প্রিয়তম অসুখ সে রিভিউ – সাদাত হোসাইন | Priyotomo Ashukh She

  • বই : প্রিয়তম অসুখ সে 
  • লেখক : সাদাত হোসাইন 
  • প্রকাশনী : অন্যপ্রকাশ 
  • পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৩৬০ 
  • মুদ্রিত মূল্য : ৭০০৳
সমকালীন গল্প ও থ্রিলার রহস্যের এর অদ্ভুত মেলবন্ধন দেখলাম এই বইটিতে। গল্পে প্রেম, বিরহ, সম্পর্কের উথান পতন, মনোজগতে দোলাচাল যেমন আছে তেমনি আছে রহস্য, কুটকৌশল, খুন, উত্তেজনা, রহস্য উন্মোচোন।

কাহিনি সংক্ষেপ

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া জুটি অনিক ও হৃদি বিয়ে করে ফেলে গোপনে। হঠাৎ এক রহস্যজনক দূর্ঘটনায় মারা যায় অনিকের বাবা। অনিক টের পায় পরিবারের অভাব অনটন দূর করার জন্য তার বাবা হয়ত কোন অবৈধ কাজে যুক্ত হয়েছিল। কোন একটা ঘটনায় তার বাবার অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। কিন্তু দরিদ্র অনিকের পক্ষে তার বাবার মৃত্যুরহস্য উদঘাটন করার মত অর্থ বা সময় কোনটাই ছিল না।
অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা ব্যায় এর ব্যাবস্থা করতেই বেকার অনিককে গলদঘর্ম হতে হয়। এর প্রভাব পরে তার ও হৃদির সম্পর্কেও। যদিও হৃদি অনিকের দুর্বল অবস্থানের কথা আগে থেকেই জেনেই তার সাথে থাকার জন্য সংকল্প বদ্ধ ছিল তারপরও বাস্তবতা ধিরে ধিরে দুজনের দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়। এর মাঝে হৃদির জীবনে আসে তার বাবা মায়ের পছন্দ করা প্রবাসী ছেলে নেহাল। সুদর্শন ও প্রতিষ্ঠিত নেহাল খুব সহজে মিশে যায় হৃদির পরিবারের সাথে। 
পাত্তা না দিতে চাইলেও একসময় নিজের ব্যাক্তিত্ব ও ভালোবাসার জাদুতে সে জায়গা করে নেয় হৃদির মনেও। হৃদি নেহালের প্রতি আরো দুর্বল হয়ে যায় তার অসুস্থ বাবার মৃত্যুর সময়টায়। নিজের মাকে নিয়ে ব্যাস্ত অনিকের অনুপস্থিতিতে হৃদির পরিবারের পাশে দাড়িয়ে তার আস্থা অর্জন করে নেয় নেহাল। মায়ের অনবরত তাগাদা ও নিজের মনোজগতের দোলাচালে একসময় হৃদি ভাবতে থাকে অনিককে বিয়ে করা তার ভুল হয়েছে। মনকে বুঝিয়ে নিয়ে অনিকের কাছে ডিভোর্স চায় সে। জীবন যুদ্ধে ক্রমশ পরাজিত হতে থাকা অনিক মেনে নেয় হৃদির ইচ্ছা। দিয়ে দেয় ডিভোর্স। তার মায়ের মৃত্যূ ‍ও হৃদির বিয়ে হয় একই দিনে।
প্রত্যন্ত এক গ্রামাঞ্চলে খুব গোপনে গড়ে উঠেছে বিষাক্ত সাপের খামার। উদ্দেশ্য সাপের বিষ সংগ্রহ করে হীন উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে পাচার। দায়িত্বে আছে জমসেদ নামে এক নিষ্ঠুর ব্যাক্তি। তার কাজে সাহায্য করার জন্য রয়েছে লালচান নামে ঢাকার নীলক্ষেতের এক লেপ তোষক ব্যাবসায়ি। বিষ পাচারের বড় একটা চক্রের একটা অংশ তারা। লালচানের দোকানে কাজ করা কিশোর রাশু সামিল হয় এই চক্রে। ঘটনাক্রমের বিষের একটা চালান হারিয়ে ফেলার অপরাধে লালচানকে খুন করে জমসেদ। ওই চালানটা আসলে হারিয়ে গেছে রাশুর দোষেই। হারিয়ে যাওয়া সাপের বিষ ফিরে পাবার জন্য রাশুর কর্মকান্ড গল্পে আনে নতুন মোড়। পাল্টে দেয় অন্যান্য চরিত্রগুলোর ভাগ্য।
হৃদির খালাতো বোন অবন্তি। গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে ভর্তি হয় হৃদির বিশ্ববিদ্যালয়েই। হৃদিদের বাড়িতে তার আসা যাওয়া ছিল। হৃদির বিয়ের পর একদিন হৃদির রুমে থাকা অবস্থায় তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে কেউ। সন্দেহ গিয়ে গড়ায় অনিকের উপর। পুলিশ ভাবে হয়ত অনিক প্রতিহিংসা বশত হৃদি ভেবে গুলি করেছে অবন্তিকে। ভয় পেয়ে গা ঢাকা দেয় অনিক।
প্রফেসর মাহমুদ যার ছেলেকে অনিক টিউশন পড়ায় তারই পরামর্শক্রমে অনিক গিয়ে লুকায় সেই প্রত্যন্ত গ্রামের সাপের খামারে। ওখানে গিয়ে সম্মুখিন হয় একের পর এক বিভৎস কিছু ঘটনার। সে তার বাবার মৃত্যূর সাথে যোগসুত্র খুজে পায় ওই খামার ও তার পেছনের পাচার কার্যক্রমের। একদিকে পুলিশ আরেকদিকে এই দুর্বৃত্তরা। দিশেহারা অনিক এখন।
ওদিকে বিয়ের পর নেহালের সাথে হানিমুনে বিদেশে গিয়ে হৃদি দেখতে পায় নেহালের আরেক রুপ। ভদ্রতার আড়ালে নেহালের অবৈধ কর্মকান্ডের কথা জেনে ফেলে সে। পরিনামের তার উপর নেমে আসে ভয়ানক অত্যাচার। নেহালের কবল থেকে মুক্তি পেতে আকূল হয়ে ওঠে সে। দেশ থেকে হৃদির মা বোনও তার চিন্তায় অস্থির। কিছু একটা যে ঠিক নেই তারাও টের পেয়েছে। অবন্তির ডানপিটে বান্ধবী রিয়া হঠাৎ নিখোঁজ। পুলিশের সন্দেহ অনিক সহ এখন অবন্তির পুরোনো প্রেমিক মঈনের উপর। সুদর্শন ব্যাক্তিত্যবান বিবাহিত প্রফেসর মাহমুদের সাথে রিয়ার গোপন সম্পর্কের কারনে সন্দেহ গড়ায় তার উপরেও। তদন্তকারি পুলিশ অফিসার আবছার আহমেদের সামনে একের পর এক রহস্যের প্যাচ। একটা প্যাচ খুলতে না খুলতেই আরেকটা জটিল ঘটনা ঘটেই চলেছে।
   ্হবে কি এই রহস্যগুলোর সমাধান? অনিক কি পারবে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে? মানুষরুপি শয়তান নেহালের কবল থেকে কিভাবে মুক্তি পাবে হৃদি? অবন্তিুর বিছানার তোষেকের ভেতর সাপের বিষ ভরা শিশিগুলো এলো কোথা থেকে? কে খুন করতে চায় তাকে এবং কেনো? রিয়ার অন্তর্ধানের পেছনে কে দায়ি? তবে কি সব রহেস্যের সমাধান লুকিয়ে আছে সেই সাপের খামার ও তার পেছনের লোকগুলোর সাথে?  

পাঠ প্রতিক্রিয়া

বইটি অর্ধেক পর্যন্ত সম্পর্কের ভাঙ্গা গড়া, চরিত্রগুলোর পরিচিতি নিয়েই মুলত লেখা। তারপর থেকে শুরু হয়েছে টুইস্ট। গুম, খুন ও রহস্যের বেড়াজালে চরিত্রগুলোর জড়িয়ে পরা খুব চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন লেখক। গল্পের এই অংশ থেকে থ্রিলারপ্রিয় পাঠকরাও চমকে উঠবেন বার বার। শুরুর দিকটায় ধীর হলেও পরের দিকে প্রত্যেকটা অধ্যায়ই পেজ টার্নিং। শেষের দিকে মূল কালপ্রিটের পরিচয় প্রকাশ পাবার পাঠক আঁতকে উঠবে এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে গল্পটা শেষ হয় একরাশ বিষাদ নিয়ে। যা পাঠক হৃদয়কে করবে ভারাক্রান্ত। ব্যাক্তিগত রেটিং ৯/১০।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?