বইঃ জোছনাফুল।
লেখক:-আব্দুল্লাহ মাহমুদ নজীব
পৃষ্ঠা সংখ্যা— ১৪২
প্রচ্ছদ মূল্য— ২৫০ টাকা ।
▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔▔
বইটি লিখেছেন তরুণ কথাসাহিত্যিক “আব্দুল্লাহ মাহমুদ নজীব” । লেখক আমাদেরকে জীবনের এই পাঠশালায় একটি নতুন ফুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে, নাম– জোছনাফুল । এই ফুলের সুবাস কেমন ? কিভাবেই বা নিতে হয় এই সুবাস ? জীবনদর্শনের এই নতুন পাঠে সেটাই শিখতে পারবে একজন বিশ্বাসী পাঠক । হৃদয়ে ছড়িয়ে পড়বে জোছনাফুলের মনকাড়া সৌরভ ।
–
❒ বইয়ের আলোচ্য বিষয়—
 ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄
আসলে এ ধরনের ‘প্রবন্ধগল্প’ বইয়ের মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরা কঠিন । একেকটা গল্প একেক রকম হয় । তবে এক কথায় বললে, বইটি জীবনদর্শনের বই । জীবনের পথে-পথে ছুটে চলা নানা মূহুর্তের কিছু ছোট-বড় অনুভব-অনুসঙ্গকে এক জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে এ বইয়ে । লেখক নিজের জীবনবোধ থেকে কিছু শিক্ষনীয় পাঠ তুলে এনেছেন । জোছনা মুখরিত উঠোনে বসে আড্ডা জমিয়েছেন পাঠকদের সাথে ।
বইটি আমাদেরকে শুনিয়েছে জীবনের কথা ।এঁকেছে ভালোবাসার আল্পনা । চন্দ্র-সূর্যকেও টেনে নিয়ে এসেছে জীবনের এই পাঠশালায় । কবিতারাও মিলিত হয়েছে জোছনাফুলের এই আঙিনায় । কখনো নিয়ে গিয়েছে সমুদ্রের পাড়ে । কুড়িয়ে নিয়েছে ভাবনার ঝিনুক আর বিশ্বাসের মুক্তো । প্রকৃতি ও প্রকৃতির স্রষ্টাকে অনুভব করিয়ে দিয়েছে বিশ্বাসের দর্পণে । কখনো শিখিয়েছে ফ্রিল্যান্সিং, কখনোবা সাহিত্য । আয়নায় তুলে ধরেছে জীবনের কিছু প্রতিচ্ছবি । গল্পে গল্পে উঠে এসেছে কুরআন-সুন্নাহর অমূল্য সব সম্পদ আর জীবন উদযাপনের সহজ কিছু সূত্র ।
–
❒ বইটি কেন পড়বেন—
 ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄
“এক মুমিন আরেক মুমিনের আয়না” – একটিমাত্র বাক্যে নবিজির কত দিক নির্দেশনা জড়িয়ে আছে, জড়িয়ে আছে কত অর্থবহ আবেদন– তা বুঝতে এবইটা আপনাকে পড়তে হবে । জীবনকে ভালবাসতে, জীবনকে যত্ন নিতে, হৃদয়ের খোরাক পেতে বইটি আপনাকে সঙ্গ দেবে । জীবনের প্রত্যাশা পূরণ ও বিষণ্নতা দূরীকরণের কিছু সহজ পাঠে আপনার অন্তরকে প্রশান্তিময় করে তুলবে । বইয়ের অলিতে গলিতে খুঁজে পাবেন কুরআন নিয়ে তাদাব্বুরের গল্পকথা । প্রিয় পাঠক, জোছনাস্নাত রাতের নীরবতায় শব্দস্নাত হয়ে হারিয়ে যেতে চাইলে এই বইটা পড়ুন । জোছনাধোয়া উঠোনে বসে সাহিত্যের চাঁদর মুড়িয়ে জীবন দর্শনের এই পাঠশালায় আপনাকেও স্বাগতম ।
–
❒ পাঠ্যানুভূতি—
 ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄
গল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে, “আয়না ভাঙার ডাক”, “সাশ্রু” আর “বাইশে জানুয়ারি” শিরোনামের গল্প তিনটি । সাহিত্যের নৈপুণ্যে, গদ্যের অনুপম স্টাইলে আর শব্দের অনন্য কারুকার্যে পরিপূর্ন বইটিতে রয়েছে ভাবনার যথেষ্ট খোরাক । বইটি পড়তে গিয়ে কখনো কখনো মনে হয়েছে জোছনা মুখরিত রাত্রিবেলায় লেখকের সাথে আড্ডায় বসেছি । লেখক বলছে আর আমি শুনছি । যদিও বইয়ের ভাষা মান লেখকের আগের বইগুলোর তুলনায় একটু কঠিন লেগেছে । তবুও সুন্দর ।
বইয়ের শেষে স্থান পেয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ কবিতা । কবিতা আমার চোখের বিষ হলেও এ কবিতাটা মনে দাগ কেটেছে । কখনো হাসিয়েছে, কখনোবা আপ্লুত করেছে । বইটি হার্ডকভার হওয়ায় পড়তে খুবই ভাল লেগেছে । নীল রঙের প্রচ্ছদ আর বইয়ের নামলিপিটাও বেশ সুন্দর । তবে অল্পকিছু বানান ভুল চোখে পড়েছে ।
–
❒ লেখক সম্পর্কে কিছু কথা—
 ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄ ̄
লেখক তাঁর বইয়ে আমাদেরকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, জান্নাতের স্বপ্ন । তাঁর লেখাগুলো পড়লে খুব ভাল হয়ে যেতে ইচ্ছে করে, খুব ভাল । খুব পড়াশুনো করতে ইচ্ছে করে । যখনই তার বই হাতে নেই, ভাবি আমার বয়সী একটা ছেলে কিভাবে এত গভীর ভাবে ভাবতে পারে, এত চমৎকার করে লিখতে পারে ?! তার বই আমার কাছে দ্বীনি বন্ধুর সোহবত বলে মনে হয় । যার লেখা আমায় আল্লাহভীতি স্মরণ করিয়ে দেয়, নবিজির পছন্দগুলোকে সবার আগে প্রাধান্য দিতে শেখায়, সাহাবীদের মতো করে জীবন গড়তে অনুপ্রেরণা যোগায় ।
–
রিভিউটি শেষ করছি কবি আল-মাহমুদকে কেন্দ্র করে লেখা “মেনে নেব আমার এ ঈদ” গল্পে থাকা একটি চমৎকার উদ্ধৃতি দিয়ে—
“যদি জীবনটা রমজানের মতো কাটাতে পারো, আখিরাতটা হবে ঈদের মতো ” ।
“পশ্চিমাকাশে চাঁদ হাসলেই পৃথিবীতে ঈদ চলে আসে । আল্লাহ্! এমন একটা জীবন দাও, যেন চোখের পাতা বন্ধ হলেই স্বপ্নের ঈদটা পেয়ে যাই ।”
════════════════════════
বইটি প্রকাশিত হয়েছে “গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স” থেকে ।
পৃষ্ঠা সংখ্যা— ১৪২
প্রচ্ছদ মূল্য— ২৫০ টাকা ।