দিমেন্তিয়া : এম. জে. বাবু – পাঠ প্রতিক্রিয়া! | Dimentiya : M.J. Babu Books

এম.জে. বাবুকে এখন বুক ইন্ড্রাস্ট্রির অন্যতম সেনসেশন বলা যায়। তাঁর বই বের হতে দেরী হয়, হাইপ উঠতে দেরি হয় না। এত হাইপ দেখেও বই কিনিনি আগে। কারণ অনেকবার হাইপের বই কিনে ধরা খাইছি। কিন্তু এবার প্রি-অর্ডার এ নিয়ে নিলাম দিমেন্তিয়া এবং পড়েও ফেললাম।

আমার মনে বারবার প্রশ্ন উঠে এই লেখকের বই আলোচনা হয় কেন? দিমেন্তিয়া পড়ার পর আমি কয়েকটি দিক বুঝতে পেরেছি। এবং চেষ্টা করেছি সেগুলো তুলে ধরতে। কারণগুলো নিচে দিলাম। (এর মাধ্যমে বইটা কেমন তা-ও বলছি)

দুর্দান্ত প্লট। প্রথমে মনে হবে এই বুঝি সেভেন বা রাটসাসান মুভির কপি। কিন্তু যত আগাবেন তত ভুল ভাঙবে। এবং শেষ পর্যন্ত বুঝবেন প্লটটা কত ইন্ট্রিগিং ছিলো এবং এর ছিল স্বতন্ত্র ধারা। সিরিয়াল কিলিং নিয়ে অসাধারণ প্লট রচনা করেছেন লেখক সাহেব।

বর্ণনা নিয়ে অবশ্যই প্রশংসা করবো। একদম কাটছাঁট বই। কোথাও কোনো অতিরিক্ত বর্ণনা পাইনি। লেখনশৈলী বেশ সাবলীল। যদিও মাত্র অল্প জায়গায় কাঁচা ছাপ আছে। সম্ভবত প্রথম বই দেখে। থ্রিলার পাঠক হিসেবে আমি অতিরঞ্জিত পছন্দ করি না। এতে বইয়ের বা দৃশ্যের হিট অফ দ্যা মোমেন্ট নষ্ট হয়ে যায়। বইটাতে আছে অনেক গায়ের লোম দাঁড়ানো দৃশ্য। লেখক বেশ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছে এইগুলো তুলে ধরতে। অনেক জায়গায় আপনার গোসবাম্প হতে বাধ্য।

সাসপেন্স। হ্যাঁ, এত সাসপেন্স যে আপনাকে পেইজ উল্টাতে বাধ্য করবে। আমি একটানা প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পড়ে দিমেন্তিয়া শেষ করি। প্রতিটা চ্যাপ্টার শেষ হয় পেইজ টার্নের মাধ্যমে। আপনার মনে এমন খচখচানি সৃষ্টি করবে যে আপনি সব ছেড়ে পরবর্তী চ্যাপ্টার এ যাবেন।

টুইস্ট!
ওহএমজি টাইপের টুইস্ট আছে। আপনাকে লেখক এমন বোকা বানাবে যে আপনি হা হয়ে থাকবেন। এত সাসপেন্স এর পর এমন টুইস্ট-ই তো স্যাটিসফেকশন দিতে পারে।

অভিযোগ আছে চরিত্র নিয়ে। একটা চরিত্রের ব্যাকস্টোরি দিতে পারতো। দিলে বইটা আরেকটু জমতো। তবে বাকি চরিত্ররা ছিলো বেশ ভালো।

সমাপ্তি

এটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে। অনেক বই সমাপ্তিতে মরে যায়। প্লট দুর্দান্ত হলেও সমাপ্তি বেশ বাজে। উল্লেখ্য জাহিদ হোসেনের কাদুস্যেয়াস, ইশ্বরের মুখোশ। কিন্তু এই লেখক সমাপ্তি দিয়েছে বেশ ভালো টুইস্টের সাথে। পাশাপাশি রয়েছে খুব সুন্দর প্লট রিভিলিং (ব্যক্তিগতভাবে এই চ্যাপ্টারটা বেশ ভালো লেগেছে। খুব সহজ ভাষায় সাইকো এনালাইসিস করেছে।) বইয়ের সমাপ্তিতে রয়েছে ক্লিফ হ্যাংগার। সম্ভবত অ্যাবসেন্টিয়াতে আলোচনা হয়েছে এটা।

দুর্দান্ত প্লট, সাবলীল লেখনশৈলী, এক্সট্রিম সাসপেন্স, পেইজ টার্নিং মোমেন্ট, ক্লেভার রেড হারিংস, মাথা নষ্ট করা টুইস্ট। এই হলো দিমেন্তিয়ার বৈশিষ্ট্য। তাইলে বলুন, বই নিয়ে আলোচনা করা হবে না কেন?

সাউথে এটলি কুমারের মুভিতো অনেকেই দেখেন। তাকে বলা হয় মাসালা মুভির প্রিন্স। এম.জে. বাবু তেমন একটা মাসালা বই হলো দিমেন্তিয়া। আপনার ভালো লাগবেই। বই পড়ার আগে যে প্রত্যাশা ছিলো, তা শতভাগ পূরণ হয়েছে৷ তাই বাধ্য হয়ে এত বড় আলোচনা করলাম। ভালো একটা সময় গেলো বইটার সাথে।

এবার আসি একটু সমালোচনার জায়গায়। না বই নিয়ে করছি না। করছি প্রুফ নিয়ে। অনেক জায়গায় দুইটা শব্দ লেগে গেছে। উদাহরণ ১৩ নাম্বার পেইজের শেষ প্যারায় *উঠলমেয়েটির। এভাবে ক্রিয়াপদের সাথে কিছু বাক্য লেগে আছে। বিস্ফারিত হয়ে আছে বিস্ফোরিত। এত সুন্দর বইয়ে এইগুলা বিরক্তিকর লাগে অনেক। তবে বানান ভুল অনেক কম। তাই হয়ত চোখে লেগেছে আমার।

গ্রন্থরাজ্যের প্রোডাকশন প্রশংসা করার মতো। দুর্দান্ত প্রোডাকশন হয়েছে বইয়ের। সে অনুযায়ী দাম ও সাশ্রয়ী। সবচেয়ে ভালো লেগেছে ভারী ডাস্ট কাভারটা। আরেকজন প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। তা হলো প্রচ্ছদকার সুলতান আযম সজল। একদম পার্ফেক্ট প্রচ্ছদ হয়েছে বইয়ের।

 

বি.দ্র. বইটা বেশ দ্রুত পড়ি। তাই কিছু জিনিস হয়ত ছুটে গেছে। চেষ্টা করবো পরের বই পড়ার সময় তুলে ধরতে। আমার পুরো অবজার্ভেশনটা দিমেন্তিয়াকে নিয়ে। বাকি বইগুলো পড়লে হয়ত আরও ভালো তুলনামূলক আলোচনা করতে পারবো।

বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?