প্রীতিসম্ভাষন ও শিষ্টাচার [ব্লগ] – নাফিসা তাবাসুম

❐ আপনার পরিচিতজনদের শুভেচ্ছা জানানো ‘নম্রতা ও মঙ্গলকামনা’-র একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিটি সমাজে শুভেচ্ছা জানানোর ভিন্ন ভিন্ন গঠনপ্রক্রিয়া রয়েছে। যেগুলো পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়া গড়ে তোলার মৌলিক বা প্রাথমিক উপাদান। 

              ❐ শুভেচ্ছা জানানোর প্রাথমিক করণীয়গুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো ‘হ্যালো’ শব্দের মাধ্যমে অপর পক্ষের সাথে যোগাযোগ শুরু করা। অপরিচিত কারো ক্ষেত্রে আপনি প্রথমদিকে ইতস্তত বোধ করলেও অপরপক্ষ যেন আপনার ‘হ্যালো’ টিউনটি কে স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে গ্রহণ করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিটি পরিচয়ের সূত্রপাতে ‘শুভেচ্ছা (Greetings)’ অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং এটি অন্যের কাছে আপনার সম্পর্কে একটি অনুকূল ভাবনা তৈরি করে। 
          ❐ (সম্ভাষণ Greetings) :
সম্ভাষণ হলো যোগাযোগের ক্ষেত্রে অপরপক্ষের উপস্থিতিকে বিশেষ স্বীকৃতি প্রদানের উপায়। আপনি কারো সাথে যোগাযোগ এর ক্ষেত্রে যদি এমন আচরণ করেন যেন ব্যাক্তি ভাবে তার উপস্থিতি আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে  উপভোগ করছেন তবে এটিই হলো উক্ত ব্যাক্তির প্রতি সম্ভাষণ বা গ্রিটিংস। যাকে সহজ বাংলায় শুভেচ্ছা বলা যায়।
কোনো ব্যাক্তি যদি সবসময়  মিশুক আচরণের মাধ্যমে অন্যকে গ্রহণ করতে অভ্যস্ত থাকে তাহলে আমরা অনেকেই তাদের নিয়ে তিরস্কার করি অথবা ভেবে থাকি যে উক্ত ব্যক্তিটি উদ্ভট আচরণ করছে। এমনটা মনে হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যথক্রমে; আপনি অফিসের অতিগুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজের দিনে দেরী করে উপস্তিত হয়েছেন আপনার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা অবশ্যই আপনার সাথে রাগ হওয়ার কথা। আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এ সময়মত উপস্থিত হতে পারেন নি, আপনার মিটিং এর আয়োজকের অবশ্যই রাগ হওয়ার কথা।
কিন্তু যখন তারা আপনাকে অবাক করে দিয়ে তাদের আচরণে স্বাভাবিকতা বজায় রাখছে তখনই মানুষ তাদের নিয়ে এমন ভাববে যেন তারা উদ্ভট কান্ড ঘটাচ্ছে। 
এই ধরনের ভ্রান্তির অবসান ঘটতে পারে একটি ভালো গ্রীটিংস এর চর্চা থাকলে। এবং পূর্বেই বলা হয়েছে ভালো গ্রীটিংস মানব আচরণের পরিপূরক একটি উপাদান।
       ❐ সম্ভাষণ জানানোর বিভিন্ন প্রকারভেদ :
★ অনানুষ্ঠানিক সম্ভাষণ  : অনানুষ্ঠানিক সম্ভাষণ বা শুভেচ্ছা  হতে পারে মৌখিক কিংবা বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি অথবা উভয় আচরণের মাধ্যমে। আপনি এই শুভেচ্ছা শুরু করতে পারেন হাই, হ্যালো দিয়ে। কিছু কিছু সম্প্রদায়ে “হেই” বিশেষ জনপ্রিয় এবং তুলনামূলক  বেশি গ্রহণযোগ্য। আপনি মুসলিম হয়ে থাকলে অপর মুসলিম ব্যাক্তিকে সালামের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানো সর্বোত্তম। উল্লেখ্য, যেই শব্দ দিয়েই শুভেচ্ছা জানাবেন শব্দটির সাথে অপরপক্ষের নাম জুড়ে দিতে ভুলবেন না। এতে করে আপনার নিকট ব্যাক্তির গ্রহণযোগ্যতা কতোটুকু তা প্রকাশ পায়। এবং হাই অথবা হ্যালো বলেই থেমে যাওয়া উচিত নয়। আচরণে এমন অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলুন যেন আপনি যোগাযোগ সচল রাখতে ইচ্ছুক।
কখনো কখনো এমন হতে পারে যে, আপনার যোগাযোগের অপর পক্ষের মানুষটি বেশ দূরে অবস্থান করছে। সেক্ষেত্রে
শব্দের মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখলে আশেপাশের মানুষ বিরক্তবোধ করতে পারে। এমতাবস্থায় আপনার উচিত  মৃদু হাসি এবং মাথা নাড়ানোর মাধ্যমে প্রতুত্ত্যর দেয়া। যেমন, থিয়েটার, রেস্টুরেন্ট, ক্লাস, হাসপাতালের ওয়েটিং জোন ইত্যাদি।
★ আনুষ্ঠানিক সম্ভাষণ :
কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে বেশ আনুষ্ঠানিক উপায়ে যোগাযোগ শুরু ও শেষ করতে হয়। অর্থাৎ সৌজন্যতা বজায় রাখার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়। যেমন; চাকরির ইন্টারভিউ, ব্যাবসায়ের মিটিং, নতুন সহকর্মী,  প্রতিষ্ঠানের সি.ই.ও, ক্লায়েন্টস, একেবারেই অচেনা কোনো ব্যাক্তি ইত্যাদি। তাদের সাথে যোগাযোগ এর শুরুতে আপনি ডিয়ার স্যার/ম্যাম শব্দটি ব্যাবহার করুন। কখনো কখনো উপযুক্ত সময় বুঝে গুড মর্নিং, গুড আফটারনুন অথবা গুড ইভিনিং ব্যাবহার করতে পারেন। রাত আটটার পরে কারো সাথে যোগাযোগ হলে যোগাযোগের শেষে গুডনাইট শব্দটি ব্যাবহার করুন। তাছাড়াও আমাদের পরিচিত কিছু ফ্রেজ বা বাক্যাংশ আছে যা আনুষ্ঠানিক যোগাযোগে আরেকটু মাত্রা যোগ করে। যেমন ;
  ❐ যোগাযোগের সময় অপরপক্ষকে “nice to meet you / pleased to meet you ” ( আপনার সাথে দেখা হয়ে আনন্দিত বোধ করছি)
“To whom it may concern” (সংশ্লিষ্টের প্রতি  দৃষ্টি আকর্ষণ করছি)
ব্যাবহার করতে পারেন। 
        ❐ আপনার বাসায় কাউকে শুভেচ্ছা জানাবেন কীভাবে: 
ঘর বা পরিবার হলো যেকোনো ভালো অভ্যাস গড়ে তোলার শিক্ষালয়। যেকোনো ভালো অভ্যাসের চাষাবাদ ঘর থেকেই শুরু হওয়া উচিত। 
আমরা বেশিরভাগ মানুষই দিনের শুরুতে ঘরের মানুষকে শুভ সকাল বার্তা দেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে চলি। স্কুল,কলেজ বা অফিস থেকে কেউ বাসায় ফিরলে তাদের স্বাগত জানাতে ভুলে যাই অথবা স্বাচ্ছন্দ বোধ করিনা। অথচ তার বিপরীত কার্যাবলি অর্থাৎ বার্তা দেয়া এবং স্বাগত জানানোর মতো ছোট ছোট বিষয়গুলো খুব বেশি সময়  খরচ করেনা বরং জীবনকে আরও আনন্দিত করে তুলতে পারে।
                 ❐ দাঁড়ানো:
 
কাউকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য কক্ষে তার প্রবেশের সাথেসাথেই আপনি দাঁড়িয়ে যান। অনেকসময় এটি আপনার জন্য একটু কঠিন হতে পারে। আপনার হাতে বা কোলে ভারী কিছু থাকতে পারে যা রেখে আপনার উঠে দাঁড়ানো সহজ নয়। তার মানে আপনি দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শনের জন্য প্রস্তুত না। এমনটা  আপনার সহকর্মীর আগমন ও প্রস্থানের ক্ষেত্রে হতে পারে। তবে অবশ্যই আপনি উর্দ্ধতন কর্মকর্তার আগমনের জন্য অপেক্ষা করলে, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের আগমনের জন্য অপেক্ষা করলে কোলে ভারী কিছু নিয়ে বসে থাকবেন না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে সম্ভাষণ জানানো আবশ্যক। যেমন,
★ বয়োজ্যেষ্ঠদের উপস্থিতি টের পেলে আমাদের দাঁড়ানো উচিত। 
★ পার্টিতে প্রধান প্রধান গেস্টদের আগমণ হওয়ার সাথে সাথে হোস্টের উচিত দাঁড়িয়ে তাদের স্বাগত জানানো।
★ এটি একটি সাধারণ নিয়ম যে, জাতীয় সংগীত প্রদর্শনের সময় আপনি যেই অবস্থানেই থাকেন এবং যেভাবেই থাকেন দাঁড়িয়ে যেতে হবে। 
একসময় সম্মান প্রদর্শনে শুধুমাত্র পুরুষদের দাঁড়ানোর প্রচলন ছিলো যেখানে মহিলারা বসে থাকার সুযোগ পেতো। তবে এখন সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিবর্তন এসেছে বিধায় সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলা উভয়কেই দাঁড়াতে হয়।
                    ❐ হ্যান্ডশেক:
মিশর ও ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়  হ্যান্ডশেক ছিলো বহুল প্রচলিত একটি গ্রিটিং পদ্ধতি তবে এটি তখন পুরুষের আচরণের মাধ্যমেই বেশি প্রকাশ পেতো। এটি এক ধরণের অঙ্গভঙ্গি যা অন্যের প্রতি আপনার মনোযোগের পরিমাণ তুলে ধরে।
ঘরের বাইরে আপনি কাউকে অল্প চেনেন, নতুন কোনো অতিথি আপনার বাসায় এলো, কোনো ব্যাবসায়ী আলাপের সমাপ্তি ঘটালে এইসকল ক্ষেত্রে আপনি হ্যান্ডশেক করতে পারেন। আপনার ডান হাতে কিছু থাকলে সেটি বাম হাতে হস্তান্তর করে ডান হাতের দ্বারা হ্যান্ডশেক করুন।
যোগাযোগ এর ক্ষেত্রে সবসময় মনে রাখা প্রয়োজন আপনার অপর প্রান্তের মানুষটিকে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। সেক্ষেত্রে হ্যান্ডশেক একটি অন্যতম মাধ্যম।
লেখাঃ নাফিসা তাবাসুম
ভলান্টিয়ার কনটেন্ট রাইটার, 
রাইটার্স ক্লাব বিডি।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?