ফুল লাগলে চেয়ে নিবেন : লেখক নসিব পঞ্চম জিহাদী | Ful Lagle Cheye Niben

  • বই : ফুল লাগলে চেয়ে নিবেন
  • লেখক : নসিব পঞ্চম জিহাদী
  • প্রকাশনী : বুকস্ট্রিট
  • পৃষ্ঠা : ১২৮
  • মুদ্রিত মূল্য : ২৪০
  • ব্যক্তিগত রেটিং : ৮/১০

ফুল লাগলে চেয়ে নিবেন :

পুরান ঢাকার জনসন রোডে ওয়াসার পানির লাইন মেরামতের কাজ চলাকালীন সমস্যা চিহ্নিত করতে ম্যানহোলে নামতে হলো ওয়াসার ইঞ্জিনিয়ার রকিব উদ্দিনকে। সেই কাজ করতে গিয়ে তার ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ পথে আবিষ্কার হলো এক বিস্ময়কর জিনিস। উত্তেজিত রাকিব তার সুপারভাইজারকে জানালো বিষয়টা। রকিবকে বলা হলো, মুখ বন্ধ রাখো। চুপ থাকতে গিয়ে রকিব ভুলে গেল বিষয়টা।
১৯৮৪ সালে বিথি নামের এক মেয়েকে বিয়ে করেন মুবিন নামের এক যুবক। দিনকাল ভালোই কাটছিল। তবে হঠাৎ করেই বিথির যেন কী হলো! মাঝেমাঝেই বলে ওঠে তার ডান হাত তার নিয়ন্ত্রণে নেই, তার কথা শুনতে চায় না। সেই হাতের একটা জীবন আছে। সে সবার ক্ষতি করতে চায়। এমন মানসিক অসুস্থতা নিয়ে একদিন বিথি নিজেই নিজের ডান হাত কেটে ফেলল, আর মুবিনকে ছেড়ে হারিয়ে গেল অনেক দূরে।
তাসমান ফারাবী একজন বিজ্ঞাপন নির্মাতা। কাজের প্রয়োজনে ছোটো এক সিনেমা বানাতে চলেছে সে। সেজন্য তার দরকার ডায়ালঅলা একটি ল্যান্ডলাইন টেলিফোন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পাওয়া গেল তেমনই এক লাল রঙের প্রাগৈতিহাসিক যুগের টেলিফোন। রাত দুইটার পর সে টেলিফোনে ভেসে আসে অদ্ভুত কিছু শব্দ, ফিসফাস করে কেউ যেন কথা বলে। এর রহস্য উদ্ধার করতে গিয়ে নিখোঁজ হলো ফারাবী।
ফারাবীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা জানতে পারে তার দুই বন্ধু। বন্ধুকে খুঁজতে বের হয় ওরা। এমন সময় হাতে এসে সূত্র। লাল টেলিফোন, সেখান থেকে পাওয়া একটি কাগজে হিজিবিজি কিছু লেখা আর একটি চিরকুট। যে চিরকুটে লেখা, ‘ফুল লাগলে চেয়ে নিবেন (বেলা দুই ঘটিকা হইতে)’। সূত্রগুলো ইঙ্গিত দেয় অতীতের আরেক ঘটনার, যার সাথে ফারাবীর নিখোঁজ হওয়ার কোনো না কোনো যোগসূত্র আছে। আর তাই দুই বন্ধু হাজির হয় অবসরপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনসুর সাহেবের কাছে। তাকে সাথে নিয়ে আবার ছুটে যাওয়া ভাষা বিশেষজ্ঞ লুৎফর রেহমানের কাছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসে অনেক সত্য ঘটনা। জানা যায় এক নির্মম সংগঠনের কথা। সেই সংগঠনের অস্তিত্ব নিয়ে গেল তাদের ফরাশগঞ্জের নর্থব্রুক হলের এক গোপন রহস্য। কী সেই রহস্য? ফারাবীকে উদ্ধার করতে পেরেছিল বন্ধুরা? ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সেই পাগলটাই বা কী তথ্য দিলো? এসবের যোগসূত্র কোথায়?

পাঠ প্রতিক্রিয়া

‘মাঝরাতে একটি গল্প শুনিয়েছিলেন’ আর ‘ফুল লাগলে চেয়ে নিবেন’ বই দুইটি একই সিরিজের হলেও ভিন্ন আঙ্গিকে লেখা। ছোটো বই দুটি পড়তে বেশি সময় লাগে না। এক নিঃশ্বাসে শেষ করে দেওয়া যায়। আমার একদিন লেগেছে বই দুটি শেষ করতে। মাঝে বিভিন্ন কাজ না থাকলে হয়ত আরও আগে শেষ হয়ে যেত। এমন ছোটো বইয়ের রিভিউ লিখতে আমার বেশ ভয় কাজ করে। মনে হয়, যা লিখব তাতেই স্পয়লার হয়ে যাবে। তাই এক সাথে দুটি বইয়েরই রিভিউ দিচ্ছি। জানি না, আবার স্পয়লার দিয়ে দিলাম কি না!

নসিব পঞ্চম জিহাদীর গল্প বলার ধরণ বেশ ভালো। আমরা কাউকে মুখে গল্প বললে যেমনভাবে বলি ঠিক যেন তেমনভাবেই গল্পগুলো এগিয়ে চলে। বাড়তি মসলা নেই, বিশেষণের আধিক্য চোখে পড়ে না, ঠিক যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই আছে যেন। বরং স্পষ্ট করে বললে তার চেয়েও কম হয়তবা।

স্ট্রং প্লট, দুর্দান্ত গল্প, বাচনভঙ্গি অসাধারণ – ১২৬ ও ১২৮ পৃষ্ঠার বই দুটিকে চাইলেই ২০০ থেকে ২৫০ পৃষ্ঠার বিস্তৃতিতে নিয়ে যাওয়া যেত। গল্পে ইতিহাসের মিশেল ছিল, ছিল মিথের আনাগোনা, তাই গল্প আরও বড়ো হলে হয়ত আরও বেশি তৃপ্তি পাওয়া যেত। যেমন, ‘ফুল লাগলে চেয়ে নিবেন’ বইটির শেষটা খুব তাড়াহুড়োয় শেষ হয়েছে মনে হলো। শেষের দিকটাও অস্পষ্ট। অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা। আশাকরি সিরিজের পরবর্তী বই এলে, সেখানে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। তবে ‘মাঝরাতে একটি গল্প শুনিয়েছিলেন’ বইটির শুরু থেকে শেষ, সবটাই বেশ মনোমুগ্ধকর।

নসিব পঞ্চম জিহাদী যেমন সিরিয়াস লেখা দিয়ে তার বই ভরিয়ে রাখেন, তারই মাঝে পঞ্চলাইনের মতো করে ঢুকিয়ে হাস্যরসাত্মক কিছু কথাবার্তা। সেগুলো পড়ে মাঝেমাঝেই আপন মনে হাসতে হয়। বেশ কিছু টাইপিং মিসটেক ছিল। বিশেষ করে ‘ফুল লাগলে চেয়ে নিবেন’ বইয়ে ৩৩ পৃষ্ঠায় ‘ঞাঘ য়ামান’ শব্দটা ঠিক কী ছিল, বুঝতে পারিনি। খুব সম্ভবত ফরমেট পরিবর্তন করতে গিয়ে বদলে গিয়েছিল শব্দটা। আশাকরি পরের মুদ্রণে ঠিক করে নেওয়া হবে। আরেকটা বিষয় বিরক্ত লেগেছে, পৃষ্ঠা বাড়ানোর জন্য ‘ফুল লাগলে চেয়ে নিবেন’ বইটির ফন্ট বাড়ানো। নাহলে হয়ত পৃষ্ঠার সংখ্যা আরো কম হতো। প্রচ্ছদের ব্যাপারে বলতে গেলে প্রথম বইয়ের চেয়ে দ্বিতীয় বইয়ের প্রচ্ছদ বেশি ভালো লেগেছে।

নসিব পঞ্চম জিহাদী বেশ আন্ডাররেটেড লেখক। তার লেখাগুলো ঠিক কারা পছন্দ করবে সেটাও হয়ত রহস্য। সবার জন্য সব লেখা না, সে জন্যই হয়ত লেখককে নিয়ে কথা হয় না। মাস্ট রিড না হলেও, আমি এই বইটি পড়তে সবাইকে সাজেস্ট করব। ভিন্নধর্মী লেখা, আশাকরি কেউ নিরাশ হবে না।

বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?