- বই : নবিজির পরশে
- লেখক : ইমাম ইবনু রজব হাম্বলি (রহঃ)
- প্রকাশনী : সত্যায়ন প্রকাশন
- বিষয় : আল হাদিস, হাদিস বিষয়ক আলোচনা
- মূল: জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম থেকে চয়নকৃত
- অনুবাদ: হাফিজ আল মুনাদি, ফারহীন জান্নাত মুনাদি
- মোট পৃষ্ঠা: ১৬০
রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কথা ছিল সংক্ষিপ্ত তবে ব্যাপক অর্থবোধক। আর এরকমই কিছু মৌলিক হাদীসের আলোচনা নিয়ে মাজলিস করেছিলেন আবূ আমর ইবনুস সালাহ রহ.। তিনি সেখানে ছাব্বিশটি মৌলিক হাদীস বর্ণনা করেছেন। বলা হতো, সমগ্র দ্বীন এ ছাব্বিশটি হাদীসে অন্তর্ভুক্ত। পরবর্তীকালে ইমাম নববি রহ. প্রয়োজনের দিকে লক্ষ করে যুক্ত করলেন আরও কয়েকটি হাদীস। এতে করে হাদীস সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল বিয়াল্লিশে। মুসলিম-বিশ্বে যুগ যুগ ধরে ইমাম নববি সংকলিত এ হাদীসগুলো ‘ইমাম নববির চল্লিশ হাদীস’ নামে খুব সমাদৃত হয়ে আসছে। আরও পরে ফিকহ-শাস্ত্রের বিখ্যাত ইমাম ও মুহাদ্দিস ইবনু রজব হাম্বলি রহ. তাঁর অনুসারীদের বারংবার অনুরোধে বুঝতে পারলেন, ইমাম নববি সংকলিত বিয়াল্লিশটি হাদীসের উপর একটি আলাদা ব্যাখ্যাগ্রন্থ প্রয়োজন। তিনি ‘জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম’ নামে সহস্রাধিক পৃষ্ঠার একটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ প্রণয়ন করলেন। এ গ্রন্থে তিনি ইমাম নববি সংকলিত বিয়াল্লিশটি হাদীসের সাথে আরও আটটি হাদীস জুড়ে দিলেন। মোট হাদীসের সংখ্যা দাঁড়াল পঞ্চাশ-এ।
কালোত্তীর্ণ এ গ্রন্থটি শতাব্দীর-পর-শতাব্দী পাঠকদের প্রিয়-গ্রন্থের তালিকায় স্থান করে আছে অনুবাদকদ্বয় এই সুবিশাল গ্রন্থ থেকে প্রতিটি হাদীসের সপেক্ষে সালাফদের বাণীগুলো চয়ন করে ক্রমান্বয়ে সাঁজিয়েছেন। অনেকটা রাসূল-ﷺ-এর হাদীসের ব্যাখ্যা সালাফদের মুখে শোনা। ফলে পাঠক একই সাথে নবিজির হাদীস, এবং এগুলোর ব্যাখ্যা সালাফদের বাণী থেকে শিখবে এবং আত্মন্নায়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
নিয়ত হোক বিশুদ্ধ
সালাফের দরসে
- ইবনুল মুবারক রহ. বলেন, কত ছোট ছোট কাজ নিয়ত গুণে মহৎ হয়! আবার কত বড় বড় কাজ নিয়তের কারণেই তুচ্ছ হয়ে যায়!
- ফুযায়েল রহ. বলেন, আল্লাহ তোমার কাছে চান শুধু পূর্ণ নিষ্ঠা আর আমলের তাঁর ও তাঁদের পরশে শুদ্ধতা।
- সুফিয়ান সাওরী রহ. বলেন, আমাকে নিয়ত থেকে জটিল কোন রোগের মুখোমুখি কখনো হতে হয় নি। কারণ, নিয়ত ঘনঘন বদলায় ।
- ফুযাইল বিন ইয়ায রহ. বলেন, আমি আবু আব্দুল্লাহ আহমদ রহ. কে নিয়ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম—’নিয়ত কেমন হওয়া উচিৎ?’ আবু আব্দুল্লাহ
- বলেছিলেন, ‘কেউ যখন কোন কাজের ইচ্ছা করে, তখন সে যেন প্রথমেই
- নিজেকে শুধরে নেয় এবং আমলটি এক আল্লাহর উদ্দেশ্যে করার সংকল্প করে।’
- ইয়াহইয়া ইবনে কাসীর রহ. বলেন, তোমরা যেভাবে আমল শেখো, সেভাবে নিয়ত শিক্ষা করো। কারণ, নিয়ত আমলের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
- যাইদ শামী রহ বলেন, আমি ভালবাসি যে, পানাহারসহ সমস্ত কিছুতেই আমার
- একটা নিয়ত থাকুক ২ দাউদ তাঈ রহ. বলেন, আমি তো দেখি, সদিচ্ছার মাধ্যমেই সমস্ত সওয়াব জড়ো করা সম্ভব। কেননা সওয়াবের জন্য কোনো আমলের সদিচ্ছাই যথেষ্ট; যদিও
- পরবর্তিতে সে আমলটি করা আর সম্ভব না হয়।
- ইউসুফ বিন আসবাত (রহ) বলেন, আমলে দীর্ঘ সময় শ্রম দেয়ার চেয়েও আবেদের জন্য কষ্টসাধ্য হলো, নিয়তকে পচন থেকে রক্ষা করা।
- ফুযাইল ইবনে ইয়ায রহ. বলেন, আল্লাহ শুধুই নিয়ত আর সদিচ্ছা দেখতে চান! তিনি আরো বলেন, আল্লাহর রাস্তায় নিহত হওয়ার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর হলো প্রতিটি আমলে আল্লাহকে প্রাধান্য দেওয়া।
নিয়ত হোক বিশুদ্ধ
- সাহাল বিন আব্দুল্লাহ তাসতুরী রহ. বলেন, মানুষের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ নিয়তকে খালেস রাখা। কারণ নিয়তে আল্লাহর সাথে কারো অংশীদারিত্ব চলে না।
- ইউসুফ বিন হুসাইন রহ. বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ নিয়তকে পরিশুদ্ধ করা। কত চেষ্টা করলাম, অন্তর থেকে রিয়ার শিকড় উপড়ে ফেলতে! কিন্তু দেখা যায়, রিয়া আবার নতুনরূপে গজিয়েছে।
- মুতাররাফ ইবনে আব্দুল্লাহ রহ. সর্বদা দোয়া করতেন হে আল্লাহ! কত বার তোমার কাছে তাওবা করেছি, ‘আর অন্যায় করবো না’! অথচ আবারও সেই অন্যায়ে ফিরে গিয়েছি। তাই তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।
- হে আল্লাহ! তোমার জন্য কত আমলের সংকল্প করেছি; কিন্তু আমল আর করাহয়নি। তাই তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।
- হে আল্লাহ! তোমার সন্তুষ্টি প্রাপ্তির আশায় কত আমল শুরু করেছি; অথচ পরে তাতে নিজের প্রবৃত্তি মিশিয়ে ফেলেছি! তাই তোমার কাছে এবং তোমারই কাছে ক্ষমা চাইছি। ক্ষমা কর হে মালিক!