- বই : নিষিদ্ধ লোবান
- লেখক : সৈয়দ শামসুল হক
- প্রকাশনী : অনন্যা
- রেটিং : ৪/৫
- বইছবি : সংগৃহীত
- রিভিউয়ার : রাবেয়া খাতুন
- ভলেন্টিয়ার কন্টেন্ট রাইটার
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস নিষিদ্ধ লোবান। গুটিকয়েক চরিত্রের সমন্বয়ে লেখা বইটির মূল চরিত্র বিলকিস এবং সিরাজ। মূলত এই দুই চরিত্রের সমন্বয়ে লেখক সংক্ষিপ্ত আকারে মুক্তিযুদ্ধের নির্মম ইতিহাস তুলে ধরেছেন।
বাংলার শহরে যুদ্ধ শুরু হলে বিলকিস যুদ্ধের তান্ডবলীলার মুখে পরে, যুদ্ধে তার স্বামী যোগদান করায় বেশ কয়েকদিন স্বামীর অপেক্ষাতেই দিনাতিপাত করে সে। স্বামী না ফেরায়, সে গ্রামের পথে রওনা হয় মা-ভাইয়ের খোঁজে। চলার পথে দেখা হয়ে যায় সিরাজ নামের সদ্য কৈশোর পেরনো এক যুবকের সাথে।
কিছু সম্পর্ক রক্তের না হয়েও হয়ে ওঠে আত্মার কাছাকাছি, সিরাজ এবং বিলকিসের মধ্যেও তেমনই সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
বিলকিস যখন গ্রামে আসে যুদ্ধের আবহাওয়া ততদিনে এই গ্রামগুলোকেও ছেঁয়ে ফেলেছে। এমন সংকটপূর্ণ সময়ে সিরাজ বোনসম বিলকিসকে একা ছেড়ে দিতে রাজি হয় না, একসাথে পথ চলতে থাকে তারা। একসময়ে বিলকিস জানতে পারে, তার সহদরকে মেরে বাজারে লাশ ফেলে রাখা হয়েছে। যুদ্ধের নৃশংসতা দেখতে দেখতে বিলকিস যেন জ্বলন্ত অঙ্গার হয়ে উঠেছিল, তাই সে নির্ভীক সিদ্ধান্ত নেয় তার ভাইকে কবর দিতে যাবে। কিন্তু পাকবাহিনীর কড়া নিষেধ ছিলো লাশে যেন কেউ হাত না দেয়।
নিষেধাজ্ঞা কে উপেক্ষা করেই বিলকিস লাশ দাফন করতে থাকে। শুরু হয় এক অভিনব উপায়ে বিলকিস এবং তার সহচারী সিরাজের রণাঙ্গনে অংশগ্রহণ। এরপর?
বইটিতে দেখা যায় এক নারীর বিচিত্র ধরনের সাহসিকতার বীরত্বগাঁথা, আত্মত্যাগ। অল্প কথায়, সাবলীলতার ঢঙে বইটি গভীর ভাবে আমাদের চেতনাকে নাড়িয়ে দেয়। বইটিতে আরও আছে যুদ্ধকালীন সময়ে বিহারীদের নিকৃষ্ট আচরণের দিকসমূহ, বাঙালিদের প্রতি পাকবাহিনীর নোংরা ব্যবহার সহ সেই সময়ে দেশের মানুষেদের মধ্যে যে অস্বাভাবিক গোপনীয়তা, ভয়ের বিষয় ছিলো তাও বইটিতে ফুটে উঠেছে।
পছন্দের উক্তি সমূহ :
★ পালাবার সবচেয়ে ভালো জায়গা শত্রুর ঘাটির ভেতর।
★ চাঁদ কখনো আলো দেয়, কখনো মেঘের আড়ালে কৃপণ হয়ে যায়।
★ কেউ ভেঙে পড়ে না, শোক কখনো এত বড় নয় যে মানুষ মাথা তুলে দাড়াতে পারে না।