দা ডিভাইন রিয়ালিটি : হামজা আন্দ্রেস জর্জিস

| একজন! |

মনে করুন, আপনি এক অভিযাত্রী। এক নভোযানে করে অন্য এক গ্রহে গিয়েছেন মানুষের মতো সৃষ্টিদের দেখতে। গ্রহে নামামাত্র আপনার গাইডের দেখা পেলেন। তিনি জানালেন, আপনার নভোযান নেমেছে গ্রহের সীমানাহীন দেশ স্ফিঙ্গায়। আপনার মনে কিছুটা খটকা জাগল। গাইডকে জিজ্ঞেস করলেন, এই গ্রহে আর কোনো দেশ আছে কি না। তিনি একগাল হেসে জানালেন,“হ্যাঁ, দুটো।” 

আপনি বললেন, “দুটো দেশের মধ্যে যদি সীমানাই না থাকে, তা হলে আপনারা কীভাবে বোঝেন কোন দেশে আছেন?” আপনার দিশারি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “হুম, আমরাও এই সমস্যায় ভুগছি। কোনো সীমানা নেই। আর দুই দেশের বৈশিষ্ট্য একই রকমের।”

“আপনাদের তা হলে এদুটোকে এক দেশ বানানো উচিত। কারণ, আমার কাছে তা-ই মনে হচ্ছে।” 
বেলা পড়তে খাবারের জন্য একদল কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করলেন আপনারা। খেতে খেতে এক কর্মকর্তা দেশের রাজাদের তারিফ করলেন। শুনে আপনি জিজ্ঞেস করলেন,“তার মানে 
এখানে রাজা এক জনের বেশি?”
“হ্যাঁ। দুজন রাজা আমাদের।” 
আপনি হতবুদ্ধ হয়ে গেলেন। জিজ্ঞেস করলেন,“আপনাদের আইন-কানুন আর সমাজে শৃঙ্খলা রক্ষায় সংগতি ধরে রাখেন কীভাবে?” 
“তারা সব সময় একমত হয়। তাদের ইচ্ছে একই।” 
“তা হলে, আপনাদের রাজা দুজন নন; একজনই। কারণ, একই ইচ্ছার অধীনে কাজ করছেন তারা।” 
কেবল একজন স্রষ্টা থাকার পক্ষে আমি পাঁচটি যুক্তি তুলে ধরব৷ ওপরের গল্পটিতে আছে তার তিনটি৷ গল্পের প্রথম অংশ যে-যুক্তিটির সারসংক্ষেপ উল্লেখ করেছি, আমি সেটাকে বলি ‘ধারণাগত পার্থক্য’। এর মানে, একই বস্তুর একাধিক অস্তিত্বের জন্য এমন কিছুধারণা থাকতে হবে যা একটাকে অন্যটা থেকে আলাদা করবে। যেমন ধরুন, যদি বলি টেবিলে দুটো কলা আছে, আপনি নিজে পর্যবেক্ষণ করেই কথাটা যাচাই করতে পারবেন। আপনি দুটো কলা দেখতে পাচ্ছেন, কারণ এখানে এমন কিছুধারণা আছে যা আলাদা আলাদা। যেমন, কলা দুটোর আকার, টেবিলের ওপর দুটো কলার নিজ নিজ অবস্থান৷ কলা দুটোকে আলাদা করার মতো কিছুই যদি না থাকত, তা হলে কিন্তু বলা যেত না যে দুটো ভিন্ন কলা আছে ওখানে৷ এ বইতে এযাবৎ যুক্তি দেখানো হয়েছে একজন মহাশক্তিধর, মহাজ্ঞানী, সর্ববিষয়ে অবগত, পরাজাগতিক এক অনিবার্য অসৃষ্ট স্রষ্টার ব্যাপারে। কেউ যদি এই সত্তাকে এক না বলে একাধিক দাবি করেন, তা হলে এমন কিছুধারণা লাগবে, যা তাদের আলাদা করে। যদি আলাদা করা না যায়, তার মানে আসলে একজন স্রষ্টার কথাই বলা হচ্ছে। একজন স্রষ্টার জন্য যা সত্য, তা যদি অপরজনের জন্যও সত্য হয়, তা হলে আমরা আসলে একজন স্রষ্টার বর্ণনা দিয়েছি; দুজনের নয়। 
গল্পের দ্বিতীয় অংশ আছে বর্জন যুক্তি এবং সংজ্ঞামূলক যুক্তির সারাংশ। বর্জন যুক্তি বলে কেবল একটি ঐশী ইচ্ছা থাকাই সম্ভব। যদি দুজন স্রষ্টা থাকেন, এবং তাদের কেউ একজন একটি গাছ সৃষ্টি করতে চান, তা হলে তিনটি সম্ভাবনা হতে পারে। প্রথমত, দুজনের ইচ্ছে হবে একে অন্যের বিপরীত; তখন কোনো গাছই সৃষ্টি করা যাবে না। কিন্তু সৃষ্টিযেহেতু আছে, যৌক্তিকভাবে এটা অসম্ভব। এরা যদি একজন আরেকজনের ইচ্ছার বিরোধিতা করতেন, তা হলে কোনো সৃষ্টিই সম্ভব হতো না। দ্বিতীয়ত, গাছ সৃষ্টি করে একজন স্রষ্টা অপর স্রষ্টার ইচ্ছাকে পরাভূত করবেন। তৃতীয় সম্ভাবনা, তারা দুজনেই একই গাছ একই তরিকায় সৃষ্টির ব্যাপারে একমত হবেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সম্ভাবনার মানে: সত্যিকার অর্থেকেবল একটি ইচ্ছেই আছে। আর আমাদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটা কেবল একজন স্রষ্টাকে বোঝায়। সংজ্ঞামূলক যুক্তি বলে একজনের বেশি স্রষ্টার অস্তিত্ব অসম্ভব। কেননা স্রষ্টা যদি একজনের বেশি হতেন, মহাজাগতিক সুসংগতি হতো সুদূর পরাহত। একজন স্রষ্টার যুক্তি তুলে ধরার পাশাপাশি, আল্লাহর চিরাচরিত ধারণাকে নিশ্চিত করছে এ-বই। আল্লাহর সম্বন্ধে চিরাচরিত ধারণা আমাদের বলে দেয় যে, বাইরের কেউ তাঁর ইচ্ছেকে দমাতে পারে না। তার মানে দুটো সার্বভৌম ও চূড়ান্ত ইচ্ছা থাকতে পারে না।
বই : দা ডিভাইন রিয়ালিটি
লেখক : হামজা আন্দ্রেস জর্জিস
অর্ডার লিংক কমেন্টে।
সিয়ান | বিশুদ্ধ জ্ঞান | বিশ্বমান
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?