পুরষ্কার – রাহাত বিন সিদ্দিক | Puroshkar By Rahat Bin Siddik

আজ রাহাত অনেক দিন পর হাসিমুখে কলেজে ঢুকে হাসিমুখে কলেজ থেকে বের হল। না হয় এতোদিন তো সে হাসিমুখে কলেজে গেলেও দেয়। কলেজের নানা ঘটনা / সমস্যা তাঁর মনকে বিষিয়ে দিন শেষে সেই হাসি আর মুখে থাকে না। থাক সে কথা, সে কথা পরে বলা যাবে। এখন মূল কথায় আসি। রাহাতের একটা সমস্যা আছে সেটা হলো সে যখন হাসিখুশি থাকে তার প্রচুর খেতে ইচ্ছে করে। তাই সে নাচতে নাচতে চলে গেল ফেয়ারির পাতিয়েরি রেস্টুরেন্টে। এছাড়াও তার বন্ধুদের সাথে দেখা করার কথা ছিল তাই সেখানে যাওয়া। সেখানে গিয়ে সে সে দেখলো তাদের রেগুলার টেবিলে অন্য গ্রুপ বসা। প্রথম দেখাতেই চিনে গেল।

তারা তার প্রাক্তন বন্ধু সাফির জ্ঞানের বন্ধু, টেবিলের বা দিকে তাসফিয়া ও স্বর্ণা আর ডান দিকে জারাফ ও সুহানা। তাদের মধ্যে দুইজন তার জীবনের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী। তাই যে কোনো কথা না বলে তার পাশের টেবিলে বসে পড়ল। মেনুকার্ড পড়তে পড়তে সে চোখের কানি দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে দেখল তিন জোড়া অগ্নি চোখ তার তাকিয়ে আছে। যদি চোখ দিয়ে আগুন বের হবার কোনো উপায় থাকত তাহলে এতোক্ষনে সে বারবিকিউ হয়ে যেত। এইসব কথা চিন্তা করতেই তার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল  এমন সময় সাজি এসে হাজির সাদি প্রথমে না দেখলেও পরে সে খেয়াল করে। 
তারপরেও সে খেয়াল না করার ভান করে থাকে। রাহাত চুপচাপ তার মোবাইল বের করে স্ক্রল করতে থাকে। এইসব বিষয় আগে তাকে অনেক কষ্ট দিত এখন তা অভ্যাস হয়ে গেসে। যেহেতু সে রেগুলার কাস্টমার তাই তারা জানত সে কখন ওর্ডার দিবে আর কি ওভার দিবে । তাই তারা আর তাকে ওর্ডারের জন্য ডিস্টার্ব করল না। কিছুক্ষণের মধ্যে তার ফ্রেন্ড ঐশী আর কিরন চলে আসল। ঐশী বসার আগে তার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল, “কিরে রাহাত, তোর কিসে?
 -কই কিছু না তো।”
– ” তাইলে এতো স্যাড পোস্ট কেন? 
ঐশীর কথা শুনে রাহাত হাসতে লাগল। বলল, “বলতে গেলে অনেক কিছু হইছে আর না গেলে কিছুই হয় নাই।”
রাহাতের কথা শুনে কিরন বলল, ” কিরে কি বলস, এই সব? কথার আগা মাথা বুঝি না।”
রাহাত হাসতে হাসতে বলল, ” আচ্ছা আমি যদি কখনো তোদের সাথে মিথ্যা কথা বলি, রাগ করবি?”
ঐশী ওর মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল, “হঠাৎ এই কথা কেন? আচ্ছা। তুই যদি ভুলে বলস তাইলে তুই নিজেই অইটার জন্য সরি বলবি। আর জেনেশুনে বলোস তাইলে অইটা বলার কোনো না কোনো কারন আছে তাইলে।”
– ” তুই রাগ করবি না? বন্ধুত্বের মাঝে মিথ্যা বলতেসি।”
– ” বললাম না তোর কারন আছে সেটা বলার। যখন তোর মনে হবে তোর বলার সময় তখন তুই ঠিকি বলবি।”
এতোক্ষন কিরন তাদের কথা বসে বসে শুনছিল। এখন সে তার নীরবতার বাধ ভেঙে বলল, “দেখ, রাহাত। আমরা তোকে বেশি দিন চিনি না। যতদূর চিনি আমরা এতোটুকু বুঝসি যে তুই তোর কথা সহজে মানুষকে বলোস না। হইতে পারে তুই হয়ত কারো কাছে বড় কোনো বিশ্বাসঘাতকতা পাইসোস অথবা….
এমনতাবস্থায় ঐশী বলে ওঠে, ” আমি জানি রাহাত তুই পরিস্থিতি সামলানোর জন্য মিথ্যা বলস যাতে কথা না বাড়ায় বা প্রবেলেম তৈরি না হয়। এই সব কথা তুই বাদ দে। তুই আগে বল কাহিনি কি?”
রাহাত তখন ওয়েটারকে ইশারাকরে তাদের খাবারের ওর্ডার দিয়ে দিল। এমন সময় সে খেয়াল করল তার প্রাক্তন বন্ধু আর তার বন্ধুরা কান খাড়া করে তাদের কথা শুনছে। সে সেই দিকে তোয়াক্কা না করে বলল, “আমার সাথে খুব বাজে ভাবে মাইন্ড গেম খেলসে। নেহাত আমি অনুভব, অনুভূতি, ইমোশন এইসবের মাঝে ছিলাম বলে ধরতে পারি নি। থাকার কথাও না আমি তো সিরিয়াস ছিলাম না। আমি তো আমার ফ্রেন্ডের সাথে মজা করতেছিলাম। যদি না থাকতাম তাইলে ঠিকি ধরে ফেলতাম। আমার কষ্ট কোথায় জানিস?
– ” কোথায়?”
– ” আমার সাথে গেম খেলসে এবং তাতে আমি হেরে গেছি। আমি আমার জীবনে কখনো মাইন্ড গেমে হারি নাই।”
ঐশী রাহাতের দিকে তাকিয়ে বলল, ” তোর কেন মনে হল তোর সাথে কেউ গেম খেলেছে?”
ততোক্ষনে আমাদের খাবার চলে এসেছে৷ রাহাত তার কাটা চামচটা চাউমিনে ঘোরাতে ঘোরাতে বললাম, “হঠাৎ আমাকে জেরা করা, কোনো কারন ছাড়া কথা ১৮০° ঘুরানো, তারপর আমার দেয়া বই চেক করা এই গুলা হচ্ছে মাইন্ড গেমের প্রমান। সব প্রমান খোলা রেখে গেছে। আমি শুখু কড়ার সাথে কড়ি মিলাইছি। আর কিচ্ছু না আমার কাছে সব জলের মতো পরিষ্কার।”
কিরন খানিকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কে খেলছে? ও?”
– ” না। ওর বন্ধু। ও এতো গভীরে চিন্তা করার মানুষ না। ওদের গ্রুপের ইনোসেন্ট ফেস আর মাদার পারসোন এই কাজটা করেছে। আমি এই ক্ষেত্রে ১০০% সিউর। বলতে হবে পরিকল্পনা বাজে হইলে কি হবে আঘাত একেবারে পয়েন্টে করছে। তাদের খেলা ভালো ছিল কিন্তু তারা ভুল মানুষের সাথে খেলসে।” এই কথা বলে রাহাত হাসতে থাকল। 
রাহাত তার চাউমিনের প্রথম বাইট নিতে যাবে এমন সময় সুহানা দাঁড়িয়ে চিল্লাই উঠে বলল, “আমরা কোনো গেম টেম খেলি নাই। আর আমরাও দেখব তুই কি করতে পারোস?”
রাহাত তার চাউমিনের চামচটা রেখে তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, “প্রথমত আমি একবারও তোমাদের কথা বলি নি, তোমরা নিজে থেকে বলে উঠলা, তার মানে কি দাঁড়ায়? আর এছাড়াও … 
এইবার সাদি এসে তার কলার ধরে বলল , ” রাহাত , অনেক সহ্য করেছি আর কোনো বাজে কথা বললে ….
রাহাত কলার থেকে সাফির হাত সরিয়ে বলল, ” বাজে কথা ? হ্যা, সত্য সর্বদা বাজে হয় । তাই হয়তো কেউ কাউকে এখন বলে না।”
রাহাত সুহানা ও তাসপিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি আমার জীবনে অনেক মাইন্ড গেমার দেখেছি কিন্তু তোমাদের মত কখনো দেখিনি। আমি অনেকের সাথে খেলেছি কিন্তু তোমরা হল নতুন ধরনের, নিজস্ব স্বার্থ ব্যতীত সেরা লেভেলের গেমার। তোমাদের পরিকল্পনা বাজে ছিল, অনেক ভুল ছিল, কিন্তু তোমাদের লক্ষ্য ছিল সুদৃঢ়। এইজন্য হয়ত হেরে গেছি। সাফল্যের শীর্ষে ওঠে তোমাদের মতো নতুনদের কাছে হেরে গেলাম।”
সুহানা হেসে বলল , ” কি এই জন্য কষ্ট হচ্ছে?” 
রাহাত পকেট থেকে একটা দাবার ঘুটি (রাজা) বের করে বলল, “আমাদের কমিউনিটিতে একটা রেওয়াজ আছে  খেলায় যে হেরে যায় সে তার পক্ষ থেকে বিজেতাকে বিজয়ের সরূপ হিসাবে একটা পুরস্কার দেয়, সাথে দেয় তার  অবস্থান আর সম্মান।”
রাজার ঘুটির দিকে তাকিয়ে বলল, ” এই যে দাবার ঘুটি দেখতেসো, এইটা কোনো সাধারন কোনো সাধারণ দাবার ঘুটি না, এইটা হলো The Black King। যা আমি আমার শিক্ষক থেকে খেলার দ্বারা ছিনিয়ে নিয়েছিলাম। আমাদের মাইন্ড গেম দুনিয়ায় এর আরেক নাম আছে সেটা হলো, The crrown of the Top। আমার এই অমূল্য সম্পদ একটা বিজয়ের চিহ্ন হিসাবে তোমাদের দিয়ে দিলাম। এইটা তোমাদের বার বার মনে করিয়ে দিব তোমরা ভুল লোকের সাথে গেম খেলেছিলে। সারাজীবন পস্তাবে এর জন্য।
বাই বাই, টাটা, আল-বিদা।”
এই কথা বলে রাহাত টেবিলে ঘুটিটা সুহানাদের টেবিলে রেখে সেখান থেকে। রাহাতের কথা শুনে সবাই যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেল। তার বন্ধুরা, সাফির বন্ধুরা নিশ্চুপ ভাবে বসে আছে।কারো মুখে ভাষা নেই।
এমন সময় সাফির বন্ধু অদিত এসে এই নিস্তব্ধতার দ্বার ভেঙে দেয়। সে এসে সাফিকে বলে, ” সাফি খরব শুনসোস?”
– “কি?”
– “রাহাত তো ঘন্টা দুয়েক আগে সুইসাইড করছে।”
অদিতের কথা শুনে সবাই যেন আকাশ থেকে পড়ল। সুহানা দাবার ঘুটিটা হাতে নিয়ে বলল, “চলে গেল কিন্তু নিজের দায়িত্ব ভুললো না।”
পুরষ্কার – রাহাত বিন সিদ্দিক | ক্রেডিট : নিস্তব্ধ কথা 
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?