বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে লেখক : ফাহাম আব্দুস সালাম | Bangalir Mediocritir Shondhane

  • বই : বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে
  • লেখক : ফাহাম আব্দুস সালাম
  • প্রকাশনী : আদর্শ
  • বিষয় : বিবিধ বিষয়ক প্রবন্ধ
  • পৃষ্ঠা : 152, কভার : হার্ড কভার, 
  • সংস্করণ : 1st 1st Published, 2022
  • আইএসবিএন : 9789849656418, ভাষা : বাংলা

ফাহাম আব্দুস সালামের লিখা “বাঙালি মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে” বইটার রিভিউ দিবো ভাবতেছিলাম তখন থেকে যখন ইউটিউবে ফাহাম স্যারের আলাপগুলো দেখা শুরু করছি। বইটায় উনি বেশ কিছু বিষয়ে নিজস্ব যুক্তি তর্ক দাঁড় করাইছেন। যেমন, বাঙালির জাতীয়তাবাদের ফাঁক ফোকর গুলো, ভাষা নিয়ে আমাদের সীমাবদ্ধতার কথা, তারপর আসে সুন্দর-অসুন্দরের আলাপ (ডিডেরো ইফেক্ট অধ্যায়টা ইন্টারেস্টিং লাগছে বেশি আমার), বাঙালির পলিটিকাল স্ফিয়ারের কিছু সেনসিটিভ বিষয়াদি ইত্যাদি। যেসব বিষয়ে লেখক কলম ধরছেন, নিতান্তই সৎসাহসের দরকার ওসব নিয়ে বাক্য ব্যয় করতে গেলে। 

যারা বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে বইটি পড়বেন , তাদের চিন্তা ভাবনার জগতে বইয়ে উক্ত বিষয় গুলো নিয়ে একটু হইলেও পরিবর্তন আসবে বলে মনে করি। অন্ততঃ প্রশ্ন করা শিখবেন নিজ জাতিসত্ত্বার ও ভূখণ্ডের রূঢ় বাস্তবতাকে, নিজের চিন্তার জগতের সীমাবদ্ধতাগুলোকে। বাঙালি জাতিসত্তা একটা স্বাধীন রাষ্ট্র পাওয়ার পঞ্চাশ বছরের মাথায় কোন পথে চলে যাইতেছে তার ছোটখাটো রোডম্যাপও পাইতে পারেন। একটা স্বাধীন রাষ্ট্র পাওয়ার জন্য যে জাস্টিসফুল ন্যারেটিভটা একাত্তরে সামগ্রিক জনগোষ্ঠী হিসেবে এই ভূখণ্ডের বাসিন্দারা তাদের চিন্তা জগতে লালন করেছিল, তার পরিণতি কি হইছে আর ভবিষ্যতে কতটা অপরিণামদর্শী হইতে পারে এখানকার নাগরিক জীবন, তার সম্ভাবনা গুলো ক্যালকুলেট করার মতন ইনসাইট পাইবেন বইটা পড়লে। 
ফাহাম আব্দুস সালামের লেখার সাথে পরিচিত সবাই জানেন যে ফাহাম ভালো লিখতে পারেন। তবে ফাহামের তিনটি গুণ আলাদা করে বলা যায় যা, লিখতে পারেন এরকম বহু লোকের মাঝে আমরা। খুঁজি কিন্তু পাই না।
ফাহাম চিন্তা করতে জানেন। চিন্তার ব্যাপারটা। বুঝতে হলে আমরা কেনেডিয়ান সাইকোলজিস্ট। জর্ডান পিটারসনের কথা ধার করতে পারি। তিনি। বলছেন যে, মানুষ সাধারণত তাদের মাথায় যে। চিন্তাটা আসে সেটা নিয়ে চিন্তা করে না। অর্থাৎ যে কোনো ইস্যুতে একটি সাধারণ ভাবনা তাদের । আসে ঠিকই – কিন্তু সেই প্রাথমিক ধারণাটা কতোটা। উপযুক্ত হয়েছে তা নিয়ে তারা আর চিন্তা করতে পারে না। ফাহাম এই কাজটা পারেন। তিনি পদ্ধতিগত ভাবে চিন্তা করতে পারেন বলে নিজের। ‘ ভাবনাকে ছকে নিতে পারেন। যদি ফাহামের। কোনও চিন্তায় ভুল থাকে তাহলে সেটাও তিনি। পদ্ধতিগত ভাবেই করেছেন। তাই কোথায় ভুল। হয়েছে সেটা ধরিয়ে দিতে পারলে তিনি বুঝবেন।। সবাই বোঝে না।
পইড়া দেইখেন, ভাল্লাগবে। বইটা সম্পর্কে যা বললাম একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত। নিজেরা পইড়া বইটা সম্পর্কে নিজ নিজ চিন্তা ভাবনা বিল্ড করলে আপনার চিন্তার জগতের জন্য সুবিধা হবে। 

বাঙালির বিপ্লব

বাঙালি বারে বারে প্রথম থেকে শুরু করতে চায়। কেননা সে তার পূর্বতর ভুল ও মিথ্যা ভরা অচলায়তনকে প্রশ্ন করতে অপারগ, মোকাবেলা করতে অনিচ্ছুক। সে মনে করে যে নতুন একটা শুরুর মানে হোলো যা কিছু তার কীর্তি, তা সব তামাদি হয়ে যাওয়া। বিশ্বাস তার নিশ্চিত যে ভুলকে ডিজঔন করা হোলো সঠিকত্বের পথে সংক্ষিপ্ততম ও একমাত্র পথ। ধ্বংসই তার চোখে শ্রেষ্ঠ সমতাকারী— তাই ধ্বংস ছাড়া নতুন কিছু শুরু— তার কাছে অলীক ভাবনা।
আঠারো বছরের প্রেমে মোহ, কাম আর ভালোবাসাকে আলাদা করা যতোটা কঠিন তার চেয়ে বেশী কঠিন বাঙালির দেশপ্রেমে ঘৃণা, ন্যায়ের আকাঙ্ক্ষা, সাম্য আর কৌশলী শঠতাকে আলাদা করা। বিপত্তি হোলো, সে আলাদা করার অনিচ্ছার মাঝেই দেশপ্রেমের প্রাবল্য অনুভব করে। তার বুদ্ধিবৃত্তিক আলস্যকে শুদ্ধের প্রতি আসক্তি বলে মনে করে প্রথম থেকে শুরু করার এই ইচ্ছাকে ভক্তি সহকারে নাম দিয়েছিলো ‘বিপ্লব’।
কিন্তু
নিয়োলিবারেলিজমের এই ঘনঘটা কালে ‘বিপ্লব’ শব্দটা ওবিস— বগলের চুলের মতো অশোভন অতিরিক্ত; খুঁজে পেতে হয় তাকে একটা ৩৬-২৪ ৩৬ মাপের শব্দ। বাঙালির চিরদিনের ফ্যান্টাসি তাই নতুনতর এক শব্দে শোভিত হয়: ‘পরিবর্তন’। পরিবর্তনে সব কিছু বদলে যাবে, বদলে যাওয়াটাই ভবিতব্য— ব্য— শুধু তার নিজের আদিপনা ছাড়া।
বাঙালির বিপ্লবের গন্তব্য একটাই: সবাই, সবকিছু তার নিজের মতো হয়ে উঠবে। সমতা আর সাম্যের মানে তার কাছে হোলো কাতারে কাতারে, লাখে লাখে তার নিজের ক্লোন কিলবিল করবে। আর যারা অন্য রকম, অন্য বিশ্বাসের তাদের সে ‘কিল বিলের মতো কচু কাটা করবে। কারণ তার স্বপ্নের মঙ্গল রাষ্ট্রে ভিন্ন মত মানেই বিদূষক, প্রতিবন্ধক। এই প্রতিবন্ধককে টপকানো তার লক্ষ্য না কেননা সেজন্য কসরত করতে হবে— সে চায় কোনো এক শক্তিমান, যার দোষগুলো ঠিক তারই মতো কিন্তু গুণগুলো হবে পৌরাণিক— তিনি এসে এই প্রতিবন্ধক ‘উপড়ে’ দেবেন।
সে বাস করে সমাজে, সে বোঝে সমাজ এবং তার অস্তিত্ব সমাজে পোঁতা কিন্তু স্বপ্ন দেখে রাষ্ট্রের। সে স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তাকে রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা বলে গুলিয়ে ফেলে। কেননা প্রয়োজন বোধ করার আগেই, পলিটি হয়ে ওঠার আগেই— সে পেয়ে গেছে একটা রাষ্ট্র। সে রাষ্ট্রে তার নিজের অওকাদ হোলো প্রজাসুলভ, নাগরিকসুলভ না। নাগরিকের রাষ্ট্রে সুবিধা যেমন আছে, দায়ও আছে অনেক। প্রজার রাষ্ট্রে কোনো দায় থেকে না, থাকে শুধু কর্তব্য আর কিছু প্রিভিলেজ– দুটোই ঊর্ধ্বতনের ঠিক করে দেয়া। নাগরিকের রাষ্ট্র ‘হয়ে ওঠার’ জিনিস, সেখানে সে উপস্থিত থাকে ঔনার হিসেবে। প্রজার রাষ্ট্র ‘করে দেয়ার’ জিনিস, যেখানে সে উপস্থিত থাকে— স্বভাবতই— সুযোগ-সন্ধানী খেলোয়াড় হিসেবে।
সে কোনোদিনও নাগরিক হতে পারে না, সে হয় বাসিন্দা। বাসিন্দার ভাবজগতে প্রক্সিমিটি হোলো সব থেকে দৃশ্যমান নির্ণায়ক কেননা একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্ৰমিত হোলে ‘অপর’ বাসিন্দা নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। এই ‘অপর’ বাসিন্দা তার চোখে সংখ্যা থেকে মানুষ হয়ে ওঠে কেবলমাত্র ধর্ম কিংবা ভাষার দোহাই থেকে, কখনোই নাগরিকত্বের কারণে না। লিগাল কোডের দার্শনিক ব্যাখ্যা তার ভেতরে কোনো ধরনের ওভার আৰ্চিং দিকনির্দেশনা হয়ে ওঠে না। সে বোঝেই না যে শাস্তির বাইরেও লিগাল কোডের একটা গন্তব্য আছে। যে কারণে বাঙালির একমাত্র রাষ্ট্রের একজন মন্ত্রী সর্বসম্মুখে বলতে পারেন যে একজন পূর্বতর প্রধানমন্ত্রীকে দেশ থেকে বের করে দেয়া উচিত। কারণ তার মনে রাষ্ট্র হোলো খুব বড় ধরনের একটা গ্রাম, যার ঢোকার ও বের হওয়ার মুখে খুব বড় একটা মেঠো পথ আছে। যখন সে গ্রামের কেউ এমন কোনো অপরাধ করে যার ব্যাখ্যা গ্রামবাসীর জানা নেই তখন বয়োজ্যেষ্ঠরা তাকে গ্রাম থেকে বের করে দিলে সবাই সুখে শান্তিতে বসবাস শুরু করবে বলে মনে করা হয়। এই মেঠো পথটার অপর প্রান্ত, যেটা অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, সেটা গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে ‘বাস্তবতা’ বটে কিন্তু ‘বিবেচ্য’ না।
এই অবিবেচ্যতাকে বরাদ্দ রেখে সে রাষ্ট্র গঠন করে, বিপ্লবের স্বপ্নও দেখে— স্পর্ধা মাত্রই ‘অদ্ভুত’, কিছু স্পর্ধা অদ্ভুততর। তা সেই বিপ্লব বস্তুটা কী?
বাঙালি কখনো এলাবোরেট স্বপ্ন দেখতে পারে না- তার জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন। তার স্বপ্ন হোলো তাৎক্ষণিকতার স্বৈরাচার– অর্ধেক তার দেখা, তার অর্ধেক তার স্বপ্ন। আর সেই সিকিস্বপ্নের পুরোটাই হোলো ধ্বংসের ছক। সে এমন কোনো অলৌকিক কসরতের আরাধনা করে যার তোপে হাজির সুবিধাপ্রাপ্তরা সব ‘নাই’ হয়ে যাবে। এই নাই হয়ে যাওয়াটাও খুব মজার বিষয়। এক সময় সে মনে করতো যে এদের হত্যা করা উচিত- তাহলেই না বিপ্লবের ন্যায্যতা। এখনও যে সে অন্যরকমদের মৃত্যু চায় না, তা না; কিন্তু হত্যা করে পার পাওয়া আজকের দুনিয়ায় খুব কঠিন। তাই সে তার দৃশ্যকল্পকে একটু ঘষামাজা করেছে। এখন সে চায় এই ডার্টি জবটা রাষ্ট্রই করুক— আইন দিয়েই করুক। আইন যদি বলে যে তার প্রতিপক্ষের পাদ মারার অধিকার নেই, সে বিচলিত হয়ে যায় তার প্রতিপক্ষ পাদ মারলে, বিচার চেয়ে বসে আইন ভাঙার অপরাধে। আইনের উৎস ও ন্যায্যতা প্রশ্নে আলাভোলা কলোনিয়াল, মাথায় তেল দিয়ে সাতলানো চুলের সুবোধ বালক, কিন্তু আইন ভাঙ্গলে সাজা কী— সে প্রশ্নে একদম কামোচ্ছল তাগড়া পুরুষ— সতত উদগীরণমুখ।
তার কলোনিয়াল মাথার সব থেকে বড় চিহ্ন হোলো আইন-ফেটিশ। কলোনিয়াল মাথা মনে করে যে সব কিছুর জন্য আইন দরকার, পাদ মারা এবং পাদের থেকে রক্ষা পাওয়া- দুটোর জন্যেই আইনের প্রয়োজন আছে। কারণ সে সত্যি সত্যিই মনে করে যে আজকে যদি একজনের পাদ থেকে নিস্তার না পাওয়া যায়, কালকে তাহলে দশজনের পাদ থেকে কীভাবে রক্ষা করবো (কলোনিয়াল মন ঐকিক নিয়মে তুখোড়)? তার মন বলে, একজনের পাদ উপদ্রব – কিন্তু দশজনেরটা— বিপ্লব। কাজেই
আইন দাগা। অন্যদিকে বাংলাদেশের বিচারপতিরা শক্তিমানের প্রতি পরমব্রতী; বিচার করার চেয়ে বিহিত করার দিকে তাদের ঝোঁকটা একটু বেশী। পোক্ত ব্যবস্থা আর কী!
গর্দভদের সংবিধানে সবসময় সর্বোচ্চ সংখ্যক আইন ও সংশোধনী থাকতে হয়। গর্দভরা নিরাপদ হওয়ার চেয়ে নিরুপদ্রব হওয়াকে বড় পাওয়া মনে করে।
যে প্রশ্নটা প্রাসঙ্গিক সেটা হোলো কীভাবে আমরা আধুনিক জীবনে অভ্যস্ত হয়েও আদিম গোত্রীয় চিন্তাকে প্রশ্রয় দেই? কীভাবে নাগরিক শেকড়হীনতার মাঝেও এতো সার্থকভাবে সামষ্টিক আদিপনাকে লালন করি? পশ্চিমের লাইফ স্টাইল আমাদের এতো প্রিয় অথচ পশ্চিমের লিবারেল থটস কেন আমাদের বিন্দুমাত্র টলাতে পারে না?
এর উত্তর অন্তত আমার কাছে হোলো ভাষা। লিঙ্গুইস্টিক রেলেটিভিটি বলে একটা হাইপোথিসিস আছে, যেখানে ধারণা করা হয় যে মানুষের ওয়ার্ল্ড ভিউ তার ভাষা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অর্থাৎ একটা ভাষার গঠন তার ভাবনাকে প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রিত করে। কুৎসিত সরলীকরণে বলা যায়, যা আপনার ভাষায় নেই— সেটা আপনার ভাবনায়ও নেই। যেমন ধরুন কোনো ভাষায় যদি ক্রিয়ার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কাল যদি না থেকে কেবল একটিই ক্রিয়া থাকে তাহলে সে ভাষার মানুষেরা ‘সময়’ কে আমাদের মতো করে নির্দিষ্ট ঘটনার সাথে সমন্বয় করে আলাদা করার ভাবনা পোষণ করবে না। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো যে লিঙ্গুইস্টিক রেলেটিভিটির বিভিন্ন দাবী বিভিন্ন সময়ে ভাষাবিদরা নাকচ করেছেন কিন্তু সে আলোচনার সুযোগ এখানে নেই। ব্যক্তিগতভাবে, যখন আমি লিঙ্গুইস্টিক রেলেটিভিটির নামগন্ধও জানতাম না, তখনও এই একই উপসংহারে পৌঁছেছিলাম (আমি কোনো ভাষাবিদ নই এবং ভাষাতত্ত্বে যে আমার কোনো প্রশিক্ষণ নেই সেটা বলে রাখা ভালো)।
একটা ছোট্ট ও প্রায় অপ্রাসঙ্গিক উদাহরণ দেয়া যাক। বাংলাদেশের শিক্ষিত মানুষ অপর সমগোত্রীয়কে যে অপবাদটি ছুড়ে সবচেয়ে স্বস্তি বোধ করেন, আমার ধারণা, সেটা হোলো ‘অসভ্য’। কিন্তু এই কটূক্তিতে কেউ মনোক্ষুণ্ন হয়েছেন এমন অপবাদ শোনা যায় না বললেই চলে।
মজার ব্যাপার হোলো দু’শ বছর আগে এভাবে যে কাওকে অভিযুক্ত করা যায় সে ধারণাটাই হাজির ছিলো না। তা কীভাবে এই শব্দটি মগজে ঠাই নিলো?
দীপেশ চক্রবর্তীর কাছেই শুনেছিলাম মনে হয়- ঊনবিংশ শতকে ভারতবর্ষের শিক্ষিত মানুষেরা প্রথম অনুধাবন করেন যে য়োরোপীয়ানরা যে অর্থে ‘civilisation’ শব্দটি ব্যবহার করেন সে অর্থ প্রকাশ করার মতো কোনো শব্দ তাদের স্থানীয় ভাষায় নেই। অর্থাৎ সমাজের অর্থনৈতিক, নৈতিক, আইনী বিকাশ এবং মন ও মগজের উৎকর্ষ অর্থে যে civilisation- তার দ্যোতক কোনো শব্দ আমাদের নেই। তাহলে একটা শব্দ বানাতে হয়।
সংস্কৃতে সভ্য শব্দটার অর্থ হোলো ‘সদস্য’। ছোটো বঙ্গে এই অর্থে শব্দটি এখনও ব্যবহৃত হয় (যেমন সংসদের সভ্য)। সদস্য অর্থটি মাথায় রেখে পার্টিসিপেন্ট এর এক্সটেনশান হিসেবে আমরা সভ্যতা শব্দটি আবিষ্কার করি এবং কৃত্রিমভাবে এই শব্দটির সীমানা নির্ধারণ করি য়োরোপীয়ানরা যে সীমানায় ‘civilisation’ ব্যবহার করেন, ঠিক সেই নিরিখে।
ইংরেজিতে civil থেকে civilisation এর উৎপত্তি। কিন্তু আমরা ‘সভ্যতা’ আবিষ্কারের পর দেখলাম যে, যে ব্যক্তি সভ্যতার অনুগামী, অর্থাৎ মন ও মগজের উৎকর্ষ যার হাসিল হয়েছে তাকে নির্দিষ্ট করার মতো কোনো শব্দ তো পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা আরেকটা কৃত্রিম শব্দ আবিষ্কার করলাম। যেহেতু আমরা civilisation এর মানে সভ্যতা নির্ধারণ করেই ফেলেছি সেহেতু civil মানে শিষ্টও। সুতরাং সভ্যর অর্থ হিসাবে ‘সদস্য’ থাকলো আবার ‘সাধুজন’ও জুড়ে বসলো। প্রথমে একটা গোজামেলে শব্দ বানানো, তারপর সেই গোজামেলে শব্দকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আরেকটি গোজামেলে শব্দের আবিষ্কার।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন কেন ‘অসভ্য’ গালিটি শুনলে কারো গায়ে লাগে না।
কিন্তু প্রশ্নটি শুধু গালির না, আমরা কী অর্থে ‘সভ্যতা’ বুঝি তারও। একান্তই আমার ব্যক্তিগত ধারণা— আমাদের মনে ‘সভ্যতা’র সাথে কোনো ‘শর্তের’ সংশ্লিষ্টতা নেই। আমাদের মনে সভ্যতার সীমানা নির্ধারিত হয়।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?