বইয়ের_ভুবন_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা
প্রতিযোগীর নামঃ সুমাইয়া আক্তার
পোস্ট নং ১
বইয়ের নামঃ দ্য বয় ইন দি স্ট্রাইপড পাজামাস
লেখকঃ জন বয়েন
অনুবাদকঃ সালমান হক
প্রচ্ছদঃ ডিলান
প্রকাশনীঃ বাতিঘর
প্রথম প্রকাশঃ জানুয়ারি ২০১৭
মলাট মূল্যঃ১৬০ টাকা
পৃষ্ঠাঃ ১৪৪
ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৯/১০
আমার পড়া দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পটভূমিতে লেখা কোনো যথোচিত ও প্রশংসনীয় বইয়ের তালিকায় প্রথমে থাকবে ” দ্য বয় ইন দি স্ট্রাইপড পাজামাস ” বইটি।
▪️লেখক পরিচিতিঃ ১৯৭১ সালে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহরে জন্মগ্রহণ করেন জন বয়েন।ইংরেজি -সাহিত্য নিয়ে ট্রিনিটি কলেজে পড়াশোনা করেছেন।পরবর্তীতে ক্রিয়েটিভ রাংটিং এর উপর উচ্চতর ড্রিগ্রী নিয়েছেন আ্যঙ্গোলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত উপন্যাসের সংখ্যা ৯টি।তার মধ্যে দ্য বয় ইন দি স্ট্রাইপড পাজামাস নিউ ইয়র্ক টাইমসের বেস্টসেলার তালিকায় স্থান দখল করে নিয়েছে।সেই সাথে সারা বিশ্বে অর্জন করেছে অকুন্ঠ প্রশংসা।এই উপন্যাসটির ১০০ কোটির ও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। অনুদিত হয়েছে বিশ্বের ৫১টি ভাষায়।
▪️কাহিনী সংক্ষেপঃ
এই গল্পের প্রধান চরিত্র ব্রুনো।ব্রুনো ৯ বছরের একটি ছেলে যার জন্ম ১৯৩৪ সালের ১৫ এপ্রিল।গল্পের শুরু হয় ব্রুনোর স্কুল থেকে ফিরে আসা থেকে।এসেই সে দেখে যে মারিয়া তার জিনিসপত্র প্যাক করছে।ওর মাকে জিজ্ঞেস করতে সে জানতে পারল যে তারা বার্লিনের বাসা থেকে অন্য কোথাও যাবে। ওর বাবার চাকরি আউট উইথে হয়েছিল যার কারণ ওর বাবার পদন্নোতি। ফিউরী সাহেব স্বয়ং তাদের বাসায় এসেছেন।ব্রুনোর তিন বেস্ট ফ্রেন্ড কার্ল,ড্যানিয়েল আর মার্টিনকে ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে হবে শুনে মন খারাপ হয়ে গেল তার। তাছাড়া বার্লিনের এই বাসাটা ওর খুব ভালো লাগে ওর।গোটা বার্লিন শহর ওর প্রিয়।ব্রুনোর দাদা- দাদিকে ছেড়ে নতুন কোথাও যেতে একদমই মন চাইছে না।ব্রুনো,তার মা-বাবা, বড় বোন গ্রেটেল,মারিয়া,অন্যান্য কাজের লোক সহ সবাই আউট-উইথ এর বাসাটায় উঠল।বাসাটা দেখেই ব্রুনোর মুখ চোঙ্গার মতো হয়ে গেল।এটাতো তাদের বার্লিনের বাড়িটার একেবারে বিপরীত।মাত্র তিন তলা বাড়ি তাও আবার বেসমেন্ট সহ।বার্লিনের সাথে আউট-উইথ এর পরিবেশের কোন মিল না দেখে ব্রুনো খুব খারাপ লাগলো।এখানে ব্রুনোর সাথে খেলার সমবয়সী কেউ নেই।ওদের আউট-উইথের বাসাটা থেকে অনেক দূরে অনেকগুলো ছোট-বড় মানুষকে দেখা যায় সব সময়। যারা সবাই সবসময় ডোরাকাটা পাজামা পড়ে থাকে। ওর কৌতুহল হয় ওদের সম্পর্কে। হঠাৎ একদিন অভিযানে বের হয় ব্রুনো ওর সাথে দেখা হয় শুমেল নামের একটা ছেলের।শুমেলের সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে রোজ ব্রুনো ওর সাথে দেখা করে।শুমেলের সাথে ব্রুনোর বন্ধুত্ব আরো ঘনিষ্ঠ হয়।একদিন শুমেল ব্রুনোকে জানায় যে তার বাবা ক্যাম্প থেকে নিখোঁজ হয়ে গেছে।ব্রুনো শুমেলকে তার বাবাকে খোঁজার আশ্বাস দেয়। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী শুমেল ব্রুনোর জন্য ডোরাকাটা পাজামা আনে।আর ব্রুনো ক্যাম্প এ সেগুলো পড়ে ঢুকে।
ব্রুনোর ঐদিন ক্যাম্প এ যাওয়ার পরিণতি কতটা ভয়াবহ ছিল জানতে হলে পড়তে হবে জন বয়েনের লেখা “দ্য বয় ইন দি স্ট্রাইপড পাজামাস” বইটি।
▪️পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা অসাধারণ একটি বই।যুদ্ধের সময় দুইজন শিশুর বন্দী জীবনের ভিন্ন স্বাদ পাওয়া যায় এ গল্পে।যেকোন বয়সের পাঠকই পড়তে পারবে।অসম্ভব হৃদয়গ্রাহি আর মানবিক আবেদনসম্পন্ন বইটি।এই বইটা পড়ার পর উপলব্ধি করতে পারলাম যে যুদ্ধের নৃশংসতা ও ভয়াবহতা কতটুকু। সহজেই পাঠকের মনে দাগ কাটানোর মতো বই। বইটা পড়া শেষে ‘টমাস জেফারসন’ এর ” যেকোনো যুদ্ধে নির্যাতিতদের মতো নির্যাতনকারীরা ও চরম শাস্তি ভোগ করে।”
আমার মনে হয়েছিল এটাই সমগ্র বইয়ের মূল সারাংশ।
▪️ব্যক্তিগত মতামতঃ জন বয়েনের অসাধারণ লেখনীতে এটি হয়ে উঠেছে অবিস্মরণীয় আর হৃদয়স্পর্শি একটি গল্প।বইটির লেখাগুলো ছিল সাবলীল ও প্রাণোজ্জ্বল।অনুবাদ ও ছিল বেশ ভালো। গল্প কোথাও ঝুলে যায়নি। বইয়ের মান অনুযায়ী এর দাম তুলনামূলক কম।
নিঃসন্দেহে এটি পাঠকের কোমল হৃদয়কে ছুয়ে যাবে।যে কেউ আবেগাপ্লুত হয়ে উঠবে সহজেই।
▪️সমালোচনাঃ তবে বইয়ের বেশ কিছু জায়গায় টাইপিং মিসটেক এর ফলে বইয়ের মাধুর্যতার কমতি ঘটেছে।আশা করি পরবর্তীতে এধরণের ভুল ঠিক করে নেওয়া হবে।
পরিশেষে শুধু এটাই বলব যে এটি আমার পড়া সেরা বইগুলোর মধ্যে একটি।আশা করি অন্য পাঠকদেরও এই বইটি ভালো লাগবে।