- বই : দ্য লাস্ট ওডেসি (সিগমা ফোর্স # ১৫)
- লেখক : জেমস রোলিন্স
- অনুবাদ : মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ
- প্রকাশক : বিবলিওফাইল
- প্রকাশকাল : জুন, ২০২০
- রিভিউ ক্রেডিট : শুভাগত দীপ
- ঘরানা : অ্যাডভেঞ্চার,হিস্ট্রি,মিথোলজি,থ্রিলার
- প্রচ্ছদ : সজল চৌধুরী
- পৃষ্ঠা : ৪৪৭
- মুদ্রিত মূল্য : ৪৫০ টাকা
- ফরম্যাট : হার্ডকভার
- ব্যক্তিগত রেটিং : ৩.৭৫/৫
- গুডরিডস রেটিং : ৪.১৯/৫
কাহিনি সংক্ষেপ গ্রিনল্যান্ডে বৃহৎ হিমবাহ হেলহাইমের একটা অংশে আবিস্কৃত হলো প্রাচীন এক আরব বজরা। ব্যাপারটা সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত ধারণা পাওয়ার জন্য ড. মারিয়া’র অনুরোধে সেখানে পা রাখলো ড. ইলেনা কারগিল। প্রতিভাধর এই বিজ্ঞানী বয়সে তরুণী হলেও, প্যানিয়োঅ্যানথ্রপলজি (নর-জীবাশ্মবিদ্যা) ও আর্কিওলজি’র ওপর বেশ ভালো দখল আছে তার। ইলেনা’র আরেকটা পরিচয় সে সিনেটর কারগিলের মেয়ে।
হেলহাইমের ভেতরে ইলেনা যখন প্রাচীন সেই আরব বজরা’র রহস্য নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে, ঠিক তখনই ওর ও ওদের টিম মেম্বারদের আক্রমণ করা হলো। অপহরণ করা হলো ইলেনা-কে। আর সেই সাথে তারা এমন এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলো, যা ওদের কাছে রীতিমতো অবিশ্বাস্য ঠেকলো। অপহরণকারীরা নিজেদের পরিচয় দিলো বনু মুসা অর্থাৎ মুসার সন্তান হিসেবে। ইতিহাসবিখ্যাত তিন মুসলিম বিজ্ঞানী ভাই যারা নবম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর ইসলামি স্বর্ণযুগে জ্ঞান ও বিজ্ঞানকে নিয়ে গিয়েছিলেন উন্নতির চূড়ান্ত শিখরে, তাঁদের সাথে এই বনু মুসা সঙ্ঘের সম্পর্ক কি? কি চায় তারা?
বান্ধবী অপহৃত হওয়ার পর মারিয়া ও তার প্রেমিক সিগমা ফোর্সের বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ জো কোয়ালস্কি পৌঁছে গেলো গ্রিনল্যান্ডে। তাদেরকে সাহায্য করার জন্য সিগমা’র ডিরেক্টর পেইন্টার ক্রো পাঠালেন অপারেটিভ কমান্ডার গ্রেসন পিয়ার্স ও শেইচানকে। ইলেনা’র খোঁজ তো শুরু হলোই, সেই সাথে শুরু হলো প্রাচীন এক মানচিত্রের রহস্যভেদের চেষ্টা যেটাকে বানানো হয়েছে অসাধারণ যন্ত্রকৌশল ব্যবহার করে। ভ্যাটিকান থেকে পাঠানো ফাদার বেইলি ও মনসিনর রো’র মতে এই প্রাচীন মানচিত্রে দেয়া আছে গ্রিক মিথোলজিতে উল্লিখিত টারটারাসের প্রবেশপথ বা নরকের দরজার সন্ধান।
গ্রিক মহাকবি হোমারের দুই বিখ্যাত মহাকাব্য ইলিয়াড ও ওডেসি। ওডেসিতে যে ওডেসিয়াসের বাড়ি ফেরার বর্ণনা হোমার দিয়েছেন, সেগুলো কি নিছকই কল্পনাপ্রসূত? নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে অবিশ্বাস্য অথচ সত্যতা নির্ভর ব্যাপারস্যাপার? তাই যদি হয়, গ্রিক দেব-কামার হেফাস্টাসের বানানো অসংখ্য ব্রোঞ্জ নির্মিত যান্ত্রিক সৈন্য ও পৌরাণিক পশুরও কি অস্তিত্ব আছে? সেগুলো যদি থাকে, টারটারাসও তো আছে। কমান্ডার গ্রেসন পিয়ার্স, শেইচান, কোয়ালস্কি ও মারিয়া’র এবারকার মিশনে ওদের পেছনে লেগে আছে আরো একটা গুপ্তসঙ্ঘ, যাদের লক্ষ্য একটা আস্ত নরকের দখল নিয়ে পৃথিবীর বুকে মহাপ্রলয় নামিয়ে আনা।
প্রাচীন এক যান্ত্রিক মানচিত্রকে সম্বল করে হাজার হাজার বছর ধরে লুকিয়ে রাখা এক বা একাধিক বিপজ্জনক সত্য আবিস্কারের পথে এগিয়ে চললো সিগমা ফোর্সের সদস্যরা। ওদের সঙ্গী হলো ভূতত্ত্ববিদ ম্যাক, ফাদার বেইলি ও মনসিনর রো। ওদিকে বনু মুসা সঙ্ঘের গুপ্তঘাতক নেহির ও তার ভাই কাদিরও এগিয়ে চলেছে নির্দিষ্ট একটা লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে। পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে কে তবে! জমে উঠলো খেলা।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ অনেকদিন পর সিগমা ফোর্স সিরিজের কোন বই পড়লাম। ‘দ্য লাস্ট ওডেসি’ এই সিরিজের পনেরোতম বই। সিগমা ফোর্স সিরিজের বইগুলোতে জেমস রোলিন্স ইতিহাস, মিথ ও বিজ্ঞানকে একীভূত করেন। এই বইতেও এই ধারার কোন ব্যতিক্রম লক্ষ্য করিনি। গ্রিকদের অন্ধকার যুগ, শূন্যতম বিশ্বযুদ্ধ, জ্ঞান-বিজ্ঞানে ইসলামের স্বর্ণযুগ, প্রাচীন যন্ত্রকৌশল, গ্রিক মিথোলজি সহ অনেক ইন্টারেস্টিং ব্যাপার উঠে এসেছে ‘দ্য লাস্ট ওডেসি’ উপন্যাসে।
বিশাল কলেবরের উপন্যাস এটা। স্টোরিটা বিল্ড করা হয়েছে বেশ ধীরেসুস্থে। তবে শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে পড়া শুরু করলে মূল কাহিনি’র সাথে একাত্ম হতে কষ্ট হবে না। আমারো হয়নি। রোলিন্সের সিগমা ফোর্স সিরিজটা ভালো লাগার কারণ হলো ইতিহাস, বিজ্ঞান ও থ্রিলের পারফেক্ট কম্বিনেশন। ‘দ্য লাস্ট ওডেসি’-তেও হোমারের ওডেসি-তে বর্ণিত ওডেসিয়াসের অদ্ভুত ও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার একটা আগ্রহ জাগানিয়া সুলুকসন্ধান করেছেন লেখক।
প্রাচীন মানুষদের যন্ত্রকৌশলের ওপর যে দক্ষতা ছিলো, তার অনেকটা এই উপন্যাসে কাল্পনিকভাবে দেখানো হলেও এই ব্যাপারের ঐতিহাসিক সত্যগুলোও বেশ পরিস্কারভাবে নজরে এসেছে। সেই সাথে গোলাকার অ্যাস্ট্রোল্যাব, তিন বনু মুসা ভাই, ক্যাস্টেল গ্যান্ডোলফো, তুরস্কের ভূ-গর্ভস্থ শহর, প্রমিথিউসের আগুন সহ বেশ কিছু বিষয় গল্পের প্রয়োজনে লেখক এমনভাবে ব্যবহার করেছেন যে উপন্যাসটা উপভোগ করার ক্ষেত্রে এগুলো বেশ সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। সামগ্রিকভাবে যদি আমি বলি, ‘দ্য লাস্ট ওডেসি’ সিগমা ফোর্স সিরিজের সেরা বই হয়তো না। তবে ইতিহাস ও বিজ্ঞানপ্রেমী যেকোন পাঠকের ভালো লাগার মতো অনেক এলিমেন্ট এটাতে পাওয়া যাবে, উপভোগও করা যাবে।
‘দ্য লাস্ট ওডেসি’ অনুমোদিত অনুবাদ। অনুবাদক হিসেবে মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ বরাবরের মতোই চমৎকার কাজ করেছেন। সহজবোধ্য ও সাবলীল অনুবাদ। ভুলভ্রান্তির দেখা মেলেনি তেমন একটা। শুধু একটা জিনিস চোখে বেধেছিলো। সেটা হলো, মেরু ভাল্লুক কথাটাকে বারবার মরু ভাল্লুক লেখা হয়েছে বইয়ের প্রথমাংশে। ‘দ্য লাস্ট ওডেসি’-এর প্রচ্ছদটা বেশ ভালো লেগেছে আমার। সজল চৌধুরী’র সেরা কাজগুলোর একটা বলে মনে হয়েছে এটাকে। বইটার প্রোডাকশন কোয়ালিটিও চমৎকার। আগ্রহীরা পড়ে ফেলতে পারেন।
(৫ অক্টোবর, ২০২২, দুপুর ২ টা ৫৫ মিনিট; নিজ রুম, নাটোর)
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?