পাপা হেমিংওয়ে

আর্নেস্ট মিলার হেমিংওয়ে। বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে শক্তিশালী কথাসাহিত্যিক। কি বর্ণাঢ্য জীবন ছিল তাঁর! সাতটি ভুবন কাঁপানো উপন্যাস লিখেছেন, যার তিনটিই তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছিল। লিখেছেন মনোমুগ্ধকর ছোটগল্প, নন-ফিকশন বই। স্পোর্টসম্যান ছিলেন, সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, বিপ্লব করেছেন, পশু শিকার করেছেন আফ্রিকার সাভানা ভূমিতে, মৎস্য শিকার করেছেন কিউবার উত্তাল ক্যারিবিয়ান সমুদ্রে। জীবনকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছেন। যেদিন জীবন তাঁর কাছে ব্যর্থ মনে হল, সেদিন সকালেই শটগানে নিজেকে শেষ করে দিলেন।

তাঁর প্রথম উপন্যাস The Sun Also Rises ১৯২৬ সালে প্রকাশিত হয়। বিশ্বসাহিত্যে তাঁর স্থায়ী পদচিহ্ন অঙ্কিত হয়ে যায় এই উপন্যাসেই। 
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইতালিতে রেডক্রসে কাজ করেছিলেন। অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার ও ছিলেন। হতাহত, মুমূর্ষু সৈনিকদের হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন সব ভয় তুচ্ছ করে। পরবর্তিতে যুদ্ধাহত হন এবং হাসপাতারে চিকিৎসাধীন থাকার সময় একজন সেবিকার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সুস্থ হয়ে আমেরিকায় ফিরে যান নিজ গৃহে। কিন্তু প্রত্যাখ্যান পত্র আসে তাঁর প্রেয়সীর কাছ থেকে। যুদ্ধের বিষাদ এবং প্রথম প্রেমের ব্যর্থতা কষ্ট নিয়ে লিখেছেন তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস A Farewell To Arms। বইটি ১৯২৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল এবং পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিল। 
হেমিংওয়ে স্পেনের ফ্যাসিবাদী সরকার ফ্রাঙ্কোর বিরুদ্ধে বিপ্লবে যোগ দিয়েছিলেন। স্পেনে তাঁর বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন সংবাদপত্রে। এই বিপ্লবের স্মৃতি নিয়ে উপন্যাস লিখেছেন For Whom The Bell Tols. 
প্যারিসে থাকাকালে বিখ্যাত সাহিত্যিক Ezra Pond, James Joyece, Pablo Picasso এঁনাদের সাথে স্বর্ণালি সময় কাটান এবং লিখেছেন এ স্মৃতি নিয় The Moveable Feast. বইটি মৃত্যুর পর তাঁর ট্রাঙ্ক থেকে উদ্ধার করা হয়, এবং প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালে।
জীবনে শেষের দিকের বড় অংশ কিউবাতে কাটান। কমিউনিস্ট দ্বারা বেশ প্রভাবিত হন। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে কিউবায় থাকাকালে তিনি নিজস্ব গুপ্তচর বাহিনী তৈরী করেন নাজি আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য। গান বোটে মৎস্য শিকারের নামে ইউ.এস অ্যাম্বাসী থেকে আনা অস্ত্র দিয়ে জার্মান সাবমেরিন ক্যারিবিয়ান সমুদ্রে ডুবিয়ে দেন হ্যান্ড গ্রেনেড, ব্রাজুকা দিয়ে। হাভানায় জেলেদের কাছে খুব প্রিয় ছিলেন তিনি। উত্তাল সমুদ্রে জেলেদের সাথে মৎস্য শিকারে যেতেন।জেলেরা তাঁকে ভালোবেসে ডাকতো “পাপা”। হাভানার স্মৃতি নিয়ে লিখেছেন জীবনঘনিষ্ঠ উপন্যাস The Old Man And The Sea. বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫২ তে এবং সাহিত্যের সর্বোচ্চ সম্মান নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনে বেপরোয়া, সামাজিক রীতি নীতি কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে চলতেন। তাঁর কক্ষে কখনো নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে টাইপরাইটারে লিখে চলেছেন বিখ্যাত উপন্যাসগুলো। জীবনকে তোয়াক্কা করতেন না। তিনিই বলতে পেরেছিলেন “man can be destroyed, but not defeated. “
তাঁর শেষ জীবনে মানসিক ব্যধিতে ভুগতেন। ডিলিউসনে আচ্ছন্ন ছিলেন। তাঁর মেডিকেল রেকর্ডসে দেখা যায় তাঁর Haemochromatosis ছিল। হয়তো এ কারণেই তাঁর মস্তিষ্কে রোগ বাসা বেঁধেছিল। তাঁর পিতা ক্লারেন্স হেমিংওয়ে, বোন উর্সুলা হেমিংওয়ে এবং ভাই লিস্টার হেমিংওয়ে ও আত্মহত্যা করেছিলেন। তাই তাঁর আত্মহত্যা জেনেটিকাল এ রোগের মস্তিষ্ক আক্রান্তের জন্যই সম্ভবত হয়েছিল। তিনি শেষ বয়সে লিখতে পারতেন না। হতাশায় ভুগতেন। মেনে নিতে পারেন নি। শটগান মুখে দিয়ে ট্রিগার টিপে দিলেন কোনো এক বিষণ্ণ সকালে। – Credit : Touhid
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?