নারী সাহাবীদের দীপ্তিময় জীবন PDF : লেখক মাহমুদ আহমাদ গাদ্বানফার

  • বই : নারী সাহাবীদের দীপ্তিময় জীবন
  • লেখক : মাহমুদ আহমাদ গাদ্বানফার
  • প্রকাশনী : শব্দতরু
  • বিষয় : ইসলামে নারী
  • পৃষ্ঠা : 256, কভার : পেপার ব্যাক

সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তাআলার, যিনি তাঁর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শ্রেষ্ঠতম প্রজন্মের মাঝে প্রেরণ করেছেন। আর তাঁর সঙ্গী হিসেবে এমন কিছু মানুষকে বাছাই করেছেন যাঁরা ছিলেন সবচেয়ে বিচক্ষণ, দীনের ওপর সবচেয়ে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত, সিংহ-হৃদয়ের অধিকারী, গভীর জ্ঞানের ধারক, লৌকিকতামুক্ত, সর্বাধিক পুণ্যবান, স্পষ্টভাষী এবং অনুপম চরিত্রের অধিকারী। তাঁরা আল্লাহর মনোনীত। যথাযথভাবে নিজেদের সর্বস্ব বিলিয়ে সংগ্রাম করেছেন। তাঁদের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা জমিনের বুকে দীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর (নবী ও রাসূলগণের পর) তাঁদেরকে তিনি পুরো জগদ্বাসীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।

পাশাপাশি আমি এই সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র ‘শরিকবিহীন’ আল্লাহ তাআলা ব্যতীত ইবাদাতের উপযুক্ত আর কোনো উপাস্য নেই। আর এ কথারও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার বান্দা ও রাসূল। এ ছাড়াও তিনি আল্লাহ তাআলার সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজন, তাঁর বান্দাদের মধ্যে তিনি তাঁর একান্ত প্রিয়জন। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি, তাঁর পুরো পরিবার-পরিজন ও সমস্ত সাহাবার প্রতি শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন। আমীন!
হামদ ও ছানার পর,
আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন বলেন,
“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়। তুমি তাদেরকে রুকুকারী, সিজদাকারী অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সিজদার চিহ্ন রয়েছে। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইনজীলে তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি চারাগাছের মতো, যে তার কচিপাতা উদ্‌গত করেছে ও শক্ত করেছে, অতঃপর তা পুষ্ট হয়েছে ও স্বীয় কাণ্ডের ওপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়েছে, যা চাষীকে আনন্দ দেয়। যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফিরদেরকে ক্রোধান্বিত করতে পারেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের ওয়াদা করেছেন।”
১. সূরা আল-ফাতহ ৪৮: ২১।
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
“আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনসারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সেসমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হলো মহান কৃতকার্যতা।””
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
خير الناس قرني، ثم الذين يلونهم، ثم الذين يلونهم
*আমার প্রজন্ম হচ্ছে শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম। অতঃপর যারা তাদের নিকটবর্তী (তাবিঈ)। অতঃপর যারা তাদের নিকটবর্তী (তাবিউত তাবিঈন)।
আবু সাঈদ খুদরি রাযি. হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لا تسبوا أصحابي، فلو أن أحدكم أنفق مثل أحد، ذهبا ما بلغ مد أحدهم،
ولا نصيفه
“তোমরা আমার সাহাবীদের গালমন্দ কোরো না। তোমাদের কেউ যদি উহুদ পর্বত পরিমাণ স্বর্ণও আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করো, তবুও তাদের এক মুদ বা ‘অর্ধ মুদ’-এর সমপরিমাণ সওয়াব হবে না।”
আসহাবুর রাসূলের ব্যাপারে ইমাম আবু বকর ইবনুল আরাবী রহ. বলেন,
‘এ কথা অনস্বীকার্য যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ রাযি. সকলেই দীনের ব্যাপারে আমাদের জন্য অনুসরণীয় এক প্রজন্ম। তাঁরা একই সাথে আল্লাহ তাআলার কালাম পবিত্র কুরআন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত ও সুন্নাহর যথাযথ ধারক-বাহক, যা তারা পূর্ণ বিশ্বস্ততার সাথে নিজেদের
২. সূরা তাওবা ৯: 100
৩. সহিহ বুখারি, ৩৬৫১। সাহাবায়ে কেরাম রাযি.-এর মর্যাদা অধ্যায়। সহিহ মুসলিম, ২৫৩৩-২৫৩৫। ৪. সহিহ বুখারি, ৩৬৭৩; সহিহ মুসলিম, ২৫৪০।
পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। এই ধারাবাহিকতায় বিষয়গুলো আমাদের নিকটও পৌঁছে গিয়েছে।
সাহাবায়ে কেরাম রাযি.-এর মাধ্যমে দীন ইসলামের যে আমানত আমাদের নিকট পৌঁছেছে তার অন্যতম দাবি হলো, তাঁদের জীবনাদর্শের প্রতি অন্যায় ও আগ্রাসনমূলক দুরভিসন্ধিতে লেপে দেওয়া অপবাদের কালিমা মুছে দিয়ে মানুষের সামনে তাঁদের ইতিহাসের সঠিক চিত্র তুলে ধরা। তাঁদের জীবনের বাস্তব সত্যকে তুলে ধরা। যাতে উত্তমরূপে এসকল মহামানবকে অনুসরণ করা যায়। আল্লাহ তাআলা তাঁদের হাতে মানবসভ্যতার যে নতুন দিগন্তের উন্মেষ ঘটিয়েছেন, তার প্রতি জনমানুষের অন্তরে প্রশান্তি সৃষ্টি হয়।
পাশাপাশি মনে রাখতে হবে যে, ইসলামী শরী’আহর মূলনীতি অনুসারে তাঁদের প্রতি কোনোরূপ বিদ্বেষ পোষণ বা সমালোচনার তির ছুড়ে দেওয়া মূলত তাঁদের রেখে যাওয়া দীন ইসলামের প্রতিই বিদ্বেষ ও সংশয় প্রকাশের নামান্তর।
তাঁদের জীবনচরিতকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করার অর্থ হলো তাঁদের বয়ে বেড়ানো দীনের আমানতকে বিকৃত করা এবং সুমহান ও নিখাদ ইসলামী শরী’আহর সামগ্রিক
অবকাঠামো এবং সমস্ত মূলনীতির প্রতি সংশয় প্রকাশ করা।”
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন,
‘আর এ কথাও জেনে রাখতে হবে যে, নবী-রাসূলগণের পরে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠজন হলেন সাহাবায়ে কেরাম রাযি। ব্যক্তি হিসেবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন ব্যাপক সাহায্য-সহযোগিতা ও বিজয় পেয়েছেন, তা অন্য কেউও পাবে না। এমনিভাবে সাহাবায়ে কেরামের জামাআতের মতো অন্য কোনো দল বা গোষ্ঠী তা লাভ করতে পারে না। কারণ, হিদায়াতের আলোকবর্তিকা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাগণকে কেন্দ্র করে এমনভাবে আবর্তিত হয়েছে যা অন্য কারও সঙ্গীদের কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়নি।”
এখানে একটি বিষয় জেনে রাখা আবশ্যক যে, সমস্ত সাহাবীই সৎ এবং সত্যবাদী ছিলেন। তাঁরা এই উম্মাহর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্ম। তাঁদের ঈমান ও মর্যাদার বিষয়টি অকাট্য সত্য বলে মেনে নিতে হবে। এই বিশ্বাস দীন ইসলামের অত্যাবশ্যকীয় একটি অংশ।
৫. আল-আ’ওয়াসিম মিনাল কাওয়াসিন, ৪৯। ৬. মিনহাজুস সুন্নাতি ওয়ান নাবুওয়াহ, ৫/২৬২।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. বলেন,
ومن الشئة ذكر محاسن أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم كلهم أجمعين “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমস্ত সাহাবীর উত্তম দিক নিয়ে আলোচনা করা সুন্নাত।”
নারী সাহাবীগণ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সান্নিধ্য, সাহচর্য ও সাক্ষাৎলাভের বিচারে প্রত্যেক সাহাবীই কুরআন ও সুন্নাহতে বর্ণিত সাহাবীগণের নানা মর্যাদার সমান অংশীদার। চাই তিনি পুরুষ হোন বা নারী। বৃদ্ধ হোন বা শিশু।
ইসলামী ইতিহাসের নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইসলামের প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার প্রতিটি ক্ষেত্রে শুরু থেকেই নারী সাহাবীগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসহ পুরুষ সাহাবীদের সহযোগিতা করে এসেছেন।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, আল্লাহ তাআলা নারী ও পুরুষের দায়িত্ব ও ক্ষেত্র আলাদা করেছেন। আর নারী সাহাবীগণও নিজ সীমারেখায় থেকে দীনের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগটুকু স্বীকার করেছেন। দীনের দাওয়াত, জিহাদ, ইমারাত প্রতিষ্ঠা, রক্ষা ও ইলম চর্চায় নারী সাহাবীগণের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো। এ-সংক্রান্ত একটি ভূমিকা আলাদাভাবে সংযোজিত হয়েছে।
জান্নাতি নারীগণ
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা হলো সমস্ত সাহাবীই জান্নাতে যাবেন ইনশা আল্লাহ। তবে তাঁদের মধ্যে এমন কিছু সাহাবী রয়েছেন, যাদের কেউ কেউ তো সরাসরি জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন অভিযানে অংশগ্রহণের দরুন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত জামাআতের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে যেমন বিপুল সংখ্যক পুরুষ সাহাবী রয়েছেন, তেমনিভাবে রয়েছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী সাহাবীও।
৭. কিতাবুস সুন্নাহ (আহমাদ বিন হাম্বল রহ. ), ১৭; আস সারিমুল মাসল, ৫৬৮: তবাকাতু হানাবিলা,
3/001
বক্ষ্যমাণ গ্রন্থ
বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ২৭ জন নারী সাহাবিয়ার সংক্ষিপ্ত জীবনী নিয়ে সাজানো হয়েছে। বইটি মূল উর্দুতে উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইলমি ব্যক্তিত্ব ‘মাহমূদ আহমাদ গদ্বানফার’ সংকলন করেন। এর ভূমিকা লিখেছেন ভারতের উত্তর প্রদেশে অবস্থিত ইলমের শহর আযমগড়ের লেখক ও প্রকাশকদের সংগঠন ‘দারুল মুসান্নিফীন’ এর প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব ‘মাওলানা সাঈদ আনসারী’। ইংরেজিতে এর একাধিক অনুবাদ রয়েছে। বাংলাভাষী পাঠকের জন্য মুহতারামা ‘উম্মে উসামা’ বইটি অনুবাদের খিদমাত আঞ্জাম দিয়েছেন। মূল বইয়ে বেশ কিছু বিষয় সংশ্লিষ্ট আলোচনা রয়েছে যা গুরুত্ব বিবেচনায় ইংরেজি ও বাংলা অনুবাদে বাদ দেয়া হয়েছে।
বইটিতে লেখক বিভিন্ন সূত্র হতে তথ্য জমা করে সাজিয়ে লিখেছেন। এতে এক একটি বর্ণনাকে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তথ্যসূত্রের সাথে সম্পৃক্ত করাটা বেশ মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। যদ্দরুন আমরা প্রতিটি সাহাবিয়ার জীবনীর শেষে তথ্যসূত্রে মূল গ্রন্থাদির নাম ও পৃষ্ঠার উল্লেখ করে দিয়েছি।
বইটির সাথে জড়িত লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক, কারিগর, প্রকাশক, পাঠকসহ সকলের জন্য আল্লাহ তাআলা বইটিকে দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি, সমৃদ্ধি ও সফলতার মাধ্যম বানিয়ে দিন। আল্লাহ কবুল ফরমান।
আহমাদ ইউসুফ শরীফ উত্তরখান, ঢাকা। Please Check The Link 
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?