বই: ন হন্যতে (মৈত্রেয়ী দেবী)
লা নুই বেঙ্গলী (মির্চা এলিয়াদ)
আমরা অনেকেই সঞ্জয় লীলা বানসালি-র “হ্যাম দিল দে চুকে সানাম” মুভিটা দেখেছি। এই মুভির কাহিনী মুলত ‘ ন হন্যতে এবং লা নুই বেঙ্গলী’ থেকে নেওয়া।
ন হন্যতে পড়ার আগে লা নুই বেঙ্গলী পড়লে গল্পটা বোধগম্য হবে। আসলে এটা গল্প নয় পুরোটাই বাস্তব জীবনে ঘটা কাহিনী।
রোমানিয়ার মির্চা এলিয়াদ প্রেমে পড়েন বাঙালী মেয়ে মৈত্রেয়ীর (বা অমৃতার)। তবে সেই সময়ের রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থার দোহাই দিয়েই হোক বা অন্য কোনো কারনেই হোক তাদের সম্পর্ককে মেনে নেওয়া হয় নি। প্রেমের বিয়োগান্তে মির্চা লেখেন লা নুই বেঙ্গলী বা বাংলার রাত। ধারণা করা হয় বা মৈত্রেয়ী দেবীর মতে গল্পের খাতিরে মির্চা অনেক কল্পনার আশ্রয় নিয়েছেন কারণ সেই সময়ের রক্ষণশীল অবস্থায় বাঙালি মেয়েদের এতো বেশি সীমা লঙ্ঘনের সাহস ছিলো না। তার প্রতিউত্তর হিসেবে প্রায় ৪০ বছর পর ন হন্যতে লিখেন মৈত্রেয়ী দেবী। বিস্তর কাহিনী বলবো না বা লিখতেও ইচ্ছে করছে না তবে আমার ধারণা নিয়ে কিছুটা বলবো।
লা নুই বেঙ্গলী পড়ার পর আমার নিজেরও মির্চার প্রতি ঘৃণা, রাগ লেগেছিলো আমিও ভেবেছিলাম একটু বেশি হয়ে গেছে। তবে ন হন্যতে পড়ে বুঝেছি পুরোটা না হলেও একটু সত্যতা ছিলো। তবে এটা বড় ব্যাপারও মনে হয় নি। মির্চা যখন বই লেখেন তখন তিনি যুবক বয়সে ছিলেন সাথে বিতাড়িত, মনের আঘাতে নিপিড়ীত। এমন অবস্থায় এসব লেখা স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু মৈত্রেয়ী দেবী বই লিখেছেন যখন তিনি পূর্ণ বয়স্ক,সমাজের সবকিছুকে দেখার অভিজ্ঞতা তার হয়েছিলো।তাই তার বইয়ে ভুলের পরিমাণ নেই বললেই চলে। যতটুকু বুঝেছি দুজনে আর একটু চেষ্টা করলে এতো বেদনা সইতে হতো না,৪০ বছর পরে যে চিঠিগুলো উদ্ধার করার সাহস মৈত্রেয়ী-র হয়েছিলো সেটা ৪০ বছর আগে একটু দেখাতে পারলে গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো, এখানে ভাগ্যদেবতার হাত ছিলো এটাই বলা সমীচীন হবে।
তবে তাদের দুজনের মধ্যে একটা গভীর ভালোবাসা সারাজীবন ছিলো। সেই ভালোবাসার বিয়োগান্তক পরিণতি সকলের মনে ছাপ রাখতে যথেষ্ট।
ছবির মতো শেষে মির্চা এবং মৈত্রেয়ীর দেখা হয় কি না সেটা জানতে হলে ন হন্যতে পড়তে হবে।
রিভিউটি লিখেছেন : সুমাইয়া জেসমিন
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?