প্রত্যাবর্তন : আতাউর রহমান শিহাব | Prottaborton – Ataur Rahman Shihab

“ওরা সেদিন তোমাকে কথা বলতে দেখেছে যিশু। ওরা তোমাকে অবশ্যই পছন্দ করবে। তোমাকে অনুসরণ করবে। তোমার মধ্যে সেই যোগ্যতা আছে। মনে রাখবে, এটা তোমার নিয়তি।”

  • Book : Prottaborton – প্রত্যাবর্তন – পাঠ প্রতিক্রিয়া!
  • Author : Ataur Rahman Shihab 
  • Publisher : Upokotha Publication 
  • Quality : Hardcover 
  • Edition : 1st Published, 2021
  • Number of Pages : 330
  • Country : Bangladesh 
  • Language : Bangla

☝️উপরের লাইনটা নিয়েছি লেখক আতাউর রহমান শিহাবের লেখা দ্বিতীয় বিবলিকাল ফিকশন ‘প্রত্যাবর্তন‘ থেকে। বলে রাখা ভালো বাংলায় প্রথম বিবলিকাল ফিকশন ‘এপোথিওসিস‘ তারই লেখা।
তবে বই নিয়ে আলোচনার পূর্বে বিবলিকাল ফিকশন নিয়ে পাঠকদের একটু ধারণা দেই-

প্রত্যাবর্তন‘ পড়ার আগ পর্যন্ত বিবলিকাল ফিকশন নিয়ে আমার ন্যূনতম আইডিয়া ছিলোনা তবে ইন্টারনেট ঘেটে যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে বিবলিকাল ফিকশন হচ্ছে যে ফিকশনের চরিত্র,স্থান,কাল এবং সময় বাইবেল থেকে নেওয়া হয়। অর্থাৎ এখানে বাইবেলে বর্ণিত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাকে মূল উপজীব্য করে সেটাকে একটা ফিকশনে রুপ দেওয়া হয়।

এবার কাহিনীতে যাওয়া যাক

এটা অন্যান্য উপন্যাসের মত খুব সাধারণ কাহিনী নিয়ে শুরু হয়নি বরং বেশকিছু টাইমলাইন একসাথে এগিয়ে গিয়েছে। তাই বইয়ের কাহিনী নির্দিষ্ট করে লেখা সম্ভব না আর লিখলেও সেটা স্পয়লার হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পাঠকদের সুবিধার জন্য বেশকিছু টাইমলাইন সম্পর্কে একটু ধারণা দেবার জন্য নিচে কয়েকটি টাইমলাইন নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:

• সুমেরীয় সভ্যতা

পৃথিবীর বাইরে সূদুর নিবিরু থেকে একদিন এই পৃথিবীতে পা রাখে আনুনাকিরা। আনুনাকিরা মূলত এই পৃথিবীর কেউ নয়। রাজপুত্র ‘এনকি’ সেই আনুনাকিদেরই একজন যার কাছে এই পৃথিবীর মানুষগুলোই তার পরিবার,তার কাছে সবথেকে মূল্যবান। কিন্তু এনকির ভাইয়ের বিশ্বাসঘাতকতায় এলোমেলো হয়ে যায় সবকিছু। পুরো মানবজাতি পড়ে যায় একটা অনিশ্চয়তার দিকে। পৃথিবী ছেড়ে যাবার আগে ‘এনকি’ এই পৃথিবীর বিশেষ একজনের হাতে দিয়ে যায় একটা অমূল্য ডিভাইস যেটা কিনা রক্ষা করবে এই মানবজাতিকে, সবকিছু ফিরিয়ে আনবে আবার পূর্বের জায়গায়।

• ব্যবিলন

ব্যবিলনের বিশাল প্রাচীরের সামনে ঘোড়ায় চড়ে হাজার হাজার সৈন্যের মধ্য দিয়ে বর্ম পরিহিত বিশালাকার একজন ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তিন আর কেউ নন তিনি হলেন রাজা সলোমান। নেতৃত্ব দিচ্ছেন হাজার হাজার সৈন্যকে তাদের লক্ষ্য একটাই তা হলো প্রাচীর ভেঙে ব্যবিলন দখলে নেওয়া। ওদিকে শত্রুপক্ষ ব্যবিলনের সৈন্যরাও প্রায় বুঝে গিয়েছিল যে পরাজয় নিশ্চিত। তারা পাকড়াও হতে পারে রাজা সলোমানের কাছে কিন্তু তাদের কাছেও রয়েছে একটা ‘তুরুপের তাস‘ যেটা ব্যবহার করে হয়ত মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া যাবে এই যুদ্ধের যেটার চর্চা তারা করে আসছে আরো বহুবছর আগে থেকে।

• খিরবাত কামরান – পশ্চিম তীর

পেশায় একজন কামার হলেন বারুখ। বারুখ নামের অর্থ হলো আশীর্বাদপ্রাপ্ত। বারুখের স্ত্রী এটা নিয়ে মাঝে মাঝেই খোচা দিয়ে কথা বলে কিন্তু বারুখ কিছু না বলেই এসব সহ্য করে কারণ সে জানে তার নাম কেন আশীর্বাদপ্রাপ্ত। এক গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভার দেওয়া হয়েছে বারুখকে যা সবাইকে দেওয়া হয়না। কিন্তু বারুখের মত একই কাজ করে এবং পাশাপাশি সে বারুখের বন্ধু এমন একজন হঠাৎ বিশ্বাসঘাতকতা করে বসে তার সাথে। এবার বিশ্বাসের বলয় হতে বের হতে হয় বারুখকে। সম্মুখীন হতে হয় ভয়ানক কোনোকিছুর।

• গালিলি

নবী জশুয়ার এই পবিত্র ভূমিতে পা রাখার হাজার বছর হয়ে গিয়েছে। ইহুদিরা ছড়িয়ে পড়েছে রোমের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে অথচ তাদের কেউ সুখে নেই। একদিকে যেমন সুখে নেই ইহুদিরা অন্যদিকে সুখ নেই গালিলি হেরোডে রাজ্যের উপকূলের কিছু কৃষকের। অভাব যাদেরকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। এই অভাবই একসময় হিংস্র বানিয়ে দেয় এখানের কৃষকদের। তারা সবাই একজোট হয় প্রতিবাদ করার,কিন্তু এই প্রতিবাদ শুধু মুখের নয় এই প্রতিবাদ হবে অস্ত্রের মাধ্যমে, হবে রক্তের মাধ্যমে।  
উপরের টাইমলাইনগুলো বাদেও বইতে আরো টাইমলাইন রয়েছে যেগুলো একইসাথে ভবিষ্যৎ, বর্তমান এবং অতীতের কিছু ঘটনা নিয়ে এগিয়ে গিয়েছে। তবে বইয়ের কাহিনী বেশ জটিল। একইসাথে চার-পাঁচটা টাইমলাইন একইসাথে চলা আর সেইসাথে প্রতিটা টাইমলাইনে আলাদা আলাদা চরিত্র থাকায় বেশ কয়েকবার পাতা উল্টে পেছনে যেতে হয়েছে মনে করার জন্য।
আরো সহজভাবে বলতে গেলে ‘প্রত্যাবর্তন‘ বইটাতে তিনটি সময় নিয়ে লেখা হয়েছে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ এবং এই একেকটি সময়ে তিন-চারটি টাইমলাইন নিয়ে লেখক সামনে অগ্রসর হয়েছেন। যেখানে বংশানুক্রমে কেউ রক্ষা করে চলেছে ওয়ার স্ক্রোলের মত মূল্যবান সম্পদ এবং সেই ওয়ার স্ক্রোল চুরি করতে পেছনে লেগেছে গুপ্তসংঘ যার জন্য চলছে একে একে গুপ্তহত্যা। মজার ব্যাপার হচ্ছে এসবের মধ্যেও দুজন রাজপুত্র সময় পরিভ্রমণ করে অতীতে গিয়েছে বিশেষ একটি জিনিসের খোঁজে। আবার অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে এক গুপ্তচরকে পাঠানো হয়েছে ভবিষ্যতে একটি মিশন সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে। অল্টারনেট হিস্ট্রি, কন্সপিরেসি থিওরি কখনো বিশ্বাসঘাতকতা আবার কখনো পাশার দান বদলে দেওয়ার মাধ্যমে বইয়ের কাহিনী এগিয়ে গিয়েছে সামনের দিকে।

পাঠপ্রতিক্রিয়া:

প্রত্যাবর্তন‘ বইটা দশ পৃষ্ঠা পড়ার পর থেকে নিজের মনে শুধু একটাই প্রশ্নের উদয় হচ্ছিলো সেটা হলো, “লেখক এতকিছু এক মলাটবদ্ধ করেছে শেষে গিয়ে আবার লেজেগোবরে করে দিবে নাতো?” 
তবে আশার কথা হচ্ছে, “না, করেনি” বরং লেখকের লেখনশৈলীতে আরো মুগ্ধ হয়েছি। এমন কমপ্লেক্স একটা প্লট মাথার মধ্যে নিয়ে ব্যালেন্স করাটা আসলেই সহজ কাজ নয়। নরমালি দুটো টাইমলাইন একসাথে এগিয়ে যাওয়ার থ্রিলার পড়েছি বেশকিছু অথচ এখানে লেখক একসাথে পাঁচ-ছয়টা টাইমলাইনের কাহিনী নিয়ে কাজ করেছেন সেইসাথে যথেষ্ট পড়াশোনা করেছেন এটার জন্য। যেহেতু বেশ জটিল একটা প্লট তাই লেখনশৈলী দুর্বল হলে হয়ত বইটা রেখে দিতে হত কিন্তু খেয়াল করলাম পৃষ্ঠা বাড়ার সাথে সাথে বইয়ের প্রতি আগ্রহ আরো বাড়ছে  যেটার জন্য লেখকের পরিণত লেখার প্রসংশা করতে হয়। খুব একটা তাড়াহুড়োর ছাপ পাইনি বরং মূল কাহিনী ধীরে ধীরে খোলাসা করার চেষ্টা করা হয়েছে। বইয়ের মাঝে বেশ কিছু জায়গায় টার্ন আর টুইস্টগুলো বেশ আনপ্রেডিক্টেবল ছিল। সবমিলিয়ে একটু জটিল হলেও বইটা বেশ ভালো লেগেছে আমার। এমন বই অন্য দেশে প্রকাশ পেলে হয়ত এতদিনে তোলপাড় লেগে যেত অথচ এই বইটা অন্যান্য থ্রিলার বা এধরনের ফিকশনের তুলনায় বেশ আন্ডাররেটেড। 
যারা Seints gate, Erased এনিমে বা নেটফ্লিক্সের Dark এর মত সিরিজ দেখেছেন তারা এই বইটা অনেক দ্রুত বুঝে নিতে পারবে।
তবে কেউ যদি প্রশ্ন করেন যে পুরো বইজুড়ে কি কোনো অসঙ্গতি আমার চোখে পড়েনি?

তাহলে বলবো হ্যাঁ পড়েছে আর সেটা হলো বর্ণনাভঙ্গি। লেখকের বর্ণনাভঙ্গি একটু দুর্বল তবে চিন্তা করে দেখলাম এত জটিল একটা প্লট এখানে যদি বর্ণনা বেশি দেওয়া হত তাহলে হয়ত বইটা আরো কঠিন হয়ে যেত পাঠকের কাছে তবে কিছু জায়গায় বর্ণনার দরকার ছিল যেটা লেখক এড়িয়ে গিয়েছেন। 
আবার অন্যদিকে বইতে অধ্যায় বা টাইমলাইনের শিরোনামে একটু সমস্যা ছিল। ধরা যাক অধ্যায় ৫ শেষ হয়েছে ১০০ পৃষ্ঠায় তাহলে নরমালি ৬ অধ্যায় শুরু হবে ১০১ পৃষ্ঠা থেকে অর্থাৎ ১০১ পৃষ্ঠার একদম উপরে লেখা থাকবে ৬ অথচ এক জায়গায় এটা লেখা হয়েছে তার আগের পৃষ্ঠার একদম নিচে। যাইহোক এটা খুব বড় ইস্যু না তবে পৃষ্ঠার মাঝখানে অন্য টাইমলাইনের শিরোনাম থাকলে সেটা বোল্ড করে হাইলাইট করা হয়নি বরং নরমাল ফন্টেই রাখা হয়েছে যার জন্য পড়তে গিয়ে মাঝেমধ্যেই খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম।
দু একটা টাইপিং মিসটেক বাদে তেমন কিছু চোখে পড়েনি।

• চরিত্র:

কাহিনীর প্রয়োজনে বেশ অনেকগুলো চরিত্র এসেছে সামনে। অনেকগুলো চরিত্রের প্রায় একইরকম হওয়ায় মাঝে মাঝে বুঝতে সমস্যা হয়েছে তবে জশুয়া,ড. ভিলানি,ইভান, যিশু,এলেক এসব চরিত্র বেশ ভালোভাবে লেখক ফোকাস করতে পেরেছেন। অন্যান্য কিছু পার্শ্বচরিত্র নিয়ে আরেকটু কাজ করলে হয়ত ভালো হত।
তবে এসব ব্যাপারগুলো বাদ দিলে ‘প্রত্যাবর্তন‘ মাস্টরিড একটা বই। যারা টাইম ট্রাভেল, বিবলিকাল বিভিন্ন টার্ম আর নানান রকমের কন্সপিরেসি থিওরির মিশেলে কোনো থ্রিলার পড়তে চান তাদের কাছে এটা দুর্দান্ত লাগবে।
• Review Writer – Khandaker Sanidullah Sanid •
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?