বনি ইসরাইল কারা? – দেখুন নবীদের ক্রমধারা

বনি ইসরাইল কারা ?
বনি ইসরাইল কারা এটা জানতে হলে প্রথমেই আমাদের ইবরাহিম আলাইহিস সালামের ব্যাপারে জানতে হবে। আমরা হয়তো অনেকেই জানি, ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে ‘Father of faith’ বলা হয়। একেশ্বরবাদী হিসেবে দাবি করা তিনটি প্রধান ধর্ম ইহুদি, খ্রিষ্টান ও ইসলাম; সবগুলোতেই তিনি স্বীকৃত ও সম্মানিত। সবাই তাকে নিজেদের ধর্মের অনুসারী হিসেবে দাবি করে। এই টানাহ্যাঁচড়াকে খণ্ডন করে দিয়ে আল্লাহ কুরআনে তাকে আখ্যায়িত করছেন ‘হানিফ’ হিসেবে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ইবরাহিম আলাইহিস সালামের বাবা ছিলেন একজন মূর্তিপূজক। অপরদিকে তিনি এক আল্লাহতে বিশ্বাসী। একত্ববাদের বাণী প্রচার করতে গিয়ে স্বভাবতই তৎকালীন রাজার সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। তার সম্প্রদায়ের লোকেরা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাওহিদের বাণী থেকে। আল্লাহর নির্দেশে তখন হিজরত করেন তিনি। সাথে কেবল স্ত্রী সারাহ এবং ভাইয়ের ছেলে লুত আলাইহিস সালাম। হিজরতকালে তারা এমন এক জনপদে এসে হাজির হন, যেখানকার শাসক ছিল ভীষণ লম্পট আর অত্যাচারী। সুন্দরী নারীদের সে কুক্ষিগত করে রাখত এবং তাদের স্বামীদের নিবির্চারে হত্যা করত। যেহেতু ইবরাহিম আলাইহিস সালামের দাওয়াত-গ্রহণকারীদের মাঝে সারাহ-ই একমাত্র নারী, তাই তিনি জীবন বাঁচানোর জন্য তাকে (দ্বীনি অর্থে) নিজের বোন বলে পরিচয় দেন।
.
তারপরও সেই শাসক সারাহকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করে। সারাহ আল্লাহর কাছে দুআ করেন। এতে শাসকের হাত সঙ্গে সঙ্গে অবশ হয়ে যায়। শাসক মিনতিভরে ক্ষমা চায় সারাহর কাছে। সারাহ দয়াপরবশ হয়ে রবের কাছে শাসকের সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেন। শাসক সুস্থ হয়ে পুনরায় একই পাপকাজে সফল হবার প্রচেষ্টা চালায়। এভাবে তিনবারের বেলায় তার শিক্ষা হয়। অগত্যা সে সারাহকে ছেড়ে দেয় এবং উপহার হিসেবে প্রদান করে হাজেরাকে, যিনি ছিলেন ইবরাহিম আলাইহিস সালামের মালাকাত আঈমানুহু। হাজেরা ও সারাহর গর্ভ থেকে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের দুটি বংশধারার সৃষ্টি হয়। একটি ধারা তৈরি হয় ইসমাইল আলাইহিস সালামের দ্বারা (বিবি হাজেরার গর্ভ থেকে), আরেকটি ইসহাক আলাইহিস সালামের দ্বারা (সারাহর গর্ভ থেকে)।
.
নিচে একটি ছক দেওয়া হয়েছে। তাতে আমরা দেখব—সকল ধর্মের মূলে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম কীভাবে জড়িত ছিলেন। মাঝখানে অনেকে থাকলেও মূলত ক্রমটা এ রকম।
.
এই ছকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বনি ইসরাইল মূলত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের বংশধর। এদের বনি ইসরাইল বলার কারণ হচ্ছে—ইয়াকুব আলাইহিস সালামের আরেক নাম ছিল ইসরাইল। এই বংশ থেকে অসংখ্য নবির আগমন ঘটেছে; কিন্তু ইসমাইল আলাইহিস সালাম থেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত মাঝে আর কোনো নবির আগমন ঘটেনি। তাই এ ধারাকে বলা যেতে পারে বনি ইসমাইল।
.
ইবরাহিম আলাইহিস সালামের প্রথম সন্তান ছিলেন ইসমাইল আলাইহিস সালাম। আল্লাহর নির্দেশে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তার দুধের শিশু ইসমাইল ও স্ত্রী হাজেরাকে আরব মরুভূমির জনমানবহীন প্রান্তরে রেখে আসেন। পানির সন্ধানে হাজেরা সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে উদ্বিগ্ন হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন; যা পরবর্তীতে হজের একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গে পরিণত হয়। এটি পালনের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ আজও হাজেরাকে স্মরণ করে বিনম্র শ্রদ্ধায়। আল্লাহর অলৌকিক নিদর্শন হিসেবে এ সময় সৃষ্টি হয় জমজম কূপ, যাকে কেন্দ্র করেই জনশূন্য মরুভূমি পরিণত হয় জনবহুল শহরে। ইসমাইল আলাইহিস সালামের উত্তরসূরিরাও সেখানেই বেড়ে উঠতে থাকে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
.
এদিকে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তার প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন শামে—যা এখনকার সিরিয়া, জেরুজালেম-সহ বিশাল একটি জায়গা নিয়ে গঠিত ছিল। ফেরেশতারা যখন লুত আলাইহিস সালামের জাতিকে ধ্বংস করার জন্য প্রেরিত হলেন, সেই একই সময়ে তারা ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে সারাহর গর্ভে ইসহাকের জন্মের সুসংবাদ দেন।
.
এভাবে মক্কায় বনি ইসমাইল এবং শাম দেশে বনি ইসরাইলের বংশধরগণ বাস করতে থাকে।
‘শিকড়ের সন্ধানে’ বই থেকে…..
লেখিকা : হামিদা মুবাশ্বেরা
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?