বই : বউ সোহাগি
লেখক : রোকসানা রহমান
প্রচ্ছদ : জাওয়াদ উল আলম
প্রকাশনী : বর্ণলিপি প্রকাশনী
জনরা : সামাজিক উপন্যাস
প্রকাশকাল : ১ অক্টোবর , ২০২১
পৃষ্ঠা : ১৭৫
মলাট মূল্য : ২৪৯ টাকা
![]() |
ছবি : বই : বউ সোহাগি |
ফ্ল্যাপ থেকে
প্রথম দিকে ঘুমের ভান ধরে শুয়ে থাকলেও একটা সময় পর গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়েছিল শরৎ। বুনছিল হাজারও বাস্তব-অবাস্তব স্বপ্ন। সেই স্বপ্নে বিঘ্ন ঘটল কারও ক্রমাগত ধাক্কায়। শরৎ ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল। লাল চোখে বলল,
“কী হয়েছে?”
আফিয়াহ সেই চোখ দেখে ঘাবড়ে গেল। দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে বলল,
“জরুরি কথা আছে।”
শরৎ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হতবাক! এই রাতের বেলা ঘুম থেকে তুলে মেয়েটা তাকে বলছে, জরুরি কথা আছে। এটাই কি তার বিবাহ জীবনের প্রথম সূচনা সংখ্যা? শরৎ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ধীরে বলল,
“কী কথা?”
“আসলে কথা নয়, একটা চাওয়া।”
“মানে?”
“আমার একটা অনুরোধ আছে আপনার কাছে।”
শরৎ খেয়াল করল আফিয়া কাঁপছে। নাকের ডগা ও ওষ্ঠধরের উপরে ঘামের কণা জড়ো হচ্ছে। একটু একটু করে ওড়নার এক অংশ হাতে গুছিয়ে নিচ্ছে। শরৎ ঢোক গিলল। সংশয় নিয়ে বলল,
“কী অনুরোধ?”
আফিয়াহ সাথে সাথে উত্তর দিতে পারল না। এক ঝলক শরৎের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়েছে। মনের সাথে হয়তো যুদ্ধ চালাচ্ছে। কঠিন যুদ্ধ! শরৎ ভয়ে ভয়ে পুনরায় বলল,
“কী অনুরোধ?”
আফিয়াহ শ্বাসরুদ্ধ কণ্ঠে সাথে সাথে উত্তর দিল,
“আমার একটা ঘর চাই।”
শরৎ হকচকিয়ে গেল। অল্পক্ষণ ভাষা হারিয়ে বসে থাকল। সেকেন্ড কয়েক পর চকিত স্বরে বলল,
“ঘর! কীসের ঘর?”
আফিয়া এবার কেঁদে দিল। আচমকা শরৎের এক হাত চেপে ধরে কপালে ঠেকিয়ে বলল,
“আপনার সাথে থাকার মতো একটা ঘর। যে-কোনো ঘর হলেই চলবে। শুধু চারপাশে বেড়া থাকলেই হলো। আমার খাওয়া নিয়ে আপনার একটুও ভাবতে হবে না। পানি খেয়ে দিন কাটিয়ে দেব। ঘুমিয়ে রাত কাটিয়ে দেব। কথা দিচ্ছি, আপনার কোনো কিছুতে হস্তক্ষেপও করব না। আপনি না চাইলে আপনার দিকে চোখ তুলে তাকাব না পর্যন্ত। দেবেন আমায় একটা ঘর?”
পাঠ প্রতিক্রিয়া
লেখিকা রোকসানা রহমানের দ্বিতীয় বই “বউ সোহাগি।”
উপন্যাসিকাটির মুল চরিত্র বর্ষা, শরৎ, আফিয়াহ, মহসিন। এছাড়াও আরও অনেক চরিত্র রয়েছে। উপন্যাসে ফুটে উঠেছে ভাই-বোনের চমৎকার সম্পর্ক, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার অগাধ ভালোবাসা, একে অপরের প্রতি দায়িত্ব- কর্তব্য। গল্পটি শুরু হয় শরৎ ও বর্ষার খুনসুটিময় ভালোবাসার মাধ্যমে। বোনের স্নেহডোরে থাকা শরৎ একসময় কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয় এবং আফিয়াহকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। অন্যদিকে বর্ষা ও মহসিনের সাংসারিক জীবন তখন নড়বড়ে প্রায়। শেষ পর্যন্ত কি চারজনের জীবন সুখময় হয়? না-কি ভালোবাসার তীব্র দাহে হৃদয় পুড়ে অঙ্গার হয়? জানতে হলে পড়তে হবে বইটি।
উপন্যাস পড়ার সময়টিতে আমি দারুণভাবে অনুভব করেছি প্রতিটি ঘটনা। লেখিকা এই গল্পে সরল বাক্য ব্যবহারের মাধ্যমে আশেপাশের পরিবেশ ঘটনা খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। গল্পের লেখনশৈলী বেশ ভালো ছিল, কোনো তাড়াহুড়ো ছিল না। মাত্রাতিরিক্ত তেমন কোন বর্ননা বা ঘটনা ছিল না।
চরিত্র কথন
উপন্যাসটির চরিত্রগুলো হলো- শরৎ, বর্ষা, মহসিন, আফিয়াহ, তিনু, পরশ, রিতু, মোহন এবং আরও অনেকে। আমার পছন্দের চরিত্র শরৎ ও আফিয়াহ। শরৎের সরলতা এবং আফিয়াহের চঞ্চলতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
পছন্দের কিছু লাইন :
- “যে পুরুষ তার স্ত্রীর বৃষ্টিঝরা ভালোবাসায় উলটেপালটে আছাড় খায় তাকে বউ সোহাগি বলে।”
- “ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসতে না পারার কষ্টটা আমার থেকে ভালো কেউ বুঝবে না।”
- “সময়কে অবহেলা করো না। সে মানতে পারে না। সহ্য করতে পারে না। ভয়ংকর রকম রেগে যায়। ফলস্বরূপ তোমাকে অভাবে ফেলবে। ভয়াবহ সময়ের অভাব! আফসোসের জালে বন্দী করবে। চোখ ফাটিয়ে জল বের করবে। প্রচন্ড রকম হীনমন্যতায় ভুগিয়ে বাধ্য করাবে,ইশ! একটিবার যদি পেছনে ফিরতে পারতাম। সেই দিনটিতে সেই সময়টিতে! তাহলে অবশ্যই বিমূঢ়তা কাটিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিতাম।”
- “হয়তো তোমার মতো আমিও একদিন মাটির নিচে শুয়ে পড়ব। হারিয়ে যাব পৃথিবীর বুক থেকে। কিন্তু কাশফুল? শরৎ? এরা যুগ যুগ বেঁচে থাকবে প্রকৃতির সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে।”
বইয়ের প্রোডাকশন ও অন্যান্য :
বইয়ের প্রচ্ছদ টি অসাধারণ হয়েছে, বইয়ের থিমের সাথে মিল রয়েছে। কিন্তু কিছু বানান ভুল ছিল। বইটির মূল্য সামঞ্জস্যপূর্ণ।
♦️ ব্যক্তিগত রেটিং : ৯/১০
রিভিউ লেখনীতেঃ জারিন তাসনীম