তাবলীগ জামাআতঃ সব রঙে রঙিন যারা by Akthar Bin Amir

▌তাবলীগ জামাআতঃ  সব রঙে রঙিন যারা..  
তাবলীগ জামাআতঃ  সব রঙে রঙিন যারা by Akthar Bin Amir তাবলীগ জামায়াতের বর্তমান অবস্থা.. জামায়াত শিবিরের বর্তমান অবস্থা. তাবলীগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য
(all credit to go – Akthar Bin Amir)

[১]
তাবলীগের মূলভিত্তি হচ্ছে ক্বুর’আন ও সুন্নাহ্। বিশেষ কোন ব্যক্তির নবআবিস্কৃত কোন তরিকার উপর ভিত্তি করে বহুকাল ধরে দ্বীনের তাবলীগ চলতে পারেনা। তাছাড়া যে দা’ওয়াতের শেকড় তাওহীদের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়, যে দা’ওয়াত কেবল বাহ্যিক আচরণ সংশোধন করেই ক্ষান্ত— সেই দা’ওয়াত সত্যিকারার্থে কোন দা’ওয়াতই নয়, তাতে যতই ইখলাস-মেহনত থাকুক না কেন। বস্তুত তাওহীদবিহীন এমন ইখলাস তাওহীদবাদী মুসলিমের নিকটে দু’আনা মূল্য রাখেনা। এ প্রসঙ্গে শাইখুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন,
“একজন মুসলিম অবশ্যই ইখলাস ও আন্তরিকতার সাথে নিজে ক্বুর’আন ও সুন্নাহ্ অনুযায়ী আমল করবে এবং সেদিকেই দা’ওয়াত দিবে। তবে এর সাথে অপর একটা শর্ত জরুরী আর তা হল— তাদের মানহায সঠিক ও দৃঢ়তা সম্পন্ন হওয়া। আর এটা কখনোই পূর্ণতা লাভ করে না যতক্ষণ না সালফে-সালেহীনের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়।”— [১]।
.
গাট্টিওয়ালা তাবলীগীদের দা’ওয়াতী মানহাজ (কর্মপদ্ধতি) ও আক্বীদাহ্ (বিশ্বাস) সম্পর্কে তিনি (রাহিমাহুল্লাহ্) আরো বলেন, “তাবলীগ জামাআত বর্তমান যুগে সূফী মতবাদের ধারক ও বাহক একটি জামাআত। এরা স্রেফ মানুষের চরিত্র সংশোধনের দাওয়াত দেয় কিন্তু মানুষের আক্বীদাহ-বিশ্বাস সংস্কার ও সংশোধনের দাওয়াত দেয় না। আকীদাহ্ সংশোধনের ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণ নিশ্চুপ। কেননা তাদের ধারণা মতে, বিশুদ্ধ আকীদাহর দা’ওয়াত দিলে মানুষের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি হবে। জনাব সাআ’দ আল-হুসাইন ভাই এবং ভারত-পাকিস্তানের তাবলীগ জামাআতের মুরব্বীদের মাঝে বেশ কিছু পত্র যোগাযোগ হয়। এর দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাবলীগ জামাআতের লোকেরা ওয়াসীলা, উদ্ধারকারী (ইস্তিগাসা) এবং এ ধরনের অনেক  (শিরকি) ধারণাকে সমর্থন করে। প্রত্যেক তাবলীগীকে চারটি তরীকার যেকোন একটী ভিত্তিতে বাইয়াত গ্রহণ করতে হয়। কেউ হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন যে, এদের প্রচেষ্টায় অনেক মানুষই তো আল্লাহর পথে ফিরে এসেছে, বরং এদের সাথে বের হবার জন্য (দলীল হিসেবে) কেউ কেউ ইসলাম গ্রহণ করেছে (এমন উদাহরণ টেনে বলবেন) তাদের কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করার জন্য কি এটা যথেষ্ট নয়? এ ব্যাপারে আমি বলছি যে, এ ধরণের কথা আমরা অনেক শুনেছি এবং জানি, সূফীদের কাছে থেকে অনেক ঘটনাই জানি। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যদি শাইখের আক্বীদাহ ফাসিদ হয়, হাদীসে মিসকীন হয় বরং লোকজনের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে— এতদ্বস্বত্ত্বেও অনেক ফাসিক লোক তার হাতে তাওবাহ্ করে। যে দলই ভাল বা কল্যাণের দিকে ডাকবে অবশ্যই তার কিছু না কিছু অনুসারী পাওয়া যাবেই। কিন্তু আমরা দৃষ্টি দিবো যে, সে আসলে কিসের দিকে আহবান করছে?। সে কি মানুষকে কুরআন, সুন্নাহ্ এবং সালফে সালিহীনের আক্বীদাহর দিকে ডাকছে, কোন মাযহাবের ব্যাপারে কোনরকম গোঁড়ামী করে না এবং যেখানেই সুন্নাত পায় সেখান থেকেই (নিয়ে) তার উপর আমল করে। তাবলীগ জাম’আতের কোন ইলমী তরীকা বা পন্থা নেই। তাদের পন্থা হল স্থানের পরিপ্রেক্ষিতে যেখানে তার জন্ম হয়েছে। এরা সব রঙেই রঙিন হয়।”– [২]।
.
[২]
.
আক্বীদাহ্ সংশোধনের গুরুত্বপূর্ণ ও নবীওয়ালা দা’ওয়াত বাদ দিয়ে একটি দা’ওয়াতি প্লাটফর্ম কল্পনা করা সম্বব? কখনোই নয়। তাইতো আক্বীদাহর গুরুত্বারোপ করে ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেছেন,”আক্বীদাহ হচ্ছে দ্বীনের মূল ফাউন্ডেশন ও মিল্লাতের ভিত্তি, যা সঠিক না হওয়া পর্যন্ত কোন ইবাদতই বিশুদ্ধ হবে না।— [৩]। ইমাম সালিহ আল ফাউযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন,”বিশুদ্ধ আক্বীদাহ হল সেই ভিত্তি, যার উপর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত। আর এর মাধ্যমেই আমল বিশুদ্ধ হয়। — [৪]। সুতরাং সবকিছুর আগে দা’ওয়াত হবে আক্বীদাহ সংশোধনের অত:পর অন্যসব। ফেইসবুক পাড়ায় গত কয়েকদিন ধরে দেখছি অতি উদারপন্থী কেউ কেউ বলছেন, চাইলে তাবলীগীদের ইখলাসটা কাজে লাগানো যেত, তাদেরকে আগে দা’ওয়াত দেয়া উচিত ছিল — ইত্যাদি। ভাবখানা এমন যেন এ-আইডিয়াটা কেবল তাদেরই মাথায় এসেছে, অন্যকেউ এ-ব্যাপারটা জানেন না! এইলোকগুলো না ইখলাস সম্পর্কে জ্ঞাত, আর না দা”ওয়াত। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি, একজন আম-তাবলীগীর সাথে যতক্ষণ “সহমত” পোষণ করবেন ঠিক ততক্ষণ সে আপনার কদর করবে, সুন্দর আচরণ করবে। যখনই সামান্য ইখতিলাফ করবেন, তখনই সালাম-দু’আ বন্ধ করে দিবে। 
.
অত:পর দা’ওয়াতের কথা যদি বলতে হয় — তাহলে জেনে রাখুন, এদের মুরুব্বীদেরকে একদমই দা’ওয়াত দেয়া হয়নি তা কিন্তু নয়, বরং দা’ওয়াত দেয়া হয়েছে, আমাদের শাইখরা দেখা করেছেন, কথা বলেছেন, বাসায় পর্যন্ত গিয়েছেন। উদাহরণস্বরুপ পাকিস্তানের কিবার আলিম আশ-শাইখ, ত্বালিবুর রাহমান রাশেদী (হাফিযাহুল্লাহ্)-র কথা ধরা যাক, শাইখ সরাসরি দাওয়াত নিয়ে তাবলীগের মুরুব্বি মাওলানা ত্বারীক্ব জামীলের বাড়িতে গিয়েছিলেন। উক্ত ঘটনা আলোকপাত করে শাইখ বলেন, “আমি যখন তার বাড়িতে গিয়েছিলাম, তখন আমি তাকে একটা কথাই বলেছিলাম — “আপনি অনৈসলামিক পদ্ধতিতে তাবলীগ করছেন, তাই আপনাকে সতর্ক করার জন্য আমি সফর করে আপনার বাড়িতে এসেছি। আপনারা তাবলীগ করার জন্য সারা দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ান (যেই তাবলীগী কার্যক্রম মূলত ভুল পদ্ধতিতে পরিচালনা করে থাকেন) । কিন্তু কাল ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ যখন আপনাকে (ভুল পদ্ধতিতে তাবলীগ করার জন্য) পাকড়াও করবে, তখন আপনি যেন আল্লাহকে — “আল্লাহ, দুনিয়ায় থাকতে কেউ আমাকে ভুল থেকে সতর্ক করে নি”– এই কথাটি বলতে না পারেন। কেননা, আপনি ভুল পদ্ধতিতে তাবলীগ করছেন। বাস্তবতা হচ্ছে যে, ক্বুরআন ও হাদীসে রাসূল (ﷺ) এর যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমেই সঠিকভাবে তাবলীগ করতে হয়।” (আমার এই কথাগুলো শুনে) তিনি আমাকে বললেন : “আমিতো নিজেকে সত্যের পথের পথিক মনে করি।” তখন আমি তাকে বললাম, “আমিতো আপনাকে পথভ্রষ্ট মনে করি, তাই আপনাকে নাসীহাহ্ দিতে এলাম। যদি আপনি সত্যের পথেই থাকতেন, তাহলে তো আপনার বাড়িতে আমার আসার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। কেননা, আমি জানি যে, আপনার ‘আকীদাহ্ ক্বুরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী। সুতরাং আপনি ক্বুরআন ও সুন্নাহর পথে ফিরে আসুন এবং এটাই সিরাতে মুস্তাক্বীম।” — [৫]।
.
[৩]
.
সালাফিয়্যাহর ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন “হক্কপন্থী লোকেরা যদি কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা, সেই কথা বর্ণনা না করতো, তাহলে ভ্রষ্টতার শিকার হয়েছে এমন লোকেরা তাদের ভুলের উপরেই থেকে যেত। তখন সাধারণ লোকেরা অন্ধভাবে সেই ভ্রষ্টতার অনুসরণ করতো। সুতরাং যারা সত্য জেনেও চুপ করে ছিলো, লোকদের পথভ্রষ্ট হওয়ার পাপ তাদের উপরেও পড়তো।”— [৬]। সুতরাং যারা বিদ’আতীদের থেকে সর্তক করছেন— তারা অন্তত বোবা শয়তানদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে মুক্ত — আলহামদুলিল্লাহ্। আর যারা বিদ’আতীদের পক্ষে উল্টো মায়াকান্না দেখাচ্ছেন, হিতাকাঙ্ক্ষী হচ্ছেন,ডিফেন্স করছেন— তাদের উদ্দেশ্যে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্ (রাহিমাহুল্লাহ্)-র একটি প্রাসঙ্গিক উক্তি দিয়ে শেষ করছি। তিনি (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন, “যে ব্যক্তি নিজেকে বিদ’আতীদের সাথে সম্বন্ধ করবে, অথবা তাদের প্রতিরক্ষা করবে, অথবা তাদের প্রশংসা করবে, তাদের বই-পুস্তককে মূল্যবান মনে করবে, অথবা তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করবে, অথবা তাদের সমালোচনা করাকে অপছন্দ করবে, অথবা তাদের পক্ষে ওকালতি করবে — তাকে শাস্তি দেয়া উচিত। বরং প্রত্যেক যে ব্যক্তিই বিদ’আতীদের অবস্থা জানার পরেও তাদের মুকাবিলা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে না তাকেই শাস্তি দেয়া ওয়াজিব। কেননা বিদ’আতীদের মুক্বাবিলা করা বড়ো ওয়াজিব।” — [৭]।
.
মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে সালাফিয়্যাহ’র ওপর অটল রাখেন এবং সত্যান্বেষী ভাইদেরকে সালাফী বানিয়ে আমাদের শক্তিশালী করেন। আমীন।
.
তথ্যসূত্রঃ
১. — [ফিতনাতুত তাকফীর: ৭]।
২.— [ইমারতী ফাতওয়া, শাইখ আলবানী, পৃষ্ঠাঃ ৩৮]।
৩. — [হিসনুত তাওহীদঃ ৫৯]।
৪. — [আক্বীদাতুত তাওহীদঃ ২২]।
৫. — [https://youtu.be/iS9dwjHCB28]
৬. — [মাজমু’ঊ ফাতাওয়া ইবনু বায : – ৩/৭২ ]।
৭. — [মাজমু‘ঊ ফাতওয়া ইবনু তাইমিয়্যাহ: ২/১৩২]।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?