ফ্যামিলি লাইফ
লেখক : হায়াত মাহমুদ
প্রকাশনী : নিয়ন পাবলিকেশন
বিষয় : পরিবার ও সামাজিক জীবন
পৃষ্ঠা : 96, কভার : হার্ড কভার
ভাষা : বাংলা
‘ফ্যামিলি লাইফ’ (english : Family Life) পিতা-মাতা , ভাই-বোন , আত্মীয়- সজন অত্যন্ত কাছের প্রিয় মানুষগুলোকে নিয়েই আমাদের ফ্যামিলি লাইফ অর্থাৎ, পরিবারিক জীবন। বিশ্বজুড়ে পারিবারিক অশান্তি এবং নানাবিধ সমস্যায় বিপর্যস্ত মানুষের জীবন। তাহলে এর সমাধান কী? জীবনকে কীভাবে অনাবিল সুখ এবং শান্তিতে সমৃদ্ধ করা যায়? আমাদের পারিবারিক জীবনকে কিভাবে পারস্পরিক ভালোবাসা এবং পবিত্রতার শীতল পরশে পুনর্গঠন করা যায় তার কিছু অপূর্ব ও কার্যকরী সমাধান দেওয়া হয়েছে ‘ফ্যামিলি লাইফ’
পরিবার হচ্ছে সমাজ জীবনের একটি মৌলিক সংগঠন। এই পরিবারের গঠন কাঠামো যত সুন্দর হবে; পারিবারিক বন্ধনও ততো মজবুত হবে। পরিবারের মজবুতী অর্জনের মৌলিক একক হচ্ছে ভালোবাসা। মহান রাব্বুল আলামিন মানুষের অস্তিত্ব টিকে থাকার জন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে পরিবার গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। পরিবার ছাড়া সমাজ জীবনে শান্তি প্রত্যাশা করা যায় না বরং সমাজে দেখা দেয় বিপর্যয়। একটি পরিবার প্রথমত একজন পুরুষ ও একজন নারীর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়। এই পরিবার তখনই আদর্শ পরিবার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যখন নারী ও পুরুষ একে অপরের প্রতি পূর্ণ ভালোবাসা, সৌহার্দ্যপূর্ণ আচার-আচরণ, উত্তম ব্যবহার, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, সহনশীলতা ইত্যাদির সমন্বয় সাধিত হয়।
আজ যদি আমাদের চারপাশের পরিবারের দিকে তাকিয়ে দেখি তাহলে দেখতে পাবো অধিকাংশ পরিবারের মধ্যে অশান্তি বিরাজ করছে। এই অশান্তির মূল কারণ হচ্ছে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে পূর্ণ আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সমন্বয় সাধন না হওয়া। আর তখনই সেই সংসারে অশান্তির বাতাস সর্বদা প্রবাহমান হয়। একটু তুচ্ছ ঘটনাকেও কেন্দ্র ঘটে যায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা। একটি পোশাককে কেন্দ্র করেও অনেক নারী আত্মহত্যা করেছে
অথচ এই নারীদের মধ্যে যদি স্বামীর প্রতি ভালোবাসা ও আন্তরিকতা বিরাজ করতো তাহলে এমন জঘন্য অপরাধ আত্মহত্যা বেছে নিতে পারতো না। পক্ষান্তরে বহু পুরুষ আছে যারা তাদের স্ত্রীদের প্রতি সর্বদা চাপপ্রয়োগ ও অত্যাচার চালিয়ে যায়। এদের নিষ্ঠুরতা খুবই ভয়াবহ। বছরের পর বছর সংসার করে যায় কিন্তু তাদের মনের মধ্যে পরিপূর্ণ ভালোবাসা ও আন্তরিকতা খুজেঁ
পায় না। সবসময় বিরাজ করতে থাকে অস্থিরতা। কিছু পুরুষের স্বভাব হলো
তাঁর স্ত্রীর দোষ খুঁজে বের করা। অথচ নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের দোষ তো খুঁজেই বেড়াতেন না বরং যদি কোনো ভুল দেখতেন তাহলে তিনি তা সংশোধন করে দিতেন। তিনি পারিবারিক কাজেও স্ত্রীদেরকে সহায়তা করতেন। নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবসময় Sacrifice ও Compromise করে চলতেন; যাতে করে পরিবারের মধ্যে সুখ-শান্তি প্রবাহমান থাকে। কিছু পুরুষ মনে করেন- যেহেতু তিনি পরিবার পরিচালনা করেন তাই তিনি স্ত্রীর উপর সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী।
আর মহান আল্লাহ কি নির্দেশ দিয়েছেন তা একটু অবলোকন করুন; “পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক” এ কারণে যে আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজেদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত; তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হেফাজতকারিনী ঐ বিষয়ের যা আল্লাহ হেফাজত করেছেনে।
আর তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, বিছানায় তাদেরকে ত্যাগ কর এবং তাদেরকে (মৃদু) প্রহার করো। এরপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমুন্নত মহান। (সূরা আন নিসা : ৩৪)
বর্তমানে অধিকাংশ পরিবারের মধ্যে দেখা যায় অশান্তি আর দ্বন্ধ-কোলাহল। খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে অনেক সময় দেখা যায় স্বামী ও স্ত্রী ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়েন। কখনো কখনো দেখা যায় স্ত্রী পরিবারের কর্তৃত্ব নিজের হাতে নিয়ে নিতে চায় আর এই সব বিষয় নিয়েও পরিবারের মধ্যে অশান্তি লেগেই থাকে। অথচ আল্লাহ তাআলা পরিবারের কর্তৃত্বের দায়িত্ব পুরুষের উপরে অর্পণ করেছেন। আর যেসব স্ত্রীলোক; যারা স্বামীদের আনুগত্য করে না কিংবা যারা এ ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করে। আল্লাহ তাআলা সংশোধনের জন্য পুরুষদেরকে যথাক্রমে তিনটি উপায় বাতলে দিয়েছেন। অর্থাৎ স্ত্রীদের পক্ষ থেকে যদি নাফরমানী সংঘটিত হয় কিংবা এমন আশঙ্কা দেখা দেয় তবে প্রথম পর্যায়ে তাদের সংশোধন হল যে নরমভাবে তাদের বোঝাবে। যদি তাতেও বিরত না হয়; তবে দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদের বিছানা নিজের থেকে পৃথক করে দেবে। যাতে এই পৃথকতার দরুন সে স্বামীর অসন্তুষ্টি উপলব্ধি করে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে পারে। তারপর যদি তাতেও সংশোধন না হয়, তবে মৃদুভাবে মারবে, তিরস্কার করবে। আর তার সীমা হল এই যে শরীরে যেন সে মারধরের প্রতিক্রিয়া কিংবা যখম না হয়।
কিন্তু এই পর্যায়ের শাস্তি দানকেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পছন্দ করেননি বরং তিনি বলেছেন- ‘ভালো লোক এমন করে না। যাইহোক সাধারণ মারধরের মাধ্যমেই যদি সমস্যার সমাধান হয়ে যায়; তবুও উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গেল।
যদি এ তিনটি ব্যবস্থার ফলে তারা তোমাদের কথা মানতে আরম্ভ করে, তবে তোমরাও আর বাড়াবাড়ি করো না এবং দোষ খোঁজাখুঁজি করো না বরং কিছু সহনশীলতা অবলম্বন কর।
আর একথা খুব ভাল করে জেনে রেখো যে, আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে নারীদের উপর তেমন কোনো উচ্চ মর্যাদা দান করেননি। আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব তোমাদের উপরও বিদ্যমান রয়েছে, তোমরা কোনোরকম বাড়াবাড়ি করলে তার শাস্তি তোমাদেরকেও ভোগ করতে হবে। অর্থাৎ- তোমরাও সহনশীলতার আশ্রয় নাও; সাধারণ কথায় কথায় দোষারোপের পন্থা খুঁজে বেড়িয়ো না। আর জেনে রেখো আল্লাহর কুদরত ও ক্ষমতা সবার উপরেই পরিব্যাপ্ত।
অন্য বর্ণনায় এসেছে- এক সাহাবি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন
“হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো উপর তাঁর স্ত্রীর কি হক আছে? রাসূল বললেন- তুমি খেতে পেলে তাকেও খেতে দেবে, তুমি পরিধান করলে তাকেও পরিধেয় বস্ত্র দেবে, তাঁর চেহারায় মারবে না এবং তাকে কুৎসিত বানাবে না, তাকে পরিত্যাগ করলেও ঘরের মধ্যেই রাখবে।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উত্তম ব্যবহার, আন্তরিকতা ও ভালোবাসার মাধ্যমে বৈবাহিক জীবনের মধুরতা অর্জন করেছেন। বর্তমান সময়ে দেখা যায় পারিবারিক জীবনে অশান্তির একটি মূল কারন হচ্ছে নৈতিক চরিত্রহীনতা। তাইতো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
“তোমাদের মধ্যে ঈমানে পরিপূর্ণ মুসলমান হচ্ছে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি। যেসব লোক নিজেদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম তারাই তোমাদের মধ্যে অতি উত্তম।” একটি পরিবারে একজন পুরুষ অবস্থান হচ্ছে যথাক্রমে; পিতামাতার সন্তান,
ভাইবোনের প্রিয় ভাই, তাঁর স্ত্রীর প্রিয়তম স্বামী, সন্তানের বাবা এবং ছেলের বউয়ের শ্বশুর। অপরদিকে একজন নারীর অবস্থান হচ্ছে- তাঁর স্বামীর প্রিয়তমা স্ত্রী, সন্তানের জননী,শাশুড়ি ইত্যাদি। অতএব নারী ও পুরুষ উভয়ে যখন যেই অবস্থানে থাকে তারা যদি তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো যথাযথ ভাবে পালন করে। তাহলে পারিবারিক জীবন হয়ে উঠবে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধিময়। আর যদি
• সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৪২। জামে তিরমিজি, হাদিস নং ২১৪২।
তারা স্ব স্ব স্থান থেকে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে তাহলে সংসারে অশান্তি ও দ্বন্দ্ব-কোলাহল নেমে আসে।
আসুন! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসৃত পদ্ধতি অনুযায়ী জীবন-যাপন করি এবং তিনি যেভাবে উত্তম ব্যবহার ও সুষ্ঠু পরিচালনার দ্বারা প্রভাব বিস্তার করেছেন; সেই দিক নির্দেশনাগুলো মেনে চলার চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন । ছুম্মা আমিন।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?