বইঃ দ্য ডার্ক মেইডেন্স
লেখিকাঃ রিকাকো আকিয়োশি
অনুবাদঃ নজরুল ইসলাম
প্রকাশনীঃ বুক স্ট্রিট
পৃষ্ঠাঃ ২২৪
জাপানিজ থ্রিলার সবসময়ই ব্যতিক্রম। গতানুগতিক যে সকল থ্রিলার আমরা পড়ে অভ্যস্ত সেসব থেকে কিছুটা ভিন্নরকম হয়ে থাকে জাপানিজ থ্রিলার।
আর এই বইটি সে হিসাবে আরও বেশি ব্যতিক্রম। আপনারা নিশ্চয় বিখ্যাত জাপানিজ লেখক রিউনসুকে আকুতাগাওয়া’র লেখা রাণােমন গল্পটির কথা ভুলে যাননি। যেটা থেকে পরবর্তীতে আরেক বিখ্যাত জাপানিজ পরিচালক আকিরা কুরােসাওয়া একই নামে সিনেমা তৈরি করেছিলেন। গল্প এবং সিনেমা দুটোই নিজ নিজ জায়গায় ক্লাসিকে পরিণত হয়েছে। ভাবছেন ধান ভাঙতে শিবের গীত কেন গাচ্ছি! কারণ আছে।
এই বইটি কাহিনীও রিউনসুকে আকুতাগাওয়া’র লেখা রাশােমন গল্পটির পদ্ধতি অনুসরণ করে এগিয়েছে। তাই বলে রিকাকো আকিয়ােশির কৃতিত্ব খাটো করে দেখার কোনাে অবকাশ নেই। দারুণ মুন্সিয়ানার সাথে গল্প বলে গিয়েছেন লেখিকা।
বইটিতে একটা মিথলজিক্যাল কবিতা আছে। সেটি অনুবাদে করে দিয়েছেন সুলেখক তানজীম রহমান ভাই। তানজীম ভাইকে ধন্যবাদ। আশা করি পাঠক বইটি পড়ে দারুণ আনন্দ পাবে।
নজরুল ইসলাম
নারায়ণগঞ্জ
জাপানের খ্রিস্টান মিশনারী “সেইন্ট মেরি একাডেমি ফর গার্লস” এর লিটারেচার ক্লাবের প্রেসিডেন্ট “ইতসুমি শিরাইশি”।
জাপানিজ নামগুলো কেমন যেন পান সুপারি টাইপ হয়ে থাকে। ইতসুমি পড়তে যেয়ে কতবার যে “ইলতুৎমিস” পড়েছি। শামসুদ্দিন ইলতুৎমিস দিল্লীর মামলুক সালতানাতের সুলতান।
ইতসুমি ছিলো সুন্দরী, সুদর্শনা মেয়ে যার সৌন্দর্যের ডাক ছিলো পুরো একাডেমি জুরে। তার কালো চোখ, গোলাপের পাপড়ীর মতো সাজানো ঠোঁট, কালো চুল, নিখুঁত দেহের সৌন্দর্যে হিংসায় পরে যেতো একাডেমির মেয়েরা। তার সৌন্দর্য এতটাই যে, মেয়েরাও তার প্রেমে পড়ে যায় প্রথম দেখাতেই। আপসোস করে ছেলে না হওয়ার জন্য।
একাডেমির ছাদ থেকে পড়ে মারা যাওয়া ইতসুমির রক্তাক্ত লাশ পাওয়া গেছে। সহপাঠী, আত্মীয় সজন পুলিশ সকলেই সন্দেহ করছে। আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত খুন?
তার সঠিক মীমাংসা যখন সবার কাছে কু।য়াশা হয়ে রয়েছে। একাডেমির লিটারেচার ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট সারুরি সুমিকাওয়া সকল সদস্যদের নিয়ে অধিবেশন ডাক দিলো। সকল কে নির্দেশ করা হলো, সবাই যেনো খুনের রহস্য উদঘাটন করতে চেষ্টা করে। এবং প্রেসিডেন্ট কেনো, কিভাবে মারা গেছে তার জন্য ছোট্ট গল্প লিখে সবাইকে পড়ে শোনাতে বললো। যথারীতি সবাই নিজের মতো করে গল্প তৈরি করলো। ক্লাবের সকল সদস্য যার যার মতো করে গল্প লিখলো। সকলেই একে অপর সদস্যকে হত্যাকারী হিসেবে সন্দেহ করছে। আর সবার গল্পের সপ্তাহ ছিলো- লাশের হাতে পাওয়া একগুচ্ছ “লিলি অফ দ্য ভ্যালি’র”বর্ণনা দিয়ে।
কাহিনী যখন একে অপরকে অপরাধী হিসেবে সাবস্থ করে চলছে তার মধ্যেই প্লট ৩৬০ ডিগ্রী পরিবর্তন করে দিলো। মৃত লাশের নিজের হাতে লিখা চিঠি পেয়ে। উঠে এলো নারী সৌন্দর্যের মাঝে লুকিয়ে থাকা রহস্য। কিভাবে একাডেমির প্রফেসরের সাথে ইতসুমির অবৈধ প্রেমের ঘানির কুলুর বলদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো লিটারেচার ক্লাবের সকল সদস্য তাও নিজের অজান্তে। এবং জড়িয়ে পড়েছে খুনের গল্পের যাতা কলে। যেখানে খুনের চিহ্ন শুধুই “লিলি অফ দ্য ভ্যালি”।
এখানেই ক্লাইম্যাক্স শুরু। রহস্য জানতে হলে বইটা পড়তে হবে। এর পরে বলে দিলে, গল্পের মজাই থাকবেনা
বইয়ের নাম :- দ্য ডার্ক মেইডেনস লেখক:- রিকাকো আকিয়ােশি অনুবাদ:- নজরুল ইসলাম। ধরন :- মার্ডার মিস্ট্রি প্রকাশনী:- বুক স্ট্রিট প্রচ্ছদ:- আদনান আহমেদ রিজন পৃষ্ঠা সংখ্যা :-২২৪
“ডার্ক মেইডেনস”। এর অর্থ ‘অন্ধকারের মেয়েরা।
প্রকৃতপক্ষে, এই জাপানিজ নভেলে ছােট ছােট গল্পের আকারে মানুষের মনের নানা অন্ধকার দিক উন্মােচিত হয়েছে যেখানে ঘৃনা-প্রতিশােধ, লােভ-লালসা, হিংসা প্রতিফলিত হয়েছে।
ইতসুমি সুরাইশি সেইন্ট মেরি গার্লস স্কুলের এক জনপ্রিয় ছাত্রী। ইতসুমি দারুন সুন্দরী, বন্ধুসুলভ, আত্মবিশ্বাসী ও উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্না। তার এত সব গুন ও সহজাত নেতৃত্বের কারনে সে সহজেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ছাত্রী দের মাঝে। কিন্তু হঠাৎ তার আকস্মিক মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে যায় সবাই, বিশেষ করে তার নিজের হাতে গড়ে তােলা লিটারেচার ক্লাবের বান্ধবীরা। একসময় গুঞ্জন ওঠে এই ক্লাবের ই কোনাে সদস্যের হাতে খুন হয়েছে ইতসুমি।
ইতসুমির মৃত্যর কিছুদিন পর লিটারেচার ক্লাব থেকে আয়ােজন করা হয় এক বিশেষ মিটিং, যা ক্লাবের শেষ মিটিং ও বটে।
এই মিটিং এর বিশেষ আকর্ষন ছিল মিস্ট্রি স্টু পার্টি যেখানে সবাই আলাদা আলাদা। খাবার নিয়ে আসবে যা খেতে হবে সম্পূর্ণ অন্ধকারে। খেতে খেতে এক একজন পাঠ করবে স্ব-রচিত গল্প। আর এই গল্প আবর্তিত হয়েছে মৃত ইতসুমি-কে ঘিরে। এক কথায়, রশােমন স্টাইলে রহস্য উদঘাটন, যা | অনুবাদক নিজেই ভূমিকাতে বলেছেন। সাতজনের ভিন্নভিন্ন সাতটি গল্পে ফুটে উঠেছে নিজেদের ভেতরে লুকিয়ে রাখা কথা, ক্ষোভ, চারিত্রিক বিশ্লেষন ও ধ্যান- ধারনা। একই ঘটনা কিন্তু ভিন্নভিন্ন চরিত্রের পারসপেক্টিভ থেকে শােনার পর সম্পূর্ণ আলাদা বলে মনে হচ্ছিল। প্রত্যেকেই একেকজন ভিন্ন মানুষ কে সন্দেহ ভাজন হিসেবে দাবি করে তার গল্প শেষ করে। কিন্তু এভাবে তাে কানাগলি তে গিয়ে ঠেকবে সবাই…তাহলে???শেষে এই রহস্য উন্মােচনে অবতীর্ন হয় ইতসুমি নিজেই!!! মানে ইতসুমির লিখে যাওয়া চিঠি। পড়তে পড়তে পাঠক মাত্রই অবাক হয়ে যাবেন মানুষের মনের কত অলিগলি, যা নিজেও সমপূর্ণ জানেনা;কারন তার নিজের গল্পে নিজে সবসময় ই নায়ক, কিন্তু অন্যেরাভিলেইন।
প্রতিটি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও মানুষকে বিশ্লেষণকরার পদ্ধতি আলাদা হয়। একই ব্যক্তিকে দশজনের কাছে দশরকম মনে হতে পারে। কারাে কাছে সে দয়ালু, কারাে কাছে তার আচরন শুধুই লােকদেখানাে। আবার কারাে কাছে সে হয়ত ভীষন বন্ধুসুলভ, কারাে কাছে মনে হয় সে কেবল সস্তা জনপ্রিয়তা খোঁজে। আরেক টা বিষয় হচ্ছে, আমরা নিজে যেমন অন্যকে ঠিক তেমন ভাবতেই পছন্দ করি।
অনুবাদক নজরুল ইসলাম এর এটি আমার প্রথম পড়া বই। আর প্রথম বই পড়েই একজন ভরসাযােগ্য অনুবাদক হিসেবে তার লেখা একদম সাবলীল মনে হয়েছে।
জাপানিজ থ্রিলার সবসময় ই ইউনিক প্লট এর আমার বিশেষ পছন্দের। তার মধ্যে এই বইটি আরাে বেশি ভালাে লেগেছে এর অসাধারন উপস্থাপনার জন্য। খুনের রহস্য উদঘাটন কে শুধুমাত্র গােয়েন্দা পুলিশ। এর মধ্যে আটকে না রেখে “রশােমন” স্টাইলে এক একজন এর দৃষ্টিভংগী থেকে ব্যাখা করার এই । ব্যাপার টা এককথায় দারুন। এতে মনস্তাত্ত্বিক দন্দ্ব টা ভালােভাবে ফুটে ওঠে। এর আগে “কনফেশন”। পড়ে এত ভালাে লেগেছিল। আর আজ এই বইটি পড়ার পর আমার পড়া সবসময়ের সেরা কিছু বই এর তালিকায় চলে এলাে।
যদিও এই বইটি ২০২১ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো কিন্তু ‘দ্যা ডার্ক মেইডেন্স’ pdf download free এখনো অফিশিয়ালি পাবলিস্ট করা হয়নি। লেখক রিকাকো আকিয়োশি এর বইটি। দ্য ডার্ক মেইডেন্স পিডিএফ ডাউনলোড না থাকায় আমরা দুঃখিত।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?