Post ID 111426
পড়ুন, আশা করি বই সম্পর্কে কিছু ধারণা পাবেন, তবে বইটি সংগ্রহ করে পড়তে পারলে আরো ভাল হয়
বই: উমর ইবনে আবদুল আজিজ
লেখক: ড. ইউসুফ আল কারযাভী
অনুবাদ: এনামুল হাসান
প্রকাশক: প্রচ্ছদ প্রকাশন
রিভিউ লেখক : istihad chy
মোবাইলে টাইপ করা দীর্ঘ একটি রিভিউ, ভুল হতেই পারে তবে যে কোন পরামর্শ বা সংশোধনী দিতে ভুলবেন না, যদি দেওয়া প্রয়োজন মনে করেন।
(Me:- বইয়ে মোটামুটি বিশাল আলোচনা তবে হালকা কিছু তুলে ধরছি)
❏ বই যে অন্তরের খোরাক, পিপাষিত মনকে তৃষ্ণা মিটাই তা তা বই না পড়লে কখনো বুঝতাম না,, আমার বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ে গার্ডিয়ান প্রকাশনের “প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ” পড়ে,, সেই থেকে মোটামুটি বই পড়া শুরু, আলহামদুলিল্লাহ, সেই শুরুটা আজো অম্লান হয়ে আছে, ইদানীং মোটামুটি কিছু গঠনমূলক বই পড়া হয়েছে, ড. ইউসুফ আল কারযাভী এর বইগুলোর প্রতি আলাদা আগ্রহ বেড়েছে, যদি প্রশ্ন করেন, কেন?? তখন আমি বলবোঃ- মন-মাইন্ড চেঞ্জ করার মত প্রতিটি বই, “” আলিম ও স্বৈরশাসক” বইটি পড়েছি, অসাধারণ, গতকাল শেষ হলো ” উমর ইবনে আবদুল আজিজ” বলতে গেলে এককথায় অসাধারণ 👌
❏ এ বইতে এমন কিছু বিষয় আলোচিত হয়েছে— এই বইয়ে ড. ইউসুফ আল কারযাভী “উমর ইবনে আবদুল আজিজ”কে নিয়ে একজন ইসলাম বিদ্বেষীর কথার জবাব দিয়েছেন, তবে জবাব দিতে গিয়ে ” উমর ইবনে আবদুল আজিজ” এর পরিচয় ও জীবনের কিছু কথা বা কাজকে উপস্থাপন করেছেন,,
=>একটা বিষয় বলা হয়নিঃ- এটা মুলত ছিল একটি খুৎবার আলোচনা – উনার শুভাকাঙ্ক্ষী অধ্যাপক মাহমুদ ইওয়ায এক ব্যক্তি বই আকারে তা প্রকাশ করেন,
❏ বইয়ের কিছু কথাঃ-
=> লেখকের কথাঃ-
বর্তমান সময়ে পথভোলা উম্মাহর জন্য হিদায়তের পথনির্দেশক ব্যক্তিদের জীবনী এবং তাদের রেখে যাওয়া আলোকোজ্জ্বল রুপরেখা তুলে ধরা বড়োই প্রয়োজন। বিশেষ করে যখন কিছু মানুষ এই ইতিহাসকে বিকৃত করে ফেলছে; যার ফলে অনেকে মনে করে, আমাদের এই গভীর আঁধারের পরে রয়েছে শুধুই আঁধার।
ইতিহাসে এমন কোন জাতি নেই, যারা মুসলিম জাতির মতো নিজেদের ইতিহাসকে হিদায়তের রাহবার এবং তাকওয়াবান নেতৃত্বের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করেছে।
=>ভুমিকাঃ-
#মালিক ইবনে আনাস রহ. আবদুর রহমান বিন হারমালা থেকে সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব রহ.- এর সুত্রে বলেন, “আবু বকর ও দুই উমর হলেন ইসলামের খলিফা।”
তাকে প্রশ্ন করা হলো, আবু বকর ও এক উমরকে তো চিনলাম। কিন্তু অপর উমর কে?
তিনি বললেন, ” তোমরা অচিরেই তাঁর সম্পর্কে জানতে পারবে।”
#উমর ইবনে আবদুল আজিজ যখন খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন গোটা জমিন অন্যায়-অনাচারের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। তিনি সে অন্যায়-অনাচারের মূলোৎপাটন করে সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন ন্যায়ের ঝান্ডা, যার কিছুটা এ আলোচনায় আমরা জানতে পাবো। ইনশাআল্লাহ
=> মুজাদ্দিদ উমর ইবনে আবদুল আজিজ <=
#উমর ইবনে আবদুল আজিজ ছিলেন সৎপথে নেতৃত্ব দেওয়া শাসকদের অন্যতম; মুসলিম ইতিহাসের পাতায় এক অনন্য উপমাহীন দৃষ্টান্তের নাম। ওলামারা তাঁকে স্মরণ করে খুলাফায়ে রাশেদিনের পঞ্চম ব্যক্তি হিসেবে।
#তাঁর সম্মানিত নানা উমর ইবনুল খাত্তাব
উমর ইবনে আবদুল আজিজের মা ছিলেন আসিম ইবনে উমর ইবনুল খাত্তাব এর কন্যা উম্মে আসিম। তিনিই হচ্ছেন সেই মহীয়সী রমণীর কন্যা, যার ঘরের পাশ দিয়ে রাতের আঁধারে হেঁটে যাচ্ছিলেন আমিরুল মুমিনিন উমর ইবনুল খাত্তাব রা.। তিনি শুনতে পলেন, এক মেয়ে তার মায়ের সাথে কথা বলছে। মা তার মপয়েকে বলছে, প্রিয় কন্যা! তুমি দুধের সাথে কিছু পানি মিশিয়ে দাও।
কন্যা বলে উঠল, মা! আপনি কি শুনেননি আমিরুল মুমিনিের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, কেউ যেন দুধের সাথে পানি না মপশায়।
মা বলল, তিনি কি তোমাকে রাতের আঁধারে দেখছেন?
মেয়েটি বল, না! যদিও খলিফা দেখছেন না, কিন্তু তার রব তো দেখছেন।
কথাটি শুনে উমর রা.- এর চোখ অশ্রুসজল হলো। সকাল বেলা তিনি সেই মা আর মেয়েকে ডেকে পাঠালেন। মাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার মেয়ের কি বিয়ে হয়েছেন?
মা বললেন, না! এখনো বিয়ে হয়নি।
উমর রা. তাঁর পুত্র আসিমকে বললেন, আসিম! তুমি তাকে বিয়ে করে নাও। আসিম সেই মেয়েকে বিয়ে করলেন। আর তাদের ঘরে প্রথম সন্তান ছিল একটি মপয়ে। সেই মেয়েটিই পরবর্তীতে গর্ভে ধারণ করেন আরেক মহান মনীষী উমর ইবনে আবদুল আজিজকে। এজন্যই উমর ইবনে আবদুল আজিজের সাথে তাঁর নানা উমর ইবনুল খাত্তাবের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে।
=> শৈশব ও বেড়ে ওঠা <=
#উমর ইবনে আবদুল আজিজ শৈশবে লালিত-পালিত হয়েছেন ইসলামি পরিবেশে। কিশোর উমরকে জ্ঞান অর্জনের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হলো মদিনা মুনাওয়ারায়, কিশোর উমর সেখানে কুরাইশদের বড়ো বড়ো সম্মানিত ব্যক্তিদের সাথে ওঠাবসা করলেন, তাদের যুবক ও কিশোরদের সঙ্গী হলেন, এভাবে একসময় তিনি প্রসিদ্ধ হয়ে উঠলেন।
=> আমিরুল মুমিনিন উমর ইবনে আবদুল আজিজ <=
#খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে তাঁর বাৎসরিক ভাতা ছিল চল্লিশ হাজার দিনার। খিলাফতের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি এই ভাতা বন্ধ করে, নিজের জন্য বার্ষিক মাত্র চারশত দিনার নির্ধারণ করে।
#অথচ আমরা দেখি, বর্তমান সময়ে যখন কোনো ব্যক্তি প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন তার থেকে সামান্য সম্পদ। কিন্তু সে যখন প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করে, তখন দেখা যায় সম্পদের পাহাড়। উমর ইবনে আবদুল আজিজ ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে তিনি ছিলেন উমাইয়া বংশের অন্যতম ধনী ব্যক্তি। কিন্তু খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি হয়ে গেলেন একহন নিঃস্ব ব্যক্তির মতো।
#উমর ইবনে আবদুল আজিজের পূর্বে ইসলামি জীবনব্যবস্থা যেন বিলুপ্ত হয়ে পড়েছিল। এর কারণ ছিল, সম্পদের প্রতি সীমাহীন লোভ, নেশা চর অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে চিনি নেওয়ার প্রবণতা। অবস্থা এমন দাড়িয়ে ছিল যে, প্রত্যেক ব্যক্তিই চাইত, তার কাছে থাকবে সম্পদের ভান্ডার। বিশেষ করে বনু উমাইয়ার অধিকাংশ ব্যক্তিই এ আশায় বিভোর ছিল।
কিন্তু উমর ইবনে আবদুল আজিজ এই সমুদয় সম্পত্তি “অবৈধ সম্পদ” হিসেবে বিবেচনা করলপন। আর সেই সম্পদগুলোকে প্রাপ্য ব্যক্তিদের হাতে ফিরিয়ে দিলেন।
=>দুনিয়া বিমুখতা<=
#একদিন তিনি পরিচারককে গোশত ভুনা করতে পাঠালেন। সেই পরিচারক অতি দ্রুত থুনা গোশত নিয়ে ফিরো এলো। তিনি বললেন, তুমি এই গোশত কোথায় ভুনা করেছ?
পরিচারক উত্তর দিলো- জনসাধারণের রান্না ঘরে।
খলিফা উমর বললেন, তুমি খাও। এই গেশত আমার জন্য খাওয়া বৈধ নয়।
তাঁর পরিচারক একবার তার জন্য জনসাধারণের রান্নাঘরে পানি গরম করল। সেই পানির পরিবর্তে তিনি এক দিরহাম সমমূল্যের কাঠ ফিরিয়ে দিলেন।
#এ মহান খলিফার একটি বাতি ছিল, যার আলোয় নিজের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি লিখতেন। অপর একটি বাতি ছিল, যার আলোয় রাষ্ট্রীয় বিষয়াদি লিখতেন। সেই বাতির আলোয় তিনি নিজের জন্য একটি অক্ষরও লিখতেন না।
লক্ষণীয় বিষয়- একজন শাসক হয়েও তার তাকওয়া, খোদাভীরুতা এবং চারিত্রিক পবিত্রতা কোথায় গিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল। এভাবেই তিনি নিজের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করেছিলেন।
=> খিলাফতের দায়িত্বানুভুতি<=
#উমর ইবনে আবদুল আজিজ সর্বদা দায়িত্বের বিশালতা উপলব্ধি করতেন। তার স্ত্রী ফাতিমা বলেন, একদিন তার কাছে গিয়ে দেখলাম, তিনি জায়নামাজে গালে হাত রেখে বসে আছেন। আর তার গণ্ডদেশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
বললাম, আপনার কি হয়েছে?
তিনি বললেন, ” হে ফাতিমা! আমি এই উম্মাহ এর যে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি সে দায়িত্বের বিশালতা নিয়ে ভাবছিলাম। আর আমি এ চিন্তা করছিলাম, এই বিস্তৃত সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুধার্ত, অসহায়, রোগাক্রান্ত, বস্ত্রহীন ব্যক্তিদের ব্যাপারে। আশ্রয়হীন এতিম আর স্বামীহীন বিধবাদের নিয়ে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া ব্যক্তিদের ব্যাপারে, যার কাঁধে রয়েছে বড়ো পরিবারের দায়িত্ব; কিন্তু সে অতি সামান্য সম্পদের অধিকারী। এমন প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যাপারে, যারা ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে, বিভিন্ন অঞ্চলে। আমি জানি, আমার রব কেয়ামত দিবসে আমাকে এ দায়িত্ব, দেশ ও জনসাধারণের জবাবদিহি নেবেন। সেদিন তাদের পক্ষে আমার বিপরীতে থাকবেন সাইয়িদুনা মুহাম্মদ সা.। আমার ভ হয়, সেদিন বিচারের সময় আমার পক্ষে কোনো প্রমাণ থাকবে না। এ কথা ভেবেই নিজের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে কাঁদছি।”
#তিনি এভাবেই নিজের দায়িত্ব নিয়ে ভবতেন। একদিন দিনের শুরুতে পরিচারক এসে বলল, আমিরুল মুমিনিন! আজ আপনার কি হয়েছে?
আপনাকে দেখে চিন্তিত-বিষণ্ন মনে হচ্ছে! অথচ এখন তো বিষণ্ণ হওয়ার সময় নয়।
তিনি বললেন, “আমি কেন চিন্তিত হব না বলো, অথচ পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত প্রতিটি ব্যক্তি যেন আমার কাছে তার প্রাপ্য চাচ্ছে; যেন তাকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিই। চাই সে আমার কাছে তা লিখে পাঠাক বা না পাঠাক। আমার কাছে এসে তার প্রাপ্য চাক বা না চাক।”
=> খিলাফতের পূর্বে ও পরে <=
#একবার তিনি বেশ কিছু দিন রোগাক্রান্ত ছিলেন। তখন স্ত্রী ফাতিমার ভাই এসে দেখলেন, তাঁর পরিধেয় কাপড়টি ময়লা। তিনি তার বোন খলিফাপত্নী ফাতিমাকে বললেন, বোন! আমিরুল মুমিনিনের কাপড়টি ধুয়ে দাও। তিনি বললেন, ইনশাআল্লাহ।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে এসে পূর্বের অবস্থায় দেখতে পেয়ে তার বোন ফাতিমাকে বললেন, খলিফার সাথে কত লোকজন সাক্ষাতে আসে; তেমাকে না বলেছিলাম তাঁর কাপড় ধুয়ে দিতে!
খলিফাপত্নী ফাতিমা বললেন, কসম আল্লাহর! এ ছাড়া আমিরুল মুমিনিনের আর কোন কাপড় নেই।
#হ্যাঁ, এমনই ছিলেন ইতিহাস বিখ্যাত এই মহান শাসক উমর ইবনে আবদুল আজিজ। যার সম্বল ছিল একটি মাত্র তালিযুক্ত জামা। যখন তিনি এটি ধুয়ে দিতেন, তখন না শুকানো পর্যন্ত ঘর থেকে বাহির হতেন না। আহ্, নম্রতা, সরলতা, যুহদ (দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি) ও খোদাভীরুতার এই তুলনাহীন উপমা আজও ইতিহাসের পাতায় বিরল।
#এই মহান ব্যক্তি ছিলেন ইতিহাস বিখ্যাত নবীপ্রেমী আয়েয আলকরনি থেকেও অধিক যাহিদ (দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্ত)। কারণ, তিনি অর্ধ পৃথিবীর খলিফা হয়েও ছিলেন নির্মোহ, নিরাসক্ত। পক্ষান্তরে আয়েয আলকরনি ছিলেন শুধু দুনিয়া ত্যাগী এক সাধক পুরুষ। যিনি না ছিলেন তাঁর মতো শাসন ক্ষমতার অধিকারী, না ছিলেন দুনিয়ার সম্পদ-প্রাচুর্যের অধিকারী। আর সততার কষ্টিপাথরে পরীক্ষিত আর অপরীক্ষিত কখনোই সমান নয়।
#প্রখ্যাত তাবেয়ি মালিক ইবনে দিনার তাঁর সম্পর্কে বলেন, লোকেরা বলে মালিক নাকি যাহিদ! আসল যাহিদ তো খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজ; যার পদতলে দুনিয়া নিজের সবটুকু নিয়ে হাজির হয়েছিল, আর তিনি তা দ্বিধাহীনচিত্তে ত্যাগ করেছিলেন।
=> উনর ইবনে আবদুল আজিজ ও তাঁর সন্তানগণ <=
#উমর ইবনে আবদুল আজিজ ছিলেন বারোজন সন্তানের আদর্শ পিতা, যাদের হৃদয়ে তিনি জ্বালিয়েছিলেন ঈমানের প্রদীপ। আর দূর করেছিলেন দুনিয়ার প্রতি মোহের অমানিশা।
ফলে সন্তানরা দুনিয়ার সম্পদে নিঃস্ব ছিল, কিন্তু ঈমানের সম্পদে ছিল বলিয়ান, যখন তাঁকে বলা হলো, আপনি এই বারোজন সন্তানের জন্য কোনো সম্পদের ওসিয়ত করে যাবেন না?
তারা বেশ দরিদ্র ছিলেন। তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন আমার অভিভাবক, যিনি অবতীর্ণ করেছেন কুরআন আর তিনিই সৎপথে পরিচালিতদের দায়িত্বশীল। আমি অন্যের সম্পদ তাদের দেওয়ার অধিকার রাখি না। যদি তারা সৎপথে পরিচালিত হয়; তাহলে আল্লাহ তায়ালা সৎপথে পরিচালিতদের সর্বোত্তম অভিভাবক। আর যদি তারা অন্যায়- অসৎপথে পরিচালিত হয়; আমি তাদের অসৎকর্মের সাহায্যকারী হতে পারি না। আমি তাদের শেষ পরিণতের চিন্তা করি না। আমি কি তাদের জন্য এমন কিছু রেখে যাবে, যার ম্যাধ্যমে তারা আল্লাহ তায়ালার আদেশ লঙ্ঘন করবে। ফলে মৃত্যুর পরেও আমি তাদের অসৎকর্মের সঙ্গী হব! আমি কখনোই এমনটি করতে পারি না।”
অতঃপর তিনি সন্তানদের নসিহত করে বললেন, তোমরা নিশ্চিন্তে থাকো, আল্লাহই তোমাদের রক্ষক এবং তোমাদের জন্য সর্বোত্তম প্রতিনিধি!
এটাই ছিল তাঁর ওসিয়ত। তাঁর সন্তানরা চলেছেন পিতার এ ওসিয়ত মেনেই। আর পেয়েছেন দুনিয়ার প্রাচুর্য, হয়েছেন সমাজের বিত্তশালীদের অন্যতম।
আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পদে এতটাই প্রাচুর্য দিয়েছিলেন, আল্লাহর পথে তাঁর কোনো কোনো সন্তানের বাহন হতো আশিটি ঘোড়া।
=> ঘনিষ্ঠজন ও জনসাধারণের প্রতি উমর ইবনে আবদুল আজিজ <=
#একবার খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজের কাছে কোনো গর্ভণর বার্তা পাঠালেন, “আমাদের শহরটি সীমানাপ্রচীর ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে! যদি আমিরুল মুমিনিন এ শহরের জন্য কিছু সম্পদ বরাদ্দ দিতেন, তাহলে আমরা তা পুননির্মাণ করতে পারতাম।”
উমর ইবনে আবদুল আজিজ ফিরতি বার্তায় লিখে পাঠান, “তুমি ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে এই শহরের সুরক্ষা বিধান করো। শহরের পথঘাট আর অলিগলিকে জুলুমের কালো ছায়া থেকে রক্ষা করো। এটাই হবে এ শহরের পুননির্মাণের পাথেয়। তোমার উপর আল্লাহ তায়ালার শান্তি বর্ষিত হোক।”
=> খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজের ইন্তেকাল <=
#খলিফার এই শাসন ও ন্যায়বিচারে হিংসুকরা ক্রমশ দংশিত হচ্ছিল, যাদের অন্যায়-অবিচার তিনি শক্ত হাতে রুখে দিয়েছিলেন। তারা এই মহান ব্যক্তিকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করে নিজেদের মুক্তির পথ খুঁজে নিল। বনু উমাইয়ার কিছু নীতিহীন ব্যক্তি যখন দেখল, ন্যায়ের এ ধারক একে একে তাদের সকল অন্যায়ের পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে, তাদের অবৈধ পথে অর্জিত সকল সম্পদ বায়তুলমালে বাজেয়াপ্ত করছে,তখন তারা ষড়যন্ত্রের ঘৃণ্য পথ অবলম্বন করল।
ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স ছিল উনচল্লিশ বছর ছয় মাস। কিন্তু এই স্বল্প সময়ের মাঝেই তিনি বদলে দিয়েছেন নিজের জীবনকে। অভাবনীয় পরির্বতন ঘটিয়েছেন মানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনাদর্শে। আর বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই দ্বীনের জন্য প্রয়োজন রয়েছে এক শক্ত ও কঠিন নেতৃত্বের, যে নেতৃত্বের সঙ্গী হবে কিছু সৎপথে পরিচালিত ব্যক্তি, যাদের রয়েছে দ্বীনের গভীর জ্ঞান আর আল্লাহর প্রতি ইস্পাত কঠিন বিশ্বাস, রয়েছে আল্লাহর মনোনীত দ্বীনকে জমিনের বুকে প্রতিষ্ঠার দৃঢ়সংকল্প আর সীমাহীন আকাঙ্খা।
পরিশেষে আমাদের মোনাজাত, আল্লাহ তায়ালা এ মহান মনীষী উমর ইবনে আবদুল আজিজের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান, আর তাঁর জীবনাদর্শকে আমাদের শাসক এবং দায়িত্বশীলদের জন্য উত্তম পাথেয় বানিয়ে দিন। সেইসাথে তাঁর জীবন যেন হয় প্রতিটি মুমিনের জন্য উপদেশ ও শিক্ষা। আমি আমার কথা বলে গেলাম। আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি আমার জন্য এবং আপনাদের সকলের জন্য। নিশ্চয়ই তিনি দয়ালু ও ক্ষমতাশীল।
#ঃ= ইউসুফ আল কারযাভীর ফতোয়া =ঃ#
#খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজ কি রাজনীতি সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন?
#খলিফা উমরের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অন্যতম একটি দিক ছিল, তিনি গভর্নর ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জন্য পর্যাপ্ত ভাতা নির্ধারণ করেছিলেন। কোনো কোনো গভর্নরকে একশ থেকে দুই শত দিনার পর্যন্ত মাসিক ভতা দিতেন। আর এক্ষেত্রে তার নীতি ছিল, যখন প্রশাসকেরা পর্যাপ্ত সম্পদের অধিকারী হবে তখন তারা নিশ্চিতে মনে নাগরিকদের সমস্যা সমাধানে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারবে।
একদিন খলিফাকে বলা হলো, আপনি চাইলে নিজের পরিবারের জন্য তেমনটি ব্যয় করতে পারেন, যেমনটি আপনি আপনার নিয়োজিত প্রশাসকদের জন্য ব্যয় করে থাকেন
তিনি বলেন, আমি অন্যের হক থেকে তাদের দিতে পারি না; আবার ন্যায্য প্রাপ্য থেকে তাদের বঞ্চিত করতে পারি না।
ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ বলেন, একদা খলিফা উমর আমাকে আফ্রিকান দেশসমূহের যাকাত আদায়ের উদ্দেশ্যে পাঠালেন। তখন আমি সেখানে পৌঁছে যাকাতের সম্পদ গ্রহণ করলাম। তারপর সেই যাকাতের মাল গরিবদের মাঝে বন্টনের জন্য গরিবদের খোঁজ করলাম।
কিন্তু বিস্মিত হতে হলো, আমি সেখানে যাকাতের অর্থ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক এমন কাউকে পেলাম না। অনুভব করলাম, খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজ সকল মানুষের দরিদ্রতা দূর করতে সক্ষম হয়েছেন।
এজন্যই এটা কোনো আচার্যের বিষয় নয়, উম্মাহর সকল ওলামায়ে কেরাম, মুহাদ্দিসিন, সুফিগণ ও ইতিহাসবিদরা এক বাক্যে উমর ইবনে আবদুল আজিজের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করেছেন। যার ফলে তিনি ইসলামের ইতিহাস ও সৎকর্মশীলদের তালিকায় অক্ষয় স্থান করে নিয়েছেন।
#আবু দাউদ এবং অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত, “অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তাঁর দ্বীনের সংস্কারক হিসেবে শতাব্দীতে মুজাদ্দিদ পাঠান।” হাদিসের ব্যাখ্যায় বাস্তবে এর প্রয়োগিক উদাহরণ দিতে গিয়ে তারা বর্ণনা করেছেন, খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজ ছিলেন প্রথম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ।
আক্ষেপের বিষয় হলো, যে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে এই লেখক উমর ইবনে আবদুল আজিজের ওপর প্রশাসনিক কর্মে অদক্ষতার অপবাদ দিয়েছেন, তিনি সেই ঘটনার অর্থ এবং তার অন্তর্নিহিত মর্ম কিছুই বুঝতে পারেননি।
ঘটনা হলো, খলিফা উমর যখন প্রশাসককে শহরের প্রাচীরের বিষয়ে বললেন, “ন্যায়পরায়ণতার মাধ্যমে শহরকে রক্ষা করো।” তখন তিনি এ কথার দ্বারা তাকে এবং অন্যান্য প্রশাসকের যে মহান বিষয়টির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন তা হলো, কোনো দেশ শুধু প্রাচীর নির্মাণ আর বাহ্যিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমেই বহিরাগত শক্তির আক্রমণ ও অভ্যন্তরীণ নৈরাজ্য থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। বরং এসকল কিছুর পূর্বে প্রয়োজন তার প্রতিটি স্থানে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার প্রাপ্য প্রদান করা এবং অন্যায়-অত্যাচার দমন করা। আর এটাই হলো সেই বিষয়, যা শহরের আধিবাসীদের রক্ষার্থে আসল প্রাচীর গড়ে তুলবে, যাদের একেক জন হবে এক একটি মজবুত বর্মের মতো। আর যখন দেশে ন্যায়বিচার থাকবে না এবং তার অধিবাসীরা দেশের জয়-পরাজয়ের কোনো পরোয়া করবে না, তখন শুধু প্রাচীর গড়ে দেশকে টিকিয়ে রাখা যায় না,
#আচর্যের বিষয় হচ্ছে, এই লেখক খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজকে সমালোচনার তিরে বিদ্ধ করে বনি উমাইয়ার অত্যাচারী ব্যক্তি হাজ্জাজ বিন ইউসুফের প্রশংসায় মেতে উঠেছেন।
হাজ্জাজ বিন ইউসুফের প্রশংসায় এ লেখক, “হাজ্জাজ বিন ইউসুফ শুধু রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি উদ্ধত ব্যক্তিদের মূলোৎপাটনের জন্য তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। এ কারণে তার যে দুর্নাম ছড়িয়েছে তা দূর হওয়া অত্যন্ত কঠিন। ইউরোপের ঐতিহাসিক ব্যক্তিরা তার ব্যাপারে এই সাক্ষ্য দেয় যে, তিনি ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম মহান প্রশাসনিক ব্যক্তিত্ব।”
আর দেখুন এই লেখককে, যে এই অত্যাচারীদের অবৈধ অত্যাচারের বৈধতা দান করতে গিয়ে নিজেকে উকিলরুরে দাঁড় করিয়েছে। কিভাবে তার শব্দগুলো ব্যক্ত করে দিয়েছে তার মনের কথা।
সে আব্দুল্লাহ বিন যুবাইরের মতো ব্যক্তিকে দেশদ্রোহী বলে আখ্যা দিয়েছে! যিনি ছিলেন একাধারে সাহাবি, আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গকারী, এবং যিনি খিলাফতের বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন, যাকে ডাকা হতো আমিরুল মুমিনিন নামে- নয় বছর ধরে। আর তাঁর শাসনব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেত যদি না আল্লাহ তায়ালার দেওয়া নির্দিষ্ট সময় এসে না পড়ত। তাঁর মতো মহান সাহাবিকে সে নাম দিয়েছে “দেশবিরোধী”। এমনকি তাঁর সাথে সাথে তাঁর সঙ্গী সকল সাহাবী ও তাবেয়িদের সে “দেশবিরোধী” বলেও আখ্যা দিয়েছে। আর সাঈদ ইবনে যুবাইর এবং অন্যান্য ফকিহদের যারা ইবনুল আশআসের সঙ্গী হয়ে হাজ্জাজ ও তার মতো ব্যক্তিদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, এই ব্যক্তি তাদের নামকরণ করেছে “মারিকি” তথা দেশদ্রোহী।
আল্লাহ তায়ালার কথাই সত্য, তিনিই পথপ্রদর্শনকারী ।
❏
বিঃদ্রঃ- এখানে আমি তেমন কোন কিছু এড করি নাই, সরাসরি বই থেকে তুলে দিয়েছি, চাইছিলাম কিছু আলোচনা করবো কিন্তু করলে অবস্থা বেহাল হয়ে যাবে মানে বি……শাল হয়ে যাবে, তাই কোন কিছু নিজে আলোচনা করিনি,
সর্বশেষ কথ হচ্ছেঃ- পড়ার মত একটি বই,
বইয়ে বিশেষ করে রাষ্ট্রব্যবস্থার সততা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা রয়েছে, তাই #মুহাম্মদ_আবু_সুফিয়ান ভাইয়ের অনুরোধঃ- চাইলে বইটি বর্তমানে রাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকা ভাইদের কে উপহার দেওয়া যায় ,, তারা পড়ুক, জানুক সত্যপন্থীদের রাষ্ট্র নায়কদের কাহিনি, তারা মানুক বা না মানুক অন্তত দাওয়াত হবে,
আর
আল্লাহ তায়ালা যদি কবুল করেন, আর কোন কথাই নাই
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?