বইঃ ইন্দুবালা ভাতের হোটেল লেখক: কল্লোল লাহিড়ি বই রিভিউ

গ্রন্থ: ইন্দুবালা ভাতের হোটেল
লেখক: কল্লোল লাহিড়ি
প্রকাশনী:সুপ্রকাশ
মুদ্রিত মূল্য: ২৩০টাকা( ভারতীয় মুদ্রায়)
বই আলোচনা: ইন্দুবালা ভাতের হোটেল।

অনেকদিন পর একটানা বসে একটা বই পড়ে শেষ করলাম। বাচ্চারা ঘুমালে রাত সাড়ে এগারোটায় শুরু করেছি। ১৫৭ পৃষ্ঠার বই শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি পৌনে দুটো বাজে। বুঝলাম পড়ার গতি খানিকটা কমে গেছে। আগে হলে এত সময় লাগতো না। যাইহোক বলছি ” ইন্দুবালা ভাতের হোটেল” এর কথা।
খুবই আশ্চর্য কথা লেখক কল্লোল লাহিড়ির প্রকাশিত বই মোটে দুটো। সেই উনার বইয়ের বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা দেখে আমার মনে হলো বইটা ভালো হবে। নেটে সার্চ দিয়ে প্রথম অধ্যায় পেলাম। সেটা পড়ে তো পড়ার আগ্রহ আরও বেড়ে গেল। অনেক ঝামেলা করে বই পেয়ে একটানা পড়লাম। সত্যি বলতে অনেক দিন পরে এত আগ্রহ করে কোনো বই পড়লাম।
না,আহামারী কোনো জীবন বদলে দেয়ার গল্প এটা না। বরং ইন্দুবালার অসহায় জীবনে অবলম্বন হয়ে ওঠা ভাতের হোটেলের গল্প। যে নারী বাংলাদেশের খুলনার কলোপোতায় খুব আদুরে মেয়ে হিসেবে জীবন শুরু করেছিল। মনে মনে ভালোবেসেছিল কিশোর বন্ধু মনিরুল কে। বাবা- মা কিছু একটা আন্দাজ করে। মেয়েকে জাতকুল রক্ষায় বিয়ে দেন পশ্চিম বঙ্গের এক দোজবর মাস্টার রতনলাল মল্লিকের সাথে। বাবা ভেবেছিল এর থেকে ভালো সম্বন্ধ আর হয় না। কিন্তু ভাগ্য ছিল অন্যরকম। জীবনে শুধু ঘাত-প্রতিঘাত। তবে সেই ঘাত-,প্রতিঘাতের গল্প আমরা শুনতে পাই এক একটা খাবারের কাহিনীর সাথে। 
সবচেয়ে মজা লেগেছে প্রতিটি অধ্যায়ের নাম খাবারের নামে।আর সেই খাবারের কথার সাথে ইন্দুবালার অতীত, বর্তমান , ছেলেমেয়ে,বাবা-মা এবং তাকে হোটেল খুলে বসার উৎসাহ এবং সাহায্যকারী লছমী এবং ধনঞ্জয় এর কথা জানা যায়। ছেলেদের প্রতিষ্ঠিত করেও তাদের কাছে রাখেনি। সবাইকে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করে নিজে হোটেল আগলে থেকে গেছে। শুধু টাকার জন্য যে হোটেল না বরং মানুষকে খাওয়াতে ভালো বাসে ইন্দুবালা। তাইতো হোস্টেল,মেসের ছেলেরা যেমন তার রান্না খাওয়ার জন্য লাইন ধরে তেমনি নকশাল করা ছেলেরা গোপনে এসে তার কাছে খেয়ে যায়।
কল্লোল লাহিড়ির লেখাতে প্রচন্ড মায়া জড়ানো। সহজ একটা খাবারের রান্নার কথাটাই এমন সুন্দর করে লিখেছেন যেন চোখের সামনে দেখছি। সামান্য কুমড়ো ফুলের বড়া ভাজার এমন বর্ননা দিয়েছেন যে মনে হচ্ছিল এক প্লেট গরম ভাত নিয়ে ইন্দুবালার সামনে বসে পড়ি। ভাজা হলেই প্লেটে তুলে দেবে।
এছাড়া চন্দ্রপুলি, বিউলির ডাল, আমতৈল, কচুবাটা সব আমাদের আদি ঘরের খাবার যা সবসময় মুখে জল আনে। যে খাবার পাওয়া যায় “ইন্দুবালা ভাতের হোটেলে”।
“আদর্শ হিন্দু হোটেল” এর মত আর একটা বই পড়লাম। যেটাই রান্নাকে অবলম্বন করে স্বপ্ন ছুঁতে পারে অতি সাধারণ মানুষ। যা ভালো লাগে। মুগ্ধ হই।
মায়াতে আটকে যায় সত্তর পেরোনো ইন্দুবালার।
গ্রন্থ: ইন্দুবালা ভাতের হোটেল
লেখক: কল্লোল লাহিড়ি
প্রকাশনী:সুপ্রকাশ
মুদ্রিত মূল্য: ২৩০টাকা( ভারতীয় মুদ্রায়)
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?