তবুও রাখি মনে – হাবিবুর রহমান | Tobuo Rakhi Mone

  • উপন্যাস : “তবুও রাখি মনে”
  • লেখক : হাবিবুর রহমান।
  • প্রকাশনী : বইমই প্রকাশনী।
  • প্রকাশক : ইমদাদুল হক।

নিশ্চিন্তপুর গ্রামের লোকজন নিস্তব্ধ। ভয়ে চুপসে আছে সবাই। জমির চেয়ারম্যানকে সবাই ভয় পায়। গ্রামের চারদিকে কেবল সুনসান নীরবতা। যেন গ্রামে কোনো জন মানবের চিহ্ন নেই। এ এক ভিড়ান ভূমি। কেউ জমির চেয়ারম্যানের ভয়ে মুখ খুলছে না। সন্ধ্যার পর রাস্তায় আশেপাশে অপরিচিত লোকের আনাগোনা দেখা যায়। নতুন মানুষ। এরা এ গ্রামের কেউ না। সেইদিন সন্ধ্যায় রূপসপুর থেকে ফেরার মতে মতির সাথে দেখা। মতি বুঝতে পারে এরা পুলিশের লোক। সিভিল বেশে গ্রামে তদন্ত করছে। 

একে একে গ্রামের সবার সাথে এদের দেখা হয়েছে। তাই ভয়ে কেউ বের হয় না। কানাঘুষা চলছে খালেক মাষ্টারের ছেলে জব্বারকে নিয়ে। সবাই বলাবলি করছে জব্বারকে মারছে জমির চেয়ারম্যানের লোক। জমির চেয়ারম্যানের মেয়ে জেসমিনের সাথে সম্পর্ক ছিল জব্বারের। রাতে প্রায়ই জেসমিনের ঘরে যেত। সবাই বলাবলি করছে। এখন এসব সবার মুখে মুখে। কেউ কেউ বলছে জেসমিন পোয়াতি। লোক মুখে প্রচলিত  নানান কথা। 
কিন্তু এসবে কান দিচ্ছেন না জমির চেয়ারম্যান। তিনি এত সহজে হৈচৈ করার লোক নন। জমির চেয়ারম্যান পুকুরপাড়ে বসে আছেন। উনাকে অনেকটা তটস্থ দেখাচ্ছে। খানিক পর পর আগুন দেওয়া উঁক্কাতে টান দিচ্ছেন। তার কপাল কুচকে আছে। চোখে মুখে চিন্তার ভাঁজ। গভীর সম্মোহনে তাকিয়ে দেখছেন, দূরের পানির উপর শামিয়ানার মত পড়ে থাকা শ্যাওলার দিকে। মাথার ভেতর এলোমেলো ভাবনা এসে উঁকি দিচ্ছে। 
আবার উধাও হচ্ছে।  পাশে দাঁড়িয়ে আছে রহমত। দাঁড়িয়ে সে উসখুস করছে। ভয়ে গুটিয়ে আছে। জমির চেয়ারম্যান ভয়ানক মানুষ। অল্পতে রেগে যান। তবে কাজ করেন ঠান্ডা মাথায়। জব্বার জেসমিনের খবর এমনভাবে ছড়িয়ে যাবে ভাবেননি। জমিলা বেগম ভেতর ঘর থেকে ডাক দিলেন,
  – জেসমিনের বাপ হুনছেন! জেসমিন কালকে রাইত থেকে কিছু খায় নাই। দুয়ার বন্ধ। তখন থেকে ডেকেই যাচ্ছি।
জমির চেয়ারম্যান উঁক্কা ছেড়ে উঠে গেলেন। ডাকতে লাগলেন জেসমিনকে। দুয়ারে ধাক্কা দিলেন। বার কয়েক ডেকে কোনো সাড়া ফেলেন না। রহমতকে দুয়ার ভাঙ্গতে বললেন। দুয়ার ভেঙে ভেতরে ডুকে দেখেন জেসমিন পড়ে আছে। সে অচেতন। মুখ দিয়ে বমি করেছে। 
সতীশ কবিরাজকে ডেকে আনা হলো। তিনি জেসমিনকে দেখে ঔষধ দিয়ে গেলেন। সতীশরঞ্জন এ অঞ্চলে অনেক নাম ডাক। তিনি বললেন,
ভয় নেই চেয়ারম্যান সাব। তেমন কিছু হয়নি শরীর দূর্বল হয়েছিল। 
সন্ধ্যার পর জেসমিনের জ্ঞান ফিরল। জমির চেয়ারম্যান মেয়ের পাশে বসে আছেন। এমন ভয়ংকর মানুষটা কেমন যেন মেয়ের পাশে মিলিয়ে গেলেন। কেবল নিশ্চুপ; নিষ্প্রভ। জগতে পিতারা এমনি, মেয়েদের কাছে কোমল আর নরম। পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর বাবাও মেয়ের কাছে শান্ত আর নিরব। মেয়েদের কাছে নিজে গুটিয়ে যান।
তিনি জেসমিনের মাথাটা নিজের কোলে রাখলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। সে পিটপিট করে তাকিয়ে আছে বাবার মুখে। দূর্বল হয়ে যাওয়া শরীরে কিছু বলার সাধ্য নেই তার। কেবলি নিশ্চুপ আর নিষ্প্রাণ। তবে জমির চেয়ারম্যানের সেই কথাটাই মাথার ভেতর বিঁধে আছে। সতীশ ডাক্তারের বলে যাওয়া শেষ কথাটি। লোকমুখে আগেই রটিত এই কথার কোনো হদিস পাচ্ছেন। জেসমিন পোয়াতি। এটা তিনি নিজেকে কোনোভাবেই বিশ্বাস করাতে পারছেন। তবে কি! লোকমুখে কথাই সত্য হলো। এসব ভাবতে গিয়ে, তার বুকের ভেতর তীরের ফলার মতো বিঁধছে।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?