নবিজির রামাদান
লেখক : শাইখ হামদান আল হুমাইদি রহ.
প্রকাশনী : মুহাম্মদ পাবলিকেশন
বিষয় : সিয়াম, রমযান, তারাবীহ ও ঈদ
অনুবাদক : সালিম আবদুল্লাহ
পৃষ্ঠা : 160, কভার : পেপার ব্যাক
ভাষা : বাংলা
রেটিং ⭐⭐⭐⭐⭐
___________________________
শাইখ হামদান আল হুমাইদি রহ. এর রচিত জনপ্রিয় ইসলামী বই “নবিজির রামাদান” বইটি “মুহাম্মদ পাবলিকেশন” এর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, মা বাংলায় অনূদিত হয়েছে ‘সালিম আবদুল্লাহ’ দ্বারা লেখক বলেন, প্রতিটি কাজের পেছনে একটি নমুনা বা মডেল থাকে। আমাদের জীবানের প্রতিটি কাজের পেছনেও একজন মডেল রয়েছেন। যিনি আমাদের অনুসরণীয়। তিনি হলেন মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি আমাদের উত্তম আদর্শ।
রামাদান৷ ইসলামের পঞ্চ বুনিয়াদের একটি। ঈমান জাগানিয়া এক মাস৷ গুনাহ মাফের শ্রেষ্ঠ মাস৷ শয়তান শৃঙ্খলিত হয় যে মাসে৷ অন্যান্য মাসের ইবাদতের সওয়াব গাণিতিক হারে বেড়ে যায় এ মাসে৷ সত্তুর থেকে সাতশ গুণ৷
শাইখ হামদান আল-হুমাইদি রহ. ‘নবিজির রামাদান’ শিরোনামে গ্রন্থটিকে এভাবে সাজিয়েছেন—
প্রথম পর্ব : রামাদানের প্রারম্ভিকে নবিজির দিনযাপন
দ্বিতীয় পর্ব : রামাদানে নবিজির সিয়াম সাধনা
তৃতীয় পর্ব : রামাদানে নবিজির রাতযাপন
চতুর্থ পর্ব : রামাদানের শেষ দশকে নবিজির আমল
পঞ্চম পর্ব : রামাদানের শেষ দশকে নবিজি আরও যা করতেন
সুতরাং বলা যায়, রামাদানে নবিজির দিনযাপনের গ্রন্থিত রূপই ‘নবিজির রামাদান’।
_____________________________________________________
শাবান মাসে নবিজির সিয়াম পালন
রামাদান আগমনের পূর্বে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক পরিমাণে শাবান মাসের রোজা রাখতেন।
আম্মাজান আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—
আমি রামাদান ছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অন্য কোনো মাসের পুরো ২৯ বা ৩০ দিন রোজা রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে তাঁকে অধিক পরিমাণে রোজা রাখতে দেখিনি।[১]
নবিজির পালকপুত্র উসামা বিন জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—
‘আমি একদিন আরজ করলাম,
: ইয়া রাসুলাল্লাহ! শাবান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে আপনাকে এত বেশি রোজা রাখতে দেখি না কেন?
জবাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন—
[১] সহিহু মুসলিম, হাদিস : ১১৫৬।
: রজব এবং রামাদানের মধ্যবর্তী শাবান এমন একটি মাস, যে মাসে লোকেরা উদাসীন থাকে। অথচ এই মাসে যাবতীয় আমল-আচরণ বিশ্বচরাচরের অধিপতির কাছে উত্তোলন করা হয়। তাই আমি চাই—–—–রোজা রাখা অবস্থায় যেন আমার আমল উত্থাপিত হয়। [২]
১। এ মাসে আল্লাহর বান্দাদের বাৎসরিক যাবতীয় আমল মহান আল্লাহর কাছে উপস্থাপন করা হয়। এজন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পছন্দ ছিল, আল্লাহ তাআলার কাছে যখন তাঁর সমস্ত আমল পেশ করা হবে তখন যেন তিনি রোজা অবস্থায় থাকেন।
২। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদানের আগমনে সম্মান প্রদর্শনস্বরূপ শাবানের রোজাগুলো রাখতেন। ঠিক যেমন ফরজ নামাজের সম্মানার্থে তার পূর্বে সুন্নাত পড়া হয়।[৩]
৩। শাবান মাসের রোজা শরীরকে রামাদান মাসে রোজা রাখার জন্য প্রস্তুত করে। যাতে করে রামাদান আসার পূর্বেই মানুষ রামাদানের রোজার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে পারে এবং রামাদান এলে যেন রোজাগুলো সহজেই আদায় করতে পারে। [*]
৪। শেষোক্ত এই ফায়দাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অনন্য; যা বর্ণনা করেছেন হাফেজ ইবনু রজব হাম্বলি রাহিমাহুল্লাহু। তিনি বলেন
রজব ও রামাদানের মধ্যবর্তী শাবান এমন একটি মাস, যে মাসে লোকেরা উদাসীন থাকে। নবিজির একথায় প্রমাণিত হয় যে, মানুষের উদাসীনতার সময়গুলোতে আল্লাহর আনুগত্যের ওপর জোর দেওয়া উচিত। কারণ, উদাসীনতার সময় অনুগত হওয়া আল্লাহ তাআলার অত্যন্ত পছন্দনীয় একটি বিষয়। যেমন সালাফগণের অনেকেই মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়টুকু নামাজের মাধ্যমে কাটিয়ে দিতেন। তারা বলতেন, এ সময়টিতে উদাসীন থাকা হয়। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইশার নামাজের জন্য অপেক্ষারত সাহাবিদের মাঝে তাশরিফ নিতেন, তখন বলতেন—
[২] সুনানুন নাসায়ি, হাদিস : ২৩৫৭।
[৩] তাহজিবুস সুনান, ৩/৩১৮। গ্রন্থটির লেখক ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ শাবান মাসে রোজা রাখার তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে এটি একটি কারণ। [৪] ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, পৃষ্ঠা: ৪৪৩
‘তোমরা ছাড়া পৃথিবীর কেউ ইশার নামাজের জন্য অপেক্ষা করে না।” উদাসীন থাকে; অথচ সময়টি গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ বাকিরা
নবিজির কথা থেকে প্রতীয়মান হয়, যে সময়ে সাধারণত কাউকে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন পাওয়া যায় না, সেসময়ে আল্লাহর ইবাদাতে মগ্ন থাকার ফজিলত ব্যাপক। এজন্যই হাদিসে মারফু[৬] ও হাদিসে মাওকুফে] বাজারে আল্লাহর কথা আলোচনা করার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।
হাদিসগুলো অধ্যয়নের পর আবু সালেহ রাহিমাহুল্লাহু বলেন, বাজারে আল্লাহর কথা আলোচনা করলে আল্লাহ তাআলা আনন্দিত হওয়ার কারণ হলো, বাজার উদাসীনতার আবাস এবং সেখানে অবস্থান করেও উদাসীনরা।
আবু জর থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে মারুফুতে এসেছে। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন :
‘আল্লাহ তাআলা তিন ব্যক্তিকে পছন্দ করেন আর তিন ব্যক্তিকে অপছন্দ করেন। পছন্দনীয় তিন ব্যক্তি—
১। কিছু লোকের কাছে একজন সাহায্যপ্রার্থী উপস্থিত হলো, যাদের কারো সাথেই তার কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই, অনন্তর সে শুধু আল্লাহর ওয়াস্তে সাহায্য কামনা করল। কিন্তু উপস্থিত সবাই সাহায্য করা থেকে বিরত থাকলো। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি মজলিস থেকে উঠে গিয়ে সাহায্যপ্রার্থীকে এমন গোপনীয়তার সঙ্গে কিছু দান করল যে, ঐ ব্যক্তি এবং আল্লাহ ছাড়া দানের বিষয়টি অন্য কেউ জানলো না। এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ পছন্দ করেন।
২। মুসলিমদের একটি দল দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ছিল। এরপর রাতের শেষ প্রহরে যখন মানুষের কাছে ঘুম সর্বাধিক প্রিয় হলো, তখন সবাই ঘুমের জন্য জমিনে মাথা রেখে দিল। এমতাবস্থায় সে দলের একজন মুজাহিদ উঠে আল্লাহর দরবারে দুআ ও কুরআন তিলাওয়াতে মগ্ন হয়ে পড়ল। এই ব্যক্তিকেই আল্লাহ পছন্দ করেন।
[৫] সহিহুল বুখারি, হাদিস : ৫৬৬। সহিহু মুসলিম, হাদিস : ৬৩৮। [৬] যে হাদিসের সনদ বা সূত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে ‘মারফু হাদিস’
বলে। অর্থাৎ যে সূত্রের মাধ্যমে স্বয়ং নবিজির কোনো কথা, কোনো কাজ করার বিবরণ বা কোনো বিষয়ের অনুমোদন বর্ণিত হয়েছে, সে সনদের ধারাবাহিকতা রাসুলুল্লাহ থেকে হাদিস গ্রন্থ সংকলনকারী পর্যন্ত সুরক্ষিত হয়েছে এবং মাঝখান থেকে একজন বর্ণনাকারীও বাদ পড়েনি তা ‘হাদিসে মারফু’ নামে পরিচিত। [৭] যদি কোনো হাদিসের সনদ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত না পৌঁছে কেবল সাহাবি পর্যন্ত গিয়েই স্থগিত হয়- অর্থাৎ যা স্বয়ং সাহাবির হাদিস বলে সাব্যস্ত হয় তাকে ‘হাদিসে মাওকুফ’ বলে।
৩। এক ব্যক্তি কোনো এক জিহাদে শরিক হলো। একপর্যায়ে যুদ্ধে পরাজিত হলে সঙ্গীরা তাকে রেখে পলায়ন করলো। কিন্তু এ ব্যক্তি দুশমনের মোকাবিলায় নিজের বুক পেতে দিল। একপর্যায়ে সে হয়তো শাহাদাতবরণ করল অথবা আল্লাহ তাকে বিজয় দান করলেন।
অপছন্দনীয় তিন ব্যক্তি হলো—
বৃদ্ধ ব্যভিচারী। অহংকারী ভিক্ষুক। এবং সম্পদশালী জালেম ব্যক্তি। [৮]
প্রথম তিন ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাদের নিজেদের মাঝে গোপনে পারস্পরিক লেনদেনের ক্ষেত্রে একক। এজন্য আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। সুতরাং যারা উদাসীনতার সময়গুলোতে আল্লাহর ইবাদাতে মগ্ন থাকে এবং রোজা থেকে লোকদের উদাসীনতার দিনগুলোতে রোজা রাখে, তারা উল্লিখিত তিন ব্যক্তিদের মতোই। [১]
অনুবন্ধী
শাবান মাস রামাদানের আগমনের বার্তাবাহী হওয়াতে রামাদানে যেসব আমল; যেমন রোজা রাখা, কুরআন তিলাওয়াত করা ইত্যাদি আমল করা হয়, সেসব আমল দিয়েই শাবান মাস শুরু করা যেতে পারে; যাতে রামাদানের জন্য পূর্ণ প্রস্তুত হওয়া যায়।
বিখ্যাত তাবেয়ি সালমা বিন কাহিল রাহিমাহুল্লাহু বলেন— ‘বলা হয়ে থাকে, শাবান মাস হলো কারি এবং ধার্মিকদের মাস।’
খলিফা মামুনুর রশিদের উজির হাসাস বিন সাহাল রাহিমাহুল্লাহু বলেন—
‘শাবান মাস রবকে ডেকে বলল, “হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে দুটি মর্যাদাপূর্ণ মাসের মাঝে অবস্থান দিয়েছ। আমারও কি কোনো মর্যাদা আছে?” প্রত্যুত্তরে আল্লাহ বললেন, “তোমার মাঝে কুরআন তিলাওয়াতের আধিক্য দিয়েছি”। [১০]
প্রসিদ্ধ তাবেয়ি আমর বিন কায়েস একজন আল্লাহর ওলি ছিলেন। তিনি যখন শাবান মাসের ঘনঘটা দেখতন, তখন দোকানপাট বন্ধ করে দিয়ে কুরআন তিলাওয়াতে মনোনিবেশ করতেন।
[৮] মুসনাদে আহমাদ ৫/১৫৩, শুআইব আরনাউত বলেন, হাদিসটি সহিহ। [১] লাতা-ইফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা: ১৩১। [১০] লাতা-ইফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা: ১৩৫।
নবিজির চাঁদ দেখা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিষ্কারভাবে নতুন চাঁদ না দেখে বা কোনো প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যদান ছাড়া রামাদানের রোজা শুরু করতেন না। যদি তিনি নিজে নতুন চাঁদ না দেখতেন বা কোনো প্রত্যক্ষদর্শী চাঁদ উদয়ের সাক্ষ্য না দিতেন, তাহলে শাবান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ করতেন।
পরিষ্কারভাবে চাঁদ দেখার আগে রোজা শুরু না করার বিষয়টি নবিজির স্পষ্ট বক্তব্য থেকেই প্রমাণিত হয়। আবদুল্লাহ ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
‘তোমরা (রামাদানের) চাঁদ দেখলেই কেবল রোজা রাখবে এবং (শাওয়ালের) চাঁদ দেখলেই কেবল রোজা রাখা বন্ধ করবে। [১১]
আর প্রত্যক্ষদর্শীর কথায় নির্ভরতার বিষয়টি নবিজির আমল থেকে বুঝে আসে। কারণ, নতুন চাঁদ দেখার ব্যাপারে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবদুল্লাহ ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাক্ষ্যকে গ্রহণ করেছিলেন; যা ইবনু উমর থেকেই বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন—
‘লোকেরা সেদিন চাঁদ দেখা না-দেখা নিয়ে মত্ত ছিল। এমনই সময় আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে বললাম, ‘আমি চাঁদ দেখেছি ইয়া রাসুলাল্লাহ!’ এরপর তিনি সেদিন থেকেই রোজা রাখলেন এবং লোকদেরকেও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। [১২]
[১১] সহিহুল বুখারি, হাদিস : ১৯০৯। সহিহু মুসলিম, হাদিস : ১০৮১। [১২] সুনানু আবি দাউদ, হাদিস : ২৩৪২।
_______________
ঘটনাক্রমে যদি চাঁদ দেখা না যায় বা কেউ যদি সাক্ষ্য না দেয় অথবা আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে শাবানের ৩০ দিন পূর্ণ করতে হবে। কারণ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
‘তোমরা কেবল চাঁদ দেখেই রোজা রাখবে এবং চাঁদ দেখেই রোজা ছাড়বে। আর যদি চাঁদ দেখার বিষয়টি অস্পষ্ট থেকে যায়, (অর্থাৎ আকাশ প্রবল মেঘাচ্ছন্ন হওয়ার দরুন চাঁদ দেখা না যায়) তাহলে শাবানের ৩০ দিন পূর্ণ করবে। (১০)
নবিজি অন্যত্র বলেন—
‘চাঁদ দেখা ব্যতীত রোজা রাখবে না এবং চাঁদ দেখা ব্যতীত রোজা ছাড়বে না। আর যদি তোমাদের এবং চাঁদ দেখার মাঝে কোনো অন্তরায় সৃষ্টি হয়; তথা মেঘ, অন্ধকার অথবা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চাঁদ দেখা না যায়, তাহলে ৩০ দিন পুরো করবে।”
সতর্কতা
কিছু মানুষ সাবধানতাবশত শাবান মাসের ৩০তম দিনেও রোজা রাখে। অথচ সেদিন রোজা রাখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
“তোমাদের কেউ যেন (শাবান মাসের শেষের) এক দুই দিন রোজা রেখে রামাদানকে অগ্রবর্তী না করে। তবে হ্যাঁ, কারো যদি পূর্ব থেকেই মাসের শেষে রোজা রাখার অভ্যাস থাকে, তাহলে সে (শাবানের শেষের দিনেও রোজা) রাখতে পারবে। [১৫]
উলামায়ে কিরাম বলেন—
‘হাদিসের অর্থ হলো, শাবানের শেষের দিন রোজা রাখার মাধ্যমে তোমরা রামাদানকে এই সাবধানতার কারণে স্বাগত জানিয়ো না যে, হয়তো দিনটি রামাদান মাসের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, রামাদানে রোজা রাখার বিধানটি চাঁদ দেখার সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং যে শাবানের শেষের এক-দু দিন রোজা রেখে রামাদানকে অগ্রবর্তী করল, সে যেন রামাদানের বিধানকে দোষযুক্ত করার অপচেষ্টা করল।’
[১৩] সহিহুল বুখারি, হাদিস ১৯০৯।
[১৪] আসসিলসিলাতুস সাহিহা, হাদিস : ১৯১৭। [১৫] সহিহুল বুখারি, হাদিস : ১৯১৪। সহিহু মুসলিম, হাদিস : ১০৮২।
হাফেজ ইবনু রজব হাম্বলি রাহিমাহুল্লাহু বলেন—
‘মুমিন কীভাবে জান্নাতের উন্মুক্ত দরজার কথা শুনে আনন্দিত হয় না? কেনই-বা পাপী ব্যক্তি জাহান্নামের বন্ধ দরজার কথা শুনে খুশি হয় না? বুদ্ধিমান কেন এমন সময়ের কথা শুনেও সুসংবাদিত হয় না, যে সময় শয়তানকে বেড়ি পরিয়ে রাখা হয়? এমন সময়কে কি অন্য কোনো সময়ের সাথে তুলনা করা সম্ভব??
আলোচিত হাদিসগুলো থেকে স্পষ্টরূপে একথাই প্রমাণিত হয় যে, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদেরকে রামাদানের আগমনি বার্তা দিয়ে সুসংবাদ দিতেন।
হাদিসের কিতাবগুলোতে রামাদানের ফজিলত সম্পর্কিত হাদিস বর্ণিত হয়েছে, সেসব হাদিসও একধরনের শুভ সংবাদ। বলাবাহুল্য, সেসব হাদিসের সংখ্যা অগণিত। তন্মধ্যে কিছু হাদিস নিম্নে পেশ করা হচ্ছে
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করে বলেন—
‘যখন রামাদান আগমন করে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের সকল দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের শিকলাবদ্ধ করা হয়।
উতবা বিন ফারকাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন—
‘রামাদান মাসে আসমানের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো তালাবদ্ধ করা হয় এবং বিতাড়িত শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। আর প্রতি রাতে একজন আহ্বায়ক হাঁক ছেড়ে ডেকে বলে :
‘হে কল্যাণকামী, জলদি এসো! হে অকল্যাণপ্রার্থী, সংযত হও! [২০]
সুতরাং আল্লাহ তাআলা কি আপনার কাছে রামাদান পৌঁছিয়ে একথা বলবেন, ‘দূর হ’? আর আপনি নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ব্যর্থ হয়ে যাবেন? অথচ তিনি পরম করুণাময়!
ওয়াল্লাহি, কক্ষনো এমন হবার নয়। কারণ, তিনি নিজেই বলেন—
‘আল্লাহ তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে কী করবেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং ঈমানের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাক। অথচ আল্লাহ হচ্ছেন সমুচিত মূল্য দানকারী সর্বজ্ঞ। [১]
[১৯] সহিহু মুসলিম, হাদিস : ১০৭৯। [২০] সুনানুন নাসায়ি, হাদিস : ২১০৮।
[২১] সুরা নিসা, আয়াত: ১৪৭।
রামাদানে আমলের প্রতি নবিজির উদ্বুদ্ধকরণ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদেরকে রামাদানের রোজা, তারাবি এবং এ মাসের যাবতীয় আমল একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করার এবং প্রতিটি আমলে প্রতিদান প্রত্যাশী হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতেন।
নবিজি সাহাবিদেরকে একনিষ্ঠতার সঙ্গে রামাদানের রোজা পালনে উদ্বুদ্ধ করতেন।
তাদেরকে বলতেন—
‘যে ব্যক্তি রামাদান মাসে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে রোজা রাখবে, তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। [20] [[22]
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদের মাঝে একনিষ্ঠতার সাথে তারাবির নামাজ আদায়কারীদের জন্য বিরাট প্রতিদান পাওয়ার কথা আলোচনা করে বলেন— “যে ব্যক্তি রামাদান মাসে বিশ্বাস ও প্রতিদানের প্রত্যাশী হয়ে কিয়াম
করবে, তার
অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। [*]
বিশেষভাবে লাইলাতুল কদরের রাতে নামাজ আদায়ের কথা তুলে বলেন—
[২২] ঈমানের অর্থ তো আমরা বুঝি। অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি বিশ্বাস রেখে…। কিন্তু ইহতিসাবের অর্থ আমাদের বোধগম্য নয়। ইহতিসাব হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার পাওয়া যাবে এ দৃঢ় বিশ্বাস রেখে নিষ্ঠার সাথে সন্তুষ্টচিত্তে রোজা ও অন্যান্য আমল করা।
[২৩] সহিহুল বুখারি, হাদিস : ৩৮। সহিহু মুসলিম, হাদিস : ৭৬২। [২৪] কিয়াম বলে দুই নামাজ উদ্দেশ্য; এক. তারাবির নামাজ। দুই. শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ।
[২৫] সহিহুল বুখারি, হাদিস : ৩৭। সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৫৯।
‘যে ব্যক্তি কদরের রাতে বিশ্বাস ও প্রতিদান প্রত্যাশী হয়ে রোজা রাখবে, তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।”
সুতরাং যে ব্যক্তি একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি কামনায় প্রতিদান প্রত্যাশী হয়ে রামাদানের রোজা রাখবে, তারাবি, তাহাজ্জুদ ও লাইলাতুল কদরে দাঁড়াবে আল্লাহ তাআলা তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন। একনিষ্ঠতার বাস্তবিক প্রমাণ পাওয়া যাবে তখনই, যখন সে আল্লার পক্ষ থেকে পুরস্কার পাওয়ার প্রতি আগ্রহী হবে, নামাজ-রোজার জন্য নিজের অন্তরকে একনিষ্ঠ করবে, রোজাকে নিজের ওপর বোঝা মনে করবে না, রোজা রেখে দিবসকে অনেক দীর্ঘ মনে করে আফসোস করবে না।[খ]
অথচ নামাজ-রোজা-তারাবিকে আমরা নিজেদের ওপর বোঝা মনে করে নিজেদের অধিকার আদায়ে কতটা ভুল করি। রোজা রেখে বলি কই, প্রতিদানের কিছুই তো দেখছি না! অথচ গোড়াতেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছি, সেদিকে কোনো দৃষ্টিই দিই না। প্রতিদানের ব্যাপারে যে নিশ্চিত থাকতে হবে, সেটাও মানি না! তাহলে প্রতিদান পাব কী করে?
[২৬] সহিহুল বুখারি, হাদিস : ১৯০১। সহি মুসলিম, হাদিস : ৭৬০। [২৭] দেখুন – ফাতহুল বারি, ৪/১১৫।
নবিজি যেভাবে রামাদানকে গ্রহণ করতেন
রামাদান যখন তার জৌলস আর মহিমা নিয়ে আগমন করে তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সানন্দে তাকে গ্রহণ করেন এবং প্রফুল্লচিত্তে সাহাবিদেরকে রামাদানের আগমনি বার্তা দেন।
আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রামাদানের শুভাগমন হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন—
‘যেই মর্যাদাপূর্ণ মাস তোমাদের মাঝে এসেছে, নিশ্চয় তাতে এমন একটি রাত আছে যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি এই রাত থেকে বঞ্চিত থাকবে, সে সমুদয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থাকবে। আর প্রকৃত বঞ্চিতকেই কেবল এই রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করা হয়। [১৬]
অন্য এক হাদিসে আছে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
‘তোমাদের কাছে রামাদান এসেছে। যা মর্যাদাপূর্ণ একটি মাস। মহামহিম আল্লাহ এ মাসের রোজাকে তোমাদের ওপর ফরজ করেছেন। এ মাসে জান্নাতের সমুদয় দরজা উন্মুক্ত করা হয়, জাহান্নামের সকল দরজা বন্ধ করে দেওয়া এবং সমস্ত শয়তানকে বেড়ি পরানো হয়। আল্লাহর কসম! এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। তার কল্যাণ থেকে যাকে বঞ্চিত করা হয়, সে (চিরদিনের জন্য) মাহরুম হয়ে যায়। [১৭]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন—
‘এই যে রামাদান তোমাদের মাঝে উপস্থিত। এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলোকে তালাবদ্ধ করা হয় এবং শয়তানদের শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। [১৮]
[১৬] সুনানু ইবনু মাজাহ, হাদিস : ১৬৪8 | [১৭] সুনানুন নাসায়ি, হাদিস : ২১০৬। [১৮] সুনানুন নাসায়ি, হাদিস : ২১০৩।
আরো পড়তে অথবা দেখতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন।
অনুরোধঃ– বই : নবিজির রামাদান এর প্রি অর্ডার চলছে … তাই নবিজির রামাদান বইটি PDF Free Download চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না।
We Respect Every Author Hardwork – boipaw.com™
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?