বইঃ নির্বাসন লেখকঃ সাদাত হোসাইন (review with pdf)

Post ID 111564

বইঃ নির্বাসন
লেখকঃ সাদাত হোসাইন
review credit:-💕Shopnil Riya

একটি বইয়ের মধ্যে যাদের জীবন চক্র বর্ণনা করা হবে, আপনি তাদের হাসিতেই হাসবেন, তাদের দুঃখেই দুঃখ অনুভব করবেন!
বাস্তবে হয়তো আপনি কখনোই কোনো ডাকাত পরিবারের সদস্যের জন্য দুঃখ অনুভব করবেন না।
অথচ বই পড়ার পর-
থাক, সেটা না হয় বই পড়ার পরই ভেবে দেখবেন।
.
৩৭৬ পৃষ্ঠার নির্বাসন উপন্যাসটি পড়া শেষ করেও এর রেশ থেকে গেছে বেশ কিছুক্ষণ! 
পুরো উপন্যাসটাজুড়ে আমার আকর্ষণ ধরে রাখা চরিত্র জোহরা।
এখন এই চরিত্রে কী এমন আছে তা জানতে হলে তো আপনাকে অবশ্যই বইটি পড়তে হবে।
.
এবার না হয় আমার পাঠ-অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কিছু শেয়ার করা যাক।
বইটি নিয়ে বলতে গেলে অনেক কিছুই বলা যায়।
আমার মনে হয় সাদাত হোসাইন এর কলমের ছোঁয়ায় অতি সাধারণ গল্পগুলোও অসাধারণ রূপে ধরা দেয় পাঠকচিত্তে!
আর নির্বাসনের কথা যদি বলি, তবে এ কথা বলতেই হয়, এত বড় একটি উপন্যাস হওয়া সত্ত্বেও এটি পুরোটা সময়জুড়ে পাঠকের আকর্ষণ ধরে রাখতে পুরোপুরি সক্ষম।
কারণ উপন্যাসটি পড়ার সময় খেয়াল করলে দেখবেন যে একটি রহস্যের ঝট খোলার সাথে সাথেই আরও একটি নতুন রহস্য সামনে এসে হাজির হচ্ছে।
তাই পুরোটা সময়জুড়ে আপনার শুধু মনে হবে, এরপর কী হবে?
আর পাঠক সেই রহস্যের ঝট খুলতে খুলতেই এরকম পেট মোটা একটি বই কখন যে আগ্রহ নিয়েই শেষ করে ফেলবে, টেরও পাবে না।
.
উপন্যাসটি আপনাকে অনেকগুলো অনুভূতির দারস্থ করবে।
কখনো উৎকণ্ঠা, কখনো ঘোর লাগা মুগ্ধতা, প্রণয়, ভালোবাসা, আতঙ্ক, ভয়, আবার কখনো অনন্ত নিঃস্বতা!
কখনো কখনো পাশে থাকা প্রতিটি মানুষের নিজস্ব ব্যক্তিগত দুঃখবোধ এতটা প্রগাঢ় হয়ে ওঠে যে কেউ আর কাউকে বলতে পারে না, “আমার বুকের উপর একটি দুঃখের পাহাড় চেপে আছে!
ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার! ভীষণ!”
বরং তখন প্রতিটি মানুষকেই মুখ বুঝে পুড়ে যেতে হয় নিজের ব্যক্তিগত দুঃখবোধের অনলে নিরবে-নিভৃতে!
উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে এমন একটা অনুভূতি আপনারও অনুভূত হতে পারে।
.
এই উপন্যাসে অনাড়ম্বর কিছুই নেই।
পুরোটাই জীবন গল্প, জীবনের গভীর বোধ।
তবে নির্বাসনের ভেতরের গল্পটা এতোটাই চমৎকার যে আপনাকে ছুঁয়ে যেতে অব্যর্থ।
.
এই উপন্যাসে আরও একটি মজার ব্যাপার হচ্ছে পরবর্তী পেইজে আপনি গল্পটা যেরকম ধারণা করবেন, আপনার ধারণার সাথে হয়তো কোনো মিলই আপনি খুঁজে পাবেন না বইতে।
এবং এইযে লেখক আমাদের ধারণাকে মিথ্যে প্রমাণ করে করেই গল্পটা এগিয়ে নিয়ে গেলেন, তাতেই পাঠকদের মনে হবে- নতুন একটি গল্পের স্বাদ পেলাম।
.
উপন্যাসটিতে আমার ভালো লাগা চরিত্রের নাম জোহরা।
লেখক জোহরা চরিত্রটিকে সৃষ্টি করেছেন একটি রহস্যময়ী চরিত্র হিসেবে।
এবং বুদ্ধিমতী তো বটেই।
কিন্তু জোহরা চরিত্রের বুদ্ধিমত্তার আড়ালে আমি আসলে লেখকের বুদ্ধিমত্তাকেই দেখতে পেয়েছি।
নিঃসন্দেহে জোহরা চরিত্রটি পাঠকের মনে ক্ষণে ক্ষণে নতুন ভাবান্তর সৃষ্টি করবে।
কেননা জোহরা চরিত্রের বুদ্ধিমত্তা, চঞ্চলতা, সাহসিকতা, উদ্ভট কর্মকাণ্ড কিংবা উচ্ছৃঙ্খলতা সবকিছুই অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়েই পাঠকচিত্তে দাগ কাটবে!
.
উপন্যাসটা যখন শেষ হলো, তখন মনে হলো এখানেই কি শেষ?
কই, এখান থেকে তো আবার শুরু হবার কথা।
কণা, মনসুর, মঞ্জু, জোহরা, হানিফ – এরপর এদের কী হবে?
কৌতূহলবশত আমার মতোই হয়তো পাঠক পরবর্তী পেইজে কিছু আছে কি না তা দেখার জন্য পাতা উল্টে দেখতেই পারে।
এবং এইযে লেখক শেষপর্যন্ত পাঠকের কৌতূহলটা ধরে রাখতে পারলেন, এটাই কি একটি বই লেখার সার্থকতা নয়?
.
পরিশেষে- হ্যাঁ, কণা এবং মনসুরের দেখা হবার পরের গল্পটা পাঠককে যার যার নিজের মতো করেই কল্পনা করে নিতে হবে।
লেখক এখানে একেবারেই সেই দায়িত্বটা নেননি।
বরং পাঠকের উপরই ছেড়ে দিয়েছেন।
তবে শেষে যে কথাটা না বললেই নয়,
তোরাব আলি লস্কর জোহরাকে ঠিক কথাটাই বলেছিলেন, “হারিয়ে যাওয়া মানুষ কখনো ফিরে আসে না, যে ফিরে আসে সে হয় তার ছায়া।
দেখতে শুনতে একই মানুষ, কিন্তু ভেতরটা আলাদা।”
ঠিকই তো।
এই যে স্ত্রীর প্রতি এত প্রেম, এত ভালোবাসা  থাকা সত্ত্বেও হারিয়ে গিয়ে সেই মানুষটাই শেষে ফিরে এলো কেমন অচেনা হয়ে!
ব্যাপারটা কেমন না?
উপন্যাসজুড়ে আমার ভালো লাগা কিছু লাইন-
💦যে ঘরে নারী নেই, সেই ঘরের চেয়ে মায়াহীন গৃহ আর জগতে নেই।
💦আপনি বিহীন এ পৃথিবীটা কী ভীষণ জঘন্য।
💦অজস্রবার ভালোবাসি বলার পরও ভালোবাসা হয় না।
আবার একবার না বলেও পৃথিবীর সবচেয়ে গভীরতম অনুভূতি নিয়ে ভালোবেসে ফেলা যায়।
💦মায়া এমন এক জিনিস,যা মানুষকে অন্ধ করে দেয়।
হিতাহিত জ্ঞান বুদ্ধি লোপ পাইয়ে দেয়।
মায়ার প্রভাব ভালোবাসার চেয়েও বেশি।
💦ইট কাঠের কাঠামোতেই কি ঘর হয়?
ঘর হতে হলে ঘরের দরজায় মানুষ থাকতে হয়।
সেই মানুষের মনে মায়া থাকতে হয়, চোখে অপেক্ষা থাকতে হয়।
নাহলে কিসের মায়ায় ঘরে ফিরবে মানুষ?
💦পৃথিবীতে সবারই একটা নিজের মানুষ থাকে।
নিজের একটা জায়গা থাকে।
সবচেয়ে শক্ত, কঠিন যে মানুষটা, তারও।
সে চায় সেই জায়গাটাতে গিয়ে সে তার কঠিন আবরণটা খুলে সম্পূর্ণ নিরাবরণ হয়ে যেতে। ভানহীন, শিশুর মতো।
💦আমিতো ভাবি পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ জায়গাটাও আপনি থাকলে আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর হয়ে উঠবে।
💦আমাদের সবার বুকের ভেতরেই একান্ত নিজের একটা জগৎ থাকে, নিজের একটা মানুষ থাকে।
সেই মানুষটার কাছে আমরা শিশু হয়ে যেতে চাই।
আমরা চাই সেই মানুষটা আমার খামখেয়ালি বুঝুক।
আমার রাগ, অভিমান, ভালোবাসা, দুঃখ, আনন্দ সব বুঝুক।
আমি না বলতেই বুঝুক।
💦এমন হিমের রাতে তুমি হলে ঘোর,
কুয়াশাও হয়ে যায় আদুরে চাদর।
💦জীবন কী আশ্চর্যরকম অনিশ্চিত, অনির্দেশ্য।
আর মানুষ সেখানে কী ভীষণ অসহায়।
এখানে নাটকের লিখে রাখা পাণ্ডুলিপিও মঞ্চস্থ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে হুট করে বদলে যায়।
হয়ে যায় অচেনা অন্য কোনো গল্প।
সেই গল্পে মানিয়ে নিতে হয় কুশীলবদের।
💦জগতে নিসঙ্গ মানুষের কান্নার মতো এতো গভীর আর কিছু নেই!
এমন তীব্র আর কিছু নেই!
💦 মানুষের গভীরতম কান্না আর আর গভীরতম প্রার্থনা হয় একা, নিঃশব্দে, গোপনে।
💦গভীরতম অন্ধকার মানুষকে যতটা ডুবিয়ে রাখতে পারে, আলো তা পারে না।
অন্ধকার গভীরতম প্রার্থনার সময়। অন্ধকার তীব্র আরাধনার সময়।
কান্না সমর্পণের সময়।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?