনদের চরিত্রের সাথে আমাদের সম্পূর্ণ-ই বিপরীত, মাশাআল্লাহ্!

    

       আরো বেশি ভালো লেগেছে বইয়ের ৪১ পৃষ্টার এই কলামটি-

    “তারা প্রতি নামাজের মাঝে, একান্তে মোনাজাতে যখন বলে উঠে-

    ‘আমরা আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার কাছেই সাহায্য কামনা করি। আমাদের সৎ পথের দিশা দিন।’-সুরা ফাতিহা: ৫-৬।

    তখন কিছুতেই নিজের, একজনের কথা বলে না; বরং বলে উঠে– ‘আমরা’, ‘আমাদের’! বহুবচন ব্যবহার করার এই উদারনৈতিক মানসিকতা পোষণ করে চলে। এমনকী একাকী প্রার্থনারত হলেও হৃদয়ে রয়েছে সামগ্রিক চিন্তা। তাদের ঠোঁটে উচ্চারিত হয় বহুবচনবোধক শব্দ। আর এভাবে তাদের মনোজগৎ থেকে দূর হয়ে যায় ব্যক্তি-চিন্তা, ব্যক্তি-কেন্দ্রিকতা। তার জায়গায় স্থান করে নেয় জনস্বার্থ, সামগ্রিক কল্যাণ!”

    » উপরের কথাগুলিই মুসলিম সমাজকে উদার, নৈতিক আর পরস্বার্থের প্রতি আরেকধাপ বোধোদয়  জাগাবে। আমরা মুসলিম জাতি আজ কুরআনের প্রথম সুরার অনুপম শিক্ষাটিকেও মন-মগজে আর সমাজে সত্যিকারার্থে প্রয়োগ করছি কিনা! দ্বিধান্বিত এ জাতির সকরুণ পরিস্থিতির প্রকৃষ্ট কারণ হলো- বেশির ভাগই অর্থ না বুঝে কুরআন পড়া আর সালাত আদায় করা।

    আরো ভালো লেগেছে ১২ পৃষ্টার অনুপম কথাটি-

    

“তবে মাঝে মাঝে তাদের আওয়াজ শুনতে পাবে। তাদের বিকট চিৎকার তোমার কান ঝালাপালা করে তুলবে। সেই চিৎকার কোন শত্রুর বিরুদ্ধে নয়; নিজেদের বিরুদ্ধেই। নিজের আপন ভাইয়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠছে তাদের ভোঁতা হাতিয়ার! আর যদি কখনো তাদের বেশ চেতনাদীপ্ত হয়ে বীরদর্পে লড়ে যেতে দেখ, তাহলে বুঝে নেবে, অন্য কোন মুসলিম শাসককে উৎখাত করতে তখন তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। মনে হয় যেন তারা সাহাবাচরিত্রের বিপরীত হওয়ার জন্য গোঁ ধরে বসেছে। কারণ, সাহাবারা ছিলেন—

    ‘কাফিরদের প্রতি অতিশয় কঠোর আর নিজেদের মাঝে পরম কোমল।’ সূরা ফাতাহ:২৯।

অপরদিকে এরা নিজেদের মাঝে খুবই হিংস্র, অথচ শত্রুদের প্রতি সদয়-সহৃদয়; মুমিনদের প্রতি খড়গহস্ত,  কাফিরদের জন্য বিনয়াবনত। যেন কুরআনে বর্ণিত ইহুদিদের গুনাবলি তাদের মুগ্ধ করে রেখেছে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে–

  ‘তাদের নিজেদের মাঝে অন্তর্দ্বন্ধ অতি তীব্র, আপনি মনে করের তারা ঐক্যবদ্ধ। আসলে তাদের হৃদয় বিক্ষিপ্ত। কারণ, তারা এক নির্বোধ জাতি।’ সুরা হাশর: ১৪।

  »বিশ্বাস করুন, লেখাটি পড়ে খুব নির্মমভাবে বুঝতে পারলাম আজ মুসলিম জাতির অবক্ষয়ে পড়ার মূল কারণ। বর্তমান সমাজের সাথে কতটা প্রাসঙ্গিক লেখাগুলি! আমাদের কুরআন অধ্যয়ন এবং তদনুযায়ী জীবন গঠনের এক অনুপম ইঙ্গিত এটি।

 বইটির তিন চতুর্থাংশ জুড়ে অনুবাদকের যথেষ্ট কারিশমা দেখা গেলেও শেষের কয়েকটা বেশ সাদামাটা আলোচনা বলে মনে হয়েছে। (রিভিউতে অনুবাদক এবং প্রকাশনীর দোষ-ত্রুটি তুলে ধরার নিয়ম না থাকলেও বুঝতে পারছিনা এটা মূল লেখকের সাদামাটা আলোচনা নাকি অনুবাদকের খেয়ালিপনা। কেননা, একই লেখকের একটি বইয়ে শেষের দিকে শব্দ চয়ণ/ভাষাশৈলির ঘাটতি হবে এমনটা মনে হয়না!)

  প্রকাশক- Noor Mohammad Abu Taher.

  প্রকাশনী- গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স।

  মূল লেখক- ইউসুফ আল কারজাভি।

  ভাষান্তর – Faruq Azam.

বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?