প্লাসেন্টা প্রিভিয়া – কী? কেন? কীভাবে? | Placenta Previa Details

প্লাসেন্টা প্রিভিয়া 

❏ গর্ভকালীন জটিলতাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি নাম হচ্ছে ‘প্লাসেন্টা প্রিভিয়া’ বা ‘লো লায়িং প্লাসেন্টা’।
গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা(গর্ভফুল/ডিম্বকবাহী গর্ভপত্র) সাধারণত জরায়ুর শীর্ষভাগে বা পাশে অবস্থান করে।  কিন্তু এটি যদি জরায়ুর একদম নিচে বা জরায়ুমুখে এসে যায়, তখন এই মেডিকেল কন্ডিশনকে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বলা হয়। গর্ভধারণের ২০তম সপ্তাহের বাইরে প্রতি ১০০০ গর্ভধারণের মধ্যে ৪টিতে প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

প্লাসেন্টা কী

❏ প্লাসেন্টা হলো মাতৃগর্ভে শিশুর সুরক্ষা বা সাপোর্ট সিস্টেম। এটি জরায়ুর দেয়াল সংলগ্ন একটি চ্যাপ্টা ও কিছুটা গোলাকৃতির অঙ্গ, যা গর্ভের শিশুকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসহ অক্সিজেন সরবরাহ করার পাশাপাশি শিশুর রক্ত থেকে বর্জ্যজাতীয় পদার্থগুলি প্রত্যাহারে সাহায্য করে। এছাড়া শিশুটি শরীরবৃত্তীয় যেসমস্ত কাজের জন্য উপযোগী হয়ে উঠে না, প্লাসেন্টার মাধ্যমে সেগুলো হয়ে থাকে।
কোনো কারণে প্লাসেন্টা ঠিকভাবে কাজ না করলে শিশুর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বেড়ে যায়!
প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হলে গর্ভস্থ সন্তানের মাথা সঠিক অবস্থানে থাকেনা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাথা উপরের দিকে বা আড়াআড়ি(ব্রীচ পজিশন) থাকতে দেখা যায় এবং গর্ভবতী নারীরা  স্পটিং বা হালকা থেকে ভারী রক্তপাতের সম্মুখীন হয়ে থাকেন। যদিও এ রক্তপাতের সময় কোন ব্যথা অনুভূত হয় না। 

প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার প্রকারভেদঃ

❏ প্লাসেন্টা প্রিভিয়া ৩রকমের হয়ে থাকে-
১.গর্ভফুল জরায়ুমুখকে পুরোপুরি ঢেকে রাখলে সেটাকে বলা হয় কমপ্লিট/টোটাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া।
২. যদি গর্ভফুল জরায়ুমুখকে আংশিক ঢেকে রাখে তখন তাকে মার্জিনাল/পার্শিয়াল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বলা হয়। 
৩.আর যদি জরায়ুমুখের ২সেন্টিমিটারের মধ্যে গর্ভফুলটি থাকে কিন্তু জরায়ুমুখকে ঢেকে রাখেনি – এই অবস্থাকে বলা হয় লো লায়িং প্লাসেন্টা।

প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার কারণঃ

❏ প্লাসেন্টা  প্রিভিয়া কেন ঘটে তা যদিও  প্রতিষ্ঠিত নয় তবে বেশ কয়েকটি কারণ গর্ভের নিচের অংশে প্লাসেন্টার অবস্থান বাড়ানোর জন্য দায়ী-
◑ ৩৫বছরের বা তার বেশি বয়সের মহিলাদের মধ্যে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া ঘটে থাকে।
 ◑এছাড়া যেসব মহিলাদের পূর্বে অনেকবার গর্ভাবস্থা হয়েছে বা যারা জমজ বা ত্রয়ীর মতো একাধিক গর্ভধারণের সম্মুখীন হয়েছেন তারা অন্যদের তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। 
◑জরায়ুতে ইতোমধ্যে অস্ত্রোপচার হয়েছে বা যাদের জরায়ু অস্বাভাবিক আকারের, তাদের প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।  
◑ধুমপান বা মাদকে আসক্ত এমন ধরনের মহিলাদের প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হয়ে থাকে। 
◑অতীতে গর্ভপাত হয়েছে- এমন মহিলাদের প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে।
 ◑এছাড়াও গর্ভাবস্থায় শিশুর অবস্থানও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ যা থেকে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হয়ে থাকে। শিশুর নিতম্ব আগের দিকে থাকলে বা গর্ভে অনুভূমিকভাবে থাকলে প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।

প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার লক্ষণঃ

❏ বিভিন্ন চিহ্ন এবং উপসর্গ আছে যার মাধ্যমে প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়-
◑গর্ভাবস্থায় ২০তম সপ্তাহের পরে যোনি রক্তক্ষরণ হলে তা প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 
◑গর্ভাবস্থার বয়স অনুপাতে জরায়ুর আকার বড় মনে হওয়া। তীব্র যন্ত্রণার সাথে খিঁচুনি আসা।

 প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার চিকিৎসাঃ

❏ প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হলে অবশ্যই বাচ্চা সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে ডেলিভারি করাতে হবে। যেসন হাসপাতালে আইসিইউ, এনআইসিইউ সাপোর্ট আছে, নার্সিং টিম সাপোর্ট, সার্জন টিম সাপোর্ট, ২৪ঘন্টা সিজারিয়ান সেকশন আছে-   এমন জায়গায় ডেলিভারি করাতে হবে। অন্তত ৪ব্যাগ ক্রস ম্যাচ রক্ত এবং সাধ্যমতো ডোনার রেডি রাখতে হবে। সবমিলিয়ে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য রেডি থাকা। 
চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি, সনোগ্রাফির সহজলভ্যতা, মানুষের সচেতনতা ইত্যাদির কারণে এই মৃত্যুগুলো অনেকাংশেই কমানো সম্ভব হচ্ছে।

প্লাসেন্টা প্রিভিয়াতে করণীয়ঃ

❏ নিয়মিত চিকিৎসকের কাউন্সিলিং এ থাকতে হবে। সব ধরনের ভারী কাজ এবং রাফ জার্নি থেকে বিরত থাকা।  পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। যোনিপথের কোন ধরনের পরীক্ষা না করা।

প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার প্রতিরোধঃ

❏ প্লাসেন্টা প্রিভিয়া সাধারণত প্রতিরোধ করা যায় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর ঝুঁকির কারণগুলো রোধ করা যায়।
প্লাসেন্টা প্রিভিয়া থেকে রক্তপাত- অনেক ক্ষেত্রে শয্যা বিশ্রাম, যৌনমিলন পরিহার তথা ক্রিয়াকলাপের  সীমাবদ্ধতা দ্বারা হ্রাস করা যেতে পারে।
লাবনী 
ভলান্টিয়ার কন্টেন্ট রাইটার
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?