- বই: নায়িকা সংবাদ
- লেখক: শানজানা আলম
- জনরা: সমকালীন উপন্যাস
- প্রকাশনী: অন্যপ্রকাশ
- প্রচ্ছদ: মোস্তাফিজ কারিগর
- মুদ্রিত মূল্য: ৪০০ টাকা
দিন বদলায় সাজ পাল্টায় আসে বর্ষা বসন্ত শীত, প্রতিবিম্বে দৃশ্যমান হয় ফেলে আসা অতীত!মুখোশে মুখোশে সূর্য ডোবে, আসে লাস্যময়ী রদৈনিকে রোজ নিয়মিত হয় ‛নায়িকা সংবাদ’ !!
চলচিত্র জগতের এক নম্বর নায়িকা জেরিন। জেরিনের নায়িকা হওয়ার পথটা সহজ ছিল না। জরী থেকে জেরিন হয়ে উঠতে তাকে বহুপথ পাড়ি দিতে হয়েছে।
১৬ বছর বয়সী কিশোরী জরীর সাজগোজ আর নাচের খুব শখ ছিল। বিজয় মেলা উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জরীর স্কুলের মেয়েদের অংশ নিতে হবে। জরী ও নাচে অংশ নিয়েছিল। জরীর আব্বা ছিলেন ধার্মিক মানুষ। তিনি এই নাচের বিষয়টা জানলে জরীকে কখনো ক্ষমা করতেন না। অনুষ্ঠানে ওড়নায় মুখ ঢেকে জরী নৃত্য প্রদর্শন করেছিল। তার নাচ অসম্ভব ভালো হয়েছিল। ঢাকা থেকে আগত এক প্রোডাকশন ম্যানেজার জরীকে তার কার্ড দিয়ে যায়। জরী স্বপ্ন দেখে, সে একদিন ঢাকা যাবে, তার স্বপ্ন পূরণ হবে।
জরীর আব্বা- আম্মা সুন্দরী মেয়েকে পাত্রস্থ করার কথা ভাবে। জরীর আব্বার মৃত্যুর পর বিয়ের কথা আরোও জোরদার হয়। এস এস সি পরীক্ষা চলাকালীন সময় জরীর বিয়ে হয় যায়। বিয়ের পর কি হয়েছিল? জরী কিভাবে নায়িকা জেরিন হয়ে উঠেছে- তা জানতে হলে বইটি পড়তে হবে।
জরীর নায়িকা জেরিন হওয়ার কাহিনীটা খুব সুন্দর করে বর্ণনা করা হয়েছে। জেরিনের জীবনের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। চলচিত্র জগতের নানা বিষয় লেখিকা দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।
জেরিন অন্য সব নায়িকাদের থেকে আলাদা। গ্ল্যামারের পাশাপাশি অভিনয়েও দারুণ পারদর্শী। তাই তো, কয়েক বছরে সে চলচিত্র জগতের সবচেয়ে বড় তারকা হয়ে উঠেছে। লোভ, ধোঁকা, স্বার্থপরতা- এইসব বাঁধা অতিক্রম করে আজকে জেরিন এই স্থানে এসেছে। জেরিনের বিপদে তার আপন কেউ পাশে ছিল না। কিন্তু, তার এই সফলতার দিনে, অনেক মানুষই তার সুবিধা নিতে চেয়েছে।
এহসান আর গুলিস্তার মিষ্টি একটি কাহিনীও বইয়ে রয়েছে। জামাল সাহেব চরিত্রটি খুব ভালো লেগেছে। তিনি অন্যসব ডিরেক্টরদের মত ছিলেন না। এছাড়া, ফারুক, সোহেল, নাশিদ খলিফা, সিল্কি, নূরজাহান বেগম, নিম্মি, কাইয়ুম, রেবিনা, মণি, সৌমেন- চরিত্রগুলোও নিজ নিজ স্থানে নিখুঁত ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
শানজানা আপুর অন্য বইগুলো থেকে এই বইটি আলাদা। বইয়ের কাহিনী অতিরঞ্জিত ছিল না। অযথা বইয়ের কাহিনীও লম্বা করা হয়নি। প্রচ্ছদও বইয়ের সাথে একদম মানানসই। পরিশেষে বলব, অসম্ভব সুন্দর ‛নায়িকা সংবাদ’ উপন্যাসটি।
মানুষের মন বড়ই চঞ্চল, দ্বিধাগ্রস্ত। বেশির ভাগ সময় মনের দুটো ইচ্ছা থাকে। একটা ইচ্ছা দুরন্ত, সে সামনে এসে নিজেকে জাহির করতে চায়। আরেকটা ইচ্ছা সুপ্ত। কখনো সামনে আসে না, মুখচোরা। লুকিয়ে থাকে গোপনে। বেশিরভাগ মানুষ এই ইচ্ছাকে দেখতেই পায় না। জানতেই পারে না। তবু খুব প্রিয়জন তার প্রিয় মানুষের এই সুপ্ত ইচ্ছাকে সহজেই চিনতে পারে। অবিশ্বাসের জুজুবুড়ি তাকে ভয় দেখাতে পারে না।
মনটা অনেকটা পাখির মত, সুস্হ একটা পাখিকে ভালোবাসা খুব সহজ। পাখিও সাড়া দেয়। অসুস্থ, আহত, ডানাভাঙা পাখিকে সবাই যত্ন করতে পারে না। পাখিও সুস্হ হয় না।