- Book : Tabliger Shorup – তাবলীগের স্বরূপ
- Author : Muzaffor Bin Muhsin
- Last Update : 29 – 6 – 2022
- Publisher : Ach-Chirat Prokashani
- Quality : Paperback
- Edition : 1st Published, 2019
- Number of Pages : 262 Only
- Country : Bangladesh
- Language : Bangla & Arabic
তাবলীগের স্বরূপ বইটি নিয়ে কিছু কথা
দাওয়াত ও তাবলীগ আল্লাহর নির্দেশিত বিশেষ ফরয বিধান। উম্মতের একটি শ্রেণী উক্ত গুরু দায়িত্ব পালন করবেন, যারা হবেন পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে পারদর্শী অর্থাৎ শারঈ জ্ঞানে অভিজ্ঞ। বাকী সকল শ্রেণীর মানুষ তাদেরকে সার্বিকভাবে সহযােগিতা করবে এবং তাদের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে। তাওহীদ বুঝা, তাবলীগ করা ও আমল করার জন্য প্রধান শর্ত হল ইলম অর্জন। বিশেষ করে যারা দাওয়াতী কাজ করেন, তাদের জন্য শারঈ জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক, যাতে তারা দ্বীনের প্রকৃত স্বরূপ জনগণের সামনে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারেন।
বর্তমান শিরক-বিদ’আত ও নব্য জাহেলিয়াতের যুগে তাওহীদের দাওয়াতকে শক্তিশালী করার জন্য ইলমী কৌশলের বিকল্প কিছু নেই। ধর্মের নামে প্রচলিত অধিকাংশ ইসলামী দল সমাজে যে তাবলীগ করছে তা শিরক, বিদ’আত, কুসংস্কার ও মিথ্যা কেচ্ছা-কাহিনীতে ভরপুর। পথভ্রষ্ট ফের্কাগুলাে বিভিন্ন মাযহাব, তরীকা, দর্শন ও মতবাদের নামে নিজেদের রচিত নিয়ম-নীতি প্রচার করছে।
বিশেষ করে প্রচলিত তাবলীগ জামা’আত স্বপ্নে পাওয়া ইলিয়াসী মিথ্যা ধর্ম, জাল ও যঈফ হাদীছ এবং বানােয়াট কেচ্ছাকাহিনী প্রচার করে মুসলিম উম্মাহকে ভ্রষ্টতার ফাঁদে বন্দী করেছে। কারণ তারা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছকে বর্জন করে মাওলানা ইলিয়াস ছাহেবের জামাই মাওলানা যাকারিয়া রচিত ‘ফাযায়েলে আমল’ ও ‘তাবলীগী নিছাব’কেই আঁকড়ে ধরেছে। তারা শিরকী আক্বীদা প্রচার করে কোটি কোটি মানুষের ঈমান নষ্ট করছে।
নিত্য-নতুন আমল তৈরি করে জনসাধারণকে শুধু বিদ’আতী আমলের দিকে ডাকছে। শারঈ জ্ঞানের অভাবে তারা অন্ধত্বকে বরণ করে নিয়েছে। মূলত ‘ফাযায়েলে আমলই তাদেরকে এই পথে নামিয়েছে। বিশেষ করে জাল হাদীছের মােহ তাদেরকে মাতাল করে দিয়েছে এবং স্বপ্নে পাওয়া মিথ্যা কাহিনী তাদেরকে প্রতিবন্ধী বানিয়েছে। অথচ শরী’আতের দৃষ্টিতে জাল ও যঈফ বর্ণনা গ্রহণযােগ্য নয়।
আল্লাহ তা’আলা এবং রাসূল (সঃ) এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। আল্লাহ বলেন,فين أم من افترى على الله گير با يف الاس بغير علم إن الله لا يهيرى القوم الظييين.
‘সুতরাং ঐ ব্যক্তির চেয়ে বড় যালেম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহ্র উপর মিথ্যারােপ করে, যাতে সে বিনা ইলমে মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে পারে? নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা যালেম সম্প্রদায়কে হেদায়াত দান করেন না’ (আন’ আম ১৪৪)।
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ সম্পর্কে ঐ সমস্ত কথা বলা হারাম, যে বিষয়ে তারা জানে না (আ’রাফ ৩৩)।
অনুরূপ হাদীছেও এসেছে,
عن عبد الله بن عمرو قال قال رسول الله و بلغوا عني ولو آية وحدثوا عن بني إسرائيل ولاحرج ومن كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من الارا
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা) বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, একটি আয়াত (কথা) হলেও তােমরা আমার পক্ষ থেকে পৌছে দাও।
আর বাণী ইসরাঈলদের সম্পর্কেও বর্ণনা কর, তাতে সমস্যা নেই। তবে কেউ যদি আমার উপর ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যারােপ করে, তাহলে সে যেন তার স্থান জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।
অন্য হাদীছে এসেছে,
يقول من يقل على ما لم أقل
عن سلمة بن الأكوع قال سعث التي فليتبوأ مقعده من الار.
সালামা ইবনুল আকওয়া (আকাশ) বলেন, আমি রাসূল (স)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলতেন, “কেউ যদি আমার সম্পর্কে এমন কথা বলে, যা আমি বলিনি, তাহলে সে যেন তার স্থান জাহান্নামে তৈরি করে নেয়। জাল হাদীছ বর্জনের ব্যাপারে সকল মুহাদ্দিছ একমত। এর প্রচার-প্রসার এবং তার প্রতি আমল করা সবই মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্যে হারাম।
ড. ওমর ইবনু হাসান ওছমান ফালাহ বলেন,
وهو إجماع ضم آخر على تحريم العمل بالموضوع.
‘জাল হাদীছের প্রতি আমল করা ইজমার আওতাধীন বিষয় সমূহের মধ্যে একটি বিশেষ হারাম। আহকাম, আক্বীদা, ফযীলত, ওয়ায-নছীহত কিংবা লােকেরা এই জাল-যঈফ বর্ণনা ও উদ্ভট কল্প-কাহিনীর মধ্যেই হাবুডুবু খাচ্ছে।
সেজন্য আমরা ‘তাবলীগের স্বরূপ’ নামে প্রবন্ধটি সংকলন করেছি, যাতে সাধারণ মানুষ উক্ত ভ্রান্ত মতবাদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে এবং ইসলামের স্বরূপ সম্পর্কে অবগত হতে পারে। আল্লাহ তা’আলা মুসলিম উম্মাহকে উক্ত বিদ’আতী দর্শন থেকে রক্ষা করুন-আমীন!! আমরা প্রথম অধ্যায়ে ইসলামী দাওয়াতের সঠিক রূপরেখা সম্পর্কে আলােচনা করেছি।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে তাবলীগ জামা’আতের পরিচিতি ও ভ্রান্ত আক্বীদাগুলাে উল্লেখ করেছি। পরবর্তী অধ্যায়গুলােতে ফাযায়েলে নামায, ফাযায়েলে যিকির, দরূদ, হজ্জ, রামাযান, ফাযায়েলে কুরআন ইত্যাদি অংশে বর্ণিত জাল-যঈফ বর্ণনা ও মিথ্যা কাহিনীগুলাে উল্লেখ করেছি এবং তা খণ্ডন করার চেষ্টা করেছি।
পাশাপাশি উক্ত বিষয়গুলাে সম্পর্কে যে সমস্ত ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে সেগুলােও পেশ করেছি। এরপর তাদের প্রচারিত ‘মুন্তাখাব হাদীস বইটি সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করে সংক্ষেপে কয়েকটি কথা লিখেছি। সবশেষে ‘ফাযায়েলে তাওহীদ’ ও ‘ফাযায়েলে জিহাদ’ অধ্যায় দুটি আমরা সংযােগ করেছি, যা তাদের ফাযায়েলে আমলের মধ্যে স্থান পায়নি।
যদিও শরী’আতে ‘তাওহীদ’ ও ‘জিহাদ’-এর ফযীলত সবচেয়ে বেশী। লেখাটি সংকলনে যারা বিভিন্নভাবে সহযােগিতা করেছেন, তাদের জন্য আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদান ভিক্ষা করছি। আল্লাহ যেন আমাদের এই ক্ষুদ্র খিদমত কবুল করেন এবং প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর হাতে গ্রন্থটি পৌছানাের ও সংশােধন হওয়ার তাওফীকৃ দান করেন-আমীন! – বিনীত মুযাফফর বিন মুহসিন।
১. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৬১; ১/৪৯১ পৃঃ, নবীদের ঘটনাবলী’ অধ্যায়; মিশকাত হা/১৯৮,
পৃঃ ৩২, “ইলম অধ্যায়। ২. ছহীহ বুখারী হা/১০৯, পৃঃ ২১, “ইলম অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৮। ৩. ডঃ ওমর ইবনু হাসান ওছমান ফালাতাহ, আল-ওয়াযউ ফিল হাদীছ (দিমাঙ্ক ;
মাকতাবাতুল গাযালী, ১৯৮১/১৪০১), ১/৩৩২ পৃঃ।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?