বইয়ের নাম- ডাইনী পুনরাগমণ | রিভিউ | পাঠ প্রতিক্রিয়া
প্রকাশনী- তাম্রলিপি।
মলাট মূল্য- ৪০০ টাকা।
পৃষ্ঠা সংখ্যা- ২১৬
প্রচ্ছদ- সজল চৌধুরী
(ডাইনি নিয়ে অনেক আলোচনা চলছে। ভালোই তো, এটাও একটা ভালোরকম পাবলিসিটি স্টান্ট হয়ে গেল! আমি ডাইনি এবং তার পরের পর্ব ডাইনি পুনরাগমণ দুটো বইয়েরই রিভিউ লিখেছিলাম পড়ার পরপরই। আজ এই গরম গরম আলোচনার সুযোগে ‘ডাইনি পুনরাগমণ’ এর রিভিউটা পোস্ট করে ফেলা যাক। রিভিউই লেখার চেষ্টা করেছি আমি, অন্যকিছু নয়। )
পাঠ প্রতিক্রিয়া- ডাইনী পুনরাগমন
বই- ডাইনি পুনরাগমণ
প্রকাশনী- তাম্রলিপি
জনরা- থ্রিলার
এটাকে পাঠ প্রতিক্রিয়াই বলা যেতে পারে। রিভিউ বলতে পারছি না। কারণ পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ হয়তো সম্ভব হবে না এই মুহূর্তে। শুধু বইটি পড়ে আমার কেমন লেগেছে সেটাই অল্প কথায় তুলে ধরার একটা চেষ্টা মাত্র।
সালমা সিদ্দিকার থ্রিলার উপন্যাস ‘ডাইনী’র সিক্যুয়েল ‘ডাইনী পুনরাগমন’। তুমুল জনপ্রিয় উপন্যাস ডাইনীর কনসেপ্টটা দারুণই ইউনিক। একটি মেয়ে যে কী না বংশগতভাবে প্রাপ্ত ডাইনী শক্তিধারী একজন মানুষ। অসাধারণ রূপবতী, বয়স যার কাছে পরাজিত। এই বয়স তথা নিজের যৌবনকে ধরে রাখার জন্য তার প্রয়োজন হয় কিছু বিশেষ পুরুষের, যারা তামালিক পুরুষ হিসেবে গল্পে বর্ণিত হয়েছে।
থ্রিলারের অ আ ক খ তেমন একটা জানি না। আমার কাছে থ্রিলার এখনো কিছু অত্যন্ত বিখ্যাত লেখকের বিখ্যাত কিছু লেখার (ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলা কিংবা লাভক্রফটের যেকোন হরর গল্প) মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এসবের বাইরেও থ্রিলারের রহস্যময় জগতের অদ্ভুতুড়ে হাজাররকম কনসেপ্টে লেখা অজস্র গল্প তেমন একটা পড়া হয়নি আমার। হয়ত খুব বেশি বড় ভক্ত নই আমি এসব গল্পের।
সালমা সিদ্দিকার লেখার সূত্র ধরেই আধুনিক কিছু থ্রিলার গল্পের সাথে পরিচয় হলো। ‘ডাইনী’ তেমনই একটি গল্প। গল্পটার ইউনিক কনসেপ্ট পাঠকমাত্রকেই চমকে দেয়। এমন কনসেপ্ট নিয়ে কেউ যে ভাবতে পারে, এটাই আশ্চর্যজনক মনে হয় আমার কাছে।
যাহোক, গল্পের প্রসঙ্গে আসি। ‘ডাইনী’ যারা পড়েছেন, তারা ‘ডাইনী পুনরাগমন’ পড়ার সময় নিজের অজান্তেই তুলনায় জড়িয়ে পড়েন। আমিও একটু আধটু জড়িয়ে গেছি।
তবে আমার কাছে দুটো গল্পকেই গতিময় মনে হয়েছে। কাহিনীতে স্বাতন্ত্র্যও আছে, এটা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দুটোই যদি একই ছাঁদে লেখা হতো, তাহলে হয়ত বোরডমে ভুগতাম। কিন্তু সেটা হয়নি। তামালিক পুরুষের সন্ধানে ‘ডাইনী’ গল্পের মূল চরিত্র (নাম ভুলে গেছি) একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে চলে। ‘ডাইনী পুনরাগমন’এর শাহানার অনুসন্ধানটা অন্যকিছুকে ঘিরে। এখানেও তামালিক পুরুষের প্রসঙ্গ এসেছে। তবে তা গল্পের মূল ঘটনা থেকে পাঠকের মনোযোগকে সরিয়ে নেয় না।
সালমা সিদ্দিকার লেখার মূল আকর্ষণ তার বাক্যগঠন। ছোট সাবলীল আর রসালো বাক্য দিয়ে সাজানো তার গল্পগুলো পাঠক দারুণ আনন্দ নিয়ে পড়ে। ডাইনী পুনরাগমনেও লেখকের লেখনশৈলী পাঠককে ধরে রাখতে পুরোপুরি সক্ষম। একের পর এক ঘটনার বিন্যাস সমাবেশ মনোযোগকে অন্যকিছুতে সরতে দেয় না।
গল্পটি লেখার সময় লেখক যথেষ্ট পড়াশুনা করে নিয়েছেন, বোঝাই যায়। গল্পের দুষ্ট চরিত্রগুলোর অপকর্ম (কী সেই অপকর্ম সেটা বলছি না, স্পয়লার হয়ে যাওয়ার ভয়ে) লেখক যেভাবে বিস্তৃত আকারে বর্ণনা করেছেন এবং যতরকম যন্ত্রপাতি আর কোথায় কী কী ভাবে সেগুলো সংগৃহীত হয়ে থাকে…এসবের যেমন জম্পেশ ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাতে পাঠক হিসেবে আমি যথেষ্ট মুগ্ধ। বলতেই হবে, লেখক গল্প সৃষ্টিতে ফাঁক রাখেননি। নিজের হাতে যত্ন নিয়ে প্রতিটি ফাঁক পূর্ণ করেছেন।
এবারে আসি কিছু ‘কম ভালো লাগা’ বিষয় নিয়ে। এটা বলতেই হবে, তা নয়। আর আমি জানি, এই জিনিসগুলো পাঠকভেদে বিভিন্নরকম হয়। কাজেই আমার কাছে যা কম ভালো লেগেছে, তা আরেকজনের কাছে বেশ ভালোও লাগতে পারে। তবে আমি তো আমার কথাই বলছি! কাজেই আমার কাছে কী মনে হয়েছে সেটাই শুধু বলতে পারবো।
সালমা সিদ্দিকার লেখায় কেউ কেউ নাকি আগেই এই অভিযোগ তুলেছেন। আমি অবশ্য আগে এই অভিযোগ তুলিনি। বিশেষ করে তার ছোটগল্প নিয়ে আমার তেমন অভিযোগ নেই। কিন্তু উপন্যাসের ক্ষেত্রে মনে হলো, কথাটা বলা যেতে পারে।
লেখক তীব্র বেগে ঘটনার ঘোড়া ছুটিয়ে দিয়েছেন, একের পরে এক স্টেশন অতিক্রম করেছেন তুঙ্গস্পর্শী গতিতে। এই গতির সাথে পাল্লা দিতে মাঝে মাঝে কিছুটা অস্থির লাগে, ক্লান্ত বলবো না। ঐ যে বললাম, থ্রিলার বলতে এখনো বুঝি সেই ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলা, যেখানে পেনসিলভ্যানিয়ার থমথমে স্তব্ধ প্রকৃতিকে চিত্রিত করেই লেখক গায়ের লোমে কাঁটা ধরিয়ে দিয়েছেন। তাই আমিও সেই গতানুগতিক পাঠক হিসেবে কিছুটা অস্থিরতায় ভুগেছি পরিস্থিতি বা পারিপার্শিকতার বর্ণনার খরায়। কোথাও দু’দন্ড থেমে জিরিয়ে আরেকটু রয়েসয়ে যদি গল্পটা বলা হতো, তাহলে খুব বেশি কি দেরি হয়ে যেত?
তবে এটা একান্তই আমার নিজস্ব চিন্তাধারা। পাঠক মাত্রেই ভিন্ন চিন্তাধারার মানুষ হন। কাজেই এজন্য লেখককে বেশি কিছু বলাটা অন্যায্য বলে মনে করছি। ডাইনী পুনরাগমন’এ লেখক অনাবশ্যক রগরগে বর্ণনাগুলো (যা ডাইনী সত্ত্বার প্রাণভোমরা) সযত্নে এড়িয়ে গেছেন এটা আমার কাছে ভালো লেগেছে। অতি প্রয়োজনে দু’একটি বর্ণনা এসেছে যা গল্পের প্রয়োজনকেই স্বীকৃতি দিয়েছে মাত্র।
সিক্যুয়েল লেখা নিঃসন্দেহে কঠিন। লেখক কঠিন কাজটি অনায়াসে করেছেন সেজন্য তাকে অভিনন্দন। শুনতে পাচ্ছি এর নাকি আরেকটা খণ্ড আসতে যাচ্ছে। এই ব্যাপারে লেখকের ভাবনাই চুড়ান্ত। তবু সামান্য পাঠক হিসেবে মনে করি…কোথায় থামতে হবে সেটা অবশ্য অবশ্যই লেখককে জানতে হবে।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?