বই : রূহের খোরাক : ইমাম ইবনু কাইয়্যিম রহ. | Ruher Khorak

রূহের খোরাক
লেখক : আল্লামা ইবনুল কায়্যিম জাওযিয়্যাহ রহ
প্রকাশনী : মাকতাবাতুল আসলাফ
বিষয় : আত্মশুদ্ধি ও অনুপ্রেরণা
পৃষ্ঠা : 352, কভার : হার্ড কভার, সংস্করণ : 1st Published, 2021

আল-জাওয়াবুল কাফী’ আত্মশুদ্ধি বিষয়ে রচিত অনন্য এক গ্রন্থ। অন্তরের ব্যাধিতে দিশেহারা এক ব্যক্তির একটি মাত্র প্রশ্নের জবাবে হিজরি ৭০০ শতাব্দীর যুগশ্রেষ্ঠ আলিম ইমাম ইবনু কাইয়্যিম রহ. আত্মশুদ্ধির খনি রেখেছেন এই গ্রন্থে। ‘রূহের খোরাক’ তারই অনূদিত রূপ।

ভারত উপমহাদেশসহ বাংলাদেশের বরেণ্য সব বুযুর্গ ব্যক্তিত্ব ও আধ্যাত্মিক মনীষীর বিভিন্ন নসীহতে, আলোচনায়, বয়ানে—এমনকি আত্মশুদ্ধিমূলক নানা বইয়ে আছে এ গ্রন্থের উদ্ধৃতি।
অন্তরের রোগে পেরেশান অসংখ্য মানুষ এ গ্রন্থ থেকে আত্মশুদ্ধির খোরাক নিয়ে হিদায়াতের পথে হেঁটেছেন, পেয়েছেন মুক্তির দিশা। এতে বিবৃত আত্মার রোগের ব্যবস্থাপত্র শত শত বছর ধরে যারাই পাঠ করেছেন, নিজের পাপ-পুণ্যের হিসাব মেলাতে গিয়ে অঝোর ধারায় কেঁদেছেন। শেষ রাতের জায়নামাযকে সুসিক্ত করেছেন।
আত্মশুদ্ধি বিষয়ক গ্রন্থগুলোর প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—যে কোনো আলোচনা হৃদয়গ্রাহী ও প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করা, যা মানুষকে গুনাহ ত্যাগে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সওয়াব অর্জনেও আগ্রহী করে তুলবে। বৈশিষ্ট্যটি এ গ্রন্থে পরিপূর্ণরূপে বিদ্যমান।
প্রায় হাজার বছর অতিক্রান্ত হলেও এর আবেদন ও প্রয়োজনীয়তা এতটুকুও ম্লান হয় নি। আজও কোনো মুমিনের হৃদয়াত্মা গুনাহের খরতাপে রুক্ষ এবং তৃষিত হলে এ গ্রন্থ এক পশলা বৃষ্টির মতো তার হৃদয়কে শীতল করে দেয়।
প্রত্যেক রোগেরই প্রতিষেধক রয়েছে
আবু হুরায়রা সূত্রে সহীহ বুখারী’র বর্ণনা, নবীজি এ ইরশাদ করেন—
ما أنزل الله داء إلا أنزل له شفاء
‘আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে এমন কোনো রোগ দেননি, যা থেকে পরিত্রাণের উপায় রাখেননি।”১”
জাবির ইবনু আবদিল্লাহ সূত্রে সহীহ মুসলিমের বর্ণনা, নবীজি
ইরশাদ করেন—
لكل داء دواء فإذا أصاب دواء الداء برأ بإذن الله
‘প্রত্যেক রোগেরই ওষুধ রয়েছে। যখন সঠিক পদ্ধতিতে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়, তখন আল্লাহ তাআলার হুকুমেই আরোগ্য লাভ হয়। যে
উসামা ইবনু শারিক সূত্রে মুসনাদু আহমাদের বর্ণনা, নবীজি ইরশাদ করেন—
ما أنزل الله سبحانه من داء إلا جعل له دواء، علمه من علمه
وجهله من جهله
“আল্লাহ তাআলা প্রতিটি রোগের জন্যই আরোগ্যের ব্যবস্থা রেখেছেন। জ্ঞানীরা সে-ব্যাপারে জানে, আর মূর্খরা অজ্ঞই থেকে যায়।
[১] বুখারী, হাদীস-ক্রম : ৫৬৭৮
[২] মুসলিম, হাদীস-ক্রম : ২২০৪; মুসনাদু আহমাদ, হাদীস-ক্রম : ১৪৫৯৭ [৩] মুসনাদু আহমাদ, হাদীস-
অজ্ঞতার প্রতিকার
এ বিষয়ে অন্য আরেক হাদীসে নবীজি বলেন—
إن الله لم يضع داء إلا وضع له شفاء، أو دواء، إلا داء واحدا، قالوا: يا رسول الله ما هو؟ قال: الهرم
‘আল্লাহ তাআলা একটি রোগ ছাড়া বাকি সব রোগেরই ওষুধ রেখেছেন।’ সাহাবায়ে কেরাম সেই রোগটির কথা জানতে চাইলে নবীজি বললেন, ‘বার্ধক্য। আল্লাহ তাআলা বার্ধক্যের কোনো প্রতিষেধক দেননি। ১
উল্লিখিত হাদীসসমূহে সকল ধরনের মানবিক (শারীরিক, মানসিক ও চারিত্রিক) রোগ-ব্যাধি উদ্দেশ্য।
অজ্ঞতার প্রতিকার
নবী কারীম অজ্ঞতাকে রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে জ্ঞানী বা আলিম ব্যক্তিবর্গের শরণাপন্ন হতে হবে, তাঁদের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে অজ্ঞতাকে দূর করে করতে হবে।
সুনানু আবি দাউদে জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু’র ভাষ্যে একটি ঘটনা বিবৃত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘শীতকালে আমরা একটি সফরে ছিলাম। পাথরের আঘাতে আমাদের এক সফরসঙ্গীর মাথা আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ঘটনাক্রমে ওই রাতে তাঁর স্বপ্নদোষ হয়ে যায়। কিন্তু পবিত্রতা হাসিল করতে গোসল করাকে তিনি আঘাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করলেন। সফরসঙ্গীদের নিকট পরামর্শ চাইলেন—এই অবস্থায় গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করা যাবে কি না। সঙ্গীরা তাৎক্ষণিক জানা-শোনা থেকে বললেন, “যেহেতু পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে, আর তুমিও পানি ব্যবহারে সক্ষম, তাই আমরা তোমার জন্য তায়াম্মুম করার কোনো অবকাশ দেখছি না।” এ কথা শুনে তিনি গোসল করে নিলেন। ফলে ক্ষতস্থান দিয়ে মাথার ভেতরে পানি ঢুকে যায় এবং তিনি মারা যান। এই মর্মান্তিক ঘটনার খবর নবীজির কাছে পৌঁছুলে নবীজি – ইরশাদ করেন—
[১] মুসনাদু আহমাদ, হাদীস-ক্রম : ১৮৮৩১; আবু দাউদ, হাদীস-ক্রম : ৩৮৫৫
২১
রূহের খোরাক
قتلوه قتلهم الله ألا سألوا إذا لم يعلموا؟ فإنّما شفاء العيّ السؤال إنما كان يكفيه أن يتيمم ويعصر – أو يعصب – على جرجه خرقة ثم يمسح عليها، ويغسل سائر جسده
“তার সঙ্গীরা তাকে হত্যা করেছে। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন। তারা যেহেতু জানত না, তাহলে কেন তারা জিজ্ঞেস করল না! অজ্ঞতা নামক ব্যাধির | চিকিৎসা হলো প্রশ্ন করা। এই ব্যক্তির জন্য তো তায়াম্মুমই যথেষ্ট ছিল। অথবা মাথায় একটি ব্যান্ডেজ বেঁধে গোসল করলেও পারত, এমতাবস্থায় ব্যান্ডেজের ওপর মাসেহ করে নিলেই হতো।””””
উল্লিখিত হাদীসে নবী কারীম খুব স্পষ্টভাবেই একটি বিষয় তুলে ধরেছেন যে, অজ্ঞতা হলো এক ধরনের মানবব্যাধি। প্রশ্ন করাই এই ব্যাধির চিকিৎসা। আল্লাহ তাআলাও পবিত্র কালামুল্লাহকে বিশ্বাসীদের জন্য ‘শিফা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
কুরআনে শিফা বা আরোগ্যের আলোচনা
আল্লাহ তাআলার বাণী —
ولو جعلناه قرآنا أعجميا لقالوا لولا فصلت آياته أأعجمي وعربي قل هو للذين آمنوا هدى وشفاء
‘যদি আমি এই কিতাবকে অনারব ভাষার কুরআন বানাতাম, তাহলে তারাই বলত যে, এর আয়াতসমূহকে কেন স্পষ্ট করা হলো না! কী আশ্চর্য! কুরআন অনারবী ভাষায় আর রাসূল হলেন আরবী ভাষার! হে নবী, আপনি তাদেরকে বলে দিন, এই কুরআন হলো ঈমানদারদের জন্য হিদায়াত ও শিফা।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন
[১] আবু দাউদ, হাদীস-ক্রম : ৩৩৬
[২] সূরা হা-মীম সিজদাহ, আয়াত ক্রম : ৪৪
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?