পার্মানেন্ট রেকর্ড – এডওয়ার্ড স্নোডেন | Permanent Record – Edward Snowden

❝পার্মানেন্ট রেকর্ড❞-এ যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপনে চালিয়ে যাওয়া বৈশ্বিক নজরদারির এক উপাখ্যান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা- সি আই এ এবং এনএসএ’র সাবেক অফিসার এডওয়ার্ড স্নোডেন ২০১৩ সালে মার্কিন ইন্টারনেট নজরদারির উপর থেকে পর্দা উন্মোচন করেছিলেন। মার্কিন এই হুইসেলব্লোয়ারের কাছ থেকে বিশ্ব জানতে পারে PRISM, STELLARWIND, XKEYSCORE সহ বেশ কিছু নজরদারি ব্যবস্থার কথা।

স্নোডেনের সেই তথ্যফাঁসের কারণেই মানুষ জানতে পারে তাদের প্রতিটি অনলাইন কমিউনিকেশনের রেকর্ড রাখা হচ্ছে। পার্মানেন্ট রেকর্ড। যখন ইচ্ছা তখন কাওকে বলির পাঠা বানানোর জন্য মার্কিন সরকার সেই রেকর্ড ব্যবহার করতে পারবে।
এডওয়ার্ড স্নোডেন এক জিনিয়াসের নাম। এই সাবেক গোয়েন্দা নিজের জীবন বাজি রেখে মার্কিন সরকারের মুখোশ উন্মোচন করার দুঃসাহসিক কাজ করেছেন। বিনিময়ে তিনি পেয়েছেন নির্বাসিত জীবন।

At A Glance Of Permanent Record

  • বই : পার্মানেন্ট রেকর্ড 
  • লেখক : এডওয়ার্ড স্নোডেন
  • অনুবাদক : মাহজাবীন খান
  • প্রকাশনী : রেড পাবলিকেশন 
  • জনরা : আত্মজীবনী 
এডওয়ার্ড স্নোডেন, দু হাজার তেরো সালের বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ব্যাক্তিত্ব। আমরা তখন স্কুলে পড়তাম, ছিলাম পড়াশোনা আর বিনোদন মিডিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকা রেগুলার টিনেইজ। তবে পেপারের ফ্রন্ট পেইজে দেখতাম সবসময় এই মানুষটাকে নিয়ে কিছু না কিছু লিখা হচ্ছেই। টেলিভিশনে দেখতাম ওবামা বলছে; “I’m not going to be scrambling jets to get a 29-year-old hacker”. কৌতুহলবশত এতোটুকু শুধু জেনে নিয়েছিলাম, সে ইন্টারনেট সম্পর্কে এমেরিকান গভর্নমেন্টের কোন একটা সিরিয়াস সিক্রেট লিক করে দিয়েছে। 
তারপর অনেক বছর চলে যায়। বিশ্বব্যবস্থায় বহু উত্থান-পতন হয়। প্রযুক্তির দুনিয়ায় আসে বহুল পরিবর্তন। স্নোডেন নিজের সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে নিয়ে আসে ‘Permanent Record’ বই,২০১৯ সালে। ২০২০ সালের বইমেলায় যেটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়। 
বাবা ইউএস কোস্টগার্ড এয়ারক্রাফটের সিভিল সার্জেন্ট হওয়ার সুবাদে ছেলেবেলাতেই কম্পিউটার আর ইন্টারনেটের সাথে সখ্য গড়ে তোলার সুযোগ হয় স্নোডেনের। ‘পার্মানেন্ট রেকর্ড’ বইয়ে ইন্টারনেট জীবনের বর্ণনা দিতে গিয়ে সে তুলে ধরেছে তার পরিবার, পড়াশোনা এমনকি শৈশব,কৈশোরের প্রথম হ্যাকিং ও! তুখোড় মেধাবী এই তরুণ ৯/১১-র পর অনেক বেশি ভাবুক হয়ে পড়ে। নিজের দেশ এমেরিকার জন্য কিছু করার তীব্র অভিপ্রায় মাত্র ২০ বছর বয়সে তাকে ইউএস সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করে। 
সেখানে তেমন সুবিধা করা সম্ভব হয়নি বিধায় সে তার প্রযুক্তিগত মেধা দিয়ে দেশের সেবা করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং জায়গা করে নেয় CIA, NSA এর মত ওয়ার্ল্ডের টপ কন্ট্রোলিং এজেন্সিতে। কিন্তু এরপরই ঘটে চমক। বিশ্বের সবচেয়ে সংবেদনশীল সিক্রেট সেক্টরে কাজ করার সময় সে এমন সিক্রেট খুঁজে পায়; যা দেশের প্রতি,দেশের সরকারের প্রতি তাকে করে তোলে বীতশ্রদ্ধ। স্নোডেনের তখন কিছুরই কমতি নেই। বয়স পঁচিশের মাঝেই ভালো বাড়ি, গাড়ি, ভালোবাসা – সবই তার হাতের মুঠোয়। তার কাজের ক্ষেত্র ছিল এমন বিষয় নিয়ে, যা পড়তে পারার অনুমতি পুরো বিশ্বের মাত্র ডজনখানিক মানুষের ছিল। 
এতোকিছুর পর ও সে গা ভাসিয়ে দিতে পারেনি। প্রযুক্তির উদ্ভাবনের সাথে সাথে আইনের প্রয়োগের অভাব দিন দিন তাকে চিন্তাগ্রস্ত করে তোলে। নিরাপত্তার নামে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে এমেরিকান সরকারের ‘নোংরা গোপন নজরদারি’ ব্যাবস্থাটার সাথে সে কিছুতেই একমত হতে পারেনি। সে আরো আবিষ্কার করে সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে এমেরিকা কিভাবে রাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদের জন্ম দেয় আর নিজেদের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার পায়তারা করে। অতএব সে সিদ্ধান্ত নেয় সত্য পুরোপুরি জানার আর জানানোর, যার ফলশ্রুতিতে তাকে অর্জন করতে হয় অনিশ্চিত নির্বাসনের জীবন।
এ সব কিছুই গুছিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে ‘পার্মানেন্ট রেকর্ড’ বইটিতে, এডওয়ার্ড স্নোডেনের জবানীতে। 
বইটি পড়তে গিয়ে একজন সৎ, মেধাবী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার স্নোডেনের পাশাপাশি এক দুর্দান্ত লেখক স্নোডেনের সাথেও আপনাদের পরিচয় ঘটবে। ব্যক্তিগত ঘটনার মজাদার বর্ণনা, কর্মক্ষেত্রের সাথে ইতিহাস যোগ করে আলাপ আর টেকনোলজির বিষয়গুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ বইটিকে এক দারুণ পাঠ্য হিসেবে উপস্থাপন করেছে। এই বইয়ের মাধ্যমে অনেক অজানা বিষয় স্নোডেন বিশ্বকে জানিয়েছে আর আমাদের করে তুলেছে তার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ।
পার্মানেন্ট রেকর্ড
স্নোডেন বইটিতে রাজনীতি ও প্রযুক্তির চমৎকার সম্মিলন ঘটিয়েছেন। একই সাথে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে ইতিহাসের ছোঁয়াও আছে বইটিতে।প্রথম অধ্যায়ে আছে স্নোডেনের শৈশব থেকে শুরু করে একজন কম্পিউটার জিনিয়াস হয়ে উঠার গল্প। সেই সাথে আছে আমেরিকান ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (আইসি)’তে তার ক্যারিয়ার শুরুর কথা।দ্বিতীয় অধ্যায়ে আছে আইসিতে স্নোডেনের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের গল্পসহ মার্কিন সরকারের বিভিন্ন অবৈধ নীতির কথা। এই অধ্যায়েই স্নোডেন উল্লেখ করেছেন কীভাবে তিনি মার্কিন সরকারের বৈশ্বিক নজরদারির কথা ধীরে ধীরে জানতে পেরেছেন। সেই সাথে তিনি তার বিবেকের সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে গিয়েছেন। 
অবশেষে একটা সময় মার্কিন সরকারের এই গোপন কার্যক্রম থেকে পর্দা উন্মোচনের সিদ্বান্তের দিকে এগিয়ে গিয়েছেন।মানুষের প্রতিদিনের জীবনে গোপনে নজরদারি চালিয়ে মার্কিন সরকার মানুষের গোপনীয়তার অধিকারে হস্তক্ষেপ করে আসছিল। তা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের সুস্পষ্ট লংঘন। একই সাথে তা ছিল যেকোনো স্বাধীন সমাজের মূল্যবোধের লংঘন। এডওয়ার্ড স্নোডেন সরকারের এই গোপন বৈশ্বিক নজরদারির মাধ্যমে সংবিধান লংঘনের প্রমাণ সম্বলিত কিছু ডকুমেন্টস সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে উন্মোচন করেন। 
তিনি উন্মোচন করেন এক ঘৃণ্য সত্যের। এই সত্য প্রকাশের সিদ্ধান্ত তার জন্য সুখকর কিছু ছিলনা। সেই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন ও তার পরিণতি নিয়েই সাজানো হয়েছে তৃতীয় অধ্যায়।এডওয়ার্ড স্নোডেন, একজন কম্পিউটার জিনিয়াস, তিনি একজন সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ট্রেনিংপ্রাপ্ত ছিলেন। তিনি আইসিতে মার্কিন সরকারের চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন আবার সরকারি কর্মকর্তা হিসেবেও কাজ করেছেন। বর্তমানে নির্বাসিত জীবনে গণমানুষের অনলাইন-অফলাইন জীবনসহ ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার নিয়ে কাজ করছেন। মার্কিন সরকারের এক গোপন সত্য উন্মোচনকারী এই ব্যক্তিটি অনেকের কাছে নায়ক।
সাংবিধানিক ও ব্যক্তিগত নীতি-নৈতিকতা ও সত্যের সমর্থন করতে গিয়ে নিজের দেশের সরকারের কাছেই তিনি পেয়েছেন দেশদ্রোহী খেতাব।তিনি নায়ক নাকি দেশদ্রোহী? এই প্রশ্নের উত্তর এডওয়ার্ড স্নোডেনের জীবনী ‘পার্মানেন্ট রেকর্ড’ বইটিতে খুঁজে পাবেন।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?