বই : পৃথিবী আমার বন্ধু
লেখক : ড. রাগিব সারজানী
প্রকাশনী : মাকতাবাতুল হাসান
বিষয় : ইসলামি বিবিধ বই
পৃষ্ঠা : 512, কভার : হার্ড কভার
আইএসবিএন : 9789849631866, ভাষা : বাংলা
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত সমস্যা হলো পরিবেশগত সংকট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। পরিবেশদূষণ, বন উজাড়ীকরণ, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, ওজোন স্তরের বিনাশ, খরা ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, বন্যা ও ভূমিকম্প, হারিকেন ও ঘূর্ণিঝড়, প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি, শত শত প্রজাতির বন্য পশুপাখির বিলুপ্তি, বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংস, জলবায়ুর পরিবর্তন ইত্যাদি বর্তমান সময়ে গোটা বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।
এই পৃথিবী আমাদের, আমরাও পৃথিবীর। আমাদেরকে নিজের সন্তানের মতো বুকে আগলে রেখেছে পৃথিবী। কিন্তু পৃথিবী ও চারপাশের প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের আচরণ হয়ে উঠেছে শত্রুতাসুলভ, আমাদের অবিবেচক ও হঠকারী কর্মকাণ্ড শুধু প্রকৃতিকে নয়, মানবজীবনকে ঠেলে দিয়েছে ক্ষতি ও ধ্বংসের মুখে। এই পৃথিবীর এমন কোনো ভূভাগ বা উপাদান নেই যা মানুষের স্বেচ্ছাচারিতা দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে না; মাটি ও পানি, বায়ু ও ভূমি, বন ও বন্যপ্রাণী, সমুদ্র ও আকাশ সবকিছুই মানুষের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হচ্ছে। পৃথিবীর বুকে জীবনধারণের মৌলিক উপাদানগুলো দূষণের শিকার হচ্ছে এবং দূষণের মাত্রা দিনদিন বেড়েই চলছে। দূষণের ফলে পৃথিবীজুড়ে বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে, নতুন রোগ-ব্যাধি ও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে, হাজার হাজার মানুষ ও প্রাণীর জীবন কেড়ে নিচ্ছে।
ড. রাগিব সারজানি কর্তৃক রচিত ‘আল-কাউনু সাদিকি’ গ্রন্থটি প্রকৃতি ও পৃথিবীর প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরিবেশ ও মানুষের মধ্যকার সম্পর্কের মৌলিক দিকগুলো তুলে ধরেছে। প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে মানুষের আচরণ এবং প্রাকৃতিক উপাদানসমূহের সুরক্ষার ক্ষেত্রে শরিয়তের সংশ্লিষ্ট নীতিমালা
আলোচিত হয়েছে। ইসলামি মানহাজ ও দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে পরিবেশগত সংকট ও সমস্যাবলির বাস্তবিক সমাধানের ওপর
বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে।
ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত সংকটের মোকাবিলা কীভাবে করতে হবে সে বিষয়ে বাংলা ভাষায় কোনো প্রতিনিধিত্বশীল বই নেই। এই অভাববোধ থেকে আমি ‘আল কাউনু সাদিকি’র বাংলা অনুবাদ করেছি। যথার্থ ও সাবলীল অনুবাদের জন্য সর্বোচ্চ শ্রম দিয়েছি। বইটি প্রকাশনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
— আবদুস সাত্তার আইনী
আল্লাহ তাআলার জন্য সমস্ত প্রশংসা। তিনিই সাজিয়েছেন এই বসুন্ধরা। তাঁর প্রশংসিত রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর বর্ষিত হোক রহমতের বারিধারা, যিনি আমাদেরকে শিখিয়েছেন প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের নীতি ও পন্থা।
কার্বন নিঃসরণের সংকটজনক বৃদ্ধি, অক্সিজেনের মাত্রা উদ্বেগজনক হ্রাস, পরিবেশ দূষণ প্রভৃতি নানা সংকটের আবর্তে পৃথিবী নিপতিত। রাসায়নিক সার, কীটনাশক, অব্যবহৃত প্লাস্টিক, পলিথিন, শহর ও শিল্পকারখানার দূষিত বর্জ্য, পারমাণবিক বিস্ফোরণ, পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ইত্যাদি ক্ষতিকর পদার্থ পরিবেশ দূষণ করছে প্রতিনিয়ত। মানুষের লাগামহীন উন্নয়ন, জাগরণ ও শিল্প-উন্মত্ততার ফলে পরিবেশের এমন কোনো উপাদান নেই যা কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খরা ও বন্যার সাক্ষী হচ্ছে পৃথিবী। জনজীবন আজ অতিষ্ঠ ও পর্যদুস্ত। বিশ্বনেতারা দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য অর্থ, জনবল ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবস্থা করার পেছনে ছুটছেন। দুর্যোগ মোকাবিলায় করণীয় লিখে বড় বড় সাইনবোর্ড দিচ্ছেন। প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অন্ত নেই। বিশেষ বিশেষ দিনে সম্মেলন, বক্তৃতা, আশ্বাস ও উপদেশ তারা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সবকিছু যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। স্বার্থের জন্য পারমাণবিক অস্ত্রের আঘাতে সবুজ-শ্যামল জনপদকে তারা চিরদিনের জন্য আগুনের কুণ্ডলী বানিয়ে দিতে দ্বিধা করেন না। বলতে পারি প্রকৃতির বিরুদ্ধে যেন আমাদের যুদ্ধংদেহি মনোভাব বিরাজ করছে। এভাবেই চলছে আমাদের জীবন। আশার কথা হলো, অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক কর্মোদ্যোগ ও জনসচেতনতার মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য ৫ জুন আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবস ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৪ সাল থেকে দিবসটি প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু ইসলাম আমাদেরকে প্রকৃতির বিষয়ে কী বলে? পরিবেশের সঙ্গে আমাদের আচরণ, প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারে আমাদের নীতি কেমন হওয়া উচিত—–—তা কি কখনো ভেবে দেখেছি? বিনা মূল্যে ও বিনা পরিশ্রমে প্রাপ্ত পৃথিবীর অমূল্য সম্পদরাজি ভোগের ক্ষেত্রে আমাদের ন্যায়-নিষ্ঠ অবস্থান নিয়ে কখনো কি চিন্তা করেছি?—এসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর আমাদের কাছে নেই।
‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’ পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখার জন্য আমাদের খণ্ড খণ্ড জ্ঞান আছে। কিন্তু এর সামগ্রিক রূপ আমাদের তেমন জানাশোনা নেই। আর ইসলামের চোখে মানুষ ও পৃথিবীর আন্তঃসম্পর্ক—–সেটা তো আরও অজানা। দায়িত্ববান প্রতিনিধি হিসাবে পৃথিবীর সুরক্ষা আমাদের কর্তব্য। বাংলা ভাষা তো বটেই অন্যান্য ভাষায়ও এ সম্পর্কে রচিত বই খুবই কম। আমাদের জানামতে শরিয়তের আঙ্গিকে লেখা বাংলা ভাষায় এটিই প্রথম পরিবেশবিষয়ক বই।
ড. রাগিব সারজানি সমকালের এক বিদগ্ধ গবেষকের নাম। ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে তার কলম বিশ্বমানবতার উপহার। তার কলমের কালিতে জীবন্ত হয়ে উঠছে ইসলামের নানা দিক। ড. রাগিব সারজানির অনবদ্য একটি উপহার পরিবেশবিজ্ঞানবিষয়ক বই ‘আল-কাউনু সদিকি’। তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা, নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত ও মানোত্তীর্ণ উপস্থাপনায় বইটি হয়ে উঠেছে পরিবেশবিজ্ঞানের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিলে। বইটি অনুবাদ ও সম্পাদনায় আমরা সর্বোচ্চ শ্রম দিয়েছি। বইটির গুরুত্ব বিবেচনায় আমরা যথাসম্ভব নির্ভুল করার চেষ্টা করেছি। তারপরও যদি কোনো অসংগতি থাকে তার দায় আমাদের। আমরা চেষ্টা করব পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধন করে নিতে।
_____আশিকুর রহমান
পৃথিবীর কত সমস্যা! সর্বব্যাপী ছড়িয়ে আছে কত বিচিত্র ও বহুবিধ সংকট! বিস্তৃত পৃথিবীতে এমন কোনো জায়গা নেই যা একাধিক সমস্যায় জর্জরিত নয়। দূরস্থিত কোনো গুহায় অথবা প্রত্যন্ত কোনো পাহাড়চূড়ায় কিংবা জলবেষ্টিত দ্বীপে বসবাসকারীরাও পৃথিবীর সমস্যা ও তার প্রভাব থেকে মুক্ত নয়।
একটি ব্যাপার আমাদের বিস্ময়ের উদ্রেক করে যে, সকলেই সমস্যা ও সংকটের অস্তিত্ব স্বীকার করে এবং সকলেই ভুক্তভোগী, অথচ সমস্যাগুলো বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে, যেন ব্যতিক্রম কিছু মানুষ ছাড়া বাকিরা কিছুই জানে না।
আমাদের আধুনিক যুগে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ সমস্যা হলো প্রকৃতির সঙ্গে বৈরী আচরণ। আমাদের এই যুগের পূর্বে যারা পৃথিবীতে ছিলেন তারা এই ধরনের সমস্যার কথা চিন্তাও করেননি। কারও মনে এমন ধারণার উদ্রেক হয়নি যে এই বিপুল বিশাল ভূমি ও দীর্ঘ বিস্তৃত অরণ্যরাজি দুর্বল মানুষের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে; অতল গভীর সমুদ্র মানুষের আঘাতের শিকার হবে; তাদের হাতে অসংখ্য প্রজাতির অগুনতি প্রাণীর বিনাশ ঘটবে; যদিও প্রথম দৃষ্টিতে মনে হয়, এসব প্রাণী মানুষের জীবন ও তাদের কর্মকাণ্ড থেকে অনেক দূরে বসবাস করছে। সে যুগে অতি কল্পনাপ্রবণ মানুষের মনেও এমন খেয়াল আসেনি যে মানুষের কৃতকর্মের ফলে পৃথিবীর বায়ুও একদিন নষ্ট হয়ে যাবে।
আমাদের চারপাশের পরিবেশের সমস্যা দীর্ঘকাল ধরে মহাবিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যা জনজীবনকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পৃথিবীর বুকে প্রকৃতির মৌলিক উপাদানগুলো নানাবিধ দূষণে আক্রান্ত হয়েছে। বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, মাটিদূষণ, খাদ্যদূষণ… এই ধরনের দূষণ মানবজীবনে ক্ষতিরূপে আবির্ভূত হয়েছে। এসব দূষণের ফলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে, যা হাজার হাজার মানুষ ও প্রাণীর জীবন কেড়ে নিয়েছে; একইভাবে বহুরকম রোগ-ব্যাধির সৃষ্টি হয়েছে এবং জন্ম নিয়েছে ভাইরাসের নতুন নতুন প্রজাতি। এগুলো মানবজীবন ও প্রাণিজীবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে। আল্লাহ তাআলা যে প্রকৃতিকে পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছেন তাতে তা চূড়ান্ত ভারসাম্যহীনতা তৈরি করেছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
إنا كل شيء خلقناه بقدره
আমি প্রতিটি জিনিস সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে। [সুরা কামার ৪৯] আল্লাহ তাআলা পৃথিবীকে মানুষের বসবাসস্থল ও তার জীবিকা অন্বেষণের জায়গা বানিয়েছেন। তিনি বলেন,
ووتكم في الأرض مستقر ومتاع إلى حين পৃথিবীতে কিছুকালের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল।
[সুরা বাকারা : ৩৬]
এই বৈশ্বিক সমস্যা কেবল বর্তমান মানবপ্রজন্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং তা আগামী প্রজন্মগুলোর জন্যও ঝুঁকি সৃষ্টি করছে এবং তাদের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে; তারা বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। এসব সমস্যার কয়েকটিকে অনিবার্য বলে মনে হয় এবং এখনো পর্যন্ত এগুলোর উপযুক্ত সমাধান পাওয়া যায়নি। উদাহরণ হিসাবে পারমাণবিক বর্জ্যের কথা বলা যায়। পারমাণবিক বর্জ্যে এমন সব তেজস্ক্রিয় উপাদান রয়েছে যা শত শত নয় হাজার হাজার বছর অক্ষত থাকতে পারে। এমনকি তা মহাসাগরের গভীর তলদেশে সিমেন্ট ও সিসার কয়েক স্তর নিচে প্রোথিত থাকলেও। কারণ সিমেন্ট ও সিসার এসব স্তর প্রবল চাপের নিচে ও পানির লবণাক্ততার মধ্যে শত শত ও হাজার হাজার বছর টিকে থাকবে না। যেকোনো মুহূর্তে এই পারমাণবিক বর্জ্য প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গিয়ে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
চারপাশের পরিবেশের সমস্যা কেবল প্রকৃতির উৎসগুলোর দূষণ ও তার থেকে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি করেছে। বিশুদ্ধ পানি দূষিত হচ্ছে, কিন্তু পৃথিবীর অধিকাংশ অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানিকে সঠিক পন্থায় কাজে লাগানো হচ্ছে না। আমরা দেখছি লাখ লাখ টন বিশুদ্ধ পানি সমুদ্রে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে। অথচ মানুষ বিভিন্ন অঞ্চলে পানির অভাবে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে এবং সৃষ্টি হয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট।
নির্মাণশিল্পের সম্প্রসারণের চাপে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে উর্বর ভূমি হ্রাস পাচ্ছে। অথচ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে উৎপাদনক্ষম ভূমিকেও উপযুক্ত বৈজ্ঞানিক পন্থায় কাজে লাগানো হচ্ছে না। কৃষিকাজ চলছে প্রাচীন ও আদিম পদ্ধতি ব্যবহার করে। চাষ ও সেচ ব্যবস্থার উন্নতি, বিভিন্ন ধরনের বীজের মানোন্নয়ন, মাটির ওপর চাপ এড়ানোর জন্য কৃষিচক্রের ব্যবস্থাপনা, জৈব সার ও সহায়ক উপাদান দিয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে সে সম্পর্কে এসব দেশ উদাসীন।
সৌর শক্তি ও বায়ুশক্তির মতো পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য শক্তি (ক্লিন এনার্জি) কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে বিশ্ব এখনো এগোচ্ছে ধীর গতিতে। এ ছাড়া যত ধরনের শক্তির ওপর বিশ্ব নির্ভর করছে প্রকৃতির ওপর তার ক্ষতিকর প্রভাব প্রমাণিত। শুধু তাই নয়, এগুলো প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করছে এবং মানুষের জীবনে ক্রমাগত ক্ষতি বৃদ্ধি চলেছে।
এসব সমস্যার ক্ষেত্রে ইসলাম নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেনি। কারণ এই ঐশী দ্বীনকে আল্লাহ তাআলা বিশ্বজগতের জন্য মনোনীত করেছেন। এই দ্বীনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সামগ্রিকতা এবং এই পৃথিবীতে মানবজীবনে শৃঙ্খলা বজায় রাখার সক্ষমতা। এই দ্বীন বাস্তবিক অর্থে একজন মুসলিমের সমগ্র জীবনকে অন্তর্ভুক্ত করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
و قل إن صلاتي ونسكي ومحياي ومماتي يله رب العلمين لا شريك له وبذلك
أمرت وأنا أول المسلمين
বলো, আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর উদ্দেশে। তাঁর কোনো শরিক নেই এবং এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম। [সুরা আনআম: ১৬২-১৬৩]
এই পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের দ্বারা আল্লাহ তাআলা নবুয়তের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন এবং তাঁর রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দ্বারা রাসুলগণের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন। এই দ্বীনের ব্যাপারে তিনি বলেন,
اليوم أكملت لكم دينكم وأتممت عليكم نعمتي ورضيت تكم
الإسلام دينام
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম। [সুরা মায়িদা ৩]
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন ছিল এই দ্বীনের সামগ্রিকতা ও পূর্ণতার বাস্তবিক প্রতিফলন। তাঁর জীবন রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, মাজনীতি পাশাপ চারপাশের প্রকৃতির প্রতি গুরুত্বের ক্ষেত্রেও অবদান, উপদেশ ও শিক্ষায় পরিপূর্ণ ছিল।
ইসলাম তার সামগ্রিকতা ও পূর্ণাঙ্গতা সত্ত্বেও এখন নানারকম হিংস্র আক্রমণের শিকার হচ্ছে। ইসলামের সঙ্গে ‘সহিংসতা’, ‘সন্ত্রাস’, ‘জুলুম’, ‘নিষ্ঠুরতা’, ‘পশ্চাৎপদতা’ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য জুড়ে দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর পরিবেশগত বিপর্যয়ে যদিও মুসলিমদের কোনো হাত নেই, এবং যদিও বৈশ্বিক আগ্রাসনে তাদের কোনো ক্ষমতাও নেই, শক্তিও নেই, তারপরও ইসলামের ওপর আক্রমণ অব্যাহত আছে। বরং এই আক্রমণের হিংস্রতা ও নৃশংসতা দিনদিন বেড়েই চলেছে।
মানবতার যাবতীয় সমস্যার সমাধানে সক্ষম পূর্ণাঙ্গ ও সামগ্রিক ঐশী জীবনবিধান এখন অবরুদ্ধ। তাকে অবদান রাখার সুযোগই দেওয়া হচ্ছে না। উপরন্তু তারা যদি পারত তবে এই জীবনবিধানের অস্তিত্বও টিকে থাকতে দিত না। আমাদের রব আল্লাহ তাআলা যেমন বলেন,
ولا يزالون يقاتلونكم حتى یردوکم عن دينكم إن استطاعوا
তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যে পর্যন্ত তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে না দেয়, যদি তারা সক্ষম হয়। [সুরা বাকারা : ২১৭]
এই অস্পষ্ট চিত্রচ্ছায়ায় আমরা জিজ্ঞাসা করি, সেইসব মুসলিমরা কোথায়, যারা এই জীবনবিধান নিয়ে মুখ খুলে কথা বলবেন এবং কলম দিয়ে লিখবেন?
নিজেদের দ্বীন ও দ্বীনের সৌন্দর্য সম্পর্কে মুসলিমদের অজ্ঞতা আরেকটি বড় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব আলেম-উলামা, দায়িগণ ও সংস্কারকদের কাঁধে বর্তায়। সত্যপন্থীদের মধ্যে যারা কিতাবের ধারকবাহক, অথচ তা বোঝে না, আল্লাহ তাদের ঘৃণ্য অভিধায় অভিহিত করেছেন এবং কঠিন ভাষায় তিরস্কার করেছেন। তিনি বলেন,
مثل الذين حملوا الثورية ثم لم يخيلوها كمثل الحمار يحمل أسفاراً
بئس مثل القوم الذين كذبوا بآيت الله والله لا يهدي القوم الظلمين
যাদেরকে তাওরাতের দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়েছিল, কিন্তু তারা তা বহন করেনি (অনুসরণ করেনি), তাদের দৃষ্টান্ত হলো পুস্তক বহনকারী গর্দভ! কত নিকৃষ্ট সে সম্প্রদায়ের দৃষ্টান্ত যারা আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করে! আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (১)
এই বৈশিষ্ট্য মুসলিমজাতির জন্যও প্রযোজ্য হবে বলে আশঙ্কা হচ্ছে। সুতরাং প্রকৃতি ও পরিবেশ প্রসঙ্গে লেখা আমার জন্য বড় সৌভাগ্য ও আনন্দের বিষয়। এই বিষয়ে লেখার দ্বারা কয়েকটি উদ্দেশ্য অর্জিত হবে। পৃথিবীর প্রাকৃতিক শৃঙ্খলা ও বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষার সমস্যা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এটি কোনো জাতি বা দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এই লেখার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে ইসলামে পরিবেশগত সংকট উত্তরণের জন্য সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সমাধান পেশ করা হয়েছে। এটা ইসলামের বিশ্বজনীনতার দলিল। প্রকৃতি যে একদিন হুমকির সম্মুখীন হবে তা মানুষের কল্পনায় আসার বহু শতাব্দী আগে ইসলাম প্রকৃতির বিষয়ে যত্নশীলতার কথা বলেছে। বস্তুনিষ্ঠ ইসলামি শরিয়ার এমন কোনো নির্দেশনা নেই যা কোনো-না-কোনোভাবে প্রকৃতির বিষয়টি স্পর্শ করেনি। এর দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয় যে এই দ্বীন আল্লাহর মনোনীত।
ইসলামের পরিবেশবিষয়ক অবদান সম্পর্কে অজ্ঞতা। কেবল অমুসলিমদের ও সাধারণ মুসলিমদের রয়েছে তা নয়, বরং আমি বলব, অনেক আলেমও এই অজ্ঞতা থেকে মুক্ত নন। এই বিষয়ে আমার কলম ধরার এটাও একটি কারণ।
সত্য এই যে, আমি নিজেও যে এই বিষয়ে অজ্ঞতামুক্ত তা নয়। যখন আমি এই প্রবন্ধগুলো লিখতে শুরু করি তখন আমার মাথায় ছিল শরিয়তের কিছু বিধিবদ্ধ বিধান ও নীতিমালা, কুরআনের কিছু নির্দেশ এবং হাদিসের কিছু উপদেশ, তা ছাড়া আলেমগণের কিছু বক্তব্য।
কিন্তু আমাদের বিপুল পরিমাণ ফিকহি জ্ঞানসমুদ্রে ঘাঁটাঘাঁটি ও অনুসন্ধান আমার মুগ্ধতা ও বিস্ময় যেমন বৃদ্ধি করেছে, তেমনই আমার বিশ্বাসকে দৃঢ় করেছে। ফলে আমি বিস্তৃত পরিসরে বিস্তারিত আলোচনার আগ্রহ দমন করতে ব্যর্থ হয়েছি। যদিও আমি যতটুকু সম্ভব সংক্ষিপ্ত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আমার কাছে একটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, মানবজীবনে সুশৃঙ্খলা আনতে শরিয়ত এমন পথ ও পন্থা অবলম্বন করেছে, যা এই পৃথিবীতে তাদের জীবনের সবচেয়ে উপযোগী ও টেকসই পরিবেশ
নিশ্চিত করবে।
ইবাদতের এই নতুন তাৎপর্য সম্পর্কে আমার উপলব্ধি আরও বেড়েছে আল্লাহ তাআলার বাণীতে,
وهو أنشأكم من الأرض واستعمركم فيها
তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাতেই তিনি তোমাদের বসবাস করিয়েছেন। (২)
আল্লাহ তাআলা আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে এই পৃথিবীতে খলিফা বানিয়েছেন। তিনি ফেরেশতাদের নির্দেশ দিয়েছেন আদমকে সিজদা করার জন্য। তিনি তাকে মর্যাদাবান করেছেন, সম্মানিত করেছেন, উঁচু স্থান দিয়েছেন। সবকিছুর নাম তাকে শিখিয়েছেন। এই জ্ঞানপ্রাপ্তির ফলেই আদম আলাইহিস সালাম এই পৃথিবীতে বসবাসের উপযুক্ত হয়েছেন।
আদম আলাইহিস সালাম ফেরেশতাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছিলেন এ কারণে নয় যে তিনি রাত জেগে দীর্ঘ সময় আল্লাহর ইবাদত করেছেন, অনেক বেশি জিকির-আজকার ও তাসবিহ জপেছেন, বা তার ছিল অস্বাভাবিক ও অলৌকিক শক্তি, কিংবা পরম আনুগত্য। কোনো সন্দেহ নেই যে এসব ক্ষেত্রে ফেরেশতারাই শ্রেষ্ঠ ছিল। ফেরেশতাদের তুলনায় আদম আলাইহিস সালামের শ্রেষ্ঠত্ব কেবল একটি জায়গাতেই, তা হলো জ্ঞান। এই জ্ঞানের ফলে তিনি ইবাদতের নতুন একটি দিক বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তা হলো পৃথিবীকে আবাদ করা, নির্মাণ করা এবং সমৃদ্ধ করা। এ কারণে আল্লাহ তাআলা তাঁকে এসব মহান ফেরেশতাদের কাতারের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন, তাদের মধ্যে তাঁকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। এমনকি ফেরেশতাদের দিয়ে তাঁকে সিজদাও করিয়েছেন। এই শ্রেষ্ঠত্বের কারণে তিনি পৃথিবীতে খলিফা হওয়ার অধিকার পেয়েছেন। আল্লাহ তাআলা সংশ্লিষ্ট বিষয়টি বর্ণনা করেছেন এভাবে,
ه وإذ قال ربك للمليكة إني جاعل في الأرض خليفة قالوا أتجعل فيها من يفسد فيها ويسفك الدماء ونحن نست بحمدك ونقدس لك قال إني أعلم ما لا تعلمون ” وعلم ادم الاسماء كلها ثم عرضهم على المليكة فقال البوني بأسماء هؤلاء إن كنتم صدقين ” قالوا سبحتة لا علم لنا إلا ما علمتنا إنك أنت العليم الحكيم ” قال يادم البتهم بأسمائم فلما الباهم بأنمايم قال ألم أقل لكم إني أعلم غيب الشموت و الأرض و أعلم ما تبدون وما كنتم تكتمون ” وإذقلنا للمليكة اسجدوالأدم فسجدوا إلا إبليس أبى واستكبر وكان من الكفرين »
২. সুরা হুদ : ৬১।
১. সুরা জুমুআ: ৫।
স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের বললেন, ‘আমি পৃথিবীতে (আমার) প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে যাচ্ছি, তারা বলল, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকেও সৃষ্টি করবেন (এমন সৃষ্টিকে প্রতিনিধি বানাতে চাচ্ছেন) যে অশান্তি ঘটাবে এবং রক্তপাত করবে? আমরাই তো আপনার (জন্য) সপ্রশংস মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করি।'(৩) তিনি বললেন, ‘আমি জানি যা তোমরা জানো না।’ আর তিনি আদমকে যাবতীয় নাম (৪) শিক্ষা দিলেন। (তিনি আল্লাহর কাছ থেকে সব পদার্থের নাম জেনে নিলেন।) তারপর তিনি ওই সমুদয় (পদার্থকে) ফেরেশতাদের সামনে প্রকাশ করলেন এবং বললেন, ‘যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে এই সমুদয়ের নাম আমাকে বলে দাও।’ (৫) তারা বলল, ‘আপনি মহান, পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের তো কোনো জ্ঞানই নেই। বস্তুত আপনি জ্ঞানময় ও প্রজ্ঞাময়।’ (ফেরেশতারা যখন এভাবে নিজেদের অক্ষমতা ও অপারগতা স্বীকার করে নিলেন) তখন তিনি বললেন, ‘হে আদম, তাদেরকে এ সকল (পদার্থের) নাম বলে দাও।’ সে তাদেরকে এই সকলের নাম বলে দিলে তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে আকাশমণ্ডল এবং পৃথিবীর অদৃশ্য বস্তু সম্পর্কে আমি নিশ্চিতভাবে অবহিত এবং তোমরা যা ব্যক্ত করো বা (তোমাদের অন্তরে) গোপন রাখো তাও আমি জানি?’ আর যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, ‘আদমকে সেজদা করো,’ তখন (সঙ্গে সঙ্গে) ইবলিস ব্যতীত সবাই সিজদা করল; সে নির্দেশ অমান্য করল এবং অহংকার করল। (সিজদার জন্য ইবলিসের ঘাড় নত হলো না।)
সুতরাং সে কাফেরদের দলভুক্ত হলো। [সুরা বাকারা : ৩০-৩৪] ইসলাম প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে তার সম্পর্ককে দুটি স্তরে পরিচালিত করেছে। প্রথমত সাধারণ ও সামগ্রিক নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, এতে মানবজীবনে উদ্ভূত সব ঘটনায় শৃঙ্খলা আনা যায় এবং আপতিত সব সমস্যার সমাধান করা যায়। দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে অনেক বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও নির্দেশনা। বিশেষ করে রাসুলের সুন্নাহ এগুলোর দ্বারা পরিপূর্ণ, যুগ যুগ
৩. খলিফা বা প্রতিনিধি সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী তা জানার জন্য ফেরেশতাগণ এ কথা বলেছিলেন।
• বস্তুজগতের জ্ঞান।
°. সত্যবাদী হও তোমাদের বক্তব্যে।
এগুলো অপরিবর্তিত থাকবে। যেমন পথঘাট থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো, আবদ্ধ পানিতে প্রস্রাব করতে নিষেধাজ্ঞা, খাদ্য ও পানীয়ের পাত্র ঢেকে রাখার নির্দেশ… ইত্যাদি। সাধারণ নীতিমালার অত্যাশ্চর্য রহস্য আমরা এই গ্রন্থে পাব এবং ছোট ছোট ব্যাখ্যার ক্ষেত্রেও তা পাব। এতে বিস্ময়ের কিছু নেই! কারণ হাদিস একই দীপাধার থেকে উৎসারিত।
ইসলামি বিধিবিধানের অবিনশ্বরতা এবং প্রত্যেক যুগে তার উপযোগিতার উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো ইসলামি সভ্যতার বিভিন্ন যুগের বাস্তবিক চিত্র। মুসলিমগণ চারপাশের প্রাকৃতিক সম্পদকে সর্বোত্তম পন্থায় কাজে লাগিয়েছেন; সুরক্ষা দিয়েছেন এবং ব্যবহার করেছেন। ইসলামি শরিয়ায় প্রকৃতি ও পরিবেশের বিষয়টি পূর্ববর্তী চিন্তাধারার তুলনায় বিপ্লব ও উল্লম্ফন ছিল, পরবর্তীকালে মুসলিমরা যখন দুর্বল হয়ে পড়ল এবং তাদের ঐশী মানহাজ পরিত্যাগ করল তখন এই বিষয়ে তারা পরাজিত হয়ে গেল। অন্যরা তাদের ওপর আধিপত্য ও কর্তৃত্ব বিস্তার করল এবং এই পৃথিবীর নেতৃত্ব দিলো। সবকিছু এমনই হলো যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
وظهر الفساد في البر والبحر بما كسبت أيدي الناس ليذيقهم بعض الذي
عيلوالعلهم يرجعون
মানুষের কৃতকর্মের ফলে স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে আল্লাহ তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। [সুরা রুম : ৪১]
আল্লাহ তাআলাই মানুষের সংকল্প পূর্ণ করেন এবং তিনিই সরল পথে পরিচালিত করেন।
—ড. রাগিব সারজানি
বই : পৃথিবী আমার বন্ধু লেখক : ড. রাগিব সারজানী বইটির হার্ডকপি ক্রয় করুন Wafilife Books Shop থেকে। এই বইটির প্রি অর্ডার চলছে তাই দয়াকরে বই : পৃথিবী আমার বন্ধু PDF Download Free চাহিয়া লেখককে নিরুৎসাহিত করবেন না।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?