বইঃ আমি সিরাজের বেগম -শ্রী পারাবত | রিভিউ

সদ্য শেষ করলাম শ্রী পারাবত বাবুর ঐতিহাসিক এই উপন্যাসটি । শুরু থেকেই পাঠককে এক অদ্ভুত আকর্ষণে টেনে রাখতে সক্ষম বইটি । লেখকের প্রাঞ্জলভাষার প্রয়োগ, বর্ননা কৌশল , এবং সর্বোপরি সিরাজের বেগম লুৎফার নিজের জবানিতে বর্ণিত হাহাকার আমাদের সেই সময়ের ইতিহাসে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করায় ।
এই উপন্যাসে নায়ক এবং নায়িকা একজনেই । তিনি হলেন লুৎফা । সিরাজ এখানে অনেকটাই পার্শ্ব চরিত্র ।

আমি সিরাজের বেগম পিডিএফ ডাউনলোড করুন -শ্রী পারাবত আমি সিরাজের বেগম pdf download Ami Serajer Begom by Sri Parabat pdf download

বস্তুত আমরা যখন সংগ্রামের কাহিনী, কোনো সম্রাটের বীরত্বের জয়গাঁথা ইতিহাসের পাতায় পড়ি, সেখানে কিন্তু সম্রাটদের আলোকছটায় অনেকটাই ম্লান হয়ে যায় অন্তঃপুরে থাকা বেগম বা রাণীদের কথা । এই উপন্যাস সেই কাহিনী তুলে ধরেছে ।
আসলে ইতিহাস সেই বেগম বা রাণীদের স্থান দেয়নি ।দিলেও সেটি খুব যৎ সামান্য । একদিকে নবাবরা যুদ্ধ, রাজ্য শাসনে ব্যাপৃত থাকায়, অনেকটাই উপেক্ষিত এবং একাকীত্বে ভরা জীবন বেশিরভাগ বেগমদের। তাঁদের মধ্যে অনেকেই কেবল দামি বস্ত্র আর মূল্যবান রত্ন খচিত অলঙ্কার পেলেই নিজেদের ধন্য মনে করে । বিলাসবহুল জীবনের সুখস্বাচ্ছন্দ্যই তাঁদের কাছে মুখ্য । 
স্ত্রী হিসেবে স্বামীর প্রতি তাঁদের কোনো টান বা আবেগ অনেকটাই হারিয়ে যায় সময়ের অগ্রগতির সাথে সাথে । কিন্তু এমনও অনেক বেগম আছেন ইতিহাসের পাতায় , যাঁরা প্রকৃতই বেগমের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন । মূল্যবান অলঙ্কারের থেকেও তাঁদের কাছে প্রধান হয়ে উঠেছে নবাবের প্রতি অমোঘ প্রেম । গভীরতা এবং আবেগ । সর্বতোভাবে নবাবের জন্য অনুগত এবং নিবেদিত প্রানা বেগম এর সংখ্যা ইতিহাসে খুব সীমিত ।
বেগম লুৎফন্নীসা ছিলেন সেই ধরনের বেগম যিনি সামগ্রিক এবং আক্ষরিক অর্থেই ছিলেন নবাবের বেগম ।নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের থেকেও প্রধান হয়ে উঠেছিল নবাবের সেবাযত্নের ভাবনা । তাঁর জগৎ শুধু সিরাজকে কেন্দ্র করে ।
এই উপন্যাস এক জারিয়া অর্থাৎ এক ক্রীতদাসীর কিভাবে সিরাজের বেগমশ্রেষ্ঠা হয়ে উঠলেন সেই কাহিনীর কথা বলে । ত্যাগ, তীক্ষ্ণ বুদ্ধির প্রয়োগ, অপরূপা লূত্ফা কিভাবে হীরাঝিলে দিনের পর দিন স্বয়ং নবাব কর্তৃক উপেক্ষিতা হয়েছেন সেই কাহিনী মেলে ধরে ।
সীমাহীন ভালোবাসা নিয়েও তবু বেগম সিরাজের পাশেই ছিলেন । আত্মহত্যার কথা ভাবলেও তা করতে পারেননি । এই অমোঘ ভালোবাসার টান সিরাজ কি চিরতরে ফিরিয়ে দিয়েছিল? নাকি এই লুত্ফার কাছেই ফিরে এসেছিল জীবন শেষের আগে? জানতে হলে পড়তেই হবে এই উপন্যাস । এখনো একরকম ঘোরের মধ্যেই আছি বলা যায় । স্মৃতির মণিকোঠায় রয়ে যাবে দীর্ঘদিন এই উপন্যাস ।
কুচক্রী এবং ষড়যন্ত্র কিভাবে সিরাজের জীবনে অন্ধকার নিয়ে এসেছিল সেই করুণ কাহিনী পাঠককে অভিভূত করবেই করবে । একথা জোর দিয়ে বলতে পারি ।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?