দ্য পা‌পেট শো : লেখক এম . ডব্লু . ক্রে‌ভেন | The Papet Show: Author M. W. Craven

  • বই : দ্য পা‌পেট শো
  • লেখক : এম . ডব্লু . ক্রে‌ভেন
  • অনুবাদক : সা‌য়েম সোলায়মান
  • প্রকাশনায় : চিরকুট প্রকাশনী
  • দাম : ৫০০ টাকা ।
  • রিভিউ ক্রেডিট : Asm Samiur Rahman 

কাহিনীর শুরুটা চেনা চেনা, একজন পুলিশ অফিসার দক্ষতায় যে অসামান্য কিন্তু ভাগ্যের ফেরে বা স্বভাব দোষে যার উপর ঝুলছে নিষেধাজ্ঞার আদেশ। কাজেই চাকরি ছেড়ে আমাদের নায়ক ওয়াশিংটন পো ফিরে গেলো নিজ বাসভূমে। নিস্তরঙ্গ জীবনে খুঁজে নিলো মানসিক শান্তি। কিন্তু মূর্তিমান অশান্তি হয়ে উপস্থিত স্টেফানি ফ্লিন, পো-কে তার চাইই চাই সহকারী হিসেবে। হাতে তার বিশেষ বার্তা- ওসমান ওয়ার্নিং, জীবনের উপর হামলা হওয়ার ঝুঁকি আছে ওয়াশিংটন পো-এর। কিন্তু, কেন হঠাৎ এই সমন? এক উন্মাদ ক্রমিক খুনি প্রাগৈতিহাসিক পাথুরে চত্বরে এনে খুন করছে নিজের শিকারদের। নির্যাতন শেষে পুড়িয়ে মারা সেইসব হতভাগ্যদের খুনের ব্যাপারে পাওয়া যাচ্ছে না কোনও সূত্র। কিন্তু, তৃতীয় খুনির পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া দেহে ছুরির আঁচড়ে লেখা আছে ওয়াশিংটন পো-এর নাম আর পাঁচ সংখ্যাটি। কাজেই, সম্ভাবনা আছে পো-ই হতে যাচ্ছে ক্রমিক খুনির পঞ্চম শিকার।
কাজেই পো-কে ফিরতেই হলো। কিন্তু, নিয়মের মধ্যে থাকার স্বভাব কি আর তার আছে? সূত্র ফেলে নিজের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের উপর ভর করে খুনির পেছনে ছুটলো পো। খুনিকে কি নিজেই খুন হয়ে যাওয়ার আগে খুঁজে বের করতে পারবে সে? তার চাইতে বড়ো প্রশ্ন হলো ততদিন কি তার ফিরে পাওয়া চাকরিটা থাকবে?!
এম ডব্লু ক্রেভেন এর ওয়াশিংটন পো সিরিজের প্রথম কিস্তি ‘দ্য পাপেট শো।’ সিরিয়াল কিলিং এবং পুলিশ প্রসিডিউরালের বেশ চমৎকার মিশ্রণ বলা যায় বইটিকে। ‘ইমোলেশন ম্যান’ নাম দেয়া ক্রমিক খুনির পিছে আদাজল খেয়ে লেগে থাকা পো, ফ্লিন আর অপরাধ-বিশ্লেষক টিলি ব্র্যাডশকে কেন্দ্র করে দারুণভাবে এগিয়েছে কাহিনীর চাকা। চেনা কাহিনীর প্রেক্ষাপটকে দিন শেষে নিজের কলমের জোড়ে ভিন্নতা দিয়েছেন ক্রেভেন।
ক্রমিক খুন বিষয়ক রোমাঞ্চ উপন্যাসগুলোতে যেমন তুলে ধরা হয় খুনির বিশদ বিশ্লেষণ, সেদিকে খুব একটা না গিয়ে লেখক এখানে পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়াকেই মূল কেন্দ্রে রেখেছেন। পুলিশের বিভিন্ন দফতর যখন একই খুনির পেছনে ছুটতে থাকে তখন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাও একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এ বইয়ের। পোড় খাওয়া পুলিশ অফিসার হিসেবে পো-এর তদন্তের প্রথাগত পথ এড়িয়ে নিজের ধারণাকে অনুসরণ করা ও দিনশেষে সফল হওয়া দেখাটা বেশ দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। পারিপার্শ্বিক চাপের মুখেও নিজস্ব নীতিতে পো অটল। বইটা পরার আগে আমাকে আকর্ষণ করেছিল প্রধান চরিত্রের নামটা, যদিও নামে কি বা আসে যায় ধারণাকে অতিক্রম করে পো সত্যিই ছাপ রেখে গিয়েছে আমার পাঠক মনে। আবেগ বিবর্জিত কিন্তু ক্ষুরধার বুদ্ধিমত্তার বিশ্লেষক হিসেবে টিলি, তার ইন্ট্রোভার্ট থাকার প্রবণতা ও চরিত্রের পরিবর্তন-পরিণত হওয়া উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠকের নিঃসন্দেহে ভালো লাগবে। যেখানে সকলের চোখ ধোঁকা খেয়ে যায় সেখানেও সে খুঁজে পায় খুনির ফেলে আসা ছক-চিহ্ন-সূত্র। চাঁচাছোলা কথা বলা ও সব কথাকে আক্ষরিক অর্থে নেয়া টিলি ব্র্যাডশ মাঝে মাঝে এই খুন-জখমে ভরা বই-এও আপনার ঠোঁটে হাসি আনবে। ফ্লিন- একসময় পো এর অধীনস্থ আর বর্তমানে বস, দারুণ একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে যাকে পো-এর বিপরীতে আনা হয়েছে; টিলি ও পো এর সাথে তার সম্পর্কের রসায়ন ও তদন্তের প্রক্রিয়া পাঠককে টেনে ধরে রাখে বইয়ের পাতায়।
প্রথম বই হিসেবে লেখক দুর্দান্ত। তার লেখা চরিত্রগুলো নিখুঁত না হয়ে, হয়ে উঠেছে বাস্তব। চরিত্র চিত্রণে দারুণ মুনশিয়ানা, দারুণ সব রেড হেরিং এর ব্যবহারে ভুল পথে পাঠককে হাত ধরে নিয়ে যাওয়া আর দিনশেষে অসাধারণ টুইস্ট দেয়া – সব দিক দিয়েই লেখক সফল। পশ্চাৎপট বা লেক ডিসট্রিক্টের, দিনযাপনের স্বাভাবিক চিত্র যা লেখকের কলমে উঠে এসেছে, তা বেশ আগ্রহ জাগানিয়া; অবশ্য লেখক স্থানীয় হওয়ায় এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। অহেতুক রক্তারক্তি, মৃতদেহের অযাচিত বর্ণনা নেই বইয়ে, যা আছে এসেছে কাহিনীর প্রয়োজনেই। খুনির খুনের পাল্লা বাড়তে থাকলে পাঠকের মনের প্রশ্নও বাড়তে থাকে। কিভাবে ধরা যাবে এই ক্রমিক খুনিকে? একেকবার ক্লিফহ্যাঙ্গার আর চমক পেয়ে পাঠকের বইয়ের পাতা উল্টানোর গতি বৃদ্ধি পায়, আর রুদ্ধশ্বাসে সে ছুটে চলে সমাপ্তির দিকে। অন্যদের কথা জানি না, তবে এই বইয়ে প্রকৃত খুনি কে তা বুঝতে শেষ পর্যন্ত আমি ছিলাম পুরোদমে ব্যর্থ! আর সবশেষে গিয়ে খুনের পেছনের কাহিনী যে সকল পাঠককে ভালো মন্দের মাঝের ধূসর ভূমিতে দাঁড় করাবে তাও নিশ্চিত। চিরকুটের বই বাছাই নিঃসন্দেহে দারুণ হয়, ‘দ্য পাপেট শো’-ও তার ব্যতিক্রম নয়। পুলিশ প্রসিডিউরাল-এর সেরা বইয়ের তালিকায় ওয়াশিংটন পো এর প্রথম তদন্ত কাহিনী যে উপরের দিকেই থাকবে তা চোখ বন্ধ রেখে বলা যায়।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?