প্রস্থানের আগে – হরিশংকর জলদাস | Prosthaner Age – Harishankar Jaldas

  • বই – প্রস্থানের আগে
  • লেখক – হরিশংকর জলদাস
  • প্রকাশনী – অন্যপ্রকাশ
  • প্রচ্ছদ – ধ্রুব এষ
  • পৃষ্ঠা সংখ্যা – ৩৫১
  • মূল্য – ৭০০ টাকা

শিবশঙ্কর বসে আছে বারান্দায়, একাকী। অপরাহ্ণ।  বয়স সাতষট্টি। জন্ম তার উন্মুল কৈবর্ত পরিবারে। নিষ্ঠা আর শ্রমে জীবনে সমৃদ্ধি এসেছে। সমৃদ্ধি কি জীবনের সকল বাসনা মিটিয়ে দিতে পারে? তাহলে কেন আজ শিবশঙ্করের মনে হচ্ছে তার চারপাশে কেউ নেই? সহােদররা নেই, কন্যা মৃত্তিকা নেই, পুত্র আকাশ নেই, এমনকি স্ত্রী সুলেখাও নেই। কিন্তু ওরা সবাই আছে,  সবাই জীবিত। কেন শিবশঙ্করের এই একাকিত্ব?

শিবশঙ্কর নামের একজন অধ্যাপককে নিয়ে হরিশংকর জলদাসের উপন্যাস ‘প্রস্থানের আগে’। এ শুধু ব্যক্তিজীবনের উপাখ্যান নয়, একটা সামগ্রিক কালের, গােটা একটা কৈবর্তসমাজের কাহিনিও। এই উপন্যাসের পটভূমি গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত বিস্তৃত। পতিতাপল্লি, বৈষ্ণব আখড়া, রাতের শহর, স্বামীলাঞ্ছিত মৃত্তিকা, স্খলিত মঙ্গল-এ উপন্যাসের অনুষঙ্গ-কুশীলব।

উপন্যাসটি পড়তে পড়তে পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগবে সারা রাত অপূর্বকে দেহ দিয়ে বিচারসভায় কেন অস্বীকার করল শিউলি? কেন শিবশঙ্কর  পতিতা-সম্ভোগ-করে সাহেবপাড়া থেকে ফিরে এল?    কেন চৈতন্য খুড়ি ধর্ম ত্যাগ করল?  ভােলানাথ গােয়ালার মতাে সহজ মানুষটি কেন গলায় দড়ি দিল?  শিবু-প্রিয় কি শেষ পর্যন্ত জানতে পারল ভােলাকার আত্মহত্যার কারণ? চন্দনা কে? আকাশ কি বিয়ে করল শেষ  অবধি? মিটল কি শিবশঙ্করের বাসনা? উপন্যাসের নাম প্রস্থানের  আগেই-বা কেন?

এই উপন্যাসের ভাষা সহজ। ভারহীন,ভানমুক্ত। উপন্যাসের পরতে পরতে ঘটনার মােচড়। উল্লাস-আর্তনাদ, রিরংসা-জ্ঞাতিশত্রুতা, লােভ-হিংসা, প্রেম-বাৎসল্য উপন্যাসটির পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়।

‘প্রস্থানের আগে’ পাঠকের কাহিনি-তৃষ্ণা মিটাবে।বইটি যখন শুরু করেছিলাম, তখন মনে হয়েছিল লেখকের লেখা একবারেই বাজে এবং খাপছাড়া। একটি কাহিনী বলতে গিয়ে অন্য কাহিনীতে ঢুকে গিয়ে একেবারে যা তা অবস্থা। তবে ধীরে ধীরে যখন বইয়ের ভিতরে ঢুকলাম তখন আর তেমনটা লাগেনি। বইটির পাতায়  রয়েছে সুখ, দুঃখ, আনন্দ বেদনা। সেই সাথেই রয়েছে হিংসা, বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতা আর স্বার্থপরতা। বইটির চরিত্রগুলোর গঠনও চমৎকার। মনে হয়েছিল,  যেন আমি নিজেও তাদেরই একজন।

নিম্নবর্ণের জেলে সম্প্রদায়ের উপর, উচুঁ বর্ণের যে অবহেলা, অবমাননা তার স্পষ্ট বক্তব্য ফুটে উঠেছে এই বইয়ে। 

এটি কেবল শুধু একটি উপন্যাস নয়, এটি একটি মানুষের সারা জীবনের স্মৃতিচারণা, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা, নিজের জলদাস নামকে ছড়িয়ে উঠার সংগ্রাম। 

অনেকদিন পর এত বড় কলবরের উপন্যাস পড়লাম। নিঃসন্দেহে বইটি আমার প্রিয় বইয়ের তালিকায়  থাকবে।

পুনশ্চ: সাধারণত আমরা যখন স্মৃতিচারণ করি তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি ঘটনা একের পর এক  আমাদের মনে পড়ে না। ঘটনার খন্ড খন্ড অংশই মনে পড়ে। বইটি একজন মানুষের স্মৃতিচারণাই বটে। তাই বইয়ের শেষে আমার মনে হয়েছে বইটির ঘটনাসমূহের সামঞ্জস্য না থাকার কারণ এটিও হতে পারে।

বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?