বই : দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স পিডিএফ ডাউনলোড
লেখক : কিয়েগো হিগাশিনো
অনুবাদ : সালমান হক
প্রকাশনী : বাতিঘর
ধরণ : থ্রিলার
পড়েন বা না পড়েন অস্বীকার করতে পারবেন না এই বইটার নাম আপনারা সবাই একবার হলেও কারো না কারো কাছে শুনেছেন। শোনাটাই স্বাভাবিক কারণ এটা বিশ্বনন্দিত, বিশ্বজুড়ে প্রচুর ভাষায় অনুদিত এবং বহুল বিক্রিত ও আলোচিত একটা বই।
বইটি কেন পড়বেন? কারণ এটা একটা পার্ফেক্ট মার্ডার ক্রাইম ফিকশন। এর আগে এত চমৎকার বাস্তবমুখী পারফেক্ট মার্ডার না কেউ পড়েছে,না শুনেছে,না কোন খুনী করেছে। কথায় আছে, অপরাধী সবসময় তার অপরাধের একটা না একটা চিহ্ন রেখে যায়। কিন্তু এই বইয়ে অপরাধী কোনো চিহ্নই রেখে যায় নি। ভুল বললাম, ইচ্ছাকৃত কিছু চিহ্ন রেখে গেছে,যা পুলিশকে ভুল পথে পরিচালিত করা ছাড়া কিছুই করেনি।
রিভিউ: গল্পের শুরুটা ইশিগামিকে দিয়ে। প্রতিভাবান এই গণিতবিদ একটা হাইস্কুলে অংকের শিক্ষক। তার প্রতিবেশী ইয়াসুকো যে তার একটামাত্র মেয়েকে নিয়ে থাকে তার প্রতি ইশিগামির কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। এই মহিলা একটা লাঞ্চশপে কাজ করে। প্রতিদিনই ইশিগামিকে সেখান থেকে লাঞ্চ কিনতে দেখা যায়।
ইয়াসুকোর এক্স হাজবেন্ড টোগাশি। যার বিভিন্ন দোষের কারণে তাকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হয়েছে সে। কিন্তু ডিভোর্সের পরেও হাল ছেড়ে দেয়নি টোগাশি। টাকা-পয়সা চাইতে প্রায়ই আসে,হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করে। তার থেকে পালানোর জন্য বারবার বাসা, কর্মস্থান বদল করেও রক্ষা পায়নি ইয়াসুকো।
এই টোগাশিকেই সে আর তার মেয়ে মিলে একদিন খুন করে ফেলে। চমকে উঠবেন না। এটা কোন টুইস্ট না। এই গল্পটা একেবারেই অন্য ধরনের একটা গল্প। গতানুগতিক থ্রিলারে যেমন খুনী কে? এটা নিয়ে সাসপেন্স থাকে এটা তেমন না। খুন,খুনী,খুনের মোটিভ সবই পাঠক জানবে।
ঝোঁকের বসে খুনটা করে ফেলেই খুব চিন্তায় পড়ে যায় ইয়াসুকো। সেই সময় ইশিগামি এসে তাদের দরজায় দাঁড়ায়। বলে,আমি কি আপনাকে হেল্প করতে পারি?
ফিরিয়ে দেয় তাকে ইয়াসুকো। কিন্তু তারপর আবার ফোন আসে তার। বলে,আপনারা যে একটা খুন করে ফেলেছেন তা আমি জানি। আমার তরফ থেকে কোনো হেল্প লাগলে করতে রাজি।
অগ্যতা রাজি হতে হয় ইয়াসুকোকে। দক্ষ এই গণিতবিদ তারপর চমৎকার এক প্লান সাজায়। গনিতে যেভাবে যুক্তি দিয়ে একটা ইকুয়েশন সলভ করে, সেভাবেই বাস্তব জীবনেও চমৎকার এক ইকুয়েশন প্রয়োগ করে সে। লাশটা গুম করে দেয় না। পুলিশ যথাসময়ে খুঁজে পায় সেটা। লাশটা টোগাশির প্রমানিত হয়ে যাবার পরেই তার এক্স ওয়াইফ আর তার মেয়েকে সন্দেহ করতে শুরু করে তারা। কিন্তু কোনোভাবেই প্রমান করতে পারে না কারণ অ্যালিব্যাই আছে তার। অ্যালিবাইটা শক্তও না আবার দুর্বলও না, পুলিশের পক্ষে খোঁজ নেয়াটা কঠিন আরকি। ডিটেক্টিভ কুসানাগি দিনরাত এক করে মা মেয়েকে নিয়েই পড়ে থাকে,ডিটেক্টিভ কিশিতানির আবার ধারণা এরা নির্দোষ।
ডিটেক্টিভ গ্যালিলিও খ্যাত বন্ধু ইওকাউয়ার শরনাপন্ন হয় তারা। এক পর্যায়ে জানতে পারে ইশিগামি আর ইউকাউয়া পুরোনো বন্ধু। এই কেসের সূত্রেই আবার দেখাসাক্ষাৎ হয় দুজনের। পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করে ভালোই দিন কাটে তাদের। কিন্তু ডিটেক্টিভ গ্যালিলিও নাম কি আর এমনি এমনি হয়েছে? সামান্য কিছু থেকেই অনেককিছু বের করে ফেলার অস্বাভাবিক ক্ষমতা আছে তার। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো,এইবার তার টক্কর তার প্রিয় বন্ধু ইশিগামির সাথে যে গনিতের খাতায় হোক আর জীবনের খেলায় অনেক বেশী বুদ্ধি ধরে। কিছু খুঁজে পেলেও তার বিরুদ্ধে কখনোই প্রমান করতে পারবে না সে। অনেকগুলো ব্যাকআপ প্লান বারবার তাকে বাঁচিয়ে দিতে থাকে,সূক্ষ সূক্ষ ব্যাপার যেখানে একজন খুনী পাত্তাই দেবে না,সেখানেও চাল চেলে রাখে ইশিগামি। তাকে বোঝা বা ধরা মুশকিল।
এদিকে ইয়াসুকোর পুরোনো বন্ধু কুডো তার স্বামীর মৃত্যুর পর আবার তার কাছাকাছি চলে আসে। বিয়ে করতে চায় তাকে। এই ব্যাপারটা ভালো লাগেনা ইশিগামির। ভালোবাসার জন্য সে এতকিছু করলো এখন কি সেই ভালোবাসাকেই হারাতে হবে?
ভালোবাসা মানুষকে দিয়ে কি না করায়? আবার সেই ভালোবাসাই মানুষকে ডোবায়, ভালোবাসার জন্য মাঝেমাঝে মানুষ যুক্তি, বুদ্ধির উর্ধ্বে চলে গিয়ে আবেগ দিয়ে ভাবতে গিয়েই ভুলভাল করে ফেলে। এক্ষেত্রে কি হবে সেটা আমি বলবো না কিন্তু এটুকু বলতে পারি পারফেক্ট মার্ডার কাকে বলে,কত প্রকার ও কি কি জানতে হলে এই চমৎকার বইটা পড়তে হবে।
অনুবাদ: চমৎকার। সালমান হক বলে কথা!
রেটিং-৫/৫ এই বইকে না দিলে কাকে দেবো?
জাপানি বইয়ের চরিত্রের নাম মনে রাখা বিষয়ে একটা টেকনিক শিখিয়ে দিই,যে চরিত্র মনে হবে মেয়ে তাকে ছেলে ধরবেন,আর ছেলেকে ধরবেন মেয়ে। আমার ক্ষেত্রে এই বুদ্ধি প্রায়ই কাজে দেয় কিন্তু।
কন্যা মিশাতোকে নিয়ে ডিভোর্সি ইয়াসুকোর বসবাস। একটি খাবারের দোকানে কাজ করে দিন যাচ্ছিল কোনোভাবে। কিন্তু ডিভোর্স হয়েও অত্যাচারী স্বামী টোগাশির কাছ থেকে রেহাই পায় না ইয়াসুকো। বার বার এত হয়রানি সহ্য করতে না পেরে একবার ঘটনাক্রমে নিজেদের ফ্ল্যাটে টোগাশিকে খুনই করে বসে সে! এদিকে পাশের ফ্ল্যাটের ভদ্রলোক ইশিগামি, যিনি আবার ইয়াসুকোর প্রতি মনে মনে বেশ দুর্বল, এই খুন টের পেয়ে যান! ইয়াসুকোর মন জয় করতে ভীতসন্ত্রস্ত মা-মেয়ের পাশে দাঁড়ান তিনি! কিন্তু কথা হচ্ছে খুনটা এখন কিভাবে ধামাচাপা দেয়া যায়?
তো,শুরুতেই জেনে ফেললেন খুনি কে! ভাবছেন স্পয়লার হয়ে গেল? মোটেই কিন্তু তা নয়! আসল খেলা শুরু হয় এরপর। এই প্রতিবেশী ভদ্রলোক ইশিগামি কিন্তু বিশাল বুদ্ধির অধিকারী এক গণিতবিদ! এদিকে এই খুনের তদন্ত কর্মকর্তা কুসানাগির বন্ধু আরেক বুদ্ধিমান পদার্থবিদ ইউকাওয়া,কৌতূহলবশত জড়িয়ে পড়েন এই কেসে! পড়বেন নাই বা কেন! টোগাশি খুনের এই কেসের অন্যতম সাস্পেক্ট ইশিগামি যে ঘটনাক্রমে আবার তারই ভার্সিটি জীবনের বন্ধু!
এরপর শুধু দেখে যাবেন দুই প্রবল বুদ্ধিমান বন্ধুর বুদ্ধির কারিশমা, দেখবেন কত সাধারণভাবে অপরাধ লুকানো যায়,দেখবেন কত অসাধারণ ভাবে অপরাধীর ক্লু খুঁজে পাওয়া যায়! এবং বইটি পড়া শেষে অবশ্যই ভাববেন, এতক্ষণ আসলে কী পড়লাম!!!
সবশেষে আপনাদের ভাবনার জন্য চমৎকার অনুবাদের এই বইটি থেকে পাওয়া একটি প্রশ্ন-
“একটি সমস্যার সমাধান নিজে বের করা কঠিন নাকি সেই সমস্যাটার অন্য কারো সমাধান ঠিক আছে কিনা সেটা যাচাই করা কঠিন?”
Download The Devotion Of Suspect X Bangla Anubad PDF
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?