দুজনার পাঠশালা : উসতাজ হাসসান শামসি পাশা | Dujonar Pathshala : Ustaz Hassan Shamsi Pasha

  • বই : দুজনার পাঠশালা
  • লেখক : উসতাজ হাসসান শামসি পাশা, শাইখ আদেল ফাতহি আব্দুল্লাহ, শাইখ ইবরাহিম দাবিশ
  • প্রকাশনী : পথিক প্রকাশন
  • বিষয় : পরিবার ও সামাজিক জীবন, বিয়ে
  • পৃষ্ঠা : 256, কভার : হার্ড কভার
Wafilife.Com
আমরা অনেকেই বিয়ে দেরিতে করতে চাই। পড়াশোনা শেষ হয়নি, কিংবা ভাল চাকরী হয়নি, অথবা ভাল চাকরী হলেও ভাল স্যালারি হয়নি, ঢাকায় বাড়ি নেই, ইত্যাদি অজুহাতে আমরা বিয়েকে পিছিয়ে দিই। কিন্তু আমাদের পূর্বসূরিগণ ছিলেন এর উল্টো। যেমন:
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযি.) বলতেন, ‘আমি যদি জানতে পারি, আমার আর মাত্র দশ দিন হায়াত আছে, তারপরও আমি বিয়ে করব।’ উমার ইবনু খাত্তাব (রাযি.) একবার আবূ যাওয়ায়েদ-কে ধমক দিয়ে বলেন, ‘বিয়ে করছো না কেন? তোমার কি বার্ধ্য চলে এসেছে? নাকি তুমি চরিত্রহীন, লম্পট?’ ইমাম গাযালী (রহ.) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযি.) তাঁর ছেলেকে বিয়ের উৎসাহ দিয়ে বলতেন, ‘বিয়ে করার আগ পর্যন্ত কোনো ধার্মিকের ধার্মিকতা পূর্ণতা পায় না।’
‘দুজনার পাঠশালা’ বইটি বিয়ে করতে ইচ্ছুক, বিবাহিত, সবার জন্যই উপকারী। এতে স্থান পেয়েছে মানুষের মনস্তত্ত্ব নিয়ে সূক্ষ্ণ আলোচনা, স্ত্রীর সঙ্গে আচরণনীতি, কীভাবে স্বামীর মন জয় করবেন, স্বামী-স্ত্রী সাধারণত যেসব ভুল করে, সেগুলো থেকে পরিত্রাণের উপায়, সমসাময়িক ইত্যাদি বিষয় এই বইতে এসেছে। 

মানুষের জীবনের অন্যতম প্রধান, প্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য সম্পর্ক হচ্ছে দাম্পত্য জীবন। এর শেকড় যত গভীর হবে, বুনন যত অটুট হবে, পরিবারের অন্যান্য সম্পর্কও তত মজবুত ও অটুট বুননের হবে। এজন্য ইসলাম দাম্পত্য জীবনের ছোট-বড় সকল বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বর্ণনা করেছে। জীবনের সবচেয়ে মধুরতম এ সম্পর্ককে বিশুদ্ধ ও পরিশীলিতরূপে তুলে ধরতে নবিজির জীবনাদর্শকে উম্মাহর সামনে মখমল কোমল আচ্ছাদনে উপস্থাপন করেছে। 

কিন্তু সে সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে দাম্পত্য জীবনে আমরা অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যা ও জটিলতার মুখোমুখি হই। ‘দুজনার পাঠশালা’ বইটিতে দাম্পত্য জীবনকে জটিলতামুক্ত রাখার সেসব উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একে অপরের মনস্তত্ত্ব বোঝার, পরিপূরক হয়ে উঠার, বিভিন্ন মূলনীতি ও ছোট ছোট অনুষঙ্গের চর্চা করে দাম্পত্য জীবনকে আরও মাধুর্যময় করে তোলার বিষয়গুলো যত্নের সঙ্গে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

আশা করি, বইটি আপনাদের পরিতৃপ্ত করবে। পৃথিবীতে স্বর্গসুখ নামিয়ে আনার যে স্বপ্ন নিয়ে দুজন দুজনার হাত ধরেছিলেন, সে স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করবে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ومن آياته أن خلق لكم من أنفسكم أزواجا لتسكنوا إليها…»
“আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে হচ্ছে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন; যাতে তোমরা তাদের কাছে গিয়ে প্রশান্তি লাভ করতে পার।”
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إن إبليس يضع عرشه على الماء، ثم يبعث سراياه، فأذناهم منه منزلة أعظمهم فتنة، يجيء أحدهم فيقول: فعلت كذا وكذا، فيقول: ما صنعت شيئا، قال ثم يجيء أحدهم فيقول: ما تركته حتى فرقت بينه وبين امرأته، قال: فيدنيه منه ويقول: نعم أنت.
‘ইবলিশ পানির উপর তার সিংহাসন স্থাপন করে। তারপর তার বাহিনী প্রেরণ করে। তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশি ফিতনা সৃষ্টিকারী সে তার সর্বাধিক নৈকট্য অর্জনকারী। তাদের একজন এসে বলে, আমি এই এই কাজ করেছি। উত্তরে সে বলে, তুমি কিছুই করোনি। তারপর আরেকজন এসে বলে, আমি তার পিছনে লেগে থেকে তার ও তার স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। ইবলিশ তখন তাকে কাছে টেনে নিয়ে বলে, তুমি খুবই কাজের কাজ করেছো।
সুরা রূম : ২১। সহিহ মুসলিম : ৬৯৯৯।
তাবেঈ কায়স বিন আবু হাজেম রহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত,
بكى عبد الله بن رواحة- رضي الله عنه- فبكت امرأته، فقال: ما يبكيك؟ قالت: رأيتك تبكي فبكيت.
“আবদুল্লাহ ইবনে রওয়াহা রাদিয়াল্লাহু আনহু কাঁদছিলেন। তখন তাঁর স্ত্রীও কান্না শুরু করলো। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কাঁদছ কেন? স্ত্রী বলল, আপনি কাঁদছেন, তাই আপনাকে দেখে কাঁদছি।
পূর্ববর্তী স্ত্রীগণ স্বামীরা উপার্জনের জন্য বাইরে যাওয়ার সময় তাদের বলতেন, إتقوا الله فينا ولا تطعمونا الكسب الحرام فإنّا نصير على الجوع
والضر ولا تصير على النار.
“আমাদের ব্যাপারে আপনি আল্লাহকে ভয় করবেন। আমাদের হারাম কামাই খাওয়াবেন না। কেননা, আমরা ক্ষুধা ও কষ্ট সহ্য করে নিতে পারব। কিন্তু জাহান্নামের আগুন সহ্য করতে পারব না।”
মুসতাদরাকে হাকেম : ৮৭৪৭। ‘ইহইয়াউ উলুমুদ্দিন বিবাহ অধ্যায়।
ইসলামের মতো একটি পূর্ণাঙ্গ, ভারসাম্যপূর্ণ, পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন জীবন বিধান দান করেছেন। দুরুদ ও সালাম রাসুলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি, যিনি সমস্ত মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছিলেন। তাঁর পরিবারবর্গ ও সকল সাহাবায়ে কেরামের প্রতিও দুরূদ ও সালাম।
ইসলামি শরিয়তে বিয়েকে অর্ধেক দীন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। একমাত্র ইসলামই বিয়েকে একটি মহান নেয়ামত, পাশাপাশি একটি ইবাদত, শুধু ইবাদত নয়, গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।
এ থেকে প্রতীয়মান হয়, মানবজীবন ও মানব সমাজের শৃঙ্খলা ও শুচিশুভ্রতা রক্ষার্থে এর গুরুত্ব কত অধিক। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বিবাহবিমুখদের সম্পর্কে অত্যন্ত মারাত্মক কথা উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন,
النكاح من سنتي فمن رغب عن سنتي فليس مني،
“বিয়ে আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নতের প্রতি বিমুখতা প্রদর্শন করবে সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়।”
কোনো নফল আমল বর্জনের ক্ষেত্রে নবিজি এত কঠিন কথা উচ্চারণ করেননি। কিন্তু বিয়ের ক্ষেত্রে করেছেন। এ থেকে বোঝা যায় নফল আমলের চেয়ে বিয়ের গুরুত্ব অধিক। জমহুর উলামায়ে কেরামের মতে গুনাহে নিপতিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে বিয়ে করা ওয়াজিব। আশঙ্কা না থাকলে সুন্নতে মুয়াক্কাদা। ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহর নিকট যে কোনো নফল আমলের চেয়ে বিয়ে করা উত্তম। তাদের মতে, সর্বক্ষণ আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত থাকা, ইবাদতপরায়ণতা ও পার্থিব নির্মোহতার উদ্দেশ্যে চিরকুমার থাকার চেয়ে বিয়ে করা উত্তম।
সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
رد رسول الله على عثمان بن مظعون التبتل ولو أذن له لاختصينا ‘নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসমান ইবনে মাজউন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বিয়ে করা থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করেন। নবিজি তাকে অনুমতি দিলে আমরাও নপুংসক হয়ে যেতাম।”
সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৮৪৬।
সাহাবায়ে কেরামের নিকট বিয়ে অত্যন্ত পছন্দের ও সহজ একটি বিষয় ছিল। আমাদের সমাজের মতো তাদের কাছে বিয়ে মানে কাড়ি কাড়ি টাকার খেলা ছিল না।
ইমাম গাজালি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তার পুত্রকে বিয়ের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে বলেন,
لا يتم نسك الناسك حتى يتزوج
“বিয়ে করার আগ পর্যন্ত কোনো ধার্মিকের ধার্মিকতা পূর্ণতা পায় না।’
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, “আমি যদি জানতে পারি যে, আমার আর মাত্র দশ দিন হায়াত আছে, তখনও আমি বিয়ে করা পছন্দ করব।’
এমনিভাবে হযরত মুআজ রাদিয়াল্লাহু আনহু মহামারিতে তার দুজন স্ত্রী মারা যাওয়ার পরও তিনি বলতেন, ‘তোমরা আমাকে বিয়ে করিয়ে দাও। কেননা আমি আল্লাহর সঙ্গে অবিবাহিত অবস্থায় সাক্ষাৎ করতে চাই না।’
হযরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর চারজন স্ত্রী ও সতেরো জন দাসী ছিল। অথচ
তিনি অন্যতম দুনিয়াবিমুখ মহান সাহাবি ছিলেন। এ থেকে প্রমাণিত হয়, বিয়ে করা
মানে দুনিয়ার প্রতি আসক্তি নয়।’
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার আবু যাওয়ায়েদকে ধমকের সুরে বলেন, “বিয়ে করছ না কেন? তোমার কি বার্ধক্য চলে এসেছে নাকি তুমি চরিত্রহীন, লম্পট?
চতুর্দিক থেকে আষ্টেপৃষ্টে জড়ানো পাপাচার, পর্ণ আসক্তি ও যৌন মানসিকতার এই সমাজে বিয়ের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব আলোচনা করে বুঝানোর প্রয়োজন নেই, তা আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারি।
কিন্তু বিয়ে করলেই কী আমরা সফল হতে পারব? রেশম কোমল চুলে বাঁধা পড়লেই কি আমরা সুখময় জীবনের পরশ পাব? নানান জটিলতা ও সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করব?
* সহিহ বুখারি : ৫০৭৩।
‘ইহইয়াউ উলুমুদ্দিন : বিবাহ অধ্যায়।
‘ইমাম যাহাবিকৃত সিয়ার আলামিন নুবালা : ৫/৩৮।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?