- বইঃ প্রভাতকিরণ বইটির রিভিউ পড়ুন
- লেখকঃ ইসরাত জাহান দ্যুতি
- প্রথম প্রকাশঃ 1st Published, 2020
- ধরনঃ উপন্যাস
- ঘরানাঃ রোমান্টিক
- প্রকাশনীঃ বইবাজার
- মুদ্রিত মূল্যঃ ৪০০ টাকা
- Review Credit 💕 ইসরাত জাহান দ্যুতি
নামকরণঃ
প্রভাতকিরণ অর্থাৎ সকালের আলো। সকালের আলো যেমন রাতের সব অন্ধকার দূর করে দেয় ঠিক তেমনি একজন ধর্মহীন, রমনীভিলাষী ,জালিম সম্রাটের জীবনে একজন ধর্মপ্রাণ, পর্দাশীল শেহজাদীর আগমনে, তার সংস্পর্শে এসে অন্ধকার জীবনের পরিবর্তন ঘটে প্রতিটি কোনা আলোয় আলোয় ছেয়ে যায়।এ নামটিই বইয়ের মূল কাহিনীর প্রতিচ্ছবি। প্রভাতকিরণ নামটিই এ বইয়ের জন্য যথাযথ ।
প্রচ্ছদ বিশ্লেষণঃ
প্রচ্ছদে দেখা যায়, গায়ে পাঞ্জাবী,মাথায় পাগড়ী পরিহিত একজন যুবক ঘন জঙ্গলের মাঝে মাথা উঁচু করে আকাশপানে চেয়ে আছে।পাশেই তার ঘোড়াটি মাতা নিচু করে খাদ্যগ্রহণে ব্যস্ত।প্রভাতের কিরণ যেমন ধীরে ধীরে চারিদিকে আলোকিত করে তেমনি চারিদিকে মৃদু আলোয় ছেয়ে গেছে। সোনালি ও সবুজ রঙের মিশ্রণে প্রচ্ছদটি নজরকাড়া হয়েছে।
বইটি পড়ার পর প্রচ্ছদটিকে এই বইয়ের জন্য যথোপযুক্ত মনে হয়েছে।
কাহিনী সংক্ষেপঃ
প্রভাতকিরণ মূলত একজন জালিম, ধর্মহীন, রমণাভিলাষী, হিংস্র সম্রাট ও একজন আল্লাহভীরু, পর্দাশীল, অপরূপ সুন্দরী, অনন্য ব্যাক্তিত্বের অধিকারী, তেজস্বী শেহজাদীর গল্প। চমৎকার এই প্রভাতকিরণ বইটি রচনা করেছেন প্রজন্মের লেখিকা: ইসরাত জাহান দ্যুতি। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে ২০২০ সালে এবং প্রভাতকিরণ বইটি pdf ভার্সন এখনো প্রকাশিত হয়নি।
রাজাধিরাজ ফালাক তাজ ১৬টি সাম্রার্জ্য যার আধিপত্য।হিমানী মেহেরুন শেরপর নামক একটি ছোট্ট রাজ্যর শেহজাদী।পশুপাখির প্রতি ভালবাসার কারণে তাদের হত্যা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সেই নিয়ম ভঙ্গ করে ফালাক তাজের ভাই আহাদ অযাচিতভাবে শেরপুর রাজ্যর জঙ্গলে পশুপাখি হত্যা করে। এ খবর হিমানীর নিকট পৌঁছালে আহাদকে আটক করা হয়। ফালাকের নিকট যখন এ খবর পৌঁছে যে তার ছোটভাইকে একটি ছোট রাজ্যর শেহজাদী আটক করে রেখেছে তখনই সে ক্রোধান্বিত হয়ে পড়ে এবং শেরপুর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সেখানে প্রবেশ করে হিমানীর ঘন পাপড়িযুক্ত কালো নয়নজোড়ার কাছে হার মানেন।প্রথমবারের মত পরাজয় স্বীকার করেন।শেহজাদীকে বন্দী করে নিয়ে যান নিজের রাজ্য।
রমণাভিলাষী এই সম্রাট কি হিমানী মেহেরুনকে কেবল গণিকারূপে নিজের মহলে রাখবেন?নাকি হিমানীর সংস্পর্শে এসে তার চিন্তাধারার, ব্যাক্তিত্বের পরিবর্তন ঘটবে?
হিমানী কি রক্ষা পাবে হিংস্র, রমণাভিলাষী, ধর্মহীন এই সম্রাটের থাবা থেকে?
সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে প্রভাতকিরণ বইয়ের পাতায়।
চরিত্র বিশ্লেষণঃ
ফালাক তাজ ও হিমানী মেহেরুন উপন্যাসের মূল চরিত্র।প্বার্শ চরিত্র হিসেবে রয়েছে রাজ্জাক,আহাদ, জাভেদ খান, আফিয়া, আরব খান, ইসহাক, মিরাজ। আরো কয়েকজন ব্যাক্তি ছিলেন প্বার্শ চরিত্র হিসেবে।
★ফালাক তাজঃ
উপন্যাসের প্রথম দিকে তার আচরণে তার প্রতি ঘৃণা জন্মায়। কিন্তু হিমানীর মতোই আমিও কখন এই চরিত্রের প্রেমে পরে গেছি নিজেও বুঝতে পারিনি। এমন হিংস্র একজন মানুষের ভিতরে যে একজন ভাল মনের মানুষ ঘুমিয়ে ছিল তা বুঝতেই পারিনি।আর হিমানীর সংস্পর্শে এসে সেই ঘুমন্ত মানুষ জাগ্রত হয়। তার চিন্তাধারার পরিবর্তন ঘটে।
★হিমানী মেহেরুনঃ
একজন ধর্মভীরু, পর্দাশীল, অনন্য ব্যাক্তিত্বের অধিকারী একজন শেহজাদী। আল্লাহর প্রতি আস্থা, তার ব্যাক্তিত্ব, তেজ, অস্ত্র চালনায় পারদর্শীতায় তার প্রতি সকলেই মুগ্ধ হতে বাধ্য। সত্যি! এমন নারীও আছে!
তার সৌন্দর্য, তার তেজস্বী আচরণে, তার ব্যাক্তিত্বে ফালাকের মত আমিও অভিভূত হয়েছি বারংবার।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
ছোটবেলা থেকেই আমার রাজা, রানী রয়েছে এমন গল্প ভাল লাগে। দাদু, নানুর কাছে গল্প শুনতাম আর কল্পনা করতাম।আরেকটু বড় হয়ে ছোট ছোট গল্পের বইয়ে পড়তাম রাজা, রানীর গল্প।
এই বইটি পড়ার সময় আমার এত বেশি ভাল লেগেছে যা অবর্ণনীয়।এমন ধরনের গল্পের প্রতি আগে থেকেই ঝোঁক ছিল কারণে পড়তে আরো বেশি ভাল লেগেছে।
উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রকে লেখিকা খুবই সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। শব্দচয়ন, কাহিনি বর্ণনা,,বাক্যগঠন,চরিত্র বিন্যাস সবকিছুই দারুনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে সম্রাট, সম্রাজ্ঞীদের জীবনধরন, পোশাকাদি, রাজ্য পরিচালনা,প্রাসাদের সৌন্দর্যে বর্ণনা,সবকিছুই এত সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে যে পাঠক মুগ্ধ হতে বাধ্য।
ফালাকের হিংস্রতায় তার প্রতি ঘৃণা হয়েছে।হিমানীর তেজস্বী আচরণে বারংবার মুগ্ধ হয়েছি। হিমাণীর অসহায় অবস্থায় যেমন কষ্ট পেয়েছি তেমনি ফালাকের অতীত জানার পর তার জন্য ভীষণ কষ্ট হয়েছে। ফালাকের প্রতি জমে থাকা রাগ, ঘৃণা সব যেন কর্পূরের মত উবে গেছে এককথায় এই বইটি পড়ার সময় হাজারকমের অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে।
রোষকষায়িত, মনঃপূত, নিমিত্তে, স্তিমিতনেত্র এমন দারুন কিছু শব্দের ঝংকারে বইটি অসাধারণ হয়েছে।
প্রিয় চরিত্রঃ
★ফালাক তাজঃ
বইয়ের প্রথম কিছু পৃষ্ঠা পড়ে এত্ত ঘৃণা হয়েছিল যে আমি ঠিক করেছিলাম অপ্রিয় চরিত্রে তার নাম সবার প্রথমে উল্লেখ করব।
কিন্তু বই পড়ে এই ধারনা পরিবর্তন হয়েছে। হিংস্র, রমনীভিলাষী, ধর্মহীন এই সম্রাটের প্রতি ঘৃণা হলেও তার অতীত জানার পর সব ঘৃণা উবে গেছে।মেহেরের প্রতি তার ভালোবাসায় অভিভূত হয়েছি।মেহেরের প্রতি রাগ হয়েছে কখনো কেন এত কষ্ট দিচ্ছে? কেন?
আর কি করলে বুঝবে ফালাকের ভালোবাসা? ফালাকের কষ্ট?
★️হিমানী মেহেরুনঃ
একজন আল্লাহভীরু, পর্দাশীল, আর্ত্মমর্যাদাসম্পন্ন,তেজস্বী শেহজাদি। যাকে উপন্যাসের প্রথম থেকেই ভালো লেগেছে। তার অস্ত্র চালনায় বিস্মিত হয়েছি। ধর্মের প্রতি আনুগত্য, ধৈর্য্যশীলতা সবকিছুই মুগ্ধ করেছে। করুণ অবস্থায় মনে হয়েছে আর কত? আর কত কষ্ট পাবে?
কবে শেষ হবে কষ্টের প্রহর?
কিন্তু একটি কারণে হিমানীর প্রতি খানিক রাগ হয়েছে। এটি আমার প্রিয় চরিত্র এই বইয়ে। যাকে ভাললাগতে বাধ্য, যার আচরণে মুগ্ধ না হয়ে থাকা যায়না!
★ রাজ্জাকঃ
ফালাকের পালক পিতা রাজ্জাক চরিত্রটি আমার খুব প্রিয়। নিজের সন্তান না হওয়া সত্ত্বেও তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সীমাহীন ভালবাসা দিয়েছেন ফালাককে। ফালাকের প্রতি অধিক দুর্বলতার কারণে তার এত অন্যায়, অবিচার দেখেও কঠোর হতে পারেননি। তার কথায় ফালাক তার জীবনের প্রভাতকিরণ খুজে পেয়েছে। নয়ত সব জেনে বুঝেও সে অন্ধ হয়ে বসে ছিল।
প্রিয় উক্তিঃ
★তলোয়ার ফেলুন শেহজাদি।আপনি আমার সময় অপচয় করছেন।আমি চাই না আপনার বিপরীতে তলোয়ার উঠাতে ~ ফালাক
★মেহের!আপনিই একমাত্র কন্যা, যার থেকে আঘাত সয়ে সয়ে রক্তাক্ত হয়ে তবেই তাকে অর্জন করেছি।আপনাকে পাওয়ার বিনিময়ে এ আঘাত আমার কাছে বিন্দু পরিমাণ যন্ত্রণার ও নয়।আজ এবং এই ক্ষণ থেকে শেরপুরের শেহজাদী হিমানী মেহেরুন আবরামগড় সাম্রাজ্যর রাজাধিরাজ ফালাক তাজের অর্থাৎ আমার সম্পদ ~ ফালাক
★পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ চিরকাল অন্তরে গেঁথে থাকে।প্রথম, যে মানুষটিকে অত্যাধিক ভালবাসা হয় আর দ্বিতীয়, যাকে সবথেকে বেশি ঘৃণা করা হয় ~ ইসরাত জাহান দ্যুতি
★আমার মেহের! একটিবার কেন? চাইলে লাখবার আমি তোমায় নিয়ে যাব ওখানে।আমার এই বুকের সহিত হেলান করে বসে ওই জলধারাতে পা ডুবাবে তুমি~ ফালাক
★আমি যে চিরকালের জন্য আমার বিবির ভালোবাসার গোলাম হয়ে থাকতে চাই।যে বিজয় আপনাকে বিবির স্থানে কৃতদাসীতে পরিণত করবে সে বিজয় আমি কখনোই লাভ করব না ~ ফালাক
★আমাকে আর কতটা পরিবর্তন হতে দেখলে তুমি বিশ্বাস করবে আমার ভালোবাসা?~ ফালাক
★হোক সে বিষাদগ্রন্থ আর হোক সে আলোকগ্রন্থ। আমার জীবনের কেবল প্রভাতকিরণ সে ~ ফালাক
লেখক পরিচিতিঃ
৪ এপ্রিল ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানাতে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস মাগুরা। পিতার নাম মোঃ ইসরাইল হোসেন ও মাতা জান্নাত আরা বনানীর বড় সন্তান তিনি। বিবিএ অনার্সে অধ্যয়নরত তিনি। প্রভাতকিরণ লেখকের প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস।
ব্যাক্তিগত মতামতঃ
পৃথিবীতে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মানুষ রয়েছে। একেক মানুষের পছন্দ একেকরকম। একটা বই পড়ে সবার অনুভূতি কখনো এক হতে পারেনা। কারো নিকট অসাধারণ মনে হলে, কারো নিকট বিরক্তিকর মনে হতে পারে। কিন্তু প্রভাতকিরণ পড়ে আমার মনে হয়েছে এটা কারো খারাপ লাগবে না। খুব ভালো না লাগলেও খুব খারাপ লাগবে না। রেটিং খুব বেশি নিচে নামলে মোটামুটি পর্যন্ত যাবে।আবার যারা আমার মত সম্রাট, সম্রাজ্ঞীদের গল্প অথবা উপন্যাসের প্রতি অধিক আগ্রহী তাদের নিঃসন্দেহে অসাধারণ লাগবে।
[ ফারসিয়া মাহমুদ ]
ছবিয়াল – মনিরা মনি
Buy Hardcover
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?