❝ একটি বই এতটা ডার্ক কিভাবে হতে পারে? রক্তারক্তি, খুনখারাবি এবং অমানুষিক নির্যাতন ঘিরে রেখেছে পুরো দিমেন্তিয়া বইটিকে। ❞
- Book – Dimentia
- Author – MJ Babu
- Publisher – Gronthorajjo
- প্রচ্ছদকার – সজল চৌধুরী
- পৃষ্ঠা সংখ্যা – ৩৫২
- মূল্য – ৬০০ টাকা
ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যাচ্ছে খন্ড বিখণ্ড হওয়া লাশ। খুনি অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করেছে তাদের। জীবিত অবস্থায় গায়ের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বিষাক্ত আফ্রিকান পিপঁড়া, কারো উপর হাউন্ড আবার কারো গায়ে ইনজেক্ট করা হয়েছে এমোনিয়াম ট্রাই অক্সাইড সালফেট যা ভিতর থেকে জালিয়ে দিয়েছে ভিক্টিমের দেহ। এসব করেই খান্ত হয়নি খুনি। ভিক্টিমের দেহকে টুকরো করে আলাদা করেছে সে এবং ডিড অব অ্যাক্ট হিসেবে নিয়ে গেছে একটি অর্গান। কেসের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডি কর্মকর্তা শফিকে। ঘটনাক্রমে জড়িয়ে পড়ে কলাবাগান থানার ওসি দানিয়াল। বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত মোকাবেলা করে তাকে সমাধান করতে হবে এই মৃত্যুরহস্য তা না হলে, ঝরে পরবে আরেকটি জীবন।
✒পাঠ প্রতিক্রিয়া
দিমেন্তিয়া বইটির প্রথম অধ্যায় পড়েই ধাক্কা খেলাম। ভয়ঙ্কর লোমহর্ষক বর্ণনা উঠে এসেছে বইতে। একদিকে যেমন মাথানষ্ট করা দুধর্ষ প্লট তার ওপর লেখকের সাবলীল বর্ণনা বইটিকে অন্য এক মাত্রায় নিয়ে গেছে। কি নেই বইটিতে? থ্রিল, সাসপেন্স, অ্যাকশনের এক অনবদ্য মিশ্রণ। বইটি যেন চুম্বকের মত আমাকে ধরে রেখেছিল। এক অধ্যায়ের পর পরের অধায়ে কি হয়েছে তা না পড়ে উঠতে পার ছিলাম না। একবারে পারফেক্ট থ্রিলার বলব না, তবে কম কিছুও নয়। বিশেষ করে বইয়ে যে একের পর এক টুইস্ট লেখক সাজিয়ে রেখেছেন তা আসলেই দুর্দান্ত। শেষের ক্লাইম্যাক্স এর জন্য একবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। শেষের টুইস্ট পড়ে বিরাট এক ধাক্কা খেলাম। শেষ এমনটি হয়েছিল লেখকেরই অন্য একটি বই পিনবল পড়ে। আমার কাছে বইটি ভালোই লেগেছে। ডার্ক সাইকোলজিকাল থ্রিলার হিসেবে অসাধারণ।
✒বইয়ের একটি অংশ
অদ্ভুত লাগে শহরটাকে। কেউ টাকা পয়সা খরচ করে ইটের দেয়াল বানিয়ে চার দেয়ালে বন্দি থাকে। প্রাচুর্য নামের বেড়াজালে বন্দি রেখে দুনিয়াই দেখতে পারে না। আর কেউ খোলা রাস্তায় পড়ে কাপতে কাপতে দুনিয়াটাকে বেশ ভালোভাবেই চেনে আর দেখে।
দিমেন্তিয়া বইটিতে প্লট ব্যতীত আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হলো লেখকের লেখনশৈলী। প্রতিটি ঘটনা ও পারিপার্শ্বিকের বর্ণনা লেখক যেভাবে দিয়েছেন তাই পাঠককে বইয়ে আটকে রাখার জন্য যথেষ্ট। তবে বইয়ের ঘটনাগুলো অতি দ্রুত ঘটছিল। একদিকে দানিয়াল তদন্ত করছে অপরদিকে শফি আবার অন্যদিকে মনোজ, আশিক, ফিরোজ তদন্ত করছে। কোনো অধ্যায়ে কেউ কিডন্যাপ হচ্ছে আবার একই অধ্যায়ে অন্য ভিক্টিমের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ঘটনার সাথে তাল রাখাই মুশকিল হয়ে পড়ে। আবার, বইয়ে অনেক বেশি ডিটেইলস দেয়া হয়েছে যা কিছুটা বিরক্তিকর বলেই আমার মনে হয়েছে।
✒চরিত্রয়ণ
দিমেন্তিয়া বইয়ে লেখক প্রতিটি চরিত্রকে তার সর্বোচ্চ দিয়ে গড়ে তুলেছেন তা সহজেই বোঝা যায়। আগে সিরিজের দ্বিতীয় বই অ্যাবসেন্টিয়া না পড়ে থাকলে আমি প্রথমে শফিকেই মূল চরিত্র হিসেবে ধরে নিতাম।
✒বানান ও সম্পাদনা
দিমেন্তিয়া বইটির তৃতীয় সংস্করণ হওয়া স্বত্বেও বইতে অনেক বানান ভুল রয়েছে। আবার, কোথাও দুইজন চরিত্রের নাম উল্টো-পাল্টা হয়ে গেছে।
✒প্রোডাকশন
দিমেন্তিয়া বইয়ের বাঁধাই, কাগজ, কোয়ালিটি একেবারে টপ নচ।
✒প্রচ্ছদ
দিমেন্তিয়া বইয়ের প্রচ্ছদ একেবারে কড়া। বইয়ের প্রচ্ছদেই বইয়ের কাহিনী অনেকটুকু উঠে এসেছে। প্রচ্ছদ নিয়ে কোনো কথা হবে না।
✒বই নিয়ে কিছু কথা ( স্পয়লার অ্যালার্ট
দিমেন্তিয়া বইটি নিঃসন্দেহে ভালো তবে কিছু কথা শেষ পর্যন্ত থেকেই যায়।
⎊ দিমেন্তিয়া বইটিতে রিং এর একটা ব্যাপার আছে। বাহাউল্লাহ ব্যতীত প্রতিটি লাশের সাথেই রিং পাওয়া গেছে। এই রিং দিয়ে খুনি কি বোঝাতে চেয়েছে তা ক্লিয়ার করা হয়নি।
⎊ বইটির শেষ দিকে দানিয়াল শফির বাসা থেকে ৭ টি রিং পায়। এই রিং এর দিয়ে লেখক কি বোঝাতে চেয়েছেন তাও আমার কাছে ক্লিয়ার না।
⎊ রেজা তথা শফি বিউটোলিয়াম ৩৬ কথা থেকে পেয়েছে? – সেই বিষয়টিও বইতে ক্লিয়ার করা হয়নি।
⎊ বইয়ের একটি অংশে শফি কয়েকটি পলিথিনে করে কিছু ড্রেনে ফেলে দেয় যা পরে আর বইটিতে উল্লেখ করা হয়নি।
⎊ বইয়ে দানিয়াল কেসে সপ্তরিপুর একটি থিওরি দেয়। তবে শেষে গিয়ে এটাকে কেবল মোটিভেশনের জন্য বলা বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। যা আমার কাছে যথেষ্ট যুক্তি সংগত বলে মনে হয়নি।