- Title : পালামৌ
- Author : সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Publisher : মাটিগন্ধা
- Category : ভারত ভ্রমন
- ISBN : 9847034305623
- Edition : 1st Edition, 2015
- Country : বাংলাদেশ
- Language: বাংলা
বাসে-ট্রামে চড়ে কষ্ট করে ভ্রমণ করার চেয়েও মৃদু-মন্দ হাওয়ার পরশে, খোলা জানালার পাশে একটি চেয়ারে এলোচুলে পায়ের উপর পা তুলে এক কাপ চা হাতে বসে বসে ভ্রমণকাহিনী পড়া আমার কাছে অত্যন্ত আনন্দদায়ক বলে মনে হয়। ভ্রমণ কাহিনীতে পড়ার দৃশ্যগুলো যেভাবে আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে আর যেভাবে আমাদের চিন্তার ব্যায়াম হয় সেরকমটা কিন্তু সরাসরি কোনো জায়গাতে গেলে হয় না। বিভিন্ন স্থানে আমরা কল্পনা করে নিতে পারি যা আমরা দেখতে পছন্দ করি বা যা আমরা দেখতে ভালোবাসি। যে জায়গায় যা যা থাকার কথা তাই তাই আমরা কল্পনা করতে পারি।
এই প্রসঙ্গে একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যায়। ২০১৯ সালে আমাদের বিভাগীয় শিক্ষা সফরে আমরা সুন্দরবন গিয়েছিলাম। সেখানে কটকা বিচ নামক একটি অত্যন্ত সুন্দর জায়গা আছে । সাধারণত খুব কম মানুষজন সেখানে গিয়ে থাকে, বিশেষত যারা শিক্ষা সফর করার জন্য যায়। সেই বীচে আমাদের সবার প্রিয় ডঃ ফরিদ হাসান স্যার আমাদেরকে একটি জায়গায় একটা সুন্দর পাখি দেখাচ্ছিলেন যে পাখিটার নাম Lesser adjutant. এত সুন্দর একটা বীচের অন্য একটা পাশে দেখেছিলাম একটা ময়লার স্তুপ, বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের বোতল প্লাস্টিকের প্যাকেট, চিপস এর প্যাকেট ইত্যাদিতে ছড়ানো। আমরা যদি বইয়ে পড়ে এই জায়গাটার কথা কল্পনা করতাম তাহলে আমাদের কল্পনায় কখনোই আমরা ওরকম একটা সুন্দর বীচে ময়লার স্তুপ থাকার কথা চিন্তা করতাম না, যেটা বাস্তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি। কল্পনাতে আমরা তাই তাই তাই কল্পনা করে নিতাম যা আমাদের ভালো লাগতো বা যা আমরা পছন্দ করতাম। এজন্যই ভ্রমণকাহিনী আমার কাছে ভ্রমণ করার চেয়েও বেশি আনন্দপূর্ণ মনে হয়।
এবার আসা যাক পালামৌ বইয়ের কথায়।
পালামৌ এর লেখক সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জন্ম গ্রহণ করেছেন ১৮৩৪ সালে । বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বড় ভাই সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, এটা আমি এই বই পড়ার পরে জানতে পারলাম, ব্যাপারটা খুবই দুঃখের৷ কারণ বঙ্কিমচন্দ্র যতটা খ্যাতি নিয়ে জ্বলজ্বল করছেন, ততটা খ্যাতি সঞ্জীবচন্দ্র পাননি, তাই তাঁকে আমরা বলতে গেলে চিনি-ই না।
পালামৌ ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের একটি প্রদেশের নাম, এটাকে একটা পরগণাও বলা যেতে পারে। পালামৌ এর ব্যাপারে লিখতে গিয়ে লেখক বলেছেন-
“পাহাড়-জঙ্গল লইয়াই পালামৌ। যে সকল ব্যক্তি তথায় বাস করে তাহারা জঙলি, কুৎসিত, কদাকার, জানোয়ার তাহাদের পরিচয় লেখা বৃথা । ”
পাহাড়ঘেরা জায়গায় বসবাসকারী কয়েকটি উপজাতি (কোল, বাই) সম্পর্কে লেখক এই মন্তব্য করেছেন। তারা সভ্যতা থেকে তখনো অনো দূরে ছিলো৷ এখন কী অবস্থা জানি না।
বলা হচ্ছে বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ভ্রমণকাহিনী হচ্ছে এই পালামৌ, যেটা সাধু ভাষায় লেখা হয়েছে এবং খুব সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা হয়েছে। যদিও একটি সার্থক ভ্রমণকাহিনীর যেসব গুণাবলী থাকা দরকার পালামৌ অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো লঙ্ঘন করেছে।
যুবক জীবনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পালামৌ যাওয়ার যে অভিজ্ঞতা সেটাকে লেখক অনেক বছর পরে স্মৃতিনির্ভর হয়ে কাগজে লিখেছেন।
মাত্র ৬ টি খন্ডে বিভক্ত (খন্ডগুলোকে তিনি ‘প্রবন্ধ’ নাম দিয়েছেন) ছোট একটি বই। কিন্তু যতটা রূপ-লাবণ্য, সৌন্দর্য বিবেচনা করে, গভীরতা মেপে বইটি লেখা হয়েছে, সেসব আমার ছোট্ট রিভিউতে তুলে ধরা কখনোই সম্ভব না।
পালামৌ অঞ্চলে বসবাসকারী কোল উপজাতিদের বিবাহের প্রথাকে অনেক অদ্ভুত লেগেছে, অপহরণ পদ্ধতিতে ওরা বিবাহ করে, কেমন বিদঘুটে একটা ব্যাপার!
বই থেকে কিছু লাইন উদ্ধৃত করে রিভিউটি শেষ করছি –
“অদ্য যাহা ভালো লাগিতেছে না দশ বছর পরে তাঁর স্মৃতি ভালো লাগিবে। অদ্য যাহা সুখ বলে স্বীকার করি, কল্য তাহা আর জুটিবে না। যুবার যাহা অগ্রাহ্য, বৃদ্ধের তাহা দুষ্প্রাপ্য। দশ বৎসর পূর্বে যা আপনি আসিয়া জুটিয়াছিল, তখন হয়তো আদর পায় নাই , এখন আর তাহা জুটে না, সেইজন্যই তাহার স্মৃতি সুখদ।